প্রফুল্ল চন্দ্র সেন এর পূর্বসূরী ডাঃ বিধান রায়ের মন্ত্রিসভার বন ও মৎস্য দপ্তরের মন্ত্রী হেমচন্দ্র নস্করের ওই মন্ত্রিসভা সম্পর্কে একটি সরস বক্তব্য দিয়ে লেখা শুরু করছি। তিনি বলেছিলেন, “আমরা সবাই কচ্ছপ মন্ত্রী, বাড়ি থেকে গুটিগুটি করে গাড়িতে চেপে রাইটার্সে আসি, আসা মাত্রই ডাঃ রায় আমাদের উল্টে দেন, আমরা হাত পা ছুঁড়তে থাকি কিন্তু নড়তে চড়তে পারি না। আবার পাঁচটার সময় তিনি আমাদের সোজা করে দেন, আমরা গুটি গুটি পায়ে গাড়িতে চেপে বাড়ি ফিরে যাই।”
রসিকতা হলেও এই কথাগুলির মধ্যে যে একটা ভয়ংকর সত্য এবং প্রতিবাদ আছে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ডাঃ বিধান রায় তাঁর মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা নিজের হাতেই রেখেছিলেন। সেখানে অন্যান্য মন্ত্রীদের ভূমিকা নগণ্য ছিল। বলা যায়, ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৬২ সালের ৩০ শে জুন পর্যন্ত তিনি তাঁর বিশ্বস্ত আমলাদের সাহায্যে প্রশাসন চালিয়ে গেছেন। সেখানে মন্ত্রীদের স্বাধীন ভাবে কিছু বলার বা করার ক্ষমতাই ছিল না। এই দম বন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে তাঁদের মুক্তি দিয়েছিলেন প্রফুল্ল চন্দ্র সেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের সৈনিক হিসেবে তখন থেকেই সহকর্মীদের প্রতি ক্ষমতা বন্টনের অভিজ্ঞতা এবং তার সুফল তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল। মন্ত্রীদের দপ্তর পরিচালনার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর খবরদারি শিথিল করে তিনি প্রত্যেককে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সেই সময়কার শ্রী সরোজ চক্রবর্তী এই কর্মপদ্ধিটিকে A big departure বলে অভিহিত করেছিলেন। এর ফলে মন্ত্রীরা স্বেচ্ছাচারী বা অগোছালো হয়ে গিয়েছিলেন এমন কিন্তু নয়। বরং তাঁরা আরও বেশি করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আসতেন এবং তাঁর পরামর্শ নিতেন।
প্রথমে ডাঃ বিধান রায়ের মন্ত্রিসভার অসামরিক সরবরাহ দপ্তরের মন্ত্রী হয়েছিলেন প্রফুল্ল চন্দ্র সেন। তখন খাদ্য দপ্তর নামে কোন দপ্তরের নামকরণ হয়নি, আসলে এটাই ছিল খাদ্য দপ্তর। কেউ দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছিলেন না বলে অগত্যা প্রফুল্লচন্দ্র সেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন, যেমনটা হয়েছিল প্রথম আরামবাগে আসার ক্ষেত্রেও। সে গল্প পরে বলা যাবে। প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের ভাগ্যটাই বোধ হয় এরকম, চিরকাল দূর্গম পথে তাঁকেই এগিয়ে যেতে হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রী হিসেবে প্রফুল্লচন্দ্র সেনের অভিজ্ঞতা ছিল দূর্বিষহ। পরবর্তীকালে এই দপ্তরের সঙ্গে কৃষি দপ্তরের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল তাঁকে। দুটি ক্ষেত্রেই অনেক বাধা পার হয়েও অভিনব সব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৬২ সালের পয়লা জুলাই অকস্মাৎ প্রয়াত হলেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। অতুল্য ঘোষের প্রস্তাবে এবং কালীপদ মুখোপাধ্যায়ের সমর্থনে সর্বসম্মতিক্রমে মুখ্যমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হলেন প্রফুল্ল চন্দ্র সেন। এমনিতেই শেষের দিকে ডাঃ রায়ের মন্ত্রিসভায় দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন প্রফুল্ল চন্দ্র সেন, তাই অনিবার্যভাবেই তাঁর নাম উঠে এসেছিল বিধান রায়ের উত্তরসূরী হিসেবে।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রফুল্ল চন্দ্র সেন বেশ কয়েকটি অভিনব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন যা আজও আমাদের চমকিত করে।
বাংলা ভাষার ব্যবহার : — তখনো ইংরেজ শাসনের ঘোর কাটেনি, বিধানসভায় সরকারপক্ষ ও বিরোধীপক্ষের সকলেই ইংরেজিতে বক্তৃতা দিচ্ছেন, সেই সময়ে ঝকঝকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত প্রফুল্ল চন্দ্র সেন সেখানে বাংলা ভাষাকে সম্মান জানিয়ে বাংলায় বক্তব্য রাখতে শুরু করলেন। পরবর্তীকালে প্রায় সকলেই তাঁকে অনুসরণ করেছিলেন।
আমদরবার : — মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরের মাস থেকেই তিনি আমদরবার শুরু করেন। সেখানে তিনি নিজে জনসাধারণের কথা তাদের অভাব অভিযোগের কথা শুনতেন এবং যথাসাধ্য সমাধানের চেষ্টা করতেন। এই কর্মসূচি এতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে একদিন ১১ জন সহকর্মীকে নিয়ে প্রফুল্লচন্দ্র সেন ১৬ শত মানুষের আবেদন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
জেলায় জেলায় মন্ত্রিসভা : — তিনি প্রতি জেলায় মন্ত্রিসভার বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যাতে জেলার বিশেষ সমস্যাগুলি সরাসরি আলোচনার মধ্যে উঠে আসে। এই কর্মসূচিও বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এর ফলে প্রচুর গণমুখী প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছিল, মানুষের চাহিদা এবং বক্তব্য সম্মানিত হয়েছিল সরকারের দ্বারা।
প্রফুল্ল চন্দ্র সেন এর মুখ্যমন্ত্রিত্বকালে অসংখ্য সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। বিভিন্ন দিক থেকে অসহযোগিতা ও প্রতিকূলতায় অস্থির হয়েছিল সেই সময়কাল। এমনকি প্রকৃতিও রুদ্ররোষ দেখিয়েছে বারে বারে। তার মধ্যেও মানুষের সেবা থেকে সমাজের মঙ্গল থেকে এক মুহূর্ত বিরত থাকেননি তিনি। তাই তিনি সাধারণ মানুষের মনের মনিকোঠায় স্থান পেয়েছেন চিরকালের জন্য।
ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে, ধন্যবাদ জানাই লেখক শ্রী দেবাশীষ শেঠ কে
অনেক অজানা তথ্য জানলাম। এই উল্লেখযোগ্য সংবাদ শুধু আমাকে নয় অনেক মানুষকেই সমৃদ্ধ করবে বলে আমার বিশ্বাস। আশা করি আপনার আরো শ্রী বৃদ্ধি হোক । এরকম তথ্যসমৃদ্ধ আরো সংবাদের অপেক্ষায় রইলাম।
অনেক অজানা তথ্য জানলাম। এই উল্লেখযোগ্য সংবাদ শুধু আমাকে নয় অনেক মানুষকেই সমৃদ্ধ করবে বলে আমার বিশ্বাস। দেবাশীষ বাবু আশা করি আপনার আরো শ্রী বৃদ্ধি হোক । এরকম তথ্যসমৃদ্ধ আরো সংবাদের অপেক্ষায় রইলাম।
এরকম তথ্যসমৃদ্ধ সংবাদ পরিবেশনের জন্য প্রথমেই নিউজ পেজফোর সংবাদ মাধ্যমকে ধন্যবাদ। এই সংবাদমাধ্যমে জনপ্রিয় লেখক এবং সাংবাদিক দেবাশিস বাবুর সংবাদ পরিবেশনে অনেক অজানা তথ্য জানলাম এবং সমৃদ্ধ হলাম। পরবর্তী সময়ে এরকম আরো সংবাদের অপেক্ষায় রইলাম।