আরামবাগের মায়াপুর কল্যাণকেন্দ্রে শুক্রবার যথোচিত মর্যাদায় আরামবাগের গান্ধী প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের ১২৮তম জন্মতিথি পালিত হল। প্রফুল্ল চন্দ্র সেন স্মৃতি রক্ষা কমিটির উদ্যোগে এই বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আবক্ষ মূর্তিতে ফুল ও মালা দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন হুগলি জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা, আরামবাগের প্রাক্তন পুর প্রধান স্বপন নন্দী, আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিশির সরকার, জেলা পরিষদের সদস্য ও আরামবাগ লোকসভার তৃণমূল কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থী মিতালী বাগ, স্মৃতি রক্ষা কমিটির সম্পাদক সলিল চ্যাটার্জী, যুগ্ম সম্পাদক তথা বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক দেবাশিস শেঠ, আরামবাগ সাহিত্য শিল্প পরিষদের সম্পাদক বিভাংশু দত্ত-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রফুল্ল চন্দ্র সেন এর অনুরাগীরা। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন অমরেন্দ্র বাগ। সম্পাদক সলিল চ্যাটার্জী প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের স্মৃতি রক্ষা এবং তাকে ঘিরে উন্নয়ন সম্পর্কে বেশ কিছু প্রস্তাব দেন এবং সকলের সহযোগিতা প্রার্থনা করেন। উপস্থিত অতিথিবৃন্দ প্রফুল্ল চন্দ্র সেন এর জীবন আদর্শ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দেবাশিস শেঠ।
উল্লেখ্য , প্রফুল্ল চন্দ্র সেন এর জীবদ্দশা থেকেই এখানে কল্যাণ কেন্দ্রে তাঁর জন্মতিথি পালিত হয়। সেই রীতি মেনে চৈত্র মাসে নীলের দিন তাঁর জন্মতিথি পালন করে আসছে স্মৃতি রক্ষা কমিটি । এদিন এখানে উপস্থিত অতিথিরা এই মহান দেশপ্রেমিকের জীবন আদর্শ, তাঁর অনাড়ম্বর জীবনযাপন, মূল্যবোধ ইত্যাদি প্রসঙ্গে আলোচনা ও স্মৃতিচারণ করেন। প্রফুল্ল চন্দ্র সেন এর স্মৃতিকে সামনে রেখে আগামী দিনে কিভাবে জনসেবামূলক কাজকর্ম করা যায়, এই এলাকার উন্নয়ন ও তাঁর স্মৃতির যথাযথ সংরক্ষণ ইত্যাদি প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
প্রসঙ্গত, প্রফুল্ল চন্দ্র সেন এর জন্ম ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের খুলনা জেলার সেনহাটি গ্রামে। শনিবার নীল তিথির দিনে জন্ম বলে বাড়ির বড়োরা তাঁকে অনেকে নীলু বলে ডাকতেন। এ দিনটি ভূতনাথ অর্থাৎ শিবের তিথি বলে মা তাকে ভূতো নামেও ডাকতেন। পিতার কর্মসূত্রে বিহারের সাসারামের তাঁর শৈশব কেটেছে। পরবর্তীকালে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে বিএসসি পাশ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিলেত যাওয়ার ব্যবস্থা পাকা , এই সময় গান্ধীজীর আহবানে সাড়া দিয়ে সবকিছু ছেড়ে স্বদেশী স্কুল হুগলি বিদ্যামন্দিরে শিক্ষকতার কাজে যোগ দিলেন তিনি। সেখান থেকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সংগঠন গড়ে তুলতে প্রথমে আরামবাগে এলেন ১৯২১ সালে।
সেই সময় আরামবাগ মহকুমা অত্যন্ত দুর্গম অস্বাস্থ্যকর এবং অনুন্নত এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। তখন হুগলি থেকে কেউ আরামবাগে আসতেই চাইতেন না। প্রফুল্ল চন্দ্রের হাত ধরেই সবদিক থেকে আরামবাগের উন্নয়ন শুরু হয়। রাজা রামমোহন রায় ও শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জন্মভূমি আরামবাগকে প্রথম সম্মান জানিয়েছিলেন প্রফুল্ল চন্দ্র সেন। পরবর্তীকালে আরামবাগ মহকুমাকে কেন্দ্র করে এক সময় হুগলি জেলার স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের নেতৃত্বে।
স্বাধীনতার পর ১৯৪৮ সালে অসামরিক ও পরে খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সাল তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর অনাড়ম্বর জীবনযাত্রা, রাজনৈতিক সততা ও নিখাদ দেশপ্রেম আজও অনুপ্রাণিত করে আরামবাগের মানুষকে।
Congratulation to the reporter of page four also thanks for the published about p.sen. l shall appeal to the smrti rakshya committee for the development of that place.
খুব ভাল লেগেছে এই লেখা। আজকের অবক্ষয়ের যুগে
ওনার মতো মানুষদের কথা সবার জানা উচিত। ধন্যবাদ🙏