শুক্রবার | ১লা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:১৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
মীনাক্ষী সেন-এর বড়োগল্প ‘একটি ভূতের বাড়ির আজগুবি গল্প’ অজ্ঞানতার আঁধার পেরিয়ে আলোর উৎসব : সন্দীপন বিশ্বাস রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (শেষ পর্ব) : কৌশিক মজুমদার ভূত চতুর্দশী — নেত্যকালীর মিরর ইমেজ ও প্রেতলোকের চোদ্দকাহন : প্রলয় চক্রবর্তী কালীপূজার আগের দিনটি চোদ্দবাতি জ্বালানো ও চোদ্দশাক খাওয়ার জন্যে নির্দিষ্ট : অসিত দাস পেঁয়াজের ঝাঁজে গৃহস্থের চোখে জল, সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়বে রাজ্য : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ধনং দেহী ধনতেরাস অ্যান্ড পুরুষালী গয়না : রিঙ্কি সামন্ত এ উৎসবের লগনে : নন্দিনী অধিকারী রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (দ্বিতীয় পর্ব) : কৌশিক মজুমদার কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (শেষ পর্ব) : শংকর ধনতেরাস এখন বাঙালিরও : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ডাক্তারদের আন্দোলন উপনির্বাচনে ইস্যু নয়, জয় নিয়ে শাসকদল নিশ্চিত : তপন মল্লিক চৌধুরী রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (প্রথম পর্ব) : কৌশিক মজুমদার কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (তৃতীয় পর্ব) : শংকর সেকালের প্রেতচর্চা — শিক্ষিত জনের কাছে থিওসফি : প্রলয় চক্রবর্তী মা কালী যখন মহালক্ষ্মী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (দ্বিতীয় পর্ব) : শংকর মহাকাব্যে ভেড়ার উল্লেখ : অসিত দাস কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (প্রথম পর্ব) : শংকর রমা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও একাদশী পালনের নিয়মাবলী : রিঙ্কি সামন্ত আশাপূর্ণা দেবী-র ছোটগল্প ‘চাবি’ একে দানা-য় রক্ষা নেই তারওপর ডিভিসি-র ৪২ হাজার কিউসেক জল : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (নবম পর্ব) : বিজয়া দেব চেতনার সমস্যা, সামাজিক অবকাঠামো এবং বলপ্রয়োগ : এরিক ফ্রম, অনুবাদ ফাতিন ইশরাক বারবার ভিলেন সেই বঙ্গোপসাগর : তপন মল্লিক চৌধুরী নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রাখাইন পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ‘দানা’ থেকে ভয় পাবেন না, সতর্ক থাকুন, মোকাবিলায় রাজ্য সরকার প্রস্তুত : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সই বা বন্ধুত্ব স্থাপনের উৎসব সয়লা : রিঙ্কি সামন্ত প্রথম পাঠ — “নিশিপালনের প্রহরে” নিয়ে, দুয়েকটি কথা : সোনালি চন্দ বৃহন্নলার অন্তরসত্তা : নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

রবীন্দ্রনাথরা কি কবিয়ালের বংশধর? : অসিত দাস

অসিত দাস / ২৮৪ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জিনে কবিয়ালত্ব নিয়ে বেশ কিছুকাল ধরে চর্চা করছি। বনগাঁর কবিগান গবেষণাকেন্দ্রেও গেছি একবার।

এ বঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম পূর্বপুরুষ পঞ্চানন কুশারী কবিয়াল ছিলেন কিনা সে ব্যাপারে কোনও ঢেঁকিছাঁটা তথ্য পাইনি। কিন্তু সম্ভাবনার জায়গাগুলি খুঁজে পেয়েছি।

পারিবারিক কলহের জন্যে কাকা শুকদেবকে নিয়ে তিনি খুলনার পিঠাভোগের বাড়ি ছেড়েছিলেন। রূপসা নদী বেয়ে অনেক ঘাটের জল খেয়ে এ বঙ্গে আসেন। বাড়িপালানো কবি ঈশ্বর গুপ্তও কিছুকালের জন্যে কবিগানের দলে নাম লিখিয়েছিলেন। পল্লীকবি জসীম-উদ্দিন, কাজী নজরুলও প্রথমজীবনে কবিগানের দলে ভিড়েছিলেন। যদিও স্বল্পকালের জন্যে। কৈশোরকালে সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ আলকাপের দলে যোগ দিয়ে একবার বাড়ি ছেড়েছিলেন। অর্থাৎ গানবাজনার দলে ভিড়বার জন্যে ঝগড়া করে বাড়ি ছাড়াটা ছিল বহুযুগের ট্রেন্ড।

কলকাতার গোবিন্দপুরে পঞ্চানন ও শুকদেব নাকি জাহাজে পণ্যসরবরাহ করতেন। ইংরেজিতে তাদের বলত Stevedore। তার মধ্যে জল, খাদ্যসামগ্রী, পালের কাপড়, দড়ি যেমন থাকত, জাহাজ নোঙর করা অবস্থায় জাহাজের ডেকে কবির লড়াই, তরজা, গাজনের দলের স্বল্পকালীন আমোদপ্রমোদের ব্যবস্থাও থাকতে পারে। এর দায়িত্বও নিতে হতো পঞ্চাননকে। অসম্ভব কিছু নয়। নিজে কবিয়াল বলে তাঁর পক্ষে তদারকি করা সহজ হত।

ব্রিটিশ আমলে রাজা নবকৃষ্ণ দেবের সভাকবিয়াল হরু ঠাকুর সাহেবদের কবিগানে মজিয়েছেন। বুঝুন না বুঝুন, সাহেবমেমরা তাতে আমোদিত হতেন নিশ্চয়। পঞ্চানন কুশারী তথা ঠাকুর কলকাতার প্রথম কালেক্টর র‍্যাল্ফ শেলডনকে যে কবিগানে মজিয়ে ১৭৪২-এ কলকাতার প্রথম জরিপের সময় তাঁর দুই পুত্র জয়রাম ও সন্তোষীরামকে আমিনের পদ জুটিয়ে দেননি, তা কে বলতে পারে!

কবি ঈশ্বর গুপ্ত কবিয়ালদের ইতিহাস লিখতে গিয়ে প্রথম কবিয়াল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গোঁজলা গুঁইকে। তাঁর জন্ম ১৭০০ (১৭০৪?) সালে। কিন্তু তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের নাম খুঁজে পাননি। সময়কাল অনুযায়ী পঞ্চানন কুশারী হতে পারেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী। কারণ ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী পঞ্চানন কুশারী ১৭০০ থেকে ১৭২০-র মধ্যে কলকাতা-গোবিন্দপুরে বসত গাড়েন কাকা শুকদেব কুশারীকে নিয়ে।

ব্রাহ্মণ কবিয়ালদের পদবি লোকমুখে পালটে ঠাকুর হয়ে যেত। পঞ্চানন কুশারীর পদবি পালটে ঠাকুর হয়। পরবর্তীকালে হরু ঠাকুর, নীলু ঠাকুর, রামপ্রসাদ ঠাকুর, মনোরঞ্জন ঠাকুর, নিমচাঁদ ঠাকুর, মধু ঠাকুর পদবিবদলের সাক্ষ্য দিচ্ছেন। হরু ঠাকুরের পূর্বাশ্রমের নাম হরেকৃষ্ণ দীর্ঘাঙ্গী। নীলু ঠাকুর ও রামপ্রসাদ ঠাকুরে পূর্বাশ্রমের পদবি চক্রবর্তী। পঞ্চাননের মতো তাঁদেরও মূল পদবি বদলে ঠাকুর হয়ে গিয়েছিল কবিয়াল হওয়ায়।

পঞ্চানন কুশারী একটি শিবমন্দির স্থাপন করেছিলেন গোবিন্দপুরের ধনসায়রে। শিবমন্দিরকে ঘিরে গাজন, বোলান, কবিগানের আয়োজন হওয়ার চল ছিল সেযুগে। পঞ্চাননও সক্রিয়ভাবে সেই কবির লড়াইয়ে অংশ নিতেন। শিবমন্দির চত্বরে কবিগানের সেই ট্র্যাডিশন এখনও বাংলায় চলছে।

মূলত অশ্লীল খেউড় অংশের জন্যে রবীন্দ্রনাথ কবির লড়াই সম্বন্ধে বীতস্পৃহ হলেও স্বীকার করেছিলেন, তিনি যদি গ্রামের দরিদ্র কৃষকের ঘরে জন্মাতেন, তাহলে হয়তো তাঁকে কবিগানের দলে নাম লেখাতে হত, গ্রামে গ্রামে বাউল-বাউন্ডুলের মতো ঘুরতে হত।

‘জাপানযাত্রী’-তে কবিগুরু লিখেছেন,

“ডেকের উপর বিছানা করে যখন শুলুম তখন বাতাসে এবং জলে বেশ একটা কবির লড়াই চলছে; একদিকে সোঁ সোঁ শব্দে তান লাগিয়েছে, আর-একদিকে ছল্‌ ছল্‌ শব্দে জবাব দিচ্ছে, কিন্তু ঝড়ের পালা বলে মনে হল না। আকাশের তারাদের সঙ্গে চোখোচোখি করে কখন এক সময়ে চোখ বুঝে এল।

রাত্রে স্বপ্ন দেখলুম, আমি যেন মৃত্যু সম্বন্ধে কোনো একটি বেদমন্ত্র আবৃত্তি করে সেইটে কাকে বুঝিয়ে বলছি। আশ্চর্য তার রচনা, যেন একটা বিপুল আর্তস্বরের মতো, অথচ তার মধ্যে মরণের একটা বিরাট বৈরাগ্য আছে। এই মন্ত্রের মাঝখানে জেগে উঠে দেখি, আকাশ এবং জল তখন উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। সমুদ্র চামুণ্ডার মতো ফেনার জিব মেলে প্রচণ্ড অট্টহাস্যে নৃত্য করছে।”

কবিগুরু একটি কবিতাতেও লিখেছেন,

‘কবির লড়াই লাগল যেন

মাঠে আর আকাশে’।

তিনি শান্তিনিকেতনে কয়েকবার কবিয়াল গুমানী দেওয়ানকে ডাক দিয়েছিলেন তাঁকে কবিগান শোনানোর জন্যে। গুমানী দেওয়ান ছিলেন সেযুগের অন্যতম সেরা কবিয়াল।

কবিয়াল রমেশ শীল ও গুমানী দেওয়ানের মধ্যে কবিগানের ডুয়েটের আয়োজন করা হয়েছিল কলকাতার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্যোগে। অমীমাংসিত সে লড়াইয়ে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল রমেশ শীলকে। সেই পুরস্কার অর্পণের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয় রবীন্দ্রনাথের উপর।

অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ কবিগান ও কবির লড়াই নিয়ে ভালোই ওয়াকিবহাল ছিলেন।

এই সমস্ত বিষয় মাথায় রেখে কিছুটা ইনটুইশন কাজে লাগিয়ে এমন সিদ্ধান্তে আসাই যায় যে, জাহাজের স্টিভডোর হলেও পঞ্চাননের পক্ষে শখের কবিয়াল হওয়ার ষোলো আনা সম্ভাবনা ছিল। সেই কবিয়ালের জিন নীলমণি ঠাকুর, রামলোচন ঠাকুর ও দ্বারকানাথ-দেবেন্দ্রনাথ হয়ে রবীন্দ্রনাথের রক্তেও বহমান হল। এ নিয়ে আরও বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা দরকার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন