কামারপুকুরে জন্মস্থানে ঠাকুর রামকৃষ্ণের ১৮৯তম জন্মতিথি যথোচিত মর্যাদায় মহাসমারোহে পালিত হলো। বেলুড়মঠ ও জয়রামবাটি সহ দেশের বিভিন্ন রামকৃষ্ণদেবের মঠ ও মিশনে জন্মতিথি উপলক্ষে পূজা পাঠের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করা হয়। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকালে কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে বিশেষ পুজোপাঠের আয়োজন করা হয়। সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারী, ছাত্রছাত্রী-সহ অগণিত ভক্ত শোভাযাত্রা করে কামারপুকুর তীর্থ পরিক্রমা করেন। পুণ্যার্থী সমাগমে মঠ চত্বর এদিন উৎসব মুখর হয়ে উঠে।
মনে রাখতে হবে প্রতীচ্যের জ্ঞানী গুণীদের কাছে রামকৃষ্ণ প্রতিভাত হয়েছিলেন ‘ফেনোমেনন’ হিসেবে। অলডাস হাক্সলি, ক্রিস্টোফার ইশারউড, আঁদ্রে জিদ, রোমা রলাঁ, আর্নাল্ড টয়েনবি সকলেই বিমুগ্ধ শ্রীরামকৃষ্ণের ভাববিপ্লবে। এঁদের সকলের কাছে এক ‘অত্যাশ্চর্য আবির্ভাব’। মানবের এই ‘অত্যাশ্চর্যকে’ দেখার আগ্রহ চিরন্তন। একঘেয়েমি সংসারবন্ধন থেকে মনের আনন্দ মেটাতে আজও অসংখ্য মানুষ কামারপুকুর ও জয়রামবাটি ছুটে আসেন। দেখা মিলবে খড়ের ছাউনি আর মাটির দেওয়ালে উনিশ শতকের ছাপ। যা আজও অটুট। ঠাকুর রামকৃষ্ণের শোবার ঘরটুকু দেখলে মনে হবে এখনও তাঁর উপস্থিতি বিদ্যমান।
প্রসঙ্গত, উনিশ শতকের আরামবাগের সুখলালগঞ্জ আজকের কামারপুকুর। ১৮৩৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গদাধর জন্মগ্রহণ করেন। এখানে যেটা দেখার বিষয় তা হল — ঠাকুর যে ঢেঁকিশালে জন্মেছিলেন, সেখানেই শ্বেতশুভ্র মন্দিরে ঠাকুরের শান্ত-স্নিগ্ধ অপূর্ব মূর্তি। যা দেখলে হৃদয়শুদ্ধি তো ঘটবেই, সেইসঙ্গে পুণ্য সঞ্চয় হবে। মন্দিরের সামনেই নাটমন্দির। উল্লেখ করতেই হয় ঠাকুরের মন্দিরটির কথা। এই মন্দিরটি ১৯৪৯ সালে ১ মার্চ বিখ্যাত শিল্পী নন্দলাল বসুর পরিকল্পিত। পাশেই খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির দুটি ঘর আজও অটুট। একটি ঘরে ঠাকুরের জন্য বিছানা পাতাই আছে। অপর ঘরটিতে থাকতেন ঠাকুরের মধ্যম ভ্রাতা রামেশ্বর। পুত্র ও কন্যা নিয়ে বসবাস করতেন। ঠিক তার উল্টোপাশে রঘুবীর মন্দির। এই মন্দিরে এখনো রঘুবীর শিলা, শীতলাদেবীর ঘট। এখানে রামেশ্বর শিব পূজিত হন।
উল্লেখ্য, ঠাকুর রামকৃষ্ণের জন্মতিথি প্রতি বছর ধূমধাম করে পালন করা হয়। উৎসব উপলক্ষে এবারও মঠ প্রাঙ্গন সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। প্রথারীতি মেনে মঙ্গলারতি, বেদ পাঠ, স্তবগান করে পুজো শুরু হয়। সকাল সাড়ে ছয়টায় বিশেষ পুজো, চন্ডীপাঠ ও হোম হয়।
সাড়ে দশটায় মঠের ভিতর ও বাইরে খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণের আয়োজন করা হয়। মঠের অনুষ্ঠান মঞ্চে তরজা, সহজিয়া বটের বাউল সম্প্রদায় বাউল গান পরিবেশন করেন। বিকেল সাড়ে তিনটের সময় ধর্ম সভার আয়োজন করা হয়।
কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী লোকোত্তরানন্দ মহারাজ বলেন, ঠাকুরের জন্মতিথি উপলক্ষে মঠে এদিন বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। সকালে শোভাযাত্রা করে কামারপুকুর চটিতে গিয়ে বিবেকানন্দর মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। সেখান থেকে ডাকবাংলো ভবন চত্বরে ঠাকুর রামকৃষ্ণ, মা সারদা ও স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তিতে পুষ্প দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দুপুরে ২০ হাজারের বেশি ভক্ত এদিন খিচুড়ি প্রসাদ গ্ৰহণ করেছেন। ঠাকুরের জন্মতিথি উপলক্ষে ভক্তদের জন্য তিনদিনের ভক্তিমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী বুধবার পুজো অর্চনা, ভাগবত পাঠ-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে। স্থানীয় ১৮টি স্কুলের হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রীকে খাতা, পেন ছাতা দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার চৈতন্যচরিতামৃত, বিবেকান্দের জীবন ও বাণী পাঠ হবে। গরিব মানুষদের বস্ত্র বিতরণ করা হবে।
Khub bhalo laaglo lekhata pore