মঙ্গলবার | ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:১৭
Logo
এই মুহূর্তে ::
শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (অষ্টম পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন স্বর্গলোকে মহাত্মা ও গুরুদেবের সাক্ষাৎকার : সন্দীপন বিশ্বাস বই ছাপানো নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড : সাইফুর রহমান শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (সপ্তম পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন সৌমেন দেবনাথ-এর ছোটগল্প ‘শান্তিগন্ধা’ বিজেপির প্রভাবেই কি নির্বাচন কমিশনের আচমকা ভোট বৃদ্ধি : তপন মল্লিক চৌধুরী শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (ষষ্ঠ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন নগ্ন নৃত্যে বাংলায় বৃষ্টির ব্রত – পুণ্যিপুকুর, হুদুম দেও, ব্যাঙের বিয়ে : রিঙ্কি সামন্ত শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (পঞ্চম পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন বিজন প্রাণের প্রাঙ্গণে : সন্দীপন বিশ্বাস বিভূতিভূষণের পান্ডুলিপি — ‘পথের পাঁচালী’ : সবিতেন্দ্রনাথ রায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (চতুর্থ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (শেষ পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস রবীন্দ্রনাথের বিদেশি ফটোগ্রাফার : দিলীপ মজুমদার দর্শকের অগোচরে শুটিং-এর গল্প : রিঙ্কি সামন্ত রশ্মির নাম সত্যজিৎ “রে” … : যীশু নন্দী হুগলিতে মাধ্যমিকে চতুর্থ ও দশম উল্লেখযোগ্য ফলাফলে নজর কাড়ল : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (তৃতীয় পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (ষষ্ঠ পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস ১৯২৪-এ রবীন্দ্রনাথের স্প্যানিশ ফ্লু হয়, পেরুযাত্রার সময় : অসিত দাস গাইনোকলজি ও গাইনি-ক্যান্সারে রোবোটিক অ্যাসিস্টেড সার্জারীর ভূমিকা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সমাজতান্ত্রিক আদর্শের ছোটগল্পকার আলাউদ্দীন আল আজাদ : আবু জাফর রেহমান শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (দ্বিতীয় পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (পঞ্চম পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাতি ফোলালেও আম জনতাকে ভোট কেন্দ্রে টানতে পারেননি : তপন মল্লিক চৌধুরী আলুর দামে রাশ টানতে না পারলে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (প্রথম পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠিতে তাঁর স্পেনযাত্রা বাতিলের অজুহাত : অসিত দাস ফ্ল্যাশব্যাক — ভোরের যূথিকা সাঁঝের তারকা : রিঙ্কি সামন্ত সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (চতুর্থ পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪৩১-এর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

বাংলার মাদুর শিল্প

বিশ্বেন্দু নন্দ / ৪৪৫২ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সম্ভবতঃ মাদুর কথাটির উত্পত্তি সংস্কৃত শব্দ মন্দুরা থেকে। মাদুরের মূল উপাদান এক ধরনের তৃণ—সাধারণত যা মাদুরকাঠি নামে পরিচিত। মাদুরকাঠি সাধারণত সরু, গোলাকার, দৈর্ঘে চার হাত বা একটু বড়, কোনো গাঁট থাকে না বা শাখা প্রশাখাও হয় না। তৃণ শীর্ষে চার পাঁচটি ধারালে পাতা থাকে।

মাদুর কাঠির চাষ হয় সাধারণত পূর্ব আর পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ আর উত্তর ২৪ পরগণা, আর হাওড়া জেলায়। চাষের জন্য দোঁয়াশ মাটি সর্বশ্রষ্ঠ হলেও বালি ও এঁটেল মাটিতেও মাদুরকাঠি চাষ হয়ে থাকে। কাঠির রং হলুদ, চাঁপাফুলের রং বা সবুজ হয়ে থাকে। চাষের সময় চৈত্র বৈশাখ। ক্ষেত থেকে মাঘ মাসে তুলে আনা মূলগুলি রেখে ছায়ায় বা পুকুর ধারে জল ছিটিয়ে ঢাকা থাকে। চার পাঁচদিন পর অঙ্কুর দেখা যায়। জল জমে না এমন জমিতে লাঙল দিয়ে ও মাটি গুঁড়ো করে জিম প্রস্তুত করা হয়। ছয় ইঞ্চি করে সার কেটে দুটি মূল পরস্পরের এক ইঞ্চি দূরত্বে বসিয়ে মাটি চাপা দেওয়া হয়। দিন দশেকের মধ্যে বৃষ্টি না হলে সেচ দিতে হয়। এক সপ্তাহের মধ্যেই গাছ থেকে মূল বেরিয়ে আসে। ছোট অবস্থায় একবার নিড়েন দিতে হয়।

আশ্বিন-কার্তিক মাসে কাঠি গোড়া থেকে কেটে নেওয়ার পর কাঠির মাথা সমান করে সাজিয়ে মাথা থেকে পাতা কেটে নেওয়া হয়। প্রতিটি কাঠি ২-৩-৪ ভাগে করে কেটে নিয়ে ২ দিন রোদে ফেলে বাঁধাই করে বেঁধে তোলা হয়।

বাংলার মাদুর সাধারণত তিন ধরণের—একহারা, দোহারা আর মসলন্দ। কাঠি তৈরির জন্য প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন ছুরি। একে গেঁজে ছুরি বলে। এক হারা মাদুর বোনার জন্য প্রয়োজন, মাদুর কাঠি, সুতলি, টানা দেওয়ার জন্য ৪টে বাঁশের খুঁটি, টানা বাঁধার জন্য ২ খানা সোজা বাঁশ, দুটি মোটা দড়ি, শালকাঠের শানা (প্রতি ৯ ইঞ্চিতে ১৪ থেকে ১৬টা ফুটো), একটা তক্তা, কাছি ভেজাবার জন্য পাত্র। দোহারা মাদুরের জন্য প্রয়োজন এ সবই কিন্তু শানার জন্য প্রতি ৯ ইঞ্চিতে ৯ থেকে ১০টা। মসলন্দ মাদুরের জন্য আরও প্রয়োজন গোল বাঁশের চটা। শানায়ও তারতম্য হয় প্রতি ৯ ইঞ্চিতে ২৮ থেকে ৪৮। মসলন্দ মাদুরের কাঠি থেকে মাঝখানের সাদা অংশটি ছেঁটে বাদ দিতে হয়।

মাদুরে রংএর ব্যবহার

মাদুরের নকশা অনুসারে যতটুকু অংশ রং করার দরকার হয়, সেই অংশ টুকুর দুধারে ভাল করে বাঁধেন কারিগরেরা, তার পর সেদ্ধ করে নিতে হয় কম করে আট ঘন্টা। রং পাকা করার সময় নুন আর তেল ব্যবহার করা হয়। মাদুরকাঠি রংএর জন্য ব্যবহার হয় সবং এলাকার একধরনের গাছের পাতা।

ভৌগোলিক এলাকা ভেদে একহারা আর দোহারা মাদুর বুননের তারতম্য

সাধারণতঃ ভারতের অন্যান্য লৌকিক শিল্পের মতই মাদুর শিল্পীরা বংশ পরম্পরায় এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন। তবে এলাকা তারতম্যে মাদুর বুননের পার্থক্য রয়েছে।

১. সবং : দশগ্রাম, সবং, তেমাথানি, কুচবসান, সারতা, খাজুরি, বালিচক প্রভৃতি অঞ্চলে যে একহারা মাদুর বোনা হয়, তাতে একটি মাত্র টানায় সামনাসামনি দু-জন কারিগর বসেন প্রতি কাঠি বোনার পর শানা মারেন। কাঠি যে যার বাঁদিক থেকে বোনা আরম্ভ করেন। বোনার শেষে কাঠির ডগা টানার শেষে যে দড়ি থাকে সেই দড়িতে পেঁচিয়ে রেখে গিয়ে পরে শানা মারার সময় ডগা মুড়ে গাঁট দিয়ে যান। তাই বুননের সঙ্গে সঙ্গে বাঁধাও শেষ হয়। তাই মাদুর চিকন হয়, মসৃণ থাকে, আরক ধার সোজা বাঁধার ফলে দেখতেও সুন্দর হয়।

২. রামনগর : এখানে একজন শিল্পী ৩-৫-৭ করে কাঠি বুনে শানা মারেন। আর বোনার সময় বাঁধাও হয় না। সামনা সামনি বসে একজন বিজোড় কাঠি বোনেন এবং শানা মারেন। ফলে মাদুরের জমি প্রায়শই মসৃণ হয় না। ফলে মাদুরের ধার অসমান হওয়ার সুযোগ থেকে যায়।

৩. এগরা : এ অঞ্চলেও রামনগর অঞ্চলের একহারা বুননের রীতি অনুসরণ করা হয়। এখানে রঙিণ মাদুর কম হয়।

৪. উদয়নারায়ণপুর : উদায়নারায়ণপুর আর আমতা অঞ্চলে জোড়া মাদুর তৈরি হয়। মাদুর বোনার সময় দুটি মাদুরকাঠি নিয়ে একটি টানার অর্ধেক বোনার পর অপর কাঠি বুনে টানার শেষ পর্যন্ত নিতে হয়। প্রথম কাঠির ডগা ধার বাঁধার মত রেখে গোড়া যেখানে শেষ হয়, সেখানে টানার নিচে ঢুকিয়ে দিতে হয়। তাই মাঝখানে জোড়া মাদুরের আয়তন বেশ বড় হয়। সাধারনের চোখে বোঝা না গেলেও তবে নজর করে মাঝখানটা হাত দিলে একটু মোটাই লাগে।

৫. উত্তর ২৪ পরগণা : উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাত, বসিরহাট, দেগঙ্গা, বাদুড়িয়া, বনগ্রামে রামনগরের ধাঁচে একহারা বুনন পদ্ধতি অনুসৃত হয়। তবে এ অঞ্চলে পাতি বা হোগলা বেশি তৈরি হয়।

সবং-এর দোহারা মাদুরের বুনন পদ্ধতি অন্যান্য অঞ্চলের মতই। সবং-এর মোহাড়ে এক বিশেষ মাদুর তৈরি হয়—নাম চালা মাদুর যা দোহারা মাদুরের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। প্রথনে দুই-তিন ইঞ্চি বোনার পর বোনা অংশের কাঠিগুলিকে নখ দিয়ে শিল্পীরা পেছনের দিকে চালিয়ে মাদুরকে যতসম্ভব খাপি করার চেষ্টা করেন। তাই জমিন ঘন হয়, বেশিদিনও ব্যবহার করা যায়।

রামনগর অঞ্চলে দোহারা মাদুর কম হয়, এগরায় বেশি হয়। তৈরি হয় মাদুর আর আসন। হাওড়ায়ও কম বোনা হয়। ২৪ পরগণায়ও পাতি আর হোগলা পাতির দোহারাই বেশি।

মসলন্দ মাদুর

সবং আর রামনগরে হয়। কাঠির মান অনুযায়ী মসলন্দ মাদুরের মসৃণতার হেরফের হয়। সবং অঞ্চলের শিল্পীরা এই মাদুর বোনার সময় কাঠি দাঁত দিয়ে চিরে নেন। আর মাদুর বোনার সময় ধার বেঁধেও যান। প্রকৃতিক রং ব্যবহারের জন্য রং পাকা হয়। সবং এলাকার কাঠি সবুজাভ তাই দেখতে অনেক সুন্দর। রামনগরের কাঠি অনেকটা হলদেটে—মাদুরের কাঠি থেক পিথি অংশটা বাদ দেওয়া হয়—তাই স্থায়িত্ব বেশি।

(ঋণ স্বীকার – মুকুলরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

বাংলা নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩০ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন