মঙ্গলবার | ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:২৫
Logo
এই মুহূর্তে ::
শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (প্রথম পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠিতে তাঁর স্পেনযাত্রা বাতিলের অজুহাত : অসিত দাস ফ্ল্যাশব্যাক — ভোরের যূথিকা সাঁঝের তারকা : রিঙ্কি সামন্ত সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (চতুর্থ পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস মিয়ানমার সংকট, প্রতিবেশি দেশের মত বাংলাদেশকে নিজস্ব স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সিকাডার গান’ সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (তৃতীয় পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (শেষ পর্ব) : উৎপল আইচ সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (দ্বিতীয় পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (চতুর্থ পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (শেষ পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ প্রথম পাঠ — সায়র আলমগীরের গল্পগ্রন্থ ‘এক মন অন্য মন’ প্রেমময়তার গাল্পিক দলিল : সৌমেন দেবনাথ আন্তন চেখভ-এর ছোটগল্প ‘গুজবেরি’ সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নাগরিকবৃত্তের যন্ত্রণা (প্রথম পর্ব) : মিল্টন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (তৃতীয় পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৭তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ স্প্যানিশ ফ্লু থেকে বাঁচতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্পেনে গেলেন না : অসিত দাস ভোটের হার কম, ভোটারদের উৎসাহ কম, চিন্তায় বিজেপি : তপন মল্লিক চৌধুরী সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (দ্বিতীয় পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৬তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়: এক বাঁধনছেঁড়া গণশিল্পী : সন্দীপন বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের আই. সি. এস এবং বইয়ে ভুল-ত্রুটি (প্রথম পর্ব) : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৫তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ রামগতপ্রাণ দাস্যভক্তির শ্রেষ্ঠ বিগ্রহ হনুমানজি : রিঙ্কি সামন্ত লুইজ গ্লিক ও সাহিত্যে সমকালীনতা : সাইফুর রহমান ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৪তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে কি করা হচ্ছে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন সাহিত্যে যুদ্ধ, যুদ্ধে সাহিত্য : মিল্টন বিশ্বাস রবীন্দ্রনাথ কখনও শিমুলতলা আসেননি : জমিল সৈয়দ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৩তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪৩১-এর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ড্যাঞ্চিবাবুদের দেশ, মধুপুর, বাঙালির স্বর্গ (প্রথম পর্ব) : জমিল সৈয়দ

জমিল সৈয়দ / ৯৩ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪

গত শতাব্দীতে কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে একজন প্রসিদ্ধ লেখক ছিলেন। সরস রম্য কাহিনীতে তাঁর সমধিক খ্যাতি ছিলো। ৯৩ বছর আগে প্রকাশিত তাঁর একটি উপন্যাসে, পাত্র-পাত্রীরা হাওয়াবদলের জন্য হাজির হয়েছে মধুপুরে।

লিখছেন কেদারনাথ —

মাতঙ্গিনী বললেন, আহা, কি হাওয়া — প্রাণ জুড়িয়ে দেয়, কি খোলা জায়গা, কি সুন্দর মহুয়া গাছ, কি সব আরামকুঞ্জ! স্ফূর্তি যেন শিরায় শিরায় ফর ফর করে ঘোরে।

আচার্য বললেন, বাঃ সব ছাঁটা ছাঁটা ভদ্রলোক, বাছা বাছা ভদ্রলোক — রায় বাহাদুর, রায় সায়েব, জমিদার, তস্য সম্বন্ধী — বাঃ জায়গা বটে।

নবনী বললে, রাস্তা কি পরিষ্কার — দোয়ানি খোয়াবার ভয় নেই, না কুটনোর খোলা, না চিংড়ী মাছের খোসা। মহিলারা কেমন মোজা এঁটে সোজা হয়ে হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্চেন। কোথাও গ্রামোফোনে গোবিন্দলালের অভিনয় চলেছে, কোথাও হারমোনিয়ামের সঙ্গে নারীকণ্ঠে “বাঁধ না তরীখানি আমার এই নদীকূলে” — কি মধুর মিনতি। চড় চড় করে লাইফ বেড়ে যায়। আবার ভোর না হতেই ফেরিওয়ালারা ঘর ঘর রুটি, বিস্কুট, আণ্ডা, আণ্ডার-মা, ফেরি করে বেড়াচ্চে — চায়ের টেবলে যেন বসন্তোৎসব লেগে যায়! সকাল হতেই “Englishman”, “Statesman” হাজির — স্বর্গ — স্বর্গ!

মধুপুর : ধনী বাঙালির হাওয়াবদল

হুগলির ইটাচুনা রাজবাড়ি অনেকেই ঘুরে এসেছেন, আমিও একবার ইটাচুনায় রাত্রিবাস করে এসেছি। এঁরা কেউ “রাজা” উপাধি পাননি, তবু লোকের মুখে “রাজবাড়ি” শব্দটাই শোনা যায়। হয়তো রাজার বাড়ি না হলেও, বাড়ির রাজা তো বটেই। তাঁরা নাকি মারাঠা বর্গীদের বংশধর, তাঁদের ‘কুন্দন” পদবি এখন “কুণ্ডু”তে রূপান্তরিত হয়েছে।

সেই বাড়ির বিজয়নারায়ণ কুণ্ডু রেলের ঠিকাদারি করতে এসেছিলেন মধুপুর-গিরিডি। তখন মধুপুর থেকে গিরিডি রেলপথের যোগসূত্র তৈরি হচ্ছে।

বিজয়নারায়ণ ওই ঠিকাদারি করে প্রচুর অর্থোপার্জন করেছিলেন। ইটাচুনায় কলেজ ও স্কুল তৈরি করেছিলেন। তিনিই মধুপুরে একাধিক বাড়ি বানিয়ে ফেললেন।

সেই বিজয়নারায়ণ কুণ্ডুর প্রদর্শিত পথে কলকাতা থেকে ধনী বাঙালিরা চললেন মধুপুর। বিজয়নারায়ণের পৌত্র দেবনারায়ণ কুণ্ডু মধুপুরে ৩২টি বাংলো বানিয়েছিলেন কলকাতার চেঞ্জার বাবুদের থাকার জন্য।

আশুতোষ মুখার্জি তখন কলকাতা হাইকোর্টের জাজ। এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তাঁর ইচ্ছে হলো, মধুপুরে একটি বাড়ি বানাবেন। ১৯০৪ সালে কুণ্ডুদের কাছ থেকে ১২ বিঘা জমি কিনলেন।

সেই জমিতে ১৯১২ সালে বিশাল বাড়ি বানালেন আশুতোষ। পিতার স্মৃতিতে এই বাড়ির নাম দিলেন ‘গঙ্গাপ্রসাদ হাউস’। গঙ্গাপ্রসাদ মুখার্জি হলেন আশুতোষের পিতা, তিনি তখন বেঁচে নেই।

সেই বাড়িতে গৃহপ্রবেশের সময় উপস্থিত থাকার জন্য আশুতোষ পীড়াপীড়ি করছেন তাঁর মা জগত্তারিণী দেবীকে। জগত্তারিণী দেবীর নামেই আশুতোষ মুখার্জি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করেছিলেন ‘জগত্তারিণী পদক’।

জগত্তারিণী ট্রেনে চাপতে ভয়ঙ্কর অনিচ্ছুক। কারণ, তিনি তো একা বাড়ি ছেড়ে মধুপুর যেতে পারেন না, তাঁর গৃহদেবতা ‘নারায়ণ’কে দেখবে কে?

তাঁকে বলা হলো, তিনি তাঁর গৃহদেবতাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন।

জগত্তারিণীর প্রবল আপত্তি, ট্রেনের কামরায় ছত্রিশ জাতের লোক ওঠে, সেখানে তাঁর গৃহদেবতার অসম্মান হবে।

জগত্তারিণী দেবীকে বোঝানো হলো, পুরো ফার্স্ট ক্লাশ কম্পার্টমেন্ট রিজার্ভ করে মধুপুর যাওয়া হবে। তিনি তাঁর নারায়ণকে কোলে নিয়ে বসে থাকবেন।। নিমরাজি হয়ে জগত্তারিণী ট্রেনে উঠলেন।

মধুপুর পৌঁছে তাঁর হুকুম হলো, গো-রেচনা জোগাড় করে তাই দিয়ে তাঁর গৃহদেবতাকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। … চাকর একটা বাটি হাতে দৌড়োলো মাঠে, যেখানে গরু চরছে। গরুদের পিছনে দৌড়াদৌড়ি করে গো-রেচনা সংগ্রহ করা হলো।

গৃহপ্রবেশের আগে তাঁরা উঠেছিলেন কুণ্ডুদের বাড়িতে।

গৃহপ্রবেশের দিন — “আমরা সবাই মধুপুরের রাস্তা দিয়ে চলেছি নতুন গৃহে প্রবেশ করতে পদব্রজে, — সর্বাগ্রে চলেছেন — আমাদের পিতৃদেব নন — পিতামহী — সংসারের সর্বজ্যেষ্ঠা কর্ত্রী, — হেঁটে — একটা গরুর লেজ ধরে। সে-অভিনব দৃশ্য এখনও চোখের উপরে ভাসছে।” — লিখেছেন আশুতোষের পুত্র পর্যটক ও হিমালয়যাত্রী উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় — ৭৬ বছর পরে।

বাড়ির রোয়াকে দুইপাশে ইট-সিমেন্ট বাঁধানো দুটি বেঞ্চ বানানো ছিলো, তাতে আশুতোষের সঙ্গে তাঁর বন্ধুরা ও সাক্ষাৎপ্রার্থীরা বসে থাকতেন।

আশুতোষ সম্পর্কে একটি গল্প আছে। তিনি এই মধুপুর থেকে ট্রেনে কলকাতায় ফিরছিলেন। তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে, এক ব্রিটিশ সাহেব তাঁর জুতোজোড়া ট্রেনের জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দেন। আশুতোষও সাহেবের ঝোলানো কোট জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়ে বলেছিলেন, ওই কোট তাঁর জুতোজোড়াকে খুঁজতে গেছে। — এই কাহিনীর সত্যমিথ্যা আমি জানি না।

এবছর ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে গেছিলাম ‘গঙ্গাপ্রসাদ হাউস’-এর সন্ধানে। … কোথাও কিচ্ছু নেই। সেই বাড়ি নিশ্চিহ্ন। যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে। শুধু বারো বিঘা জমি ধু ধু করছে। অচিরেই সেখানে শুরু হবে নতুন ইমারত।

আশুতোষ মারা যান পাটনায়। মধুপুরে তাঁর একটি মূর্তি বসানো হয়েছিল তাঁর বাড়ির সামনে।

কোথায় গেল সেই মূর্তি?

শুধু, সামনের রাস্তাটির নামকরণ হয়েছে, আশুতোষ মুখার্জি রোড। [ক্রমশ]


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

বাংলা নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩০ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন