মঙ্গলবার | ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:৪০
Logo
এই মুহূর্তে ::
শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (প্রথম পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠিতে তাঁর স্পেনযাত্রা বাতিলের অজুহাত : অসিত দাস ফ্ল্যাশব্যাক — ভোরের যূথিকা সাঁঝের তারকা : রিঙ্কি সামন্ত সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (চতুর্থ পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস মিয়ানমার সংকট, প্রতিবেশি দেশের মত বাংলাদেশকে নিজস্ব স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সিকাডার গান’ সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (তৃতীয় পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (শেষ পর্ব) : উৎপল আইচ সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (দ্বিতীয় পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (চতুর্থ পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (শেষ পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ প্রথম পাঠ — সায়র আলমগীরের গল্পগ্রন্থ ‘এক মন অন্য মন’ প্রেমময়তার গাল্পিক দলিল : সৌমেন দেবনাথ আন্তন চেখভ-এর ছোটগল্প ‘গুজবেরি’ সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (প্রথম পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (তৃতীয় পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৭তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ স্প্যানিশ ফ্লু থেকে বাঁচতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্পেনে গেলেন না : অসিত দাস ভোটের হার কম, ভোটারদের উৎসাহ কম, চিন্তায় বিজেপি : তপন মল্লিক চৌধুরী সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (দ্বিতীয় পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৬তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়: এক বাঁধনছেঁড়া গণশিল্পী : সন্দীপন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (প্রথম পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৫তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ রামগতপ্রাণ দাস্যভক্তির শ্রেষ্ঠ বিগ্রহ হনুমানজি : রিঙ্কি সামন্ত লুইজ গ্লিক ও সাহিত্যে সমকালীনতা : সাইফুর রহমান ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৪তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে কি করা হচ্ছে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন সাহিত্যে যুদ্ধ, যুদ্ধে সাহিত্য : মিল্টন বিশ্বাস রবীন্দ্রনাথ কখনও শিমুলতলা আসেননি : জমিল সৈয়দ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৩তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪৩১-এর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কাজলদীঘি (২৩৫ নং কিস্তি) : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় / ২৯০৩ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০২০
kajaldighi

মিলিরা আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে।

অর্ক তোরা জানিস?

এখন প্রশ্ন করবে না। বলে যাও গো-গ্রাসে গিলি।

মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

মিত্রাদি তুমি হাসলে। টিনা বললো।

তনুও হাসছে।

বসন্তোৎসব।

তাই!

আমি মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ওই দিনটা মনে রাখবো। তোর অনিদা ওই দিনে আমাকে পীরবাবার থানে গ্রহণ করেছিল।

ইস। অদিতি বলে উঠলো।

তোর আবার কি হলো। মিলি বললো।

কেন মিত্রাদি এই কথাটা আমাদের বহুবার বলেছে।

দূরছাই মনে থাকে নাকি, তারপর বলো। মিলি আমার দিকে তাকাল।

শোনার উৎসাহ ওদের চোখে মুখে।

মানঝি বা মোড়ল বাহা পরবের দিন ঠিক করেন। উৎসব চলে দু থেকে চারদিন। বাহা পরবের প্রথম দিনটাকে বলে বাহাউম। পর্শুদিন মূল উৎসব পালিত হয়েছে।

ডিটেলসটা ঝেড়ে দাও। সন্দীপদা বহুতক্ষণ থেকে খোঁচা মেরে যাচ্ছে। সুমন্ত বললো।

আমি সুমন্তর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।

নারে অনি। তোর আশকারা পেয়ে এরা এক একটা বিচ্চু তৈরি হয়েছে। সন্দীপ বললো।

তুমি তো সবটা খাবে না। আর একটু খেয়ে নাও প্যাকেটটা নিয়ে নিই। সুরো বললো।

না। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।

সুরো হাসছে। ভাগ পাবে।

তুমি কিগো মিত্রাদি। অনিদার ভাগের একটা প্যাকেট গোটা নিলে। আমাদের একটু এঁটোকাটা খেতে দাও। মিলি বলে উঠলো।

মিত্রা হাসছে।

সুরোর কোন হুঁস নেই।

তুমি আর একটু খাও না। সুরো চেঁচিয়ে উঠলো।

নিয়ে নে।

বড়োমা জানতে পারলে মাথা শুধ্ধু চিবিয়ে খেয়ে নেবে।

জানতে পারবে না।

সুরো হাত লাগাল।

থামলে কেন শুরু করো। অরিত্র বললো।

কোন পর্যন্ত বলেছিলাম।

মানঝি বা মোড়ল।

ও হ্যাঁ।

মোড়ল বাহা পরবের জন্য একটা নির্ধারিত স্থান ঠিক করেন। এই পবিত্র স্থানকে জাহের থান বা জাহের বির বলে। তারপর নিজেদের মধ্যে থেকে তিনজন যুবককে ঠিক করেন। যারা সবেমাত্র যৌবনে পা রেখেছে। এরা প্রত্যেকেই দেবতার এক একটা অংশ রূপে ওই দিনটাতে আবির্ভূত হয়। তাদের নামকরণ করা হয়। তিন দেবতারূপী যুবকের মধ্যে প্রথম যুবককে জাহের এঁরা বা ফুলের দেবতা বলা হয়, দ্বিতীয়কে মারাংবুরু বা পাহাড়ের দেবতা বলা হয়, তৃতীয় যুবককে পারাগানা বোঙ্গা বা এলাকার দেবতা বলা হয়। এদের বিশ্বাস এই দেবতারূপী যুবকেরা সেদিন যা বলবে সব ফলে যাবে।

সকলে সেই দেবতাদের ঘিরে ধরে জিজ্ঞাসা করে এ বছর বৃষ্টি কেমন হবে? অসুখ-বিসুখ হবে কি না? ওই তিন দেবতার পরামর্শ অনুযায়ী সাঁওতালরা আগামী এক বছর অতিবাহিত করে।

ওরা সকলে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। অর্কর দিকে তাকালাম চোখের পলক পরছে না। সুমন্ত দেখলাম মাথা নীচু করে একাটা ছোট্ট নোট বুকে নোট করছে।

ভেবে নাও দুর্গাপূজোর সময় যেমন কুমারীপূজো হয় অনেকটা সেই রকম।

উৎসবের দিন জগমাঝি মানে যিনি সহকারি গ্রাম প্রধান তিন যুবককে নিয়ে সেখানে যান। সেখানে তিনটি শালপাতার ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়। পুরোহিত অর্থাৎ নাইকে কাঁসার থালায় গোবর এবং সিঁদুরের কৌটো নিয়ে জাহের থানে যান।

নাইকে গোবর দিয়ে ঘর তিনটির চারিদিক লেপন করে বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর কুডাম নাইকে সহকারি পুরোহিত জগমাঝি সহ পাড়ার সবাইকে নিয়ে শিকারে যান। যাত্রা পথে কোনো এক চৌরাস্তায় বনদেবতার পূজা করেন। শিকার শেষে সবাই নাইকের বাড়িতে আসে। তাদের সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রও থাকে। নাইকে নির্দেশ দিলে টামাক আমরা বলি কাড়া-নাকড়া বাজতে থাকে। এই বাজনার তালে তালে গান হয়।

পুরুষেরা সমবেত কণ্ঠে গান গাইতে থাকে। গানের মধ্যে দিয়ে তারা ফুলের দেবতা বা বাহা রঙ্গাকে ডাকে। তখন সাঁওতাল জনপদের তিনজন দেবতা রূপী যুবক অস্থির ও উত্তেজিভাবে মাথা দোলায় এবং লম্ফ ঝম্ফ করে।

বলতে পারো এই প্রসেসের মধ্যে দিয়ে ওরা একটা পাওয়ারকে আহ্বান জানায়। পায় কিনা বলতে পারবো না। তবে এটা ওদের সংস্কৃতি। শিঙ্গা বাজে আরও সব বাজনা বেজে ওঠে। অনেকটা মন্ত্রশক্তি। এদের বিশ্বাস ওই মুহূর্তে দেবতারা ওদের তিনজনের উপর ভর করে। এই দেবতা ভর করাকে বলা হয় রুম।

কখনো ঠাকুরের থানে ভর হওয়া দেখেছ?

ওরা সকলে আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে।

অনেকটা সেইরকম। তবে ওই ভরের মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়িক অভিসন্ধি লোক ঠকান। আর এদের এই ব্যাপারটায় রয়েছে ভরপুর প্রাণের স্পর্শ। ওখানে বিশ্বাসের বনিয়াদ বড়ো ঠুনকো। এখানে বিশ্বাসের বনিয়াদ চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরে।

এই সময় দেবতার উদ্দেশ্যে সকলে নাচ-গানে মত্ত হয়। বাহা পরবের নৃত্যকে বলা হয় বাহা এঁনেছ বা ফুলের নাচ। শিল্পীদের বলা হয় বাহা সেরিং। তল্লাটের যত যুবক-যুবতী সকলে দলবেঁধে হাতে হাত ধরে নাচে।

আজ একবার নাচবে। মিলি বললো।

হাসলাম।

সেদিন দেখিনি। মিত্রাদিরা দেখেছে।

তোমরা নেচো।

তুমি সত্যি মিলিদি একখানা মাল। অর্ক ঝাঁজিয়ে উঠলো।

মিলি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে, অর্ক ওই রকম ঝাঁজিয়ে ওঠায়।

দিলে রিদিমটা কেটে। আর মাল বার করতে পারবে। কেন নাচের কথাটা পরে বলা যেত না। অনিদা পালিয়ে যাচ্ছে। কত কষ্টে মালটাকে বাগে আনলাম।

সরি সরি অর্ক বুঝতে পারি নি। বিশ্বাস কর।

এতদিন অনিদাকে দেখছ আর কবে বুঝবে। সরি ফর মাই বিহেভ। ক্ষমা করবে।

অর্ক গুম হয়ে বসে রইল।

মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। মিলির চোখে মুখে অপ্রস্তুতের ভাষা।

এবার ওঠো, অনেকটা পথ। আমি বললাম।

সে কিগো সাতকান্ড রামায়ন পরে সীতা কার বাপ! বাকি মাল? অরিত্র চেঁচিয়ে উঠলো।

আম উঠতে যেতেই অর্ক হাতটা চেপে ধরলো। সরি।

কনিষ্ক মুচকি মুচকি হাসছে। একবার মিলির দিকে তাকায় একবার অর্কর দিকে তাকায়।

বাকিটা জোগাড় করে নে। আমি অরিত্রর দিকে তাকালাম।

সে বললে হবে না। যতক্ষণ না পাচ্ছি সেঁটে রইলাম।

কনিষ্কদের দিকে তাকালাম।

জায়গাটা নোংরা করে রাখিস না।

কনিষ্ক আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসছে।

সেদিনের মতো প্যাকেট করে নিই। রতন বললো।

পারলে করে নে। এখানকার পরিবেশকে বিশ্বাস নেই। এই হাসি এই কান্না।

সত্যি। কনিষ্ক বললো।

হ্যাঁ রে।

কনিষ্ক আমার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। শ্যাম হাসছে।

কি রে শ্যাম? কনিষ্ক শ্যামের দিকে তাকাল।

অনিদা যখন কইছে রাখি দে। মন্যে তো আছি ভয় লাই। আইলে তাইরে দেব।

বড়োমারা দেখলাম তখনও গোল হয়ে বসে রয়েছে। মাসীমনি চেয়ারে। দেখেই মনে হচ্ছে বেশ জমিয়ে গল্প করছে সকলে।

পায়ে পায়ে কাছে এগিয়ে গেলাম।

বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকাল।

গল্প হলো।

হ্যাঁ। এবার উঠে পরো। জানো তো যেতে কতটা সময় লাগবে।

আজ হাতি বেরল না।

বেরলে ভালো হতো তাই না।

বৌদি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো।

একে একে সবাই উঠে দাঁড়াল।

গোছ গাছ করে আবার যাত্রা শুরু। সেই এক পথ। কিছুটা গহীন বনের মধ্যে দিয়ে পথ। তারপর নেমে যেতে হবে নদীর বুকে।

এবার মিত্রারা জোড় করে আমাকে ওদের গাড়িতে তুললো। ঘেঁসা ঘেঁসি করে সবাই উঠে বসলো। মাঝে তিনজনের জায়গায় পাঁচ জন। পেছনে পাঁচজন। আমি তিনটেকে নিয়ে সামনে।

দশটা গাড়ি। ধীরে ধীরে আমরা নীচে নামতে শুরু করলাম। সবার সামনে বিনদরা। ওদের গাড়ি ছুড়কি চালাচ্ছে। তার পেছনে কনিষ্কদের গাড়ি। সেটা বিষান চালাচ্ছে। আমি যেহেতু মিত্রাদের গাড়িতে উঠেছি তাই শ্যাম মিত্রাদের গাড়িতে উঠেছে। মিত্রাদের গাড়ি রতন চালাচ্ছিল ও অনিকাদের গাড়িতে গিয়ে উঠেছে। আমরা তিন নম্বরে।

মাম্পি, মিকি, বাবান নিস্তব্ধ নেই তারা তাদের মতো। করর-বরর করেই চলেছে।

মিত্রারা পেছনে বসে সমানে খুঁচিয়ে চলেছে।

আঙ্কেল ইকির মিকিড় খেলবে।

মাম্পির মুখের দিকে তাকালাম। পেছন থেকে হাল্কা হাসি।

না উপেনটি বায়স্কোপ। মিকি বললো।

এক থাপ্পর।

সে কি রে! ও তোর থেকে বড়ো। দাদা না। মিলি চেঁচাল।

না আমার বন্ধু।

ইকির মিকির ফার্স্ট, তারপর উপেনটি বায়স্কোপ। আমি বললাম।

মাম্পি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

বাবান কোলের মধ্যে ঢুকে বসে আছে। একবার মিকির দিকে তাকায় একবার মাম্পির দিকে তাকায়।

দ্যেঠু আমপাতা। বাবান বলে উঠলো।

মিলিরা সমস্বরে হেসে উঠলো।

ও মিত্রাদি এটা আবার কোথা থেকে আমদানি হলো। টিনা বললো।

ডিসকভারি চ্যানেল। প্রত্যেকদিন আবিষ্কার হচ্ছে। তনু বললো।

সুমন্ত বলেছে আঙ্কেল না জ্যেঠু বলবি। মিত্রা বললো।

ওর অধ্যাপকগিরি বার করছি দাঁড়াও। মিলি বললো।

কিরে কাজরী। মিলি পেছন দিকে তাকাল।

আমাকে বলছো কেন। জানোতো অনিদার কার্বনকপি।

আঙ্কেল খেল না। মাম্পি গাল টেনে ধরেছে।

বাবান যা বললো, তাই খেল।

আমার সঙ্গে ফার্স্ট। মাম্পি বললো।

না আমার সঙ্গে। মিকি বললো।

দুজনে হাত তোল।

দুজনে হাত তুলে দাঁড়াল। বাবানের দিকে তাকালাম।

তুই বল।

দিদি।

কেন তোর মনে নেই।

বাবান আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

আমিই শুরু করলাম। আমি একটু বলি ওরা একটু বলে। মাঝে মাঝে ওরাই তরবর করে। আমি চুপ করে যাই।

আমপাতা জোড়া জোড়া/ মারবে চাবুক চলবে ঘোঁড়া / ওরে বিবি সরে দাঁড়া / আসছে আমার পাগলা ঘোঁড়া / পাগলা ঘোঁড়া ছুটেছে / বন্ধুক ছুঁড়ে মেরেছে / অল রাইট ভেরি গুড / মেম খায় চা বিস্কুট।

আমার সঙ্গে সঙ্গে ওরাও সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো। চিল চিৎকার জুড়ে দিয়েছে।

বাবান কোলের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে। গলা জড়িয়ে ধরেছে।

এলাটিং বেলাটিং। মাম্পি বলে উঠলো।

মিকি শুরু করে দিল।

এলাটিং বেলাটিং শৈল / কিসের খবর রইল / রাজামশাই একটি বালিকা চাইল / কি সে বালিকা চাইল / মাম্পিকে চাইল / নিয়ে যাও নিয়ে যাও বালিকাকে।

না আমি না। মাম্পি বলে উঠলো।

তাহলে।

মা।

মা তো খেলছে না।

আমি মিকির কাছে যাব না।

তাহলে বাবান।

বাবান ছোট।

তাহলে শ্যাম আঙ্কেল।

মাম্পি চুপ করে রইলো।

তুই আউট তোকে খেলতে হবে না।

না।

তাহলে মিকির কাছে যা।

মিকি মারে।

দ্যেঠু আঁটুল।

না। আইকম। মাম্পি চেঁচাল।

আগে আঁটুল। মিকি চেঁচাল।

মাম্পি কট কট করে বাবানের দিকে তাকাল। মিকিকে বাবান সাপোর্ট করেছে। বুঝলাম এবার বাবানের সঙ্গে মাম্পির ঝগড়া শুরু হয়ে যাবে।

ঠিক আছে আগে আঁটুল পরে আইকম।

মাম্পি আমার মুখের দিকে তাকাল। গম্ভীর।

আঁটুল বাঁটুল শামলা শাঁটুল / শামলা গেছে হাটে / শামলাদের মেয়েগুলো পথে বোসে কাঁদে / আর কেঁদো না, আর কেঁদো না / ছোলা ভাজা দেবো / আবার যদি কাঁদো তুমি তুলে আছাড় দেবো।

ওদের কবিতা শেষ হতেই আমি চেঁচিয়ে উঠলাম। মিকি মাম্পিকে।

না মিকিকে। মাম্পি তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো।

পেছন থেকে এতক্ষণ ফিক ফিক করে হাসি হচ্ছিল, এবার সকলে জোড়ে হেসে উঠলো।

মিত্রাদি শুনছো। মিলি বলে উঠলো।

তোকে সেদিন বলছিলাম। মাম্পি-মিকি দুজনে মিলে ভজু আর ভেঁদোদাকে শেখাচ্ছিল।

আমি তো ভেবেছিলাম স্কুল থেকে শিখেছে।

হুঁ তাহলেই হয়েছে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে আইকম-বাইকম। ভাগ। টিনা বললো।

এবার ছড়া রহস্য ধরতে পারছিস। মিত্রা বললো।

মাম্পি আর কি জানিস। অদিতি বললো।

আঙ্কেল।

মাম্পির দিকে তাকালাম।

উপেন্টি বায়স্কোপ।

তোর সঙ্গে একা।

মাম্পি মিকির দিকে তাকিয়ে হাততালি দিয়ে উঠলো। দুজনে হাতে তালি দিই, আর আওরে যাই।

উপেন্টি বায়োস্কোপ/ টাই টুনি টাইস্কোপ / চুলটানা বিবিয়ানা / সাহেব বাবুর বৈঠক খানা। / কাল বলেছে যেতে / পানসুপারী খেতে। / পানের ভেতর মৌরীবাটা / ইস্কাপনের ছবি আঁটা।

শ্যাম গাড়ি চালায় আর একবার করে টেরিয়ে টেরিয়ে আমাদের দিকে তাকায়। বেশ মজা পাচ্ছে।

অনির সঙ্গে কিরকম টর টরিয়ে বলে যাচ্ছে দেখো। সেদিন ছোটোমা কতো করে বললো, একটা ছড়া শোনা। মুখ থেকে কিছুতেই বার করতে পারল না। তনু বললো।

সামনের দিকে তাকালাম। দেখলাম গাড়ি হেলতে দুলতে নেমে পড়েছে নদীর গর্ভে।

শ্যামের দিকে তাকালাম।

কিরে কোথায় দাঁড়াবি।

ছুড়কি যেউখানে দাঁড়াইবে।

তোকে কিছু বলে নি।

বড়োমার ইনেসটকসন।

আঙ্কেল আঙ্কেল। বাবান গাল ধরেছে।

কাজরী ছেলেকে দেখছিস। অদিতি বললো।

ওরা কনটিনিউ হাসাহাসি করে চলেছে।

ও কিন্তু অনিদার সঙ্গে এরকম করছে, আর মার সঙ্গে করে, আমাদের দুজনের সঙ্গে খুব একটা এরকম করে না।

তখন ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানে না। তাই না? টিনা বললো।

পাল্লায় পরলে সব সমান বুঝলি কাজরী। মিলি বললো।

বাবানের দিকে তাকালাম।

চিড়িয়াখানা।

তুই বল।

দিদি।

ও মা দেখেছো মিত্রাদি কেমন টুক টুক করে মনে করিয়ে দিচ্ছে। তনু বললো।

বাবান একবার আমার মুখের দিকে তাকায় একবার মিত্রাদের মুখের দিকে তাকায়।

ওদিকে তাকাতে হবে না।

বল।

চিড়িয়াখানার উট, করছিল খুটখুট,/ তাইনা দেখে মালিক, পরিয়ে দিল বুট। / উট ব্যাচারী শেষে, মিষ্টী মিষ্টী হেসে, / একেবারে দৌড় দিল, মরুভূমির দেশে।

বাবান পুরোটা বলতে পারলো না আমি মাঝে মাঝে ধরিয়ে দিলাম। ওরা তারস্বরে চেঁচিয়ে বললো।

সামনের গাড়িটা থেমেছে। দেখা-দেখি আমরাও থেমেছি। আমদের দেখা-দেখি পেছনের গাড়ি গুলোও সব থেমে গেছে। পেছনে হাসাহাসি থেমে নেই। বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেই জায়গা।

আঙ্কেল আঙ্কেল মিকি তারস্বরে চেঁচাল।

মিকির দিকে তাকালাম।

ফুস।

মিকি বলার সঙ্গে সঙ্গে মাম্পি ঝাঁপিয়ে পরে আমার মুখ চেপে ধরলো।

না। তাহলে খেলব না।

তোকে খেলতে হবে না।

বাবান হাততালি দিচ্ছে।

আমি হসছি।

বাবান খোঁচা দিল। আঙ্কেল আঙ্কেল বলো।

ও মিত্রাদি এটা কি গো এতো যুদ্ধ লেগে গেছে। মিলি বললো।

আমি না এবার মিকি। মাম্পি আমার গলা জড়িয়ে ধরেছে।

ঠিক আছে এবারটা মিকি পরের বার তুই।

হ্যাঁ।

মিত্রারা হেসে চলেছে।

বলো। বাবান আবার খোঁচা দিল।

আমি চেঁচিয়ে উঠলাম।

আদা পাদা কৌন পাদা / রামাজীকা ঘোড়া পাদা / ঢাঁই ঢুঁই ঢুশ / বিল্লী (মিকি) পাদা ফুশ।

মাম্পি বাবান চেঁচিয়ে উঠলো মিকি পাদা ফুশ, আর মিকি চেঁচিয়ে উঠলো মাম্পি পাদা ফুশ।

পেছন দিক থেকে বিকট অট্টহাসির রোল উঠলো। হৈ হৈ শব্দে কান ঝালাপালা। কে কি বলছে কিছুই শোনা যাচ্ছে না। শ্যাম দরজা খুলে নেমে দরজা ধরেই হাসতে আরম্ভ করেছে।

গড় করি তোনকার কবতেকে।

মিকিরা কোমর দুলিয়ে নাচছে। এ ওকে ঠেলা মারে আর ফুস ফুস বলে।

এই রকম হৈ হৈ শব্দ শুনে বিনদরা, কনিষ্করা, অরিত্ররা সকলে গাড়ি থেকে নেমে ছুটে এসে চারপাশে ভিড় করেছে। এই গাড়ির কেউ গম্ভীর নেই। এ ওর গায়ে ঢলে পরে, সকলে হেসে চলেছে। মিকিরা তিনজনেই কোমড় দুলিয়ে চলেছে।

কি গো মিলি তোমরা এতো হাসছ! কনিষ্ক বললো।

মিলি কি উত্তর দেবে হেসেই চলেছে।

কেউ আর কনিষ্কর কথার উত্তর দিচ্ছে না। হেসেই যাচ্ছে।

আরে বলবে তো এতো হাসি কিসের? কনিষ্ক আবার রিপিড করলো।

এই প্রশ্নের হাসিই একমাত্র উত্তর। অধৈর্য হয়ে কনিষ্ক শ্যামের দিকে তাকাল।

কি রে শ্যাম! শ্যামও হেসে চলেছে।

মাম্পি চেঁচিয়ে উঠল। বাবা ফুস।

মানে!

মিত্রা হাসতে হাসতে আমার দিকে আঙুল তুলেছে।

গাড়ির সব দরজা খোলা হয়েগেছে। কেউ আর নামে না। হেসেই যায়।

পেছনে বসে কাজরী, শ্রীপর্ণা, নীপা, সুরো, অদিতি তখনও হাত পা ছড়িয়ে হেসে চলেছে।

অনিকারা এসেছে ওরাও ওদের মা-ছোটোমার এত হাসি দেখে অবাক।

ছোটোমা, বৌদি গাড়ির কাছে এসে মিত্রার দিকে তাকাল।

কিরে এত হাসির চোট কিসের!

আদা পাদা কৌন পাদা / রামাজীকা ঘোড়া পাদা / ঢাঁই ঢুঁই ঢুশ / নীরু পাদা ফুশ।

শ্রীপর্ণা পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।

হাসি থেমে নেই। ছোটোমা-বৌদিও হেসে ফেললো।

তুমি এই কালেকসন পেলে কোথায়! নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।

এবার কনিষ্করাও হে হে করে হাসতে আরম্ভ করেছে। বিনদরাও সঙ্গে যোগ দিয়েছে।

ছোটোমা মিত্রার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো।

সেই জন্য তোরা এতো হাসাহাসি করছিস।

সারাটা রাস্তা মিকিদের সঙ্গে ছড়া বলা চলেছে।

তাই বলি তোদের গাড়ি থেকে এত চেঁচামিচি হৈ হৈ কিসের। আমি তো ভাবলাম অনির সঙ্গে তোরা একসঙ্গে যুদ্ধ করছিলি।

আর যুদ্ধ ছোটোমা, তুমি যদি থাকতে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যেত। টিনা বললো।

আমি কনিষ্কর দিকে তাকালাম।

তুই এইসব এদের….!

মাআআআমপিপিপিপি। মাম্পি আমার মুখ চেপে ধরেছে।

না হবে না। খেলব না। মিকি।

না আমি না বাবান। মিকি চেঁচাল।

না দিদি। বাবান চেঁচাল।

ভেতরের হাসি এইবার বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে।

ম্যাডাম ব্যাপারটা কি। অর্ক এগিয়ে এসেছে।

অনিদাকে ধরো দারুণ সাবজেক্ট। মিত্রা হেসেই চলেছে।

অর্ক সকাল থেকে অনেক গিলেছিস বদহজম হয়ে যাবে। এটা আমার। অরিত্র এসে হাজির।

কে রে আমার নোদের চাঁদ। এসো ঝিনুকে করে দুধু খাওয়াই। ম্যাডাম যেটুকু কালকেসন হয়েছে ছেড়ে দেবেন, বাকিটা আমি ঠিক বুঝে নেব। অর্ক বললো।

একটাও মনে নেই।

মিলিদি?

দু-একটা শব্দ মনে আছে। খুব কমন, তোকে দু-একটা লাইন বলতে পারবো।

টিনাদি কিছু স্টক করেছ।

আগে হজম করি।

তোমরা এতো ঢেপসি হলে কি করে বলোতো?

থাম।

হাসি থেমে নেই।

মাম্পি কনিষ্কর কোলে উঠে পড়েছে। নীরু বাবান মিকিকে কোলে করে নামাল।

সুরো।

সুরো হাসতে হাসতেই বললো। বলো।

তুই যেন আবার অংশুর নামটা বসিয়ে দিস না।

তোমার মাথাটা না শিল নোড়ায় এবার থেঁতো করবো।

আবার এক চোট হাসি।

ভিড়ের মধ্যে থেকে পক্কে চেঁচিয়ে উঠলো।

আদা পাদা কৌন পাদা / রামাজীকা ঘোড়া পাদা / ঢাঁই ঢুঁই ঢুশ / দিদিভাই পাদা ফুশ।

তবে রে….। অনিকা তারা করলো পক্কেকে।

(আবার আগামীকাল)


আপনার মতামত লিখুন :

One response to “কাজলদীঘি (২৩৫ নং কিস্তি) : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

বাংলা নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩০ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন