সোমবার | ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:৫৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠিতে তাঁর স্পেনযাত্রা বাতিলের অজুহাত : অসিত দাস ফ্ল্যাশব্যাক — ভোরের যূথিকা সাঁঝের তারকা : রিঙ্কি সামন্ত সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (চতুর্থ পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস মিয়ানমার সংকট, প্রতিবেশি দেশের মত বাংলাদেশকে নিজস্ব স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সিকাডার গান’ সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (তৃতীয় পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (শেষ পর্ব) : উৎপল আইচ সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (দ্বিতীয় পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (চতুর্থ পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (শেষ পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ প্রথম পাঠ — সায়র আলমগীরের গল্পগ্রন্থ ‘এক মন অন্য মন’ প্রেমময়তার গাল্পিক দলিল : সৌমেন দেবনাথ আন্তন চেখভ-এর ছোটগল্প ‘গুজবেরি’ সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (প্রথম পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (তৃতীয় পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৭তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ স্প্যানিশ ফ্লু থেকে বাঁচতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্পেনে গেলেন না : অসিত দাস ভোটের হার কম, ভোটারদের উৎসাহ কম, চিন্তায় বিজেপি : তপন মল্লিক চৌধুরী সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (দ্বিতীয় পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৬তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়: এক বাঁধনছেঁড়া গণশিল্পী : সন্দীপন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (প্রথম পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৫তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ রামগতপ্রাণ দাস্যভক্তির শ্রেষ্ঠ বিগ্রহ হনুমানজি : রিঙ্কি সামন্ত লুইজ গ্লিক ও সাহিত্যে সমকালীনতা : সাইফুর রহমান ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৪তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে কি করা হচ্ছে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন সাহিত্যে যুদ্ধ, যুদ্ধে সাহিত্য : মিল্টন বিশ্বাস রবীন্দ্রনাথ কখনও শিমুলতলা আসেননি : জমিল সৈয়দ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৩তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়-এর ছোটগল্প ‘বিকাশের বিয়ে’
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪৩১-এর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

জেলেপাড়ার সঙ : অসিত দাস

অসিত দাস / ৯৫ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৪

বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ বিশেষ সংখ্যার লেখা।

কলকাতার মধ্যে আস্ত একটা জেলেপাড়া আছে জেনে আধুনিক কলকাতার নব্যযুবারা অবাক হবে। বস্তুত মাছধরার জেলেদের অস্তিত্বই নেই প্রপার কলকাতায়। লবণহ্রদের দিকে সরে গেছে মৎস্যশিকারীদের ডেরা।

কলকাতা শহরের জেলেপাড়া বলতে বোঝাত বউবাজার এবং ক্রিক রো-র মধ্যবর্তী পল্লি অঞ্চল৷ পরবর্তীকালে জেলে সম্প্রদায়ের সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার ফলে যে-যে এলাকা দিয়ে জেলেপাড়ার সঙ-এর মিছিল ঘুরত, সেইসব অঞ্চলেরও ‘জেলেপাড়া’ নামকরণ হয়েছিল৷ ঐতিহাসিক উপেন্দ্রনাথ বসু লিখেছেন — ‘‘প্রাচীন কলিকাতার একটি ক্রীক বা খাল হইতে এই রাস্তার নাম ক্রীক রো হইয়াছে৷ ওয়েলিংটন স্কোয়ারের পূর্ব হইতে আরম্ভ হইয়া এই রাস্তা পূর্বদিকে সার্কুলার রোড পর্যন্ত গিয়াছে৷ বহু পূর্বে একটি খাল ক্রীক রো, ওয়েলিংটন স্কোয়ার, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট প্রভৃতি স্থান দিয়া গঙ্গায় পড়িত৷ শহরের আবর্জনা দিয়ে এই খাল ভরাট করিয়া এই রাস্তা তৈয়ারী করা হইয়াছে৷ ক্রীক রো-র নিকটের অঞ্চলকে ডিঙ্গা-ভাঙ্গা বলা হয়৷ ইহা হইতে মনে হয় বর্ষাকালে এই খালে স্রোত খুব প্রবল হইত এবং তাহাতে কখনো-কখনো নৌকা ভাঙ্গিয়া বা ডুবিয়া যাইত৷ ক্রীক রো-র উত্তরে জালিয়াপাড়া লেন এবং এই অঞ্চলে অনেক জেলে পরিবার বহুদিন হইতে বাস করিতেন৷ ইংরেজিতে একটি কথা আছে — ‘The fish follows the water and the fisherman follows the fish — অর্থাৎনদী, খাল, বিল ইত্যাদি যেদিকে যায়, মাছও সেদিকে যায় এবং মাছ যেদিকে যায়, জেলেরা সেইদিকে যায়৷ ক্রীক রো-র উত্তরে জেলেদের বসতি হইতে মনে হয়, ক্রীক রো-র খালটি একসময়ে মৎস্যে পরিপূর্ণ ছিল…৷’’

হরিসাধন মুখোপাধ্যায়ের ‘কলিকাতা সেকালের ও একালের’ বইয়েও এই খালটির বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যায়৷ উপরন্তু বেলেঘাটা দিয়ে এই খাল যে ধাপা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, তাও তিনি জানিয়েছেন৷ শুধু নৌকাই নয়, এই খালে জাহাজও চলত এককালে৷ ডিঙা-ভাঙায় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ও মাস্তুল প্রভৃতির চিহ্ণ পাওয়া গিয়েছিল৷ অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, জেলেপাড়ার ধীবররা মাছ ধরতে নৌকো বা ডিঙি করে গঙ্গায় যেতেনই, জাহাজে করে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত যেতে অভ্যস্ত ছিলেন৷ অর্থাৎ জেলে পাড়ার অনেক জেলেই সারেঙ তথা জাহজের কাপ্তেন বা ব্যপকার্থে নাবিক ছিলেন৷ ‘সারেঙ’ শব্দটি আসছে ফারসি ‘সরহংগ’ শব্দ থেকে৷ সরহংগ ও সঙ শুনতে খুব কাছাকাছি৷ আমর মনে হয়, সরহংগ-সহংগ-সংগ্‌-সঙ—এই পথেই এসেছিল জেলেপাড়ার সঙ৷ সংসৃকত শব্দ ‘গড্ডর’ থেকে বাংলা ‘গড়ের’ ও ‘গাড়ল’ শব্দ দুটি পাওয়া যায়৷ মুখে কালিঝুলি মাখা সঙ আসছে সংস্কৃতজ ‘সাংগ’ শব্দটি থেকে৷ রগড় করার জন্য এই সঙ জোকারের সমগোত্রীয়৷ বাঙালি এই দুই সঙ-কে গুলিয়ে ফেলে কয়েকশো বছর ধরে হাবুডুবু খাচ্ছে৷ সরহংগ তথা সারেঙ তথা সঙ-রা মৎস্য শিকারের অভিলাষে গঙ্গা দিয়ে সমুদ্রযাত্রার পর ফিরে এসে তাদের অভিজ্ঞতার কাহিনি গান বা বীরগাথার মধ্যে দিয়ে পাড়া ঘুরে-ঘুরে লোককে জানাতেন৷ এর সঙ্গে কিছু নৈতিকতা, ভালোমন্দের ব্যাখ্যা,কিছু বিদ্রোহী বুলি ও অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে কিছু সাংগীতিক শ্লোগান তাঁরা দিয়ে থাকেন এবং এখনও দেন৷ মাছধরার জন্য সমুদ্রযাত্রার শেষে ঘরে ফিরে চৈত্রসংক্রান্তিতে সরহংগ তথা সঙ-রা জেলেপাড়া থেকে তথাকথিত সংযাত্রা বার করতেন৷ কালের বিবর্তনে সমুদ্রযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়, তবু জেলেপাড়ার সঙ-এর পথ-পরিক্রমার রেশ যুগ যুগ ধরে থেকে যায়৷ সঙ-রা পণপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন৷ অর্থহীন লোকলৌকিকতার নিন্দা করেছেন, নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য এখনও সমাজে কাজ করে চলেছেন৷ সঙ-সম্প্রদায়ের হাসির গান যেমন সকলকে আনন্দ দিত, তেমনি তারা সমাজের অবিচার ও দুনীর্তির বিরুদ্ধে কশাঘাত করে দায়িত্বশীল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করত৷ শিক্ষিত ও নিরক্ষর জনগণ সঙ-এর ছড়া, গান ও পথনাটিকার মাধ্যমে সমাজের চলচ্ছবি দেখতে পেতেন৷ ইংরেজের কুশাসন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধেও সঙ-সমাজ গর্জে উঠেছে৷ এখন যেটা জিজ্ঞাসা, জেলেপাড়ার সঙ কি কোনো সমুদ্রসংগীত বাsea-ballad -এর উত্তরাধিকার বহন করছে? কোনো বীররসসিক্ত জয়যাত্রার বিবরণ কি নিহিত আছে জেলেপাড়ার সঙ-এর হাসির হুল্লোড় ও জ্ঞানের গার্জেনির মধ্যে?

আপাতত যে কয়েকটি সঙ-ছড়ার দেখা পাচ্ছি, তার মধ্যে কিন্তু সঙ-এর সাগরযাত্রার চিহ্ণ স্পষ্টতই প্রতীয়মান৷

এক

সাগরপারের নাগর-ধরা

স্বেচ্ছাচারিণী

তারাই হল ভারতনারীর

কেচ্ছাকারিণী৷

পবিত্র তীর্থস্থানে লম্পট ও নেশাখোরের বিরুদ্ধেও গর্জে ওঠে জেলেপাড়ার সঙ৷ তরঙ্গমথিত সমুদ্রের দেখা মিলবে এই ছড়াতেও—

আগুলের জ্বালা ধরে অঙ্গে

দেখে দেখে পূণ্যভূমি সাধের বঙ্গে

রঙ্গিনী ভঙ্গিনী সঙ্গিনী সঙ্গে

ভদ্দর মদ্দরা যান সাগরসঙ্গম স্থানে৷

দুই

১৯১৭ সালে চৈত্রসংক্রান্তির দিন জেলেপাড়ার সঙের পালা, গান ও ছড়া ছাড়াও আর-একটি বিশেষ গান রচিত হয়েছিল৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত গানটির নাম ‘বিদ্যার মন্দিরে সিঁদ’৷ ভারতচন্দ্র রায়গুণাকারের অন্নদামঙ্গল কাব্যের অন্তর্গত ‘বিদ্যাসুন্দর’ উপাখ্যান জানা থাকলে তবেই এই ছড়ার রসগ্রহণ সম্ভব৷ বলা বাহুল্য, এই ছড়াতেও এসে গেছে সমুদ্রচিহ্ণ৷

প্রাসঙ্গিক পঙ্‌ক্তিটি উল্লেখ্য—

জয়ী হতে প্রবেশ পরীক্ষায়

পড়ুয়াবেশে এসেছিল হায়

গুণসিন্ধুসুত নব যুব রায় এই শহরে

মশান ভাসে নয়ন ঝোরে৷

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে জেলেপাড়ার সঙের ছড়ায় ও গানে ঘুরে-ফিরে আসছে সমুদ্রের জলকল্লোল৷ জেলেপাড়ার সঙরা আসলে জেলেপাড়ার সরহংগ৷ কালের বির্বতনে লোকমুখের অপভ্রংশে তারা সঙ (সং) বনে গেছে৷ সঙের মুখের ছাইপাঁশ ও কালিঝুলি ভেদ করে জাহাজের কাপ্তেন তথা নাবিকের চিহ্ণ স্পষ্টই ধরা পড়ে যাচ্ছে৷

জেলেপাড়ার ধীবর সম্প্রদায়ের সাংকেতিক একটা ভাষা ছিল। জেলেপাড়ার চৌহদ্দির বাইরের কলকাতাবাসী এর মর্মার্থ ভেদ করতে পারেননি। সমুদ্রযাত্রার সময় পর্তুগিজ ও ওলন্দাজ জলদস্যুদের মুখের ভাষাও হয়তো ভর করে ছিল জেলেপাড়ার সরহংদের তথা সঙদের উপরে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

বাংলা নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩০ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন