শুক্রবার | ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:৩২
Logo
এই মুহূর্তে ::
শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (সপ্তদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (প্রথম পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী নজরুল ও মধুপুর (প্রথম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (ষোড়শ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আলাউদ্দিন অল আজাদ-এর ছোটগল্প ‘আমাকে একটি ফুল দাও’ ধর্ম আর সাম্প্রদায়িকতাকে বিজেপি বড্ড বেশি জরুরি করে ফেলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকগীতি ঘাটু গান আজ অবলুপ্তির পথে : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (পঞ্চদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন হাসান আজিজুল হক-এর ছোটগল্প ‘স্বপ্নেরা দারুণ হিংস্র’ বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বেদেদের বৈচিত্র্যময় জীবনযাপনের কথা : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (চতুর্দশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন নাইন্টিন সেভেন্টিন ওয়ান : শৌনক দত্ত বিশ্বপরিব্রাজক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (ত্রয়দশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন নন্দিনী অধিকারীর ছোটগল্প ‘শুভ মাতৃদিবস’ গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘ফ্লোরেন্স থেকে রাধানগর রেনেসাঁস ও রামমোহন’-এর মোড়ক উন্মোচন : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ১৯২১-এ কথা দিয়েও স্পেনে গেলেন না কেন রবীন্দ্রনাথ : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথ : তারাপদ রায় ও তার অন্ত নাই গো নাই : প্রব্রাজিকা বেদরূপপ্রাণা পেজফোরনিউজ-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ২০২৪ শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (দ্বাদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন কাশ্মীরে বিজেপির প্রার্থী নেই, মোদীর সফরও বাতিল উপত্যকা ও লাদাখে : তপন মল্লিক চৌধুরী অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্যলগ্নে অক্ষয় হোক সম্পদ সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি : রিঙ্কি সামন্ত শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (একাদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন রবীন্দ্রনাথরা কি কবিয়ালের বংশধর? : অসিত দাস নিমাই ভট্টাচার্য-এর বড়োগল্প ‘প্রাইভেট প্রাকটিশ’ উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে নজর কাড়ল আরামবাগ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (দশম পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আমার রবীন্দ্রনাথ : লুৎফর রহমান রিটন রবীন্দ্র সাহিত্যের নতুন প্রান্ত : মিল্টন বিশ্বাস
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই অক্ষয় তৃতীয়া-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

দক্ষিণী টানে, কন্যাকুমারী, (শেষ পর্ব) : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী

মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী / ১৯১ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

কন্যাকুমারী আসার উদ্দেশ্য বিবেকানন্দ রক। ওই টানেই বাঙালি আসেন। ওই স্থানে পৌঁছতে না পারলে কন্যাকুমারী আসাই বৃথা। সুতরাং ব্রেকফাস্ট খেয়েই চললাম আশ্রমের ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের অফিসে। রিসেপশন থেকেই জেনে নেওয়া হয়েছে যে সিটি ট্যুর এবং সিটির বাইরে একটি ট্যুরের ব্যবস্থা রয়েছে এদের। আমরা হাফ ডে সিটি ট্যুরের টিকিট কেটে ওখানের ভদ্রলোকের সঙ্গে গল্প করছিলাম। দিনটা ছিল একটু মেঘলা। মাঝে মাঝেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আসছে। বাতাসও বইছে। ওই ভদ্রলোক আমাদের বললেন, “আপনারা বসে আছেন কেন? এখনই বিবেকানন্দ রকে চলে যান। আবহাওয়া এরকম, আজ ভিড় অল্প হবে, রোদ বেরোলে আরও ভিড়। সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে পড়ুন।” ওনার কথায় আমরা অটো ধরে চলে গেলাম স্টিমার জেটিতে। লম্বা লাইন। ৭৫ টাকা করে টিকিট। টিকিট কেটেও লম্বা লাইনে অন্তত চল্লিশ মিনিট দাঁড়িয়ে তারপর স্টিমারে ওঠার সৌভাগ্য হল। বৃষ্টির বেগ বেড়েছে সঙ্গে দমকা হাওয়া সঙ্গী। লঞ্চ যাত্রা শুরু করেই একবার এদিকে কাত আবার ওদিকে কাত হয়। লঞ্চে অন্তত তিনশোর বেশি মানুষের গলায় ভয়, ভক্তি, আনন্দের ধ্বনি উঠছে ‘জয় শিব শম্ভু’ কখনও বা ‘জয় শ্রীরাম’। বুঝলাম যতটা না ভক্তি তার থেকে লঞ্চের কাত হয়ে যাওয়ার ভয়ে ভক্তি বেশি। জীবন টলোমলো হলেই ঈশ্বরের প্রয়োজন পড়ে।

সাত মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম বিবেকানন্দ রকে। নানা ভাষাভাষির মানুষ নিজের ভাষায় কথা বলতে বলতে বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে রকে উঠছে। কেউ মুম্বই, কেউ গুজরাত, কেউ অন্ধ্র, কেউ চেন্নাই আর বাঙালি তো থাকবেই থাকবে। বিশেষ করে এই স্থানটি যে বাঙালি মহান মানুষের নামে বিখ্যাত। অপরূপ সৌন্দর্য মন্দিরের চারপাশে। সবদিক থেকে ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে রকের পাদদেশে। রকের একদম শীর্ষে রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের মন্দির (বিবেকানন্দ মন্ডপম)। রয়েছে শ্রীমা ও ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ছবি। আছে একটি ধ্যানঘর। ধ্যানঘরে কিছুক্ষণ বসে ওঁ ধ্বনি মন শান্ত করে। তবে এত ভিড় যে ধ্যানঘরে নিশ্চুপ বসে থাকা হয় না। শবরীমালার ভক্তদের ভিড় এসময় খুব বেশি থাকে। তাঁরা প্রতিটি মন্দির পরিক্রমা করেন। বিবেকানন্দ রকে বিবেকানন্দ মন্দিরের পাশে শ্রীপদমন্ডপম নামে আর একটি মন্দির রয়েছে, যাতে পাথরের উপর পায়ের ছাপ রয়েছে, যেটি কন্যাকুমারী মায়ের পদচিহ্ন বলা হয়।

এই বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল কন্যাকুমারীর বাবাতুরাই এর কাছে মূল ভূখন্ড থেকে পাঁচশো মিটার দূরে সমুদ্রের উপর অবস্থান করছে। এটি ভারতের প্রধান স্থলভাগের দক্ষিণতম বিন্দু। স্বামীজী ১৮৯২ সালের ২৪ সে ডিসেম্বর মূল ভূখন্ড থেকে সাঁতার কেটে এই প্রস্তরখন্ডে আসেন এবং টানা তিনদিন ধ্যানস্থ থাকেন। এই বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল তৈরি হয়েছিল ১৯৭০ সালে। বিবেকানন্দ রকের অনতিদূরেই আর একটি প্রস্তরখন্ডে রয়েছে তামিল কবি থিরুভাল্লাভুরের আটত্রিশ ফুট উঁচু মূর্তি।

হাফ ডে সিটি ট্যুরে বিকেলে বেড়িয়ে প্রথমে দেখা হল তিরুপতি বালাজীর মন্দির। একেবারে সাগরের তীরে, অপূর্ব গঠনশৈলী। এটি মূল তিরুপতি মন্দিরের আদলে তৈরি। এরপর একে একে সাঁইবাবার মন্দির ও শ্রীরামচন্দ্রের মন্দির দেখে যাওয়া হল সুচিন্দ্রম টেম্পল। এই মন্দিরে একই সঙ্গে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর বিরাজমান। এইখানে পুরুষদের খালি গায়ে প্রবেশ করতে হয়। মহিলাদের সমস্ত অঙ্গ ঢাকা থাকে এরকম পোশাক পরে প্রবেশ করতে হয়। এই মন্দিরের মূল কাঠামো তৈরি করেছিলেন চোল রাজারা নবম শতকে। পরবর্তীকালে সপ্তদশ শতকে থিরুমালাই নায়েক এবং ত্রিবাঙ্কুরের মহারাজ মন্দিরটিকে আরও বাড়ান। এই মন্দিরের ভিতরের গঠনশৈলীতে তামিলনাড়ু ও কেরালা উভয় স্থানের ছাপ পাওয়া যায়। এর সপ্ততলবিশিষ্ট শ্বেতশুভ্র গোপুরমের উচ্চতা ১৩৪ ফুট, যা অনেক দূর থেকে দেখা যায়।

এরপর সানসেট পয়েন্টে যাবার পথে অনেকগুলি সুন্দর সুন্দর চার্চ দেখা হল। সানসেট পয়েন্টে মা মেরীর ছোট্ট যীশুকে কোলে নিয়ে মূর্তি রয়েছে। জায়গাটি ভারি সুন্দর। এছাড়া ওয়াক্স মিউজিয়াম ও থাউজেন্ড ইয়ার ওল্ড শিবম টেম্পল দেখে ফিরে আসা হল বিবেকানন্দ আশ্রমে। বিবেকানন্দ আশ্রমের ভিতরে রয়েছে ভারতমাতা মন্দির, যেটি অনন্য সুন্দর। এটির একতলা জুড়ে অপূর্ব চিত্রের মাধ্যমে রামায়ণ কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতলে রয়েছে ভারতমাতা ও বিভিন্ন দেবীমূর্তি। মন্দিরের বাইরের বাগানটি আলোকমালা দ্বারা সজ্জিত। এছাড়া আশ্রমে রয়েছে একাক্ষরা গণপতি মন্দির। এখানে ভোর ও সন্ধ্যাবেলা পূজা ও বাদ্য সহকারে আরতি হয়। প্রসাদও বিতরণ হয়। তবে বিবেকানন্দ আশ্রমে বাঙালি মাত্রেই মনে হবে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের মন্দির নেই কেন বা স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তিতে পুজো কেন করা হয় না। আসলে এই আশ্রমের সঙ্গে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের কোন যোগ নেই। এটি তামিলদের নিজস্ব আশ্রম যেখানে বিবেকানন্দর মূর্তির নীচে লেখা আছে ‘Bro Narendra’, অর্থাৎ এখানে তিনি ভ্রাতা বা পরমবন্ধু রূপে রয়েছেন। আপনজনের মত। এঁরা অবশ্য নিয়ম মেনে চলেন মিশনের মতই।

প্রথমদিন আশ্রমে এসে এঁদের নিজস্ব বীচে না গিয়ে আমরা সঙ্গম পয়েন্টে গিয়ে যে ভুল করেছি, সেটা আর পরদিন করিনি। সঙ্গম পয়েন্টে একই সঙ্গে কন্যাকুমারী মাতার মন্দির, সমুদ্র, দোকানপাট সব মিলিয়ে ভিড় হয় অত্যন্ত বেশি। আশ্রমের নিজস্ব এলাকার মধ্যে আধো অন্ধকার থাকতে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেলেই একদম সামনে ছোট্ট ফাঁকা এই সানরাইজ বীচ। সকাল ছটা না বাজলে নিরাপত্তা রক্ষী বীচে যাবার দরজা খুলে দেন না। ততক্ষণ অবশ্য পাঁচিলের এপার থেকে বিবেকানন্দ রক সমেত সমুদ্রের অপূর্ব রূপ দুচোখ ভরে দেখে নিতে কোন অসুবিধা নেই। ছটার সময় হালকা আলো ফুটতে নিরাপত্তা রক্ষী ঠিক এক ঘন্টার জন্য বীচে থাকার অনুমতি দেন। কারণ হিসেবে বলেন জোয়ার এলে বীচে থাকা নিরাপদ নয় তাই এটা আশ্রমের নিয়ম। ওই এক ঘন্টা বীচে থেকে অপরূপ সূর্যোদয় দেখে মন ভরে যায়।

এখানকার সকলে খুব ভোরে ওঠেন এটা লক্ষ্য করেছি। এই এক ঘন্টার সময়টুকুর মধ্যে মহিলারা চা, ঝিনুকের গয়না নিয়ে বিক্রিবাটার চেষ্টা করছেন। কারো হচ্ছে, কারো একেবারেই হচ্ছে না। এক ঘন্টা হয়ে গেলে আশ্রমের রক্ষী সমুদ্রের দিকে গেট বন্ধ করে দেওয়ার সময় ওদের জিজ্ঞেস করতে ভোলেন না কারো বিক্রি হল কি হল না। ছোট্ট নিজস্ব বীচে লোকজন অল্প, তাই বিক্রেতার মুখে হাসি না ফোটাই স্বাভাবিক। তবু তাঁরা আসেন, চেষ্টা করেন। সূর্যোদয় দেখে ময়ূরের এদিকে ওদিকে বীরদর্পে ঘুরে বেড়ানো দেখতে দেখতে গেস্ট হাউসে ফিরে আসা। এরপরে স্নান সেরে ব্রেকফাস্ট করে নিয়ে আশ্রমের ফ্রি বাস সার্ভিসের বাস ধরে চলে গেলাম Wandering Monk Exhibition (পরিব্রাজক স্বামী বিবেকানন্দের ভারত পরিক্রমার বিভিন্ন দুর্লভ ফোটোগ্রাফের প্রদর্শনী), গান্ধী মেমোরিয়াল, কামরাজ মেমোরিয়াল (কুমার স্বামী কামরাজ নাদার, তামিলনাড়ুর বিখ্যাত রাজনীতিবিদের জীবনীচিত্র), কন্যাকুমারী দেবীর মন্দির ও সমুদ্রপাড়ে চার্চ দর্শন করতে।

কুমারী আম্মান বা ভগবতী আম্মানের মূর্তি পূজিত হয় এই কন্যাকুমারী মন্দিরে। ৫১ সতীপীঠের মধ্যে অন্যতম এই মন্দির। মন্দিরের বাইরে ফুলের দোকান। মন্দিরের দক্ষিণ প্রান্তে বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর ও আরব সাগর মিলিত হয়েছে, যেটাকে সঙ্গম পয়েন্ট বলা হয়। ভরা দোকান পাটের মধ্যেই মন্দির। প্রবেশ করার পূর্বে জুতো খুলে দোকানে জমা করতে হয়।

মন্দিরের পৌরাণিক কাহিনী মনে দাগ কাটে। ব্রহ্মার বরে ত্রিলোক বিজয়ী বাণাসুরের অত্যাচারে দেবতারা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। দেবতারা প্রতিকার চেয়ে ব্রহ্মার কাছে প্রার্থনা করেন। কিন্তু বাণাসুরের মৃত্যু আবার কোনো পুরুষের হাতে হবে না। শর্ত এটা যে কোনো কুমারী কন্যাকে এই কাজ করতে হবে। ব্রহ্মার বরে জন্ম নেন কন্যা। তাঁর হাতেই বধ হবে বাণাসুর। মুশকিল হল শিবকে নিয়ে। তিনি এই কন্যার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিবাহ করতে চান। অন্যদিকে একথা শুনে কন্যাও সেজেগুজে তৈরি বিবাহের জন্য। বিবাহের দিন মহাদেব যাত্রা করেন বরযাত্রীসহ। কিন্তু এ বিবাহ ঘটলে তো অনর্থ হবে। তাই মঞ্চে নামেন নারদ। এবার নাটক অন্যদিকে মোড় নেয়। রাতে বিয়ে হবার কথা। কিন্তু নারদ মুনি জ্যোৎস্না রাতে মোরগের ডাকে শিবকে বিভ্রান্ত করে দেন। ভোর হয়ে গেছে ভেবে ভোলেভালা ভোলানাথ বরযাত্রীসহ ফের কৈলাস যাত্রা করেন। লগ্নভ্রষ্ট কন্যার আর বিবাহ হল না। বিবাহের জন্য যত রান্না হয়েছিল সব পড়ে থেকে থেকে সমুদ্রের মধ্যে পাথর হয়ে গেছে। আসলে এক কুমারী মনের পাথর হয়ে যাওয়া বলেই আমার বোধ হয়। এরপরই কুমারীর সঙ্গে বাণাসুরের যুদ্ধ হয়। কন্যা অসুরকে হত্যা করেন। কন্যা এরপর কুমারীই থেকে যান।

এই মন্দির দ্রাবিড়ীয় শৈলীতে তৈরি। মন্দিরের পূর্ব দিকের দ্বার বছরের বিশেষ দিনে খোলা হয়। আধো অন্ধকার কুঠুরিতে মায়ের দর্শন মেলে। কথিত আছে মায়ের নাকের নাকছাবি শঙ্খচূড়ের মাথার মণি। এটির ঔজ্জ্বল্যে সমুদ্রের জাহাজ লাইটহাউস ভেবে আসতে গিয়ে অনেক সময় পাথরে ধাক্কা খেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আসলে এটি উজ্জ্বল হীরের নাকছাবি। মূল বিগ্রহ পরমা সুন্দরী কুমারী আম্মানের। প্রস্ফুটিত পদ্মের ওপর তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। ডানহাতে জপমালা, বাম হাতের করতল ঊরুর ওপর রাখা। প্রভাতে তিনি কুমারী কন্যার সাজে থাকেন। সন্ধ্যায় বিবাহের সাজে। তাঁর সখীদের নাম বালাসুন্দরী ও এনারা। মন্দিরে আছে পাতালগঙ্গা কূপ ও ধ্বজ স্তম্ভ।

মন্দির থেকে বেরোলেই সামনে ত্রিবেণী সঙ্গম। তিন সাগরকে আলাদা করে সবসময় বোঝা যায় না, তবে বিকেলে তিনটি আলাদা রঙ বেশ বোঝা যায়। সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতেই শুধু ইচ্ছা করে। চোখ ফেরানোর উপায় থাকে না। সঙ্গমের পাশেই গান্ধী মেমোরিয়াল। ১৯৪৮ সালের ১২ জানুয়ারি সমুদ্র সঙ্গমে বিসর্জনের আগে যে স্থানে চিতাভস্মের কলসটি রাখা হয়েছিল ১৯৫৬ সালে সেখানেই তৈরি হয়েছে এই স্মৃতিমন্দির। প্রতি বছর ২রা অক্টোবর গান্ধীজীর জন্মদিনে সূর্যরশ্মি এসে প্রবেশ করে ভস্মাধার রাখার স্থানটিতে।

কন্যাকুমারী ছেড়ে চলে আসা বেশ শক্ত। চারপাশ যেন আগলে ধরে রাখতে চায়। কিন্তু সব ভালর শেষ আছে তাই মায়া কাটিয়ে বেরিয়ে এসে ট্রেন ধরতে হয়। গন্তব্য চেন্নাই। চেন্নাইয়ে একটা রাত কাটিয়ে পরেরদিন সাত সকালে করমন্ডল ধরার কথা। চেন্নাই আগেও কয়েকবার ঘোরা। নতুন করে কিছু তেমন দেখার ছিল না। শুধু রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত বিবেকানন্দ হাউস দেখা ছিল না। চেন্নাই পৌঁছে জ্বরে পড়লাম। কিন্তু তা বলে কি দেখা বাকি রাখতে আছে? তাই বিকেলে চললাম বিবেকানন্দ হাউসে। মেরিনা বীচ রোডে এটি অবস্থিত।

১৮৪২ সালে গ্রেট ব্রিটেনের TUDOR ICE CO. বরফ সংরক্ষণের গুদাম হিসাবে এই বাড়িটি তৈরি করে। তখন এর নাম ছিল ‘আইস হাউস’। পরবর্তী কালে মিস্টার ফ্রেডরিক টিউডর এটি বসতবাড়ি হিসেবে গড়ে তোলেন এবং নাম দেন ‘CASTLE KERNAN’। পরবর্তী কালে এই বাড়ির মালিকানা আসে স্বামীজীর ভক্ত শ্রী বিলিগিরি আয়েঙ্গার-এর হাতে। স্বামীজীকে তিনি চেন্নাই এগমোর স্টেশন থেকে চিন্তাদ্রিপেট, নেপিয়ার পার্ক, মাউন্ট রোড, পাইক্রফ্টস রোড ও বীচরোড হয়ে এই বাড়িতে নিয়ে আসেন। রাস্তার দুপাশে অগণিত ভক্ত স্বামীজীর নামে জয়ধ্বনি দিয়েছিলেন। স্বামীজী ১৮৯৭ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি এই বাড়িতে আসেন এবং বাকি মাসটুকু এখানেই ছিলেন। এখান থেকেই দক্ষিণ ভারতে রামকৃষ্ণ ভাবান্দোলন শুরু হয়। তখন এই বাড়ির নাম হয় ‘বিবেকানন্দ ইল্লম’ বা ‘বিবেকানন্দ হাউস’। বর্তমানে এটি কালচারাল সেন্টার। এখানকার motto হল কঠোপনিষদের স্বামীজীর অত্যন্ত প্রিয় বাণী “উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত প্রাপ্য বরান নিবোধত।”

বিবেকানন্দ হাউসে আছে ভিডিও শো, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি শো, থ্রিডি শো, আগমেন্টেড রিয়ালিটি শো এবং মেডিটেশন রুম। প্রত্যেকটি শো খুব সুন্দর ভাবে পরিবেশন করেছে রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্ররা। ছাত্র ও অনুগামীরা এগুলি ঘুরিয়ে দেখান। 4D VIRTUAL REALITY SHOW এর নাম Tears of Vivekananda — Transformation of India। এই শোটি বাস্তব ও স্বপ্নের ব্যবধান একেবারে মুছে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে আমরা বিবেকানন্দর যুগে পৌঁছে যাই। এমনকি স্বামীজী যখন কন্যাকুমারীর জলে সাঁতার কেটে রকে উঠছেন সেসময় জলের ছিটে আমাদের গায়ে এসে লাগে। গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। থ্রিডি শোতে স্বামীজীর শিকাগো মহাসভার বক্তৃতা আমরা চাক্ষুষ করতে পারি। আগমেন্টেড রিয়ালিটি শোতে আমরা স্বামীজীকে প্রশ্ন করে সরাসরি উত্তর পাই। এর পরে মেডিটেশন রুমে গিয়ে স্বামীজীর মূর্তির দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ নিজেকে খুঁজে দেখার সুযোগ। খুঁজে পেলে ভরা মনে আবার সংসারে ফিরে আসা হংসের মতন। [সমাপ্ত]

তথ্য সহায়তা : গৌরাঙ্গ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ড. দেবাঞ্জন সেনগুপ্ত


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন