হুগলির আরামবাগ ও পাণ্ডুয়া সহ জেলার নামী-অনামী স্কুলগুলোতে এবারে মাধ্যমিক ফলাফলে বিশেষভাবে নজর কাড়ল। প্রায় প্রতি বছরই রাজ্যে এই জেলায় স্থান করে নেয় ছাত্রছাত্রীরা। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। আরামবাগের কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মিশন বহুমুখী বিদ্যালয়ের তপজ্যোতি মন্ডল মাধ্যমিকে চতুর্থ স্থান এবং ব্যান্ডেলের এলিট কো এডুকেশন স্কুলের ছাত্র নীলাঙ্কন মণ্ডল দশম স্থান অধিকার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, তপজ্যোতি মণ্ডলের প্রাপ্ত নম্বর ৬৯০। প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলের পরীক্ষায় বরাবর প্রথম হয়েছেন। প্রত্যাশাপূরণের সাফল্যে স্কুলের শিক্ষক থেকে পাড়াপ্রতিবেশী সকলেই উচ্ছ্বসিত। গোঘাট-২ ব্লকের কামারপুকুর সারদাপল্লীর বাড়িতে ফলপ্রকাশের পর স্কুলের শিক্ষক, প্রতিবেশীরা একে একে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। বাবা ও মা দুজনই শিক্ষাজগতের মানুষ। বাবা সব্যসাচী মন্ডল পশ্চিম মেদিনীপুরের তাতারপুর হাই স্কুলের ভূগোলের শিক্ষক। মা অদিতি মন্ডল গৃহশিক্ষকতা করেন। দু’জনই প্রথম থেকে ছেলের পড়াশুনায় নজর রেখেছিলেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি বাড়িতে গৃহশিক্ষকরা বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও অঙ্ক পড়াতে আসতেন। কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মিশনের এই ছাত্রের মোট প্রাপ্ত নম্বর ৬৯০। বাংলায় ৯৭, ইংরেজিতে ৯৭, অঙ্কে ৯৯, জীবনবিজ্ঞানে ১০০, পদার্থ বিজ্ঞানে ৯৯, ভূগোলে ৯৮, ইতিহাস ১০০।
পড়াশোনার পাশাপাশি বইপড়া, গান, ছবি আঁকা ও আবৃত্তি করার প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের লেখা গান গাইতে যেমন ভালোবাসেন তেমন জীবনানন্দ দাশ ও উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু সিরিজের সন্তু তাঁর প্রিয় চরিত্র। তপজ্যোতি এদিন বলেন, এক থেকে দশের মধ্যে থাকবো আশা করেছিলাম। প্রত্যাশাপূরণ হওয়ায় ভালো লাগছে। এই সাফল্যের পিছনে স্কুলের শিক্ষক, গৃহ শিক্ষক ও বাবা-মার অবদান রয়েছে। পড়াশোনার বিষয়ে মা সবসময় আমাকে সহযোগিতা করেছেন। বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চাই। অসহায় দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। বাবা সব্যসাচী মন্ডল বলেন ,মেধা তালিকায় থাকবে এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম। ভূগোলের বিষয় ছেলেকে নিজে দেখিয়েছে। ওর মাও গাইড করছে। শিক্ষকদের অবদান ছাড়া এই সাফল্য সম্ভব ছিলো না। ছেলের এই সাফল্যে গর্বিত বোধ করছি।
মা অদিতি মন্ডল বলেন, পড়াশোনার প্রতি একাগ্ৰত ও শৃঙ্খলাই ওকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে। স্কুলের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, সকালে খবর পেয়েই প্রিয় ছাত্রের বাড়িতে চলে এসেছি। শুভেচ্ছা জানিয়েছি। স্কুলের টেস্ট পরীক্ষায় অঙ্কে একশোর মধ্যে একশো না পাওয়ার লক্ষ্য ছুঁতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়ছিল। আমরা বারবার উজ্জীবিত করেছি লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করে যাবার জন্য। এই সাফল্য আমাদের সকলকে গর্বিত করেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বামী কল্যাণেশানন্দ মহারাজ বলেন, এই বছর মাধ্যমিকে বিদ্যালয়ের ১২৬ জন পড়ুয়া পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সকলেই কৃতকার্য হয়েছেন। পঞ্চাশজন পড়ুয়া নব্বই শতাংশের ওপর নম্বর পেয়েছে। তপজ্যোতি মেধা তালিকায় চতুর্থ স্থান অর্জন করে আমাদের গর্বিত করেছে।
অপরদিকে পাণ্ডুয়া স্টেশন রোডের বাসিন্দা পার্থসারথি মণ্ডল ও সুজাতা মণ্ডলের ছেলে নীলাঙ্কন মণ্ডল মাধ্যমিকে দশম স্থান পেয়ে পাড়া প্রতিবেশীর কাছে চোখের মণি হয়ে উঠেছে। প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৪। টেস্ট পরীক্ষায় ভালো ফল হয়নি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিভাবকে ডেকে নীলাঙ্কনের পড়াশোনার ব্যাপারে সতর্ক করে দেন। তারপরই নীলাঙ্কনের পড়াশোনায় মনোযোগ। প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৪। ৯৭.৭১ শতাংশ নম্বর সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। কালনা শ্রী শ্রী নিগমানন্দ বিদ্যামন্দিরে উচ্ছ্বাসের ছায়া।
প্রসঙ্গত, নীলাঙ্কনের বাবা পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ও মা গৃহবধু। বাবা-মা জানান, নীলাঙ্কন ছোটবেলা থেকেই গল্পের বই পড়তে ও গিটার বাজাতে ভালোবাসে। নীলাঙ্কনের ইচ্ছা ভবিষ্যতে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে পড়তে চায়। মহাকাশে রহস্যভেদ করতে আগ্রহী।