শুক্রবার | ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:৪২
Logo
এই মুহূর্তে ::
শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (সপ্তদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (প্রথম পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী নজরুল ও মধুপুর (প্রথম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (ষোড়শ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আলাউদ্দিন অল আজাদ-এর ছোটগল্প ‘আমাকে একটি ফুল দাও’ ধর্ম আর সাম্প্রদায়িকতাকে বিজেপি বড্ড বেশি জরুরি করে ফেলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকগীতি ঘাটু গান আজ অবলুপ্তির পথে : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (পঞ্চদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন হাসান আজিজুল হক-এর ছোটগল্প ‘স্বপ্নেরা দারুণ হিংস্র’ বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বেদেদের বৈচিত্র্যময় জীবনযাপনের কথা : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (চতুর্দশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন নাইন্টিন সেভেন্টিন ওয়ান : শৌনক দত্ত বিশ্বপরিব্রাজক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (ত্রয়দশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন নন্দিনী অধিকারীর ছোটগল্প ‘শুভ মাতৃদিবস’ গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘ফ্লোরেন্স থেকে রাধানগর রেনেসাঁস ও রামমোহন’-এর মোড়ক উন্মোচন : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ১৯২১-এ কথা দিয়েও স্পেনে গেলেন না কেন রবীন্দ্রনাথ : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথ : তারাপদ রায় ও তার অন্ত নাই গো নাই : প্রব্রাজিকা বেদরূপপ্রাণা পেজফোরনিউজ-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ২০২৪ শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (দ্বাদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন কাশ্মীরে বিজেপির প্রার্থী নেই, মোদীর সফরও বাতিল উপত্যকা ও লাদাখে : তপন মল্লিক চৌধুরী অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্যলগ্নে অক্ষয় হোক সম্পদ সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি : রিঙ্কি সামন্ত শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (একাদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন রবীন্দ্রনাথরা কি কবিয়ালের বংশধর? : অসিত দাস নিমাই ভট্টাচার্য-এর বড়োগল্প ‘প্রাইভেট প্রাকটিশ’ উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে নজর কাড়ল আরামবাগ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (দশম পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আমার রবীন্দ্রনাথ : লুৎফর রহমান রিটন রবীন্দ্র সাহিত্যের নতুন প্রান্ত : মিল্টন বিশ্বাস
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই অক্ষয় তৃতীয়া-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

১৯২৪-এ রবীন্দ্রনাথের স্প্যানিশ ফ্লু হয়, পেরুযাত্রার সময় : অসিত দাস

অসিত দাস / ১৩৮ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ১ মে, ২০২৪

দীর্ঘ প্রায় একমাসব্যাপী ইউরোপ সফরে স্পেনে ছিলাম মাত্র তিনদিন। তবুও চেষ্টা করেছি ১৯২১-এ হিমেনেথ দম্পতিকে কথা দিয়েও রবীন্দ্রনাথের শেষ পর্যন্ত স্পেনে না যাওয়ার কারণটি জানতে।

Maria Renee Cura নামক এক স্প্যানিশ লেখিকা তাঁর বই ‘Rabindranath Tagore : the greatest Indian ambassador in Argentina’ নামক বইয়ে রবীন্দ্রনাথের ১৯২৪ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা অসুখে সংক্রমণের কথা লিখে গেছেন। পেরু সফরে বেরিয়ে তিনি ট্রেনপথেই কোনও এক জায়গায় সংক্রমিত হন। তারপর অশক্ত, অসুস্থ ও দুর্বল শরীরে ট্রেনযাত্রার ধকল সইতে না পেরে পেরুগামী জাহাজে ওঠেন। মাঝে আরও দুর্বল ও শয্যাশায়ী হয়ে পড়লে তাঁকে পেরুযাত্রার সঙ্কল্প ত্যাগ করতে হয়। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এয়ার্সে তিনি নেমে পড়তে বাধ্য হন। সেখানকার প্লাতা নদীর তীরে সান ইসিদ্রো বলে জায়গায় লেখিকা ও চিত্রবিশারদ ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সান্নিধ্যে দু’তিন মাস কাটান সম্পূর্ণ সুস্থ হতে।

Maria Renee Cura লিখেছেন, —

“It was November 1924, and the flu he was suffering from did not allow him to continue his journey by road and railway across the high Andes ranges or to board another ship to reach Peru, the final destination of his long voyage. A hundred and three years earlier, Dwarkanath Tagore, another member of the family, really a “forgotten pioneer”, as his biographer Krishna Kripalani calls him, had entered the family name — although in that case for commercial reasons in the historical records of the exchange between the two distant countries. One of them, India, was then the most important British colony.

কেতকী কুশারী ডাইসনও তাঁর প্রবন্ধ ‘Rabindranath Tagore and Victoria Ocampo Encounter…’ নামক প্রবন্ধে লিখেছেন কবিগুরুর ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ার কথা। তাঁর লেখা বই ‘রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সন্ধানে’তেও এ কথা তিনি লিখেছেন। তাঁর ভাষ্য অনুসারে, —

“In 1924 she met Tagore face to face when he, ill with influenza and accompanied by his honorary secretary, Leonard Elmhirst, disembarked in Buenos Aires, hoping to proceed to Peru, a project that was eventually abandoned. Ocampo put them up in the beautiful Villa Miralrío in San Isidro, overlooking the Plata River, while she stayed with her parents in the near-by Villa Ocampo. They also spent a few days together in Chapadmalal, near Mar del Plata. Those were two dramatic months, marked by much interpersonal tension, but also punctuated by moments of enchantment and understanding. Elmhirst played a crucial role in the story of the friendship. Tagore and Ocampo met again in France in 1930, when she organized his first proper art exhibition.”

হিসেবমতো ১৯১৮-য় ফার্স্ট ওয়েভ, ১৯১৯-এ সেকেন্ড ওয়েভ আর ১৯২০-তে থার্ড ওয়েভ হয় স্প্যানিশ ফ্লু-র। কিন্তু পুরোপুরি নির্মূল হয়নি স্প্যানিশ ফ্লু। ১৯২১ থেকে ১৯৩১ পর্যন্ত মৃদু সংক্রমণ ছিল। রবীন্দ্রনাথ এই চতুর্থ তরঙ্গের স্বীকার। কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রেও এই চতুর্থ তরঙ্গ এসেছিল। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ের চেয়ে চতুর্থ ঢেউয়ে কম জীবনহানি হয়েছে। স্প্যানিশ ফ্লুর ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছিল।

১৯২১-এ স্প্যানিশ সাহিত্যিক দম্পতি হুয়ান রামোন হিমেনেথ ও হেনোরিয়া কাম্প্রুবির আমন্ত্রণে কবিগুরুর স্পেন যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সুইজারল্যান্ডে গিয়েও তিনি স্পেন যাওয়ার পরিকল্পনা ত্যাগ করেন স্প্যানিশ ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে। হিমেনেথ-দম্পতির ব্যবস্থাপনায় রবীন্দ্রনাথের নাটকের মহড়া পর্যন্ত দেওয়া হয়ে গিয়েছিল স্পেনের মাদ্রিদে। তিনি গেলে তাঁকে যে কী বিপুল সম্বর্ধনা দেওয়া হবে, তাঁর বক্তৃতা শোনা হবে, তাঁর রচনা কবিতা পঠিত হবে কখন ও কোথায়, তা মনে মনে ছকে রেখেছিলেন হিমেনেথ দম্পতি। তিনি শেষ পর্যন্ত স্পেনে না যাওয়ায় মনে মনে ভীষণ ব্যথিত হয়েছিলেন তাঁরা।

না যেতে পারার কারণ জানিয়ে হেনোরিয়াকে প্রেরিত রবীন্দ্রনাথের চিঠিটি ভালো করে পড়লে বোঝা যাবে, তিনি পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সুইজারল্যান্ড সফর করেছিলেন। তাঁর যেটা সফরসূচি ছিল, তা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন, কোনও স্বাধীনতা নিতে চাননি তিনি। হয়তো তিনি দু’য়েকদিন ম্যানেজ করতে পারতেন, কিন্তু তাড়াহুড়ো হয়ে যেত ওইটুকু অল্প সময়ে স্পেনকে বোঝার পক্ষে। তাই তিনি পরে অবসর সময়ে ধীরেসুস্থে স্পেন সফরের কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু বাস্তব তা ঘটেনি।

হয়তো তখন স্পেন যাত্রার কথা শুনলে তাঁর সঙ্গীসাথীরা স্প্যানিশ ফ্লু-এর আতঙ্কে ভুগতেন। তাই কবিও আর খামোখা ঝামেলা বাড়াতে চাননি।

রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন লেখায় তাঁর উপন্যাস বা নাটকের চরিত্রদের মুখে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও তজ্জনিত নিউমোনিয়ার কথা এসেছে। যোগাযোগ উপন্যাসে বিপ্রদাসের ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়া হওয়ার কথা জানা গেছে। চোখের বালির রাজলক্ষ্মীর ইনফ্লুয়েঞ্জার কথা জানা যায়। নিউমোনিয়া হয়েছিল কিনা তা স্টেথো দিয়ে চেক করলেই বুঝতে পারতেন মহেন্দ্রবাবু।

তখন বিশ্ব জুড়ে চলছে স্প্যানিশ ফ্লু-র দাপট।

সাক্ষাৎ শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্র-পরিবারে জোর হানা দিয়েছিল এই স্প্যানিশ ফ্লু, বম্বে ফ্লু বা যুদ্ধজ্বর। ২ জানুয়ারি ১৯১৯ প্রাণ গিয়েছিল দ্বিজেন্দ্রনাথের কনিষ্ঠ পুত্র কৃতীন্দ্রনাথের স্ত্রী সুকেশী দেবীর। স্বয়ং প্রতিমা দেবী আক্রান্ত হয়েও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন। সাংঘাতিক ভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন হেমলতা দেবীও, তিনিও কোনও মতে সেরে ওঠেন। ‘ক্যাশবহি’তে ‘‘অকসিজেন গ্যাসের জন্য’’ খরচের কথা উল্লেখ করেছেন রবিজীবনীকার প্রশান্তকুমার পাল।

শুধু শান্তিনিকেতন নয়, ‘মীরা দেবী পুত্র নীতীন্দ্রকে নিয়ে হায়দ্রাবাদে ছিলেন। সেখানে তাঁর কনিষ্ঠ দেবর শান্তির ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগে মৃত্যু হয়। এর পরে মীরা দেবী ও নীতুও এই রোগে আক্রান্ত হন।’

রক্তের সম্পর্কে অনাত্মীয়, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আত্মার আত্মীয় অজিতকুমার চক্রবর্তীরও মৃত্যু হয়েছিল এই রোগেই, ছত্রিশ বছর বয়সে। তিনি অবশ্য তখন শান্তিনিকেতন-ছাড়া। ২৯ ডিসেম্বর ১৯১৮ রবীন্দ্রনাথ লেখেন, ‘অজিতের অবস্থার কথা শুনে মন বড় উদ্বিগ্ন হল। বুঝতে পারচি কোনও আশা নেই এবং এতক্ষণে হয়ত জীবনাবসান হয়ে গেছে। অল্প বয়স থেকে ও আমার খুব কাছে এসেছিল — ও যদি চলে যায় ত একটা ফাঁক রেখে যাবে।’

কথায় আছে, ‘মঘা এড়াবি ক’ ঘা’। রবীন্দ্রনাথ ১৯২১-এ স্প্যানিশ ফ্লু-র ভ্রুকুটি থেকে রেহাই পেলেও ১৯২৪-এ আর তা এড়াতে পারেননি। যদি এড়াতে পারতেন, তাহলে হয়তো লেখা হত না রবীন্দ্রনাথ-ওকাম্পো মহাকাব্য। একেই বলে, ‘পোয়েটিক জাস্টিস’!


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন