ছুট ছুট ছুট ছুট।
আশ্রমের ভারী শক্ত কোলাপসিবল গেটটা অন্যদিন ঠেলতে প্রাণ বেরিয়ে যেত অজয়ের। আজ ন’বছরের বালকের শরীরে ষোলো বছরের কিশোরের তেজ। প্রাণপণে গেটটা ঠেলতেই হড়হড়িয়ে খুলে গেল। চাবি সমেত তালাটা গেটে লটকে রইল অজয়ের ভবিষ্যতের মত। এদিক ওদিক একবার তাকিয়েই দেদৌড়। গলি থেকে একেবারে বড় রাস্তায় এসে পড়ল অজয়।
এবারে আর দৌড়ব না। রাস্তার লোকজন চোর ভাবতে পারে।
অজয় নির্বিকার মুখে চলতে লাগলো। ভাবখানা এই, যেন কিচ্ছুটি হয় নি। যদিও পেটের মধ্যে খিদে আর মাথার মধ্যে চিন্তাগুলো ঘুরপাক খেয়েই যাচ্ছে।
আশ্রমের সবাই কি এতক্ষণে জেনে গেল আমি পালিয়ে এসেছি! আচ্ছা আজকে রাত্তিরে কারা বিরিয়ানী খাওয়াবে বলে ছিল না! বিরিয়ানীর মশলার গন্ধটা নাকের কাছে কেমন যেন ঘুরঘুর করছে। আর সেই বড় বড় আলুগুলো! মাংসর থেকেও ওগুলো খেতে বেশি ভালো লাগে। এক বাক্স বিরিয়ানি এক একটা ছোটোবাচ্ছার পেটে পুরোটাই সেঁধিয়ে যায়। ইয়োর ফেভারিট ডিশ লিখতে বললেই আশ্রমের সবাই এক ধারসে লেখে বিরিয়ানি। ম্যাডাম হাসে, ‘তোদের সবার ফেভারিট ডিশ এক? আর অন্য কিছু লিখতে পারিস না!”
হাতে যখন অত পয়সা নেই, তখন আর ফেভারিট ডিশের কথা ভেবে লাভ কি! ইস্টিশনে একবার পৌঁছতে পারলেই হাতের কাছে শস্তার অনেক খাবার। ঝালমুড়ি, কাঁচের বোয়েমে রাখা বিস্কুট, শোনপাপড়ি, সাবুর পাঁপড়।
মা একটা পঞ্চাশ টাকার নোট সবার চোখ এড়িয়ে সেদিন হাতে গুঁজে দিয়েছিল। সেটা এই ক’দিন বইয়ের পাতার মধ্যে, একবার প্যান্টের পকেটে, কখনো পেন্সিল বক্সে লুকিয়ে রেখেছে অজয়। সবার চোখ এড়িয়ে বিশেষ করে রূপকুমারের চোট্টামির ভয়ে।
রূপকুমারটা আজকাল বড্ড চোর হয়েছে। আশ্রমের কিচেন থেকেই বিস্কুট,কেক আরো কি কি সব ঝেঁপে দেয়। কতবার আন্টীদের কাছে মার খেয়েছে ,তাও লজ্জা নেই। আমার লাট্টুটাও ঐ শালা চুরি করেছে। কিছুতেই ভাঙল না।বলে কি না,নন্দ নিয়েছে। নন্দ নিতেই পারেনা। নন্দ ঐরকম ছেলেই নয়। সে বেচারি নতুন এসেছে আশ্রমে।একটু ভীতুমার্কা। নন্দ আমাকে বলেছিল , ওর মা গলায় দড়ি দিয়েছে।মাতাল বাবাটা রাস্তায় মারপিট করে কোথায় ভেগে গেছে। নন্দর পিন্টু মামা এসে ওকে আশ্রমে দিয়ে গেল। ওর কোথাও আর যাবার নেই।কেউ ওকে ভালোবাসে না। নন্দর জন্যে মনটা কেমন কেমন করছে। রোগা,পুঁচকে ছেলেটাকে হাতের কাছে পেলেই সবাই ক্যালায়। নন্দ চুপচাপ মার খায়। তবে নন্দর পড়াশোনা করতে খুব ভালো লাগে। কোন সকালে ঘুম থেকে উঠে ছাদে চলে যায়।দুলে দুলে পড়া মুখস্থ করে। মন দিয়ে অঙ্ক করে। ধ্যানের সময় চুপ করে চোখ বুঁজে বসে থাকে। অন্যদের মত চোখ পিটপিট করেনা। নড়েচড়ে না। বইখাতা সবসময় গুছিয়ে রাখতে ভালোবাসে।
নন্দর মত একটা ভাই হলে বেশ হত।
অজয় একবার ভেবেছিল, নন্দকে নিয়েই পালাবে। দুজনে মিলে বেশ ইস্টিশনের এ মাথা থেকে ওমাথা ঘুরবে। সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠে দু’নম্বরে যাবে। লোক দেখবে। এটাওটা কিনে খাবে।
না বাবা, সঙ্গে সঙ্গে মায়ের রাগীরাগী মুখটা মনে পড়ে গেল। মা যখন রেগে যায়, তখন যা মুখ খিস্তি করে! চোখগুলো কেমন ঠিকরে বেরিয়ে আসে। গলার ভয়েসটা কেমন হয়ে যায়। ঠিক যেন রাস্তার ঐ পাগলীটার মত! মা চেঁচায়,
‘পাপ পাপ, তুই এক পেটের শত্তুর পাপ হয়েছিস। দূর ‘হ বাড়ি থেকে হারামজাদা। যা তোর দুশ্চরিত্তির বাপটার কাছে যা। ঝাড়ে বংশে শয়তানের দল যত আমার কপালে এসে জোটে!’
রাগের মাথায় মা দীদাকেও ছাড়ে না। বলে, ‘গতরখাকী বুড়ি! আমার কাছে এসেই তোকে জুটতে হল! অন্য কোথাও যাবার তোর মুরোদ নেই। যমের বাড়ি যাবার সময় হল, তাও নোলা দ্যাখো। তিন তিনটে রাক্ষুসে পেট সামলাতে আমার হাড় কালি হয়ে গেল। দূর হয়ে যা সব। আমি চিতেয় উঠলে তবে এ সংসারের হাঁ মুখ বন্ধ হবে!
এরপর কপাল চাপড়ে, কেঁদে, উনুনে জল ঢেলে তবে মায়ের শান্তি।
অজয় তখন এক ছুট্টে বাড়ি থেকে পালিয়ে স্টেশনের বেঞ্চিতে বসে থাকত। ট্রেনের আসা যাওয়া দেখতে তার সবথেকে ভালো লাগে। কেমন ঠিক সময়ে ট্রেনগুলো ইস্টিশনে এসে দাঁড়ায় আবার সময় ফুরোলে চলে যায়। কোনো গোলমাল নেই। যে ট্রেনের দাঁড়ানোর সময় নেই, সেটা ঝমঝমিয়ে চলে যায়। ঠিক যেমন মিনুদিদি পায়ে মল বাজিয়ে মাথা উঁচু করে হাঁটে।কারোর দিকে তাকায় না।
সেই কবে থেকেই স্টেশন অজয়ের সবথেকে প্রিয় জায়গা। যেন তার নিশ্চিন্ত আশ্রয়। এক একদিন সে কৃষ্ণচূড়া গাছটার তলায় পাতা বেঞ্চে শুয়ে ঘুমিয়েই পড়ত। ঝিরিঝিরি পাতাগুলো তার গায়েমাথায় ঝ’রে পড়ে আদর করত। সন্ধ্যে গড়িয়ে গেলে মা এসে ডাকত, ‘চল অজু। ঘরে চল। গরম ভাত রেঁধেছি। খাবি চল। সারাদিন কিচ্ছুটি তো দাঁতে কাটিস নি।’
সেকি আমার দোষ! অজয় ঘুম ভাঙা চোখ রগড়াতে রগড়াতে মায়ের সঙ্গে ঘরে ফিরতে ফিরতে ভাবত। দরজায় বসে থাকত দীদা। একমাথা শনের নুড়ির মত চুল আর একপেট খিদে নিয়ে। বিড়বিড় করে কি বকত কে জানে! কোমরভাঙা বুড়ি আগে তবু দু’বাড়ি বাসন মেজে ক’টা টাকা রোজগার করত। এখন আর পারে না। খালি মায়ের গালাগালি খায়।
সেদিনও মায়ের মাথাটা খুব গরম হয়েছিল। আবার সেই চেঁচামেচি, গালাগালি। রাতে হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল। মায়ের মুখটাও কেমন বৃষ্টিভেজা মাটির মত নরম হয়ে গেল। রাগী মা যেন তখন ভালো মা। চৌকিতে অজয়ের পাশে শুয়ে, গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে মা বলল,
— অজু, একটা জায়গায় যাবি?
— কোথায় মা, কবে যাব?
— দাঁড়া, দাঁড়া অত লাফাস না। সেটা একটা আশ্রম। সেখানে গেলে পেটপুরে খেতে দেবে। জামাকাপড় পাবি। পড়াশোনা করবি। কত বন্ধু হবে।
— তুমিও যাবে তো মা?
— আমি মাঝে মাঝে গিয়ে তোকে দেখে আসব। সেখানে তো থাকতে পারব না বাবা। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আরতি বলল।
— তবে যাব না মা। আমার পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করে না। ঘুম জড়ানো স্বরে বলল অজয়। তারপরেই ঘুমিয়ে কাদা। পাঁচবাড়ি কাজ করা, মাথা গরম, ক্লান্ত আরতিও নানা কথা ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিল।
ভোররাতে বৃষ্টি থেমে গেল। সকালে বৃষ্টি ধোওয়া ঝকঝকে, পরিষ্কার আকাশে আশার কিরণ ছড়িয়ে আছে। আরতি ছেলেকে ডাকলো, ওঠ ওঠ অজু। আশ্রমে যাবি না। মুখ হাত ধো। তোর ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি।
অজয় বিছানায় শুয়ে শুয়ে দেখল, চেন ছেঁড়া কিটব্যাগে সেফটিপিন লাগিয়ে রেখেছে মা। রঙচটা ব্যাগটা পেটমোটা কোলাব্যাঙের মত লাগছে। কি অত ভরেছে কে জানে! কোথায় যাব, সেখানে কি করব! অজয়ের মনের আকাশে তখনো ঘনঘটা।
মা স্টীলের গ্লাসে চা করে রেখেছিল। চায়ে পাঁউরুটি ডুবিয়ে খেয়ে মায়ের হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল অজয়। দিদা চিবুক ধরে আদর করে বলল, যা বাপ ভালো করে হোথায় থাকবি।
অজয়ের চোখের সামনে থেকে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে লাগলো তাদের বস্তি, কলতলা, শিব মন্দির আর দূরের রেলস্টেশন। বাসওলা পাদানিতে দাঁড়িয়ে চেঁচাচ্ছিল মানিকপুর, মানিকপুর। মা আর ছেলে ঠেলামেলি করে বাসে চেপে আধঘন্টা পর যেখানে নামল, সেখান থেকে একটু পায়ে হেঁটেই নাকি আশ্রম।
বড় রাস্তা পেরিয়ে গলিতে ঢুকেই বড় বাড়িটার গায়ে নাম লেখা আছে ‘মাতৃ আশ্রম’। আরতি পেটমোটা ব্যাগটা নিজেই কাঁধে নিয়ে ছেলের হাত ধরে সেখানে ঢুকল। গেট খুলতেই মা-ছেলে বড়, মেজ, সেজ, হাফপ্যান্ট, ফুলপ্যান্ট পরা ছেলেদের কৌতুহলে ঘেরাবন্দি।
“এদের সঙ্গে এবার থেকে থাকতে হবে? আমি তো একজনকেও চিনি না।” খুব কান্না পাচ্ছিল অজয়ের। তবু অজয় কাঁদেনি। মা আদর করতে গেলে শরীরটাকে শক্ত করে রেখেছিল। আরতি চোখ মুছতে মুছতে বিদায় নিল। কোলাপসেবল গেটের পেছনে মূর্তির মত সটান দাঁড়িয়ে রইল তার অজু।
সেখানে প্রায় সব ছেলের হাল অজয়ের মতই। বাপ খেদানো মায়ে তাড়ানো। কারোর কারোর আপন বলতে কেউ কোত্থাও নেই। এখানে কেউ হ্যাংলা, তো কেউ প্যাংলা। স্বপন, কার্তিক মারকুটে। যখন যার ওপর পারে একটু হাতের সুখ করে নেয়। প্রবীরদাদা শান্ত। পড়াশোনায় খুব মাথা। এখানে সবাই ওকে খুব ভালোবাসে। আশ্রমে অনেকদিন ধরে রয়েছে বাদল আর প্রসাদ। তারা সবার ওপরে ছড়ি ঘোরায়। দাদাগিরি করে।আরো আছে ক্যাবলা বকু। চালিয়াত নান্টু। কানাইটা একটু খ্যাপাটে। আপন মনে কিসব বিড়বিড় করে বকে। প্রচুর খেতে পারে।
খাওয়াদাওয়ার অবশ্য কোনো অভাব নেই আশ্রমে। চারবেলা পেটপুরে ভালোমন্দ খাওয়া দাওয়া। সকালে প্রেয়ার হবার পর লাইন দিয়ে স্যার আর ম্যাডামরা পড়াতে আসে। ঘন্টা পড়ে। বিকেলে আর ছুটির দিনে আশ্রমের পেছনের মাঠে খেলাধুলো। সব থেকেও অজয় এখানে সোনার খাঁচায় বন্দীপাখির মত নির্জীব, নিষ্প্রাণ।
মা কখনো কখনো অফিস ঘরে ফোন করে। আশ্রমে দেখা করতে আসে হাতে কুড়কুড়ে আর চিপসের প্যাকেট নিয়ে। অজয় ফিসফিস করে বলে, ‘আমাকে নিয়ে চল মা। আমার এখানে ভালো লাগছে না।’
অজয় বুঝে গেছে আশ্রমে ঢোকার সময় মায়ের হাত ধরা থাকলেও বেরোনোর সময় একলা চলোর গান। তাই আশ্রম থেকে মুক্তি পাবার প্রতিটি অন্ধিসন্ধি, ফাঁকফোকরে অজয়ের তীক্ষ্ণ নজর। বস্তির একফালি ঘর, ইস্টিশনেই তার বালক মনটা বাঁধা পড়ে আছে। রাতের স্বপ্নে ট্রেনের হর্ন তাকে নিশির ডাকের মত হাতছানি দেয়।
সেদিন দুপুরের টিফিনের ঘন্টা বাজেনি তখনো। ক্লাস চলছে। অজয় বাথরুম যাবে বলে ক্লাসের বাইরে গিয়ে দেখে দারোয়ান রামসরণ গেটের সামনে বসে নেই। বাথরুমে গেছে বোধহয়। আরিব্বাস চাবিটা পড়ে আছে মাটিতে। গেটের সামনে। কি হল রে বাবা! অজয় এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল কেউ কোত্থাও নেই।আর ভাববারও একদম সময় নেই। নিয়মের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাওয়ার এ এক মস্ত বড় সুযোগ।
সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে অজয় প্রথমেই পৌঁছে গেল তার প্রিয় ইস্টিশনে। পুরনো জায়গাগুলো সব ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখল। এক ঠোঙা ঝালমুড়ি আর কেক খেয়ে ফিরে এল নিজের চিরচেনা চৌহদ্দিতে। আশ্চর্য মা কিন্তু সেদিন একেবারেই তাকে বকেনি। মারেনি। বাড়ি ফিরে আসার পর মাথায় হাত বুলিয়ে বড় করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল।
আশ্রমের হেডস্যার সব জেনে গেছিল। ফোনে মাকে খুব বকাবকি করেছে। পুলিশে ওরা খবর দিতে যাচ্ছিল। আর কখনো আশ্রমে অজয়কে ফেরত নেবেনা, এ’কথাও জানিয়ে দিয়েছে।
অজয়ের ভারি বয়েই গেছে সেখানে ফিরে যেতে। চেনা পথের প্রতিটি পদক্ষেপে তার যে এখন সম্পূর্ণ নতুন অভিযান! মা এবার তার কাঁধে একটা ঝোলা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়েছে। অজয়ের এখন নতুন পরিচয়। সে স্টেশনের বাদামচাকওয়ালা।
ট্রেনগুলো যখন ইস্টিশনে এসে দাঁড়ায় তখন বমি করার মত পেটের ভেতর থেকে যেন লোক উগরে দেয়। কত রকম লোক! ট্রেন থেকে নেমে বেশিরভাগ লোক দৌড়য়। কেউ যায় ধীরেসুস্থে। বাজারওলার কাছে বাজার করে, চায়ের দোকানে চা বিস্কুট সাঁটিয়ে বাড়ি ফেরে। এক একটা লোকের কোনো কাজকম্ম থাকে না। তারা এদিক ওদিক দেখে। বেঞ্চিতে একটু বসে।
অজয় লক্ষ্য করেছে সকালের দিকের ডাউন ট্রেনের ফিটফাট লোকগুলো কারোর দিকে তাকায় না। পেটপুরে বাড়ি থেকে খেয়ে আসে বোধহয়। অজয়ের বাদাম চাক খেতে তাদের বয়েই গেছে! অজয় তাই এখন চানটান করে খেয়েদেয়ে একটু বেলা করে স্টেশনে আসে। তখন স্টেশন একটু ফাঁকা হয়ে যায়। শুকনো মুখ, কোঁচকানো-আধময়লা জামাকাপড়ের লোকগুলো অজয়ের কাছ থেকে বাদাম চাক কিনে খায়। কেউ কেউ আবার ফিরিস্তি জানতে চায়।
— খোকা তুমি ইস্কুলে পড়ো না? বাড়িতে কে কে আছে? তোমার বয়স কত?
— হ্যাঁ পড়ি তো। সকালে ইস্কুল করে বেলায় ইস্টিশানে আসি। বাড়িতে আমি আর দিদা থাকি। আর কেউ নেই। দীদার খুব অসুখ তো। তাই আমি এই কাজ করি। সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যে কথা বলার আর্টটা রপ্ত করে ফেলেছে অজয়। এসব বললে দু’একটা বাদামচাক আরো বেশি বিক্রি হয়। মাও আজকাল আগের মত অত আর চেঁচায় না। গালমন্দ করে না। ঘরেতে দুটো পয়সা আসছে যে!
কাঁধে ঝোলা ব্যাগ, খোঁচা খোঁচা না আঁচড়ানো চুল, ঝলঝলে হাফপ্যান্ট আর টিশার্ট পরা ন’বছরের অজয় স্টেশনের রুক্ষশুষ্ক মানুষগুলোর কাছে গিয়ে বলে, —
— ‘কাকু বাদাম চাক নেবে। পাঁচ টাকায় একটা। চারটে নিলে পনেরো টাকা। নাও না কাকু। দিদার খুব অসুখ। ওষুধ কেনার পয়সা নেই আমাদের।’
এক একদিন নিজের খোঁচা খোঁচা চুলগুলোকে হাত দিয়ে আরো খানিকটা ঘেঁটে নেয়। তারপর ঠিক দেখেশুনে কোনো মহিলা যাত্রীর কাছে গিয়ে কাঁচুমাচু মুখে বলে, “আন্টি তোমার ছেলেমেয়েদের জন্যে বাদাম চাক কিনবে? কেনো না আন্টি। আজ একটাও বিক্রি হয়নি। তুমি কিনলে দশটাকা দিয়ে একটা কেক কিনে খাব। আজ সারাদিন কিছুই খেতে পাই নি গো!”
জীবনের গল্প , সব জীবন ছবির মতন হয় না। তবুও বেঁচে থাকার গল্প গড়গড়িয়ে এগোয়।
দারুন লেখা।
এটাই সত্যি। জীবন থেমে থাকে না। এমন পাঠ প্রতিক্রিয়া পেয়ে আপ্লুত।
জীবন এমনভাবেই অজয়দের বেঁচে থাকতে শিখিয়ে দেয়। সুন্দর গল্প।
ধন্যবাদ। আপ্লুত হলাম।