শুক্রবার | ১লা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:৩৫
Logo
এই মুহূর্তে ::
মীনাক্ষী সেন-এর বড়োগল্প ‘একটি ভূতের বাড়ির আজগুবি গল্প’ অজ্ঞানতার আঁধার পেরিয়ে আলোর উৎসব : সন্দীপন বিশ্বাস রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (শেষ পর্ব) : কৌশিক মজুমদার ভূত চতুর্দশী — নেত্যকালীর মিরর ইমেজ ও প্রেতলোকের চোদ্দকাহন : প্রলয় চক্রবর্তী কালীপূজার আগের দিনটি চোদ্দবাতি জ্বালানো ও চোদ্দশাক খাওয়ার জন্যে নির্দিষ্ট : অসিত দাস পেঁয়াজের ঝাঁজে গৃহস্থের চোখে জল, সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়বে রাজ্য : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ধনং দেহী ধনতেরাস অ্যান্ড পুরুষালী গয়না : রিঙ্কি সামন্ত এ উৎসবের লগনে : নন্দিনী অধিকারী রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (দ্বিতীয় পর্ব) : কৌশিক মজুমদার কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (শেষ পর্ব) : শংকর ধনতেরাস এখন বাঙালিরও : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ডাক্তারদের আন্দোলন উপনির্বাচনে ইস্যু নয়, জয় নিয়ে শাসকদল নিশ্চিত : তপন মল্লিক চৌধুরী রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (প্রথম পর্ব) : কৌশিক মজুমদার কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (তৃতীয় পর্ব) : শংকর সেকালের প্রেতচর্চা — শিক্ষিত জনের কাছে থিওসফি : প্রলয় চক্রবর্তী মা কালী যখন মহালক্ষ্মী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (দ্বিতীয় পর্ব) : শংকর মহাকাব্যে ভেড়ার উল্লেখ : অসিত দাস কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (প্রথম পর্ব) : শংকর রমা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও একাদশী পালনের নিয়মাবলী : রিঙ্কি সামন্ত আশাপূর্ণা দেবী-র ছোটগল্প ‘চাবি’ একে দানা-য় রক্ষা নেই তারওপর ডিভিসি-র ৪২ হাজার কিউসেক জল : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (নবম পর্ব) : বিজয়া দেব চেতনার সমস্যা, সামাজিক অবকাঠামো এবং বলপ্রয়োগ : এরিক ফ্রম, অনুবাদ ফাতিন ইশরাক বারবার ভিলেন সেই বঙ্গোপসাগর : তপন মল্লিক চৌধুরী নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রাখাইন পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ‘দানা’ থেকে ভয় পাবেন না, সতর্ক থাকুন, মোকাবিলায় রাজ্য সরকার প্রস্তুত : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সই বা বন্ধুত্ব স্থাপনের উৎসব সয়লা : রিঙ্কি সামন্ত প্রথম পাঠ — “নিশিপালনের প্রহরে” নিয়ে, দুয়েকটি কথা : সোনালি চন্দ বৃহন্নলার অন্তরসত্তা : নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (ষোড়শ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন

সন্‌জীদা খাতুন / ১৯১ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪

আঠাশ

শান্তিনিকেতনের অ্যাগ্রো-ইকোনমিকসের ডাইরেক্টর ছিলেন গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল। ওখানকার গবেষক সুনীলদা আমাকে একদিন বললেন, চলো ওঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। খুব চমৎকার মানুষ, তোমার ভালো লাগবে। দেখি গানেরই লোক! বললেন, বিষ্ণুপুরের সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিষ্য তিনি। তাঁর কাছ থেকে ‘অসীম ধন তো আছে তোমার’ শিখেছিলেন। গেয়ে শোনালেন, ‘কণায় কণায় বেঁটে’র শেষের তানটি উনি কেমন গমক দিয়ে গাইতে শিখিয়েছেন। সরল-সহজ মানুষটিকে ভালো লাগল। ওঁর স্ত্রী আবার আমাদের মিষ্টি খাওয়ালেন।

বাসায় গেলেই আমার গান শুনতে চাইতেন। আমিও গাইতাম। ওঁর ভালো লাগত কি না জানি না। গানের ভাব নিয়ে সুন্দর আলোচনাও করতেন, আমার খুব উপকার হতো। বীরেনদার পত্রিকায় গান বিশ্লেষণ করে বেশ বড় লেখাও লিখেছিলেন। তাঁর প্রিয় গান নিয়ে একটি বইও ছাপিয়েছিলেন। ওঁর বাড়িতে গান গাইবার সময়ে একদিন অলকানন্দা প্যাটেল আর আইজি প্যাটেল এসেছিলেন সেখানে। ওঁরাও কিছু গান শুনেছিলেন। পরে শুনেছি অলকানন্দা রীতিমতো রাগসংগীতের চর্চা করেছিলেন।

অলকানন্দার বাবা অমিয়রঞ্জন দাশগুপ্ত তখন পূর্বপল্লীতে একটি বাসা নিয়ে ছিলেন। উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বাবার সহকর্মী ছিলেন শুনে আমি গিয়ে দেখা করেছিলাম। কিন্তু অলকানন্দার সঙ্গে আমার আর যোগাযোগ হয়নি। ওঁদের নাম শান্তিনিকেতনে খুব শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হতো।

গোবিন্দ মণ্ডল মশাই আমাকে এত স্নেহ করতেন যে কিছুদিন না গেলে অস্থির হয়ে খোঁজ করতেন। শেষ জীবনটাতে রোগে বড় কষ্ট পেয়ে গত হয়েছেন উনি। খুব যন্ত্রণা ছিল। মনে হয়েছিল ক্যানসারে ভুগেছিলেন। ওঁর একটিমাত্র সন্তানও চিররুগ্ন ছিল। বউদি তার সেবায় তৎপর থাকতেন। ছেলেটি বাবার আগেই মারা যায়।

গোবিন্দবাবুর মৃত্যুর সময়ে আমি পঞ্চবটীর বাসিন্দা ছিলাম। খবর পেয়ে ছুটে গেলাম। দেখলাম, বউদি একাই দক্ষভাবে সবকিছু সামাল দিচ্ছিলেন। স্মরণসভায় আমি ‘পথের শেষ কোথায়’ গানটি গেয়েছিলাম।

উনত্রিশ.

শান্তিনিকেতনে থাকতে বিরাট এক সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। সামতাবেড় গ্রামটিতে শরৎচন্দ্রের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। শুনলাম ওই সামতাবেড়েই পল্লী সমাজ উপন্যাসের সেই রমেশ আর রমার বাস ছিল। শ্রীনিকেতনবাসী অজয়দা (অজয় মিত্র) একদিন বললেন, ‘শরৎচন্দ্রের জন্মশতবার্ষিকীতে যাবেন নাকি সামতাবেড়, ওঁর প্রিয় কটা রবীন্দ্রসংগীত গাইবেন।’ কোন কোন গান প্রিয়? কী কী বলেছিলেন সব মনে নেই। ‘ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা’, ‘দুঃখ আমার অসীম পাথার পার হল’, আর ‘ওহে জীবনবল্লভ’ গানের কথা মনে পড়ছে।

অজয়দার গ্রাম হাওড়ার মুগকল্যাণ গ্রামে। বললেন, ‘আমাদের মাটির দোতলায় এক রাত্রি কাটাবেন, দেখবেন খারাপ লাগবে না।’ রাজি হয়ে গেলাম। মাটির দোতলা বাড়ির দিকে ঝোঁক ছিল একটা।

রাতে তো ঘুমিয়ে কাদা। ভোরে জেগে দেখি মাটির জানালা দিয়ে ফুরফুর করে বাতাস আসছে! দারুণ লাগল। গ্রাম থেকে বেরিয়ে পাকা রাস্তায় উঠে, না রিকশা না আর কোনো যানবাহন! অজয়দা বললেন, ‘সাইকেলের পেছনে উঠবেন?’ চেষ্টা করা যাক! সাইকেল চালাতে গিয়ে অজয়দা তো জেরবার। বেশ ওজন আছে তো আপনার। খানিক টেনে ক্ষান্ত দিলেন। পরে হেঁটে হেঁটেই বুঝি চলাফেরা করা গিয়েছিল।

মাঠে প্যান্ডেল টাঙানো ছিল। লোকজন বিশেষ নেই। গ্রামের হাফপ্যান্ট পরা ছেলেপুলেরা হল্লা করছে। সে যে কী পরিবেশ। ওখানে গান গায় কেউ? ভাবলাম দুঃখ আমার অসীম পাথার’ দিয়ে শুরু করে ‘ধায় যেন মোর’ চেষ্টা করি, শেষে ‘ওহে জীবনবল্লভ’ হবে। তিতিবিরক্ত হয়ে কোনোমতে গান শেষ করে উদ্ধার পেলাম। ‘ওহে জীবনবল্লভ’টাই যা একটু শুনেছিল ছেলেপিলেরা। যাহোক শরৎচন্দ্রকে আমার শ্রদ্ধা জানানো তো হলো!

হাওড়া স্টেশনের লাইনে উলুবেড়িয়াতে নামতে চাইলাম। অজয়দা বললেন, ‘তথাস্তু’। স্বপ্না নামে ওখানকার কলেজের বাংলার অধ্যাপিকাকে চিনতাম। গেলাম ওদের বাসায়। স্বপ্না তখন কলেজে। ওর মা ব্যস্ত ছিলেন রান্না নিয়ে। বারান্দায় মাদুর পেতে বসে বেশ কতগুলো গান গাইলাম। আসতে-যেতে গান শুনে বললেন, ‘বেশ মন দিয়ে গান গাও তো তুমি!’ স্বপ্না ভালো গান গায় বলে শোনা ছিল, নিজের কানে শুনবার সুযোগ হয়নি। স্বপ্নার গল্প ছিল ভারি মজাদার। ও পিএইচডি থিসিস করেছিল অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে। তাঁকে নিয়ে অনেক গল্প বলত। হাঁটতে হাঁটতে গাইডের গল্প শুনে একবার কী দশা হয়েছিল তাই বলল। বেচারি দেশে থাকতে পারেন না, জার্মানিতে থাকতে হয়, কী করবেন! দেশের ‘মৃদু উপার্জনে বিদেশি স্ত্রীকে নিয়ে চলবেন কী করে? ‘উপার্জন’-এর ‘মৃদু’ বিশেষণ শুনে স্বপ্নার নাকি হোঁচট খাবার অবস্থা!

সুরজিৎ সিংহ দম্পতির প্রাণপণ লিচু খাবার গল্প ছিল আর এক মজাদার কিস্সা! লিচু কিনেছেন। মেয়েটি গেছে স্কুলে। বাইরের ঘরে স্বপ্নর সঙ্গে কথা বলতে বলতে সুযোগ পেলেই দুজনের একজন উঠে ঘরের ভেতরে চলে যাচ্ছেন। মানে, মেয়েটা স্কুল থেকে ফিরবার আগেই নিজেদের ভাগের লিচু শেষ করা দরকার তো! তাই একজন উঠে ভেতরে গেলে অন্যজন উসখুস করতে করতে উঠে ভেতরে চলে যাচ্ছেন। ভেতরের জনকে তখন ফিরতে হচ্ছে। দুজনকেই তো লিচু খাবার চান্স নিতে হবে ঠিকমতো! এই সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নাকি দুজনে বড্ড ব্যস্ত থাকতেন।

উলুবেড়িয়া স্টেশনে নেমে স্বপ্নার বাসায় যাওয়ার কথা থেকে স্বপ্নার গল্পে ঢুকে গেছি, অজয়দার সঙ্গে ‘আনন্দনিকেতনে যাওয়ার কথা আর বলা হয়নি। ওই গ্রামটার নাম মনে রাখতে পারিনি। কেবল মনে আছে, ম্যাককাচ্চিওন যেসব এলাকায় থেকে ঘুরে ঘুরে বাংলার মন্দির স্থাপত্য নিয়ে কাজ করেছিলেন–এটি সেই এলাকা। আনন্দনিকেতন মেয়েদের একটি প্রতিষ্ঠান। আনন্দের মধ্যে দিয়েই এখানে লেখাপড়া আর হাতের কাজ শেখানো হয়। আমি ওদের একখানা গান। শিখিয়েছিলাম। পাকা রাস্তার উল্টো দিকে দেখা যায় ঘোড়াঘাটা স্টেশন। কবি তারাপদ রায় ওই স্টেশন থেকেই ট্রেন ধরে কলকাতা যেতেন শুনেছিলাম। [ক্রমশ]


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন