মঙ্গলবার | ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:৩৭
Logo
এই মুহূর্তে ::
শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (প্রথম পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠিতে তাঁর স্পেনযাত্রা বাতিলের অজুহাত : অসিত দাস ফ্ল্যাশব্যাক — ভোরের যূথিকা সাঁঝের তারকা : রিঙ্কি সামন্ত সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (চতুর্থ পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস মিয়ানমার সংকট, প্রতিবেশি দেশের মত বাংলাদেশকে নিজস্ব স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সিকাডার গান’ সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (তৃতীয় পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (শেষ পর্ব) : উৎপল আইচ সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (দ্বিতীয় পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (চতুর্থ পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (শেষ পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ প্রথম পাঠ — সায়র আলমগীরের গল্পগ্রন্থ ‘এক মন অন্য মন’ প্রেমময়তার গাল্পিক দলিল : সৌমেন দেবনাথ আন্তন চেখভ-এর ছোটগল্প ‘গুজবেরি’ সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (প্রথম পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (তৃতীয় পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৭তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ স্প্যানিশ ফ্লু থেকে বাঁচতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্পেনে গেলেন না : অসিত দাস ভোটের হার কম, ভোটারদের উৎসাহ কম, চিন্তায় বিজেপি : তপন মল্লিক চৌধুরী সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (দ্বিতীয় পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৬তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়: এক বাঁধনছেঁড়া গণশিল্পী : সন্দীপন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (প্রথম পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৫তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ রামগতপ্রাণ দাস্যভক্তির শ্রেষ্ঠ বিগ্রহ হনুমানজি : রিঙ্কি সামন্ত লুইজ গ্লিক ও সাহিত্যে সমকালীনতা : সাইফুর রহমান ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৪তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে কি করা হচ্ছে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন সাহিত্যে যুদ্ধ, যুদ্ধে সাহিত্য : মিল্টন বিশ্বাস রবীন্দ্রনাথ কখনও শিমুলতলা আসেননি : জমিল সৈয়দ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৩তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪৩১-এর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

শ্রী রামচন্দ্র ও হিন্দু বাঙালি : উৎপল আইচ

উৎপল আইচ / ৭৫ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

আমরা হিন্দু বাঙালিরা শক্তির উপাসক, শাক্ত।  আমরা মাতৃ-পূজায় বিশ্বাসী। আমরা আমিষ খেতে অভ্যস্ত। আমাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক বাঙালি আছেন যারা বৈষ্ণব, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ নিরামিষাশী। তবে তাঁরা সংখ্যায় খুবই কম।

উপরের কথাগুলো যেমন সত্য, তেমনি সত্য হচ্ছে যে আমরা সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী। স্বামী বিবেকানন্দ সেই সনাতন ধর্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আমরা অতি অবশ্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরকে মানি। অন্য সমস্ত হিন্দুদের মত আমাদের অর্থাৎ বাঙালিদের কাছেও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিপালক হচ্ছেন ভগবান বিষ্ণু। আর শ্রীরামচন্দ্র হচ্ছেন বিষ্ণুর অবতার। আবার বিস্মিত হয়ে দেখি যে শ্রীরাম বিষ্ণুর অবতার হওয়া সত্ত্বেও মূলত শিব-এর আরাধনা করতেন। আবার শ্রীকৃষ্ণও বিষ্ণুর অবতার। আর বিষ্ণুর উপাসকরা বৈষ্ণব। মহাপ্রভু চৈতন্যদেব বৈষ্ণব ছিলেন আর রামপ্রসাদ — রামকৃষ্ণ ছিলেন শাক্ত। তারাপীঠের বামাক্ষ্যাপা ছিলেন তান্ত্রিক সাধক। আমরা এঁদের সবাইকে কমবেশি সমান শ্রদ্ধা করি।

বৈষ্ণব চৈতন্যদেব কি শাক্ত ধর্মের বিরোধী ছিলেন? নবদ্বীপে পোড়ামাতলা একটা বিশিষ্ট শাক্ত তীর্থস্থল। সেটা মহাপ্রভুর সময়েও ছিল।

আমরা দেখেছি শচীমাতা শিশু-নিমাই এর মঙ্গল কামনায় পৌরাণিক দেবী মা ষষ্ঠীরও পুজো করেছেন। মা ষষ্ঠী সমস্ত শিশুদের মঙ্গল করেন। মূলতঃ তাঁর কৃপায় নিঃসন্তান দম্পতির সন্তান লাভ হয়; অর্থাৎ তিনি সন্তানদাত্রী। আবার তিনিই সন্তানের রক্ষাকর্ত্রী।

আসলে আমাদের বাঙালিদের মধ্যে বৈষ্ণব, শাক্ত ধর্ম আর পুরাণ ইত্যাদি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। আমরা বাঙালিরা মনসা পূজা, শীতলা পূজা, ইতু পূজা ইত্যাদি আরও অনেক পূজা করি। আমরা লক্ষ্মী, সরস্বতী পূজা করি এবং কার্তিক পূজা ইত্যাদিও করি।

বাঙালির সবচাইতে বড় ধর্মানুষ্ঠান হচ্ছে দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজা আগে বসন্তকালে হত। শরৎকালে কেন হওয়া শুরু হল? সে গল্প আমাদের সকলের জানা। তারমানে বিষ্ণুর অবতার ভগবান রামও মা দুর্গার আরাধনা করেছিলেন আর আমরাও সেই থেকে শরৎকালে দুর্গাপূজা করে আসছি। আমরা যদি শরৎকালে অসময়ে দুর্গাপূজা করতে পারি তবে রামচন্দ্রকে অস্বীকার করি কিভাবে?

বাল্মীকি রামায়ণ বোঝার মত সংস্কৃত জানা ভারতবাসী খুব কম রয়েছে। আমরা কৃত্তিবাসী রামায়ণ পড়ে আসছি ১৫ শতাব্দী থেকে। আর গোস্বামী তুলসীদাস ১৬৩৩-এ রামচরিত মানস রচনা করেন।কৃত্তিবাস ওঝার আনুমানিক মৃত্যুর বছর ছিল ১৪৬১। হিন্দিভাষীরা তাই কিছুতেই বাঙালিদের টপকে রামচন্দ্রের সেবকের দাবীদার হতে পারেনা।

এবার আসি শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের কথায়। বাঙালিদের একটা  বড় অংশ রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ পন্থী। হ্যাঁ, ঠাকুর রামকৃষ্ণ ছিলেন মাকালীর উপাসক। ক্ষুদিরাম আর চন্দ্রমণি দেবীর চতুর্থ সন্তান ছিলেন আমাদের রামকৃষ্ণদেব। ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায়ের পিতৃদেবের নাম ছিল মানিকরাম চট্টোপাধ্যায়। তাঁর তিন পুত্র আর দুই কন্যা। পুত্রদের নাম রামকুমার, রামেশ্বর আর রামকৃষ্ণ। দুই কন্যার নাম কাত্যায়নী আর সর্বমঙ্গলা। পুত্রসন্তানদের নাম শ্রীরামচন্দ্রের উপর আর দুই কন্যার (তৃতীয় এবং কনিষ্ঠতম বা পঞ্চম) নাম শ্রীশ্রী দুর্গার উপর রাখা হয়েছিল। আমরা শ্রীশ্রীকথামৃতের ব্যক্তি-পরিচয়ে দেখতে পাই যে “শ্রী রামচন্দ্রের প্রতি ভক্তি তাঁহাতে বিশেষ প্রকাশ ছিল এবং তিনি নিত্যকৃত্য সন্ধ্যাবন্দনাদি সমাপন করিয়া প্রতিদিন পুষ্পচয়ণপূর্বক রঘুবীরের পূজান্তে জলগ্রহণ করিতেন।” তাঁর গৃহদেবতা ছিলেন রঘুবীর। ঠাকুর রামকৃষ্ণের ছোটবেলার ডাকনাম ছিল গদাধর, গদা যার অস্ত্র অর্থাৎ বিষ্ণু। ছোটবেলায় তিনি বাড়িতে থেকে রঘুবীরের বিগ্রহ সেবা করতেন। কথামৃতে আমরা দেখি ঠাকুর (সোমবার, ১৭ই ডিসেম্বর ১৮৮৩) বলছেন, “আমি ‘রাম’ ‘রাম’ করে পাগল হয়েছিলাম। সন্ন্যাসীর ঠাকুর রামলালাকে লয়ে লয়ে বেড়াতাম। তাঁকে নাওয়াতম, খাওয়াতাম, শোয়াতাম। যেখানে যাব, – সঙ্গে করে লয়ে যেতাম। ‘রামলালা রামলালা’ করে পাগল হয়ে গেলাম।” শ্রীরামকৃষ্ণ তো অন্যদের বলেছেনই, কাশীপুর উদ্যানবাটীতে লীলা সংবরণের আগে স্বামীজীকে একান্তে জানিয়ে গিয়েছেন, “যেই রাম, যেই কৃষ্ণ, ইদানীং সেই রামকৃষ্ণ”।

আমি একজন নেতাজীভক্ত। ছোটবেলায় (১৯১২-১৩ সালে) কটক থেকে মাকে লেখা একটা চিঠিতে সুভাষচন্দ্র লিখেছিলেন, “আজকাল বাঙালীদিগের মধ্যে অনেকে পাশ্চাত্ত‍্য শিক্ষা পাইয়া নাস্তিক ও বিধর্মী হইয়া যায় — দেখিলে বড় কষ্ট হয়।” সেসময় আরেকটা চিঠিতে লিখেছিলেন, “দক্ষিণাত্যে দেখি — স্বচ্ছসলিলা, পুণ্যতোয়া গোদাবরী… কি পবিত্র নদী! দেখিবামাত্র বা ভাবিবামাত্র রামায়ণে পঞ্চবটীর কথা মনে পড়ে — তখন মানসনেত্রে দেখি সেই তিনজন — রাম, লক্ষণ ও সীতা, সমস্ত রাজ্য ও সম্পদ ত্যাগ করিয়া, সুখে, মহাসুখে, স্বর্গীয় সুখের সহিত গোদাবরী-তীরে কালহরণ করিতেছেন —” “আবার রামায়ণের আর একটি দৃশ্য মনে পড়ে। তখন দেখি বাল্মীকির সেই পবিত্র তপোবন — দিবারাত্র মহর্ষির পবিত্র কন্ঠোদ্ভূত পূত বেদমন্ত্রে শব্দায়িত — দেখি বৃদ্ধ মহর্ষি আজিনাসনে বসিয়া আছেন — তাঁহার পদতলে দুইটি শিষ্য — কুশ ও লব — মহর্ষি তাঁহাদিগকে শিক্ষা দিয়েছেন।”

বৃহত্তর বাংলায় নাকি ২৫ টা রামমন্দির ছিল। তা জানার আমি প্রয়োজন বোধ করিনা। এখন সেই রামও নেই, সে অযোধ্যও নেই। রামে মারলেও মরবো, রাবণে মারলেও মরবো। আমরা বেশীরভাগই ছাপোষা লোক। আমাদের তিনটাই সম্বল। “বল বল তিন বল। ভোজনে অম্বল, শয়নে কম্বল, মরণে ‘রাম বল’।”

শেষ করার আগে একটা কথা বলতে চাই। শুরুতেই বলেছিলাম যে আমরা শাক্ত, আমিষ ভোজনে অভ্যস্ত। কিন্তু একটা কথা ইচ্ছে করেই চেপে গিয়েছিলাম। আমরা কিন্তু নিরামিষাশীও। যেমন আমিষ খাই, নিরামিষও খাই। ঠিক তেমনি যেমন দুর্গা পূজা করি, ঠিক তেমনিই শ্রীরামচন্দ্র কে পুজো করি। আমরা শ্রীকৃষ্ণের পূজা করি আবার শিবেরও পূজা করি। আমরা বাঙালি। বিষ্ণু মহেশ্বর আমাদের মজ্জায় রয়েছেন। শ্রীরামলালা আমাদের ডি-এন-এ তে আছেন এবং চিরজীবন থাকবেন। স্মৃতিভ্রম হওয়ায় আমাদের অনেকেই সেকথা জানেন না। তাঁরা যদি কখনও এটা বুঝে ফেলেন এবং শ্রীরামচন্দ্রকে স্বীকার করে নেন, তবে আমরা কেউই ব্যঙ্গ করে ‘ভূতের মুখে রাম নাম’ বলতে পারবো না। তাঁরাও ‘উল্টো বুঝলি রাম’ বলে আমাদের প্রত্যুত্তর দেবার সুযোগ পাবেন না।

আগস্ট ৬, ২০২০


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

বাংলা নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩০ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন