মঙ্গলবার | ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:৩৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (প্রথম পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠিতে তাঁর স্পেনযাত্রা বাতিলের অজুহাত : অসিত দাস ফ্ল্যাশব্যাক — ভোরের যূথিকা সাঁঝের তারকা : রিঙ্কি সামন্ত সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (চতুর্থ পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস মিয়ানমার সংকট, প্রতিবেশি দেশের মত বাংলাদেশকে নিজস্ব স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সিকাডার গান’ সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (তৃতীয় পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (শেষ পর্ব) : উৎপল আইচ সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (দ্বিতীয় পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (চতুর্থ পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (শেষ পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ প্রথম পাঠ — সায়র আলমগীরের গল্পগ্রন্থ ‘এক মন অন্য মন’ প্রেমময়তার গাল্পিক দলিল : সৌমেন দেবনাথ আন্তন চেখভ-এর ছোটগল্প ‘গুজবেরি’ সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (প্রথম পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (তৃতীয় পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৭তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ স্প্যানিশ ফ্লু থেকে বাঁচতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্পেনে গেলেন না : অসিত দাস ভোটের হার কম, ভোটারদের উৎসাহ কম, চিন্তায় বিজেপি : তপন মল্লিক চৌধুরী সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (দ্বিতীয় পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৬তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়: এক বাঁধনছেঁড়া গণশিল্পী : সন্দীপন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (প্রথম পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৫তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ রামগতপ্রাণ দাস্যভক্তির শ্রেষ্ঠ বিগ্রহ হনুমানজি : রিঙ্কি সামন্ত লুইজ গ্লিক ও সাহিত্যে সমকালীনতা : সাইফুর রহমান ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৪তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে কি করা হচ্ছে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন সাহিত্যে যুদ্ধ, যুদ্ধে সাহিত্য : মিল্টন বিশ্বাস রবীন্দ্রনাথ কখনও শিমুলতলা আসেননি : জমিল সৈয়দ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৩তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪৩১-এর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কাজলদীঘি (২৩৬ নং কিস্তি) : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় / ২৬১৯ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২০
kajaldighi

সুন্দররা সবাই খিল খিল করে হাসছে। শুভ বসিরকে ইংরেজিতে ব্যাপারটা বলছে।

পক্কে প্রাণ হাতে দৌড় দিদির হাত থেকে বাঁচার তাগিদে।

মামাগো…. বাঁচাও।

বাইরেও হাসি ছড়িয়ে পড়েছে।

বড়োমা চেঁচিয়ে উঠলো ধিঙ্গিগুলো কি শুরু করেছে বলো। পরে-টরে গেলে কোথায় লেগে যাবে।

মিত্রারা সকলে নেমে পড়েছে। বড়োমাকে দেখে আবার এক চোট হাসি।

তোমার ছেলে যা শুরু করেছে। তুমিও না হসে থাকতে পারবে না। বৌদি বললো।

তনু বড়োমার কানে কানে বলে দিল।

আমি গাড়ি থেকে নামলাম।

বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা বিটকেল হাসি হাসলো।

এতক্ষণ এই করছিলি?

টাইম পাস।

বিকেলে আমাদের সঙ্গে টাইম পাস করবি।

অনিসারা হৈ হৈ করে উঠলো।

ঝামেলা করো না। তাড়াতাড়ি কাজ সেরে নাও। অনেক বেলা হয়েছে।

দাদারা দেখলাম হাঁটতে হাঁটতে একবারে জলের কাছে চলে গেছে।

মিত্রা তনু দুজনে নেমে ছোটোমা, বড়োমা, দিদিকে পুরো ব্যাপারটা ব্রিফ করে দিয়েছে।

দুজনেই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসছে।

মাসীমনিকে দেখলাম অতীন, বরেনরা ধরে ধরে নামাচ্ছে।

তুমি বলো ছোটোমা ওই পুঁচকে পুঁচকে সব, শব্দগুলো কি মনে রেখেছে! ও খালি ধরিয়ে দিচ্ছে, গড় গড় করে বলে চলেছে। তনু বললো।

মাঝে তো তিনজনে হাতাহাতি লেগে গেলো। মিলি বললো।

ও কি করছিল তখন।

নির্বিকার।

পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম। মাম্পি কনিষ্কর কোলে, মিকি নীরুর কোলে, বাবান বটার কোলে। তিনজনেই নীচে নামার জন্য ছটফট করছে।

তুমি যাই বলো মিত্রাদি, অনিদা হচ্ছে ম্যানেজ মাস্টার ওয়ান। টিনা বললো।

মিত্রা আমার দিকে তাকাল। হাসছে।

আমার একটা মনে পড়েছে বলি।

বল।

টান দিয়েছি টোন দিয়েছি/ টানের পরে টোনটা, / সাপ এঁকেছি ব্যাঙ এঁকেছি/ বুবুন নেবে কোনটা।

তোবা তোবা, অর্ক চেঁচিয়ে উঠলো। ম্যাডাম প্লিজ আর একবার।

মিত্রা হাসছে।

অর্ক আমার দিকে তাকাল।

তুমি কি একলাই ঝারতে পারো। ম্যাডামেরও স্টক আছে।

আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।

বানিয়ে ঝারলি।

একবারে না।

আন-কমন লাগছে।

জ্যেঠিমনিকে জিজ্ঞাসা কর।

হ্যাঁ কেমন শোনা শোনা লাগছে। ইসি বললো।

দেখলি দিদিভাই কি বলছে। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে।

জ্যেঠিমনির কাছে ভেরিফাই করতে হবে।

আর একটা বলি।

আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে হাসছি।

হোক হোক বেশ হচ্ছে। নীরু চেঁচাল।

চমচম ভাই চমচম/ তোর দমদমে কি দেশ? / ইচ্ছে যে যায় এক কামড়ে / করবো তোরে শেষ। / রসগোল্লার মাসতুতো ভাই, / পান্তুয়া তোর পিসে। / ছানার ফাঁকে মিষ্টি মধুর / রস রয়েছে মিশে।

ম্যাডাম তুমি কি দিলে। খিদে পেয়ে গেল। নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।

তোর মুখে নুরো জেলে দেব। বটা দাঁত চেপে বলে উঠলো।

কেন, তোর চুলকুনি কিসের।

বটা ঠ্যাং তুললো।

দুজনের মধ্য লেগে গেল। আবার এক চোট হসাহাসি।

এটা মাম্পির ঝারলি।

মিত্রা চোখ বন্ধ করে হেসে উঠলো।

তুই দিবি না। তাই মাম্পির কাছ থেকে চুরি করলাম।

আমি মুচকি মুচকি হাসছি।

চল বিকেলে ওকে চেপে ধরবো, এখন চান করে নিই। বড়োমা বললো।

আসর ভেঙে গেল। দূরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দাদারা তখনও জলের কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে। চাঁদ-চিনারা সব এরিমধ্যে টাওয়েল পরে ফেলেছে। বিনদ-অর্জুন আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

তুমি চলো। আলতাফ চেঁচিয়ে উঠলো।

তোরা যা আমি পরে যাচ্ছি।

এক সঙ্গে।

আমি হাসছি।

কিরে ঝিনুক?

দারুন লাগছে। এরকম এক্সপিরিয়েন্স আগে হয় নি।

হাতী, ভাল্লুক দেখতে পেলে ভাল লাগত। অর্জুন বললো।

হুঁ, ব্যাটা প্যান্ট খুলে বাঁচার জন্য দৌড়বি।

চাঁদের মুখ থেকে সব শুনেছি। বিনদ বললো।

যা রেডি হয়ে নে। তাড়াতাড়ি কর। বন বাদারের ব্যাপার বিপদ-আপদ ঘটলে আর এক সমস্যা।

ওরা গাড়ির দিকে গেল। মিত্রারা সব এগিয়ে গেছে। কনিষ্কর দিকে তাকালাম।

একটা সিগারেট দে।

তুই সত্যি এতক্ষণ এইসব করছিলি! কনিষ্ক আমার মুখের দিকে তাকিয়েছে।

কি করবো। মাম্পি, মিকি, বাবান তিনজনে যা কোস্তাকুস্তি শুরু করলো থামাবার জন্য….।

তুই পারিস। বটা বললো।

বরেন, অতীন, অনিকেতরা মাসীমনিকে বড়োমাদের হাতে গুঁজে এগিয়ে এসেছে। দেবাশীষও ওদের সঙ্গে রয়েছে।

ভজু, ভেঁদোদাকে দেখলাম গামছা পরে খালি গায়ে তীরবেগে জলের দিকে দৌড়চ্ছে।

ওই দ্যাখ দুটোতে….। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম।

রাখতো, কিছু হবে না।

আরে অভ্যেস নেই পাহাড়ী ঝর্ণার জল। এ তো বৃষ্টির জল নয়। বেশ ভারী। ঠান্ডা লেগে গেলে বিপদ।

তুই ডাক্তার? নীরু বললো।

কনিষ্ক সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দিয়েছে।

চিকনা-বাসুকে দেখলাম সবাইকে গুছিয়ে গাছিয়ে জলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। শ্যাম-দারু কাছা কাছি রয়েছে। মাসীমনিকে চেয়ারে বসিয়ে বিষান ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যাচ্ছে।

যে যার মতো খুশি লুটে নিচ্ছে।

কনিষ্কর কাছ থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ধরালাম।

তোর মালটা এখন সকলের মুখে মুখে। দোবাশীষ বললো।

তোর পছন্দ।

একবারে চাটবি না।

ওর তো আবার পেছনে বুদ্ধির কেশটা রয়েছে। নীরু গম্ভীর হয়ে বললো।

হ্যাঁরে সে….।

অসভ্য কথা বলতে বারন করেছি না। নীরুর কণ্ঠে মেয়েলি টান।

বটা, নীরুর পেছনটা খামচে ধরলো।

কনিষ্ক তুই দেখ। এবার আমি করলেই দোষ।

আজ জল কেলি করবি না। আমি নীরুর দিকে তাকালাম।

কনিষ্ক খিক খিক করে উঠলো।

নীরু সিগারেটে একটা সুখটান দিয়ে বললো।

আজ দুটো নতুন ফিট করেছি।

তুই!

কারা রে! বটা বললো।

মিলি-টিনা। বটা হাত তোলার আগেই কথাটা বলে নীরু প্রাণপনে দৌড় দিল। কিছুটা তফাতে গিয়ে আঙ্গভঙ্গি করে দেখাতে শুরু করলো কি করে ওদের দুজনকে নিয়ে জলে নামবে।

আমরা এখানে দাঁড়িয়ে সকলে হেসে যাই।

ডাক্তারদাদারা হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম বেশ কিছুটা তফাতে চলেগেছে। ওদের পেছন পেছন চারটে ছেলে রয়েছে। বুঝলাম পাহাড়া বেশ জোরদার। দিদি জলে নেমেছে আফতাবভাই নামে নি। শুভরদাদু, অচিন্তবাবুও নামে নি। অনিমেষদা, বিধানদাও দেখলাম সঙ্গে রয়েছে।

সবাই দেখলাম এদিক ওদিক তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে কি যেন বলাবলি করছে।

তুই স্নান করবি না। বটা বললো।

তোরা যা।

স্নান না করিস এটলিস্ট জলের কাছে চল।

তোরা রেডি হয়ে নে।

রেডি হওয়ার কিছু নেই প্যান্ট-জামা খুলবো টাওয়েলটা পরে নেব।

জাঙ্গিয়া পরে স্নান করবি!

তাহলে কি কস্টিউম পরবো। এই নীরু অনি কি বলে শোন।

কি।

বলে কি, জাঙ্গিয়া পরে স্নান করবি।

ওকে জিজ্ঞাসা কর আগের বার কি উলঙ্গ হয়ে করেছিলাম। নীরু বললো।

ঠিক আছে চল আমি স্নান করবো।

তাহলে আমি পাহাড়া দিই।

নীরু জামা খুলে ফেলেছিল আবার বোতাম আঁটতে শুরু করলো।

তোর আবার কি হলো! কনিষ্ক বললো।

অনি আগে স্নান করে আসুক তারপর যাচ্ছি।

কেন!

আমি যথেষ্ট সম্মানীয় ব্যক্তি।

কনিষ্করা হাসছে।

ঠিক আছে তোরা যা আমি পরে যাচ্ছি। আমি বললাম।

তুই ওখানে গিয়ে স্নান করবি। নীরু বললো।

ঠিক আছে, তাই হবে।

ওরা রেডি হয়ে হাঁটি হাঁটি পায়ে সব জলের দিকে চলে গেল।

দাদারা দেখলাম অনেকটা যাওয়ার পর আবার এদিকে ফিরে আসছে।

ফোনটা পকেট থেকে বার করে কয়েকটা ফোন করে নিলাম। সব ঠিক নেই। কিছু কিছু সমস্যা থেকেই গেছে। ঝামেলা ছাড়া সুস্থভাবে বাঁচা দায়।

গোটা কয়েক ছেলে দেখলাম গাড়ির কাছা কাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ নিরস্ত্র নয়।

এখানটা নদীর গভীরতা কম কিন্তু চওড়ায় বিশাল। বর্ষার সময় সব ডুবে যায়। তখন এই রাস্তা বন্ধ। এমনকি এই নিবিড় অরণ্যের মধ্যেও জল ঢুকে যায়।

দৃশ্য-সুখ কাকে বলে নদী গর্ভে দাঁড়িয়ে অনুভব করা যায়।

একদিকে গভীর অরণ্য আর এক দিকে পাহাড়। মাঝে কিছুটা সমতল ভূমি। দু-দশটা পরিবার নিয়ে একটা গ্রাম। ভাল্লুক-হাতি-বুনোশুয়োরের সঙ্গে সহাবস্থান।

ছুড়কি আজকে গাড়িগুলো নদী-গর্ভের অনেকটা ভেতরে দাঁড় করিয়েছে। এখান থেকে নদীর পারটার দূরত্ব প্রায় দেড়শো মিটার। ঝাঁকরা ঝাঁকরা লম্বা শাল গাছগুলো ঝুঁকে পড়েছে নদীর ওপর। পায়ের তলার মাটি আলগা হয়ে গেছে। তাই সোজা না হয়ে বেঁকে গেছে।

ঝকঝকে আকাশের তলায় সোনালী বালি। হাওয়ার সাঁই সাঁই আওয়াজ। জলের কল কল। প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে এক অদ্ভূত সুর রচনা করে চলেছে।

তিনটে ছেলেকে দেখলাম বনের থেকে বেরলো। বাঁকে করে কয়েক কাঁদি ডাব নিয়ে আসছে।

নিজের মনে নিজে হেসে ফেললাম। আতিথেয়তা এরা ভাল মতো করতে জানে।

হ্যাঁরে ওন্যে কাইনু ডাব লেইলো।

সেউ পাশে কয়েকখান গাইছ আছে।

ওদের দিকে তাকালাম। ওরা যেভাবে তাড়াহুড়ো করে এদিকে আসছে, দেখে ঠিক ভাল লাগল না। ডাবের ভাড়ে হাঁটছে না, মনে হয় যেন দৌড়চ্ছে।

কাছে এসেই কোন প্রকারে কাঁধ থেকে ডাবের কাঁদির বাঁকটা নামিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।

তীরকাঁটগা কাই রাইখছু।

কেনি।

হাতি বারাইছে।

কথাটা শুনে আমার সারাটা শরীরে কেমন শিহরণ খেলে গেল।

পেছন ফিরে একবার তাকালাম। ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।

মিত্রারা সবাই তখন মনের সুখে জলে ঝাঁপাঝাপি করছে। নিজেদের মধ্যেই চেঁচা মিচি করছে। দাদারা দেখলাম পেছনের গাড়ির খুব কাছা কাছি চলে এসেছে।

আমি পায়ে পায়ে ছেলেটির কাছে গেলাম।

কুথা দেখছু।

হা য্যাখন নারকেল গাছে উঠছিলি ত্যাখন।

তান্যে কতদূর আছে।

মাইলটাক দূরে।

কি করতিছে।

পাতা খায়ঠে এউবার জল খাতি আইসবেক।

কয়টা আছে।

দশখান।

দাঁতাল আছে।

বুইঝতে পারি লাই।

সেউদিন যেউগাকে তারাইছিলি। একজন বলে উঠলো।

মনে হতিছে।

দাঁড়া হুরোহুরি করিস না।

ওরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

শ্যামআকাকে ডাকি?

না। ছুড়কিকে ডাক। আর শোন, শ্যামকে বলেছিলাম পেটিগুলো গুছিয়ে রাখতে….।

আমান্যে সব গুইছে রাখছি।

তানকাকে জল নু উঠতি বলো। আর একজন বললো।

একজন দৌড় দিল ছুড়কিকে ডাকার জন্য।

পিছন পাশ নু গাড়ি গুলানকে এউ পাশে লেই আসি। আর একজন বললো।

চাবি কার কাছে।

আমানকার কাছে আইছে।

এক কাজ কর।

বইলো।

গাড়িগুলো জলের কাছে নিয়ে চলে যা।

সেউ ভালো, তান্যে হুড়াহুড়ি কইরে গুইছে লিতে পারবে।

সেই কর।

মুহূর্তের মধ্যে পরিবেশটা কেমন ওলট পালট হয়ে গেল। ছুটো ছুটি হুড়োহুড়ি। চারটে ছেলে আমার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। চোখে মুখে উত্তেজনার ছাপ স্পষ্ট। কাঁধের অস্ত্র হাতে নিয়ে নিয়েছে।

যে ছেলেটা ছুড়কিকে ডাকতে গেছিল সে মনে হয় জলের ধারে গিয়ে চেঁচামিচি শুরু করে দিয়েছে। ছুড়কি, দারু, বিষাণ, শ্যাম সবার আগে ছুটতে ছুটতে কাছে এসে দাঁড়াল।

দাদাদের গাড়িটা দেখলাম জলের ধারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ওরা সবাই হতভম্বের মতো জলে দাঁড়িয়ে পড়েছে। বুঝলাম গাড়ি পৌঁছলেই যে যার উঠে বসে পরেবে।

একটা একটা গাড়ি জলের ধারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নীরু দেখলাম জাঙ্গিয়া পরে প্রাণপনে এদিকে ছুটে আসছে। ওর ওই অবস্থা দেখে হেসে ফেললাম। বড়োমারা দেখলাম জলের মধ্যেই সব দাঁড়িয়ে পড়েছে। কথাটা শুনে সবাই কিছুটা হতভম্ব এটাই স্বাভাবিক। চেঁচামিচি হৈ হুল্লোড় একবারে বন্ধ হয়েগেছে। দূর থেকে একটা চাপা গুঞ্জন ভেসে আসছে।

অভিমন্যুরা দেখলাম কোনপ্রকারে জল থেকে উঠে টাওয়েলটা কোমড়ে জড়িয়ে এদিকে ছুটে এসে ওদের গাড়ির কাছে গেল।

অনি হাতি বেরিয়েছে। নীরু সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। হাঁপাচ্ছে।

শ্যাম মাথা নীচু করে হেসে ফেললো।

টাওয়েলটা কোমড়ে জড়া।

ওখানে ফেলে এসেছি।

গাড়ির ভেতরে গিয়ে ছেড়ে নে।

তাই ভালো।

নীরু দাঁড়াল না।

বিনদরা দেখলাম সব হাতে পিস্তল নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে।

আমাদের গাড়িটা আর বিনদদের গাড়িটা ছাড়া সব গাড়ি নদীর ধারে চলে গেছে।

বিনদদের দিকে তাকালাম। খালি গা কোনপ্রকারে সব কোমরে টাওয়েলটা জড়িয়ে নিয়েছে। সবকটার চোখ মুখের ভাষা এরিমধ্যে বদলে গেছে। ওদের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম।

তুমি হাসছো! আলতাফ বললো।

তাহলে কি কাঁদব?

হাতি বেরিয়েছে।

তুই দেখতে পাচ্ছিস।

শ্যাম ওদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। বিষাণ-ছুড়কিও ফিক ফিক করছে।

তুমি শুধু একবার দেখিয়ে দাও। আলতাফ বলে উঠলো।

চলি যা, সেউ বুনের মধ্যে আইছে। শ্যাম বললো।

কোন দিকটা বলো।

ভাইগ পিস্তল লিয়ে হাতি মাইরতে আইসছে। শুঁড়ে কইরে তুলি দিবে এক আছার। দারু বললো।

আলতাফ দারুর কথায় ভড়কে গেল। ওদের চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারছি।

যদি তারা করে।

করলি কইরবে। তুর ওই পিস্তলে কয়টা গুলি আইছে। মোদের কাছেও অস্ত্র আইছে। ওই গুলিতে ওনকার কিছু হবেক লাই। দেখছুনা অনিদা কেমনে দাঁইরে কথা কইতিছে। ফন্দি আঁটতিছে। ওনকাকে মারা অততো সহজ লয়। তারাইতি হবি। শ্যাম বললো।

তীরকাঁটের মুখে ন্যাগড়া জড়িয়েছিস। শ্যামের দিকে তাকিয়ে বললাম।

হ সেউ সব ব্যবস্থা আইছে।

এক কাজ কর।

বইল।

গোটা দশেক গাছের ডাল কেটে নিয়ে চলে আয়।

আকা ডাইল কাটতি হবেক লাই।

বিষাণের মুখের দিকে তাকালাম।

কেন।

পেটিগুলান আছে বাঁধি বুঁধি তেল ঢালি দিই।

তাই কর। আর যে গাড়ি ভর্তি হয়ে যাচ্ছে নিয়ে ভেগে পর।

ছুড়কি।

বইলও।

এই গাড়িটা ওখানে রেখে আয় তোর মামনিদের জিনিষপত্র রয়েছে।

ছুড়কি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

না হলে সব ভিঁজে কাপরে দাঁড়িয়ে থাকবে।

চাবি কাই।

তোর বাপ জানে।

সেউঠি লাইগানো আছে।

শ্যামের মুখের দিকে তাকালাম।

যে তিনটে ডাব কাটতে গেছিল, তোকে কি বললো?

যা কইলো মনকে লিতিছে তান্যে ভিতরকে আইছে।

বাইরে আসবে?

কওয়া যায়। বুনের প্রাণী তানকার তো তিষ্টা পায়।

বললো কয়েকদিন আগে এসেছিল।

এউ সুময় তান্যে আইসবে। চাড্ডি খাতি হবে তো।

তোর কি মনে হয় এরা রেডি হতে হতে এসে পরতে পারে।

বিশ্বাস লাই।

এক কাজ কর।

বইল।

বললো তীরকাঁট নিয়ে এসেছে।

ওনকাকে তারাইবার জন্য সব সঙ্গে লেইসছি।

পটকা নিয়ে এসেছিস।

বেশি লাই।

বিষাণ পেটিগুলো কোথায়?

ইসলামদাদাই-এর গাড়ি-এর মাথায় রাখছি।

ওগুলো নিয়ে আয়। ওদের রেডি হতে হতে যদি বেরয় তাহলে তারাবার ব্যবস্থার জন্য রেডি হ।

তীরকাঁটগা তেলে ডুবি লিই।

তাই কর।

আলতাফের মুখের দিকে তাকালাম। গাড়ির চাবি কার কাছে আছে।

আবিদের কাছে।

তেলের ট্যাঙ্কের ঢাকনাটা খুলে দে। তোরা জামাকাপর পরে নে।

কি করবে?

দেখ না কি করি। হাতি তাড়ান তোদের কম্ম নয়।

ঝিনুক, অভিমন্যু, অর্জুন, বিনদ আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সাগির, অবতার, নেপলারও একই অবস্থা। চাঁদ-চিনা আমার শরীরে সঙ্গে সেঁটে রয়েছে। ওদের দিকে তাকিয়ে না পারছি হাসতে না পারছি গম্ভীর হয়ে থাকতে।

শ্যাম।

বইল।

কাউকে বল ডাবগুলো ওখানে গিয়ে রেখে আসুক বেচারারা কষ্ট করে কেটে বয়ে এনেছে।

তুমি এমনভাবে কথা বলছো যেন ব্যাপারটা কিছুই হয় নি। নেপলা ঝাঁঝিয়ে উঠলো।

কি করবো। হাতির সঙ্গে যুদ্ধ করবো। পারবি। ওই মোটা মোটা গোদা পায়ে একটা লাথি মারবে তোর গাড়িটা দেশলাই বাক্সের মতো গড়াতে গড়াতে নদীর জলে গিয়ে পরবে। এক একটার চেহারা দেখলে ভিরমি খেয়ে যাবি।

নেপলা আমার কথা শুনে কেমন ফ্যাকাশে চোখে তাকাল।

তাই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকবো।

বসে আছি কি?

শ্যামের দিকে তাকালাম।

শ্যাম মালপত্রগুলো গাড়ির মাথা থেকে নামিয়ে নে।

আকা নামান হইইছে। বিষান বলে উঠলো।

কয়েকজন দেখলাম তেলের ট্যাঙ্কের মধ্যে ন্যাগড়া বাঁধা তীরগুলো ভিঁজিয়ে নিচ্ছে।

পেছন কি হচ্ছে দেখবার আর ইচ্ছে নেই, আমি সামনের গভীর জঙ্গলটার দিকে তাকিয়ে আছি।

আকা দুইটা গাড়ি রেডি হছে ছাড়ি দিতে কই। বিষান বললো।

হ্যাঁ হ্যাঁ।

শ্যাম দু-একটা বোম-টোম সঙ্গে নিয়ে আসিস নি।

শ্যাম মাথা দোলালো। আইছে।

দূরে শব্দ হতে দেখলাম গোটা সাতেক বাইক তীর বেগে এদিকে ছুটে আসছে।

কিরে ফোন করেছিলি নাকি?

শিবু ফোইন করছিল।

কেন শুধু শুধু ফোন করলি।

টিনগা লেইসতে কইছি বাজাইতে হবে।

এরা কি হুড়কা পার্টি।

শ্যাম হাসছে।

কথা বলতে বলতেই ওরা চলে এলো।

আকা সব লেইসছি।

আমি ওদের কীর্তি কলাপ দেখে হাসছি।

হাসিস লাই।

ভাল তৈরি করেছিস।

তুর কাছ নু শিখছি।

নিমেষের মধ্যে সকলে রেডি হয়ে গেল। নিজেরাই নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিয়ে ধনুক টনুক বেঁধে নিল। একজন আমাদের সামনে এসে বললো। আকা তান্যে কি বারাইছে।

বুধিয়া ড্যাব কাইটতি গেইছল দেইখে আসছে।

আমান্যে চলি গিয়ে তানকাকে খেদি দিই।

দাঁড়া ব্যাটা আগে আসতে দে। আমি বললাম।

ছেলেটা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো।

আমাদের কথা বলার মধ্যেই দুরদার করে নদীর ধারের কয়েকটা ছোট গাছ ভেঙে পরলো।

শব্দটা শুনে চমকে দূরের দিকে তাকালাম।

একটা বিশাল হাতি নদীর গর্ভে এসে দাঁড়িয়েছে। পেছনে, একটু ওপরে নদীর ঠিক পাড়টায় আরও গোটা কয় দাঁড়িয়ে। তারা এখনো নেমে আসে নি। এটা পালের গোদা। রাস্তা ঠিক আছে কিনা আগে নেমে দেখতে এসেছে। এখান থেকেই বুঝতে পারছি হাতিটা এক দৃষ্টে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

বিশাল বিশাল কান হাত পাখার মতো দুলছে। এ্যান্টেনা ফিট করে বোঝার চেষ্টা করছে বিপদের কোন সম্ভাবনা আছে কিনা।

সকলে হৈ হৈ করে উঠলো। টিন পিটতে শুরু করলো।

পেছন দিকে তাকিয়ে দেখলাম গাড়িগুলো হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে শুরু করেছে।

অভিমন্যুরা গাড়ির পেছনে। হাতে তখনো পিস্তল ধরা আছে। কোমরের টাওয়েল খোলে নি।

ছেলেগুলো যে যার তীর ধনুক নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে।

আরও দুটো হাতি হুড়মুড় করে নদীগর্ভে নেমে এলো। এদিকে তাকিয়ে আছে। বাকিগুলো বনের মধ্যে গাছের আড়ালে।

তোরা গাড়িতে উঠে পর। অর্জুনের দিকে তাকালাম।

তুমি?

পাগলা। বেগতিক দেখলে আমি এদের কোন একটা বাইকের পেছনে বসে পরবো।

শ্যামদা?

ওরা দেখবি ঠিক তোদের গাড়ির মাথায় উঠে পরবে।

গদাম করে আওয়াজ হতেই চমকে তাকালাম। একমাত্র শ্যাম ছাড়া আমার পাশে কেউ নেই।

শূন্য নদীগর্ভ বোমের সেই আওয়াজে ভূমি কম্পের মতো কেঁপে কেঁপে উঠলো। তার শব্দের আওয়াজ তখনো আকাশে বাতাশে ভেসে বেরাচ্ছে। ধোঁয়ায় ভরে গেছে চারদিক।

ধোঁয়াটা একটু পরিষ্কার হতে দেখলাম হাতি আর দেখা যাচ্ছে না।

আকা তুমি গাড়িয়ে উঠি পরো। আমান্যে ঠিক সামলি দুব। বিষান বললো।

আমি তবু দাঁড়িয়ে থাকলাম।

তুমি যাও না। মন্যে ঠিক সামলি দুব। বিষান ঠেলা মারলো।

তারাহুড়ো করে আবার বিপদ ডাকিস না।

ঠিক আইছে।

গাড়িতে এসে উঠলাম। শ্যাম ড্রাইভিং সিটে বসেছে। আমি সামনে আমার পাশে নেপলা। কেউই জামাকাপর পরার সময় পায় নি। টাওয়েল পরা রয়েছে। গাড়ির মাথায় তীর-ধনুক হাতে গোটা পাঁচেক ছেলে লাফিয়ে উঠে পরলো। গাড়িতে উঠে জানলা দিয়ে মুখ বারিয়ে দেখলাম খাবারের পেটিগুলো দাউ দাউ করে জ্বলছে।

টিন পেটার তীব্র শব্দ।

শ্যাম গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে। গাড়িটা সামান্য গড়াতেই চাঁদ চেঁচিয়ে উঠলো আবিদদা ওই দেখ সবকটা নেমে পড়েছে।

আমি জানলা দিয়ে মুখ বারিয়ে একবার পেছন দিকে তাকালাম। শ্যামকে বললাম দাঁড়া।

থামি কি হবে টুকু আগি যাই।

আমি জানলা দিয়ে পেছনের দিকে তাকিয়ে আছি। ঝাঁকে ঝাঁকে আগুনের তীর হাতিগুলোর দিকে ছুটে যাচ্ছে। আবার একটা প্রচন্ড আওয়াজ হলো। বুঝলাম বোম ছুড়লো। শ্যাম গাড়িটা থামল।

যা তুই লামি যা মন্যে চলি যাইঠি। বয়স হয়্যা মরছে স্বভাবটা বদলাইলু নি।

বাচ্চা বাচ্চা ছেলে।

সেঠি দারু-শিবু আইছে।

তাদের বয়স হয় নি। শুধু তোর আমার বয়স হয়েছে।

তুর সাথে কাথায় পাইরবনি।

দাঁড়া না। ওদের টপকে হাতি এতদূর দৌড়ে আসবে না।

মিত্রাদের গাড়ি গুলোও প্রায় আধ মাইলটাক দূরে গিয়ে ট্যারা বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। ফাঁকা জায়গা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।

শ্যাম গাড়ি থামাল।

আমি নেমে দাঁড়ালাম।

একবার হাতি তেরে এলে এরা দৌড়য় আর একবার এরা টিন পিটে তেরে গেলে হাতি দৌড়য়।

এ একটা খেলা। দড়ি টানাটানি খেলা। এ একবার সামনে এগোয় ও পিছোয়। ও এগোয় তো এ পিছোয়। মানুষের সঙ্গে প্রাণী জগতের খেলা।

বেশ কিছুক্ষণ এরকম চলার পর। চারটে ছেলেকে দেখলাম দুটো বাইকে উঠে একবারে হাতির পালটার কাছে চলে গেল। একসঙ্গে দম দম করে গোটাতিনেক আওয়াজ হলো। গোটা তিনেক আগুনের তীর গিয়ে বনের মধ্যে পরলো। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো।

এবার হাতির পালটা গা ঘেঁসা ঘেঁসি করে দাঁড়িয়ে পরলো।

আবার দম দম আওয়াজ হলো। এবার বড় মদ্দা হাতিটা মাথা দুলিয়ে নদীর গর্ভ বরাবর সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলো। পেছন পেছন আর হাতি গুলোও হাঁটতে আরম্ভ করলো।

আমি অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। অর্জুনরা কখন গাড়ি থেকে নেমে এসে পাশে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করি নি।

হাতিগুলো তখনও শুঁড় দোলাতে দোলাতে দুলকি চালে নদীর ধার দিয়ে সামনের দিকে হেঁটে চলেছে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। গহীন অরণ্যের অনেকটা অংশ পুরে ছাই হয়ে যাবে।

যখন দেখলো হাতি সত্যি সত্যি বিপদ সীমার বাইরে চলে গেছে। তখন সকলে হৈ হৈ করে উঠলো। মটোর বাইক গুলোয় উঠে তীরবেগে এদিকে চলে এলো।

বিষান সবার প্রথম সামনে এসে দাঁড়াল। ফিক ফিক করে হাসছে।

আকা এউবার গাড়িয়ে উইঠা পরো। তান্যে চলিইছে।

আমি বিষানের দিকে তাকিয়ে হাসছি।

হঁ গো তান্যে আর আইসবে নি।

বনের মধ্যে আগুনের তীরটা ছুঁড়লি কেন?

নাইলে তান্যে যাইত নি। মদ্দাটা কয়দিন ধইরে বড্ড জালাইতিছে।

কতগুলো গাছ নষ্ট করলি।

তুমায় আর ভাবতি হবে নি। তুমি অখন গাড়িয়ে উইঠ্যা পরো। মোড়ল খেপিইছে।

কেন।

তাকে সেঠি গিয়ে জিজ্ঞাসা করবো।

একবার সামনের দিকে তাকালাম। আবঝা হয়ে গেছে। তবু দেখা যাচ্ছে হাতির পালটা ধীরে ধীরে আমরা যে পথে এসেছি সেই পথে চলে যাচ্ছে।

(আবার আগামীকাল)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

বাংলা নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩০ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন