শুক্রবার | ১লা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:২৭
Logo
এই মুহূর্তে ::
মীনাক্ষী সেন-এর বড়োগল্প ‘একটি ভূতের বাড়ির আজগুবি গল্প’ অজ্ঞানতার আঁধার পেরিয়ে আলোর উৎসব : সন্দীপন বিশ্বাস রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (শেষ পর্ব) : কৌশিক মজুমদার ভূত চতুর্দশী — নেত্যকালীর মিরর ইমেজ ও প্রেতলোকের চোদ্দকাহন : প্রলয় চক্রবর্তী কালীপূজার আগের দিনটি চোদ্দবাতি জ্বালানো ও চোদ্দশাক খাওয়ার জন্যে নির্দিষ্ট : অসিত দাস পেঁয়াজের ঝাঁজে গৃহস্থের চোখে জল, সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়বে রাজ্য : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ধনং দেহী ধনতেরাস অ্যান্ড পুরুষালী গয়না : রিঙ্কি সামন্ত এ উৎসবের লগনে : নন্দিনী অধিকারী রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (দ্বিতীয় পর্ব) : কৌশিক মজুমদার কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (শেষ পর্ব) : শংকর ধনতেরাস এখন বাঙালিরও : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ডাক্তারদের আন্দোলন উপনির্বাচনে ইস্যু নয়, জয় নিয়ে শাসকদল নিশ্চিত : তপন মল্লিক চৌধুরী রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (প্রথম পর্ব) : কৌশিক মজুমদার কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (তৃতীয় পর্ব) : শংকর সেকালের প্রেতচর্চা — শিক্ষিত জনের কাছে থিওসফি : প্রলয় চক্রবর্তী মা কালী যখন মহালক্ষ্মী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (দ্বিতীয় পর্ব) : শংকর মহাকাব্যে ভেড়ার উল্লেখ : অসিত দাস কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (প্রথম পর্ব) : শংকর রমা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও একাদশী পালনের নিয়মাবলী : রিঙ্কি সামন্ত আশাপূর্ণা দেবী-র ছোটগল্প ‘চাবি’ একে দানা-য় রক্ষা নেই তারওপর ডিভিসি-র ৪২ হাজার কিউসেক জল : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (নবম পর্ব) : বিজয়া দেব চেতনার সমস্যা, সামাজিক অবকাঠামো এবং বলপ্রয়োগ : এরিক ফ্রম, অনুবাদ ফাতিন ইশরাক বারবার ভিলেন সেই বঙ্গোপসাগর : তপন মল্লিক চৌধুরী নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রাখাইন পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ‘দানা’ থেকে ভয় পাবেন না, সতর্ক থাকুন, মোকাবিলায় রাজ্য সরকার প্রস্তুত : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সই বা বন্ধুত্ব স্থাপনের উৎসব সয়লা : রিঙ্কি সামন্ত প্রথম পাঠ — “নিশিপালনের প্রহরে” নিয়ে, দুয়েকটি কথা : সোনালি চন্দ বৃহন্নলার অন্তরসত্তা : নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

নাইন্টিন সেভেন্টিন ওয়ান : শৌনক দত্ত

শৌনক দত্ত / ১৩৬ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪

সকালের মিষ্টি রোদের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে। আলোর রোশনিতে ঝলমল করছে দিগন্ত বিস্তৃত জনপদ। যদিও বাতাসে ভাসছে বারুদের গন্ধ। নির্মল পরিবেশের সবটুকু স্নিগ্ধতা শুষে নিয়ে যাচ্ছে বারুদের বিষ। ত্রস্ত বাতাসে বুক কাঁপানো আর্তনাদ। দূরে এইমাত্র ঘটে যাওয়া একটা ভয়ানক বিস্ফোরণের পর কালো ধোঁয়ার কুন্ডলি উড়ছে। শীতের নীল আকাশটা ক্রমশ ঢেকে যাচ্ছে কালচে ধোঁয়ায়। সকালের সেই মিষ্টি রোদে বারুদের গন্ধের ভেতর রাস্তা ঘেঁষে দ্রুত পায়ে হাঁটছিলো চক্রবর্তী। সহসাই দূর থেকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সশস্ত্র সৈন্যদের দেখতে পেয়ে থমকে যায় সে। বুকটা ধক করে ওঠে তাঁর। জানে ওদিকে না যাওয়াই ভালো। কিন্তু এতদূর এসে পড়েছে যে, এখন আর সরে পড়ার উপায় নেই। পেছনে সরে গেলে বা দৌঁড় দিলে সন্দেহ আরো বাড়বে কিংবা গুলিও করতে পারে। সামনে এগুলে বিপদ। না থেমেই ভাবে সত্যেন, কী করা যায়। ভাবতে ভাবতে আরো একটু সামনে এগিয়ে যায়। সত্যেন চক্রবর্তী। ঘন কালো চুল, চৌকো মুখ আর ঈষৎ নীলাভ চোখের বাইশ বছরের এক লম্বা ফর্সা বামন যুবক। একটা শীতল নিশ্বাস ফেলে সে হানাদার বাহিনীর দিকে এগিয়ে যায়। একজন তাকে হাত তুলে থামতে বলে। সৈন্যটি পরিষ্কার উর্দুতে ধমকে ওঠে—হেই, দাঁড়া! কোথায় যাস?

—হাসপাতালে। দুর্বল কণ্ঠ সত্যেনের।

—হাসপাতালে কেন? তোর পরিচিত কেউ কি জখমি?

বন্দুক হাতে আরেক সৈন্য এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে।

—না। সত্যেন মাথা নাড়ে। ভীষণ টেনশন হচ্ছে তার। জিভ শুকিয়ে এসেছে।

সৈন্যটি চেঁচিয়ে ওঠে—তাহলে?

—আমার মা হাসপাতালে।

—ও।

তুই হিন্দু নাকি?

—না।

-তাহলে আম্মিজান কে মা বলছিস কেন?

—দেখি। বলেই লুঙ্গি ধরে টান মারে এক সৈন্য।

গ্রামের ঘরে ঘরে লাশ। তাদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘরদোর। গ্রামজুড়ে চাপ চাপ রক্ত। অনেকের দেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন। দশ গ্রামের মধ্যে ইনসান বেপারীর কাছেই আছে একটি থ্রি ব্যান্ডের ফিলিপস রেডিও। প্রতি সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে বসে তিনি শর্টওয়েভে সবাইকে বিবিসির খবর শোনান। সন্ধ্যা হলেই গ্রামে হাঁকডাক শুরু হতো। গ্রামের লোকেরা একে অন্যকে বলত, ‘চল বিবিসি শুনতে যাই’। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং বিবিসি, ভয়েজ অব আমেরিকা ও কলকাতা বেতারের খবর শোনার জন্য আশপাশের মানুষ নিয়মিত ভিড় জমায়। গোপনে মাঝেমধ্যেই দল বেঁধে আসে মুক্তিযোদ্ধারা। রাজাকার আর পাকিস্তানিদের নানা খবর জেনে যেতো তার কাছ থেকে। রাজাকারদের তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানি আর্মি আজ হানা দিয়েছে ইনসান বেপারীর চায়ের দোকানে। সত্যেন চক্রবর্তী সেই খবর জানেনা। জানলে এই পথে সে কখনোই আসতো না। এই ভয় সন্ত্রস্ত দিন কবে শেষ হবে সে জানেনা তবে এত মৃত্যু তাঁর ভাল লাগছেনা। কদিন আগেই তাদের এক যজমান অবিনাশ পাল বলছিল চট্টগ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী এক মায়ের সামনে তার সন্তানকে বেয়নেটের ওপর ধরে রেখেছিল। পরে সেই শিশুটিকে ছয় টুকরা করে ফেলে রেখে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ৩০০ মানুষ ভারতের উদ্দেশে লঞ্চে করে যাচ্ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী খবর পেয়ে লঞ্চের ভেতরই সবাইকে মেরে ফেলেছে। আজ নিশ্চয় ইনসান বেপারী আর তাঁর মৃত্যু হবে এদের হাতে। পাকিস্তানি আর্মি হুংকার আর গালি দিয়ে চলেছে, লম্বা মতন একজন ইনসান বেপারীকে মাটিতে ফেলে তার বুকে পা দিয়ে চেপে ধরেছে আর বলছে, ‘মাদার চোত, তোম এদার, তোমারা দোকান মে রেডিও বাজতা হায়, শাল্যে, তুমকো খতম কারদেগা, তুম রেডিও নিকালো’। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ইনসান বেপারী সেনাদের কথায় তার জানে পানি নাই। ইনসান বেপারী কাঁদতে কাঁদতে বলছে, ও চিজ হামারা নেহি হে, আদমি লোক খবর লেকে আতা হে শুনালকে লেকে চলে যাতা হে’। কথা শুনে পাকিস্তানি সেনারা ইনসান বেপারীকে এলোপাথারি মারতে শুরু করে। সত্যেন চিৎকার করে ইনসাফ চাচাকে মারবেন না। উনার কোন দোষ নেই। চোখের পলকে সত্যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে ইনসাফ বেপারীর উপরে অগুনতি বুটের লাথি পড়তে থাকে সত্যেন চক্রবর্তীর তলপেটে, মুখে বুকে। রাজাকার তাইজুল ধারালো ছুরি হাতে এগিয়ে আসছে,তাইজুলের মুখে বিভৎস একহাসি তারপর সব অন্ধকার।

বিছানা থেকে নেমে সত্যেন একটা সিগারেট পোড়ায়। সিগারেটে টান দিয়ে তাঁর মনে হলো তলপেটের নীচে কেমন অস্বাভাবিক অনুভূতি হচ্ছে। ঠোঁটে সিগারেট চেপে ধরে সে হাত রাখে তলপেটের নীচে এবং বিস্ময়ে দুটি চোখ যেন বিস্ফারিত, সে অনুভব করে তাঁর যৌনাঙ্গটি অনুপস্থিত! নিজের হাতকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না সত্যেন জ্বলন্ত সিগারেটটা জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরনের ট্রাউজারটা দ্রুততার সাথে খুলে সত্যেন দেখলো সত্যিই তাঁর যৌনাঙ্গটি নেই।

আয়নায় নিজেকে অনেকক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো সত্যেন, নিজের শরীরে চিমটি কেটে দেখলো তারপরই তাঁর মনে হলো তাঁর তো লিঙ্গ নেই আজ থেকে সে কোন লিঙ্গর মানুষ তবে? নারী পুরুষ তো নয়ই এমন কি তৃতীয় লিঙ্গ মানুষদের ও তো কোন একটা লিঙ্গ থাকে। সত্যেনের ভাবনায় ছেদ পড়ে। তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মোবাইলটা নিয়ে ছাদে উঠে আসে সে তারপর ছোট্টবেলার বন্ধু অয়নকে কল দেয়, রিং বেজে যাচ্ছে কিন্তু কল রিসিভ করছে না অয়ন। মোবাইলে সময় দেখলো সত্যেন এই সময় অয়নের ক্লিনিকে থাকার কথা, লাইনটা কেটে দিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সত্যেন নীচে নেমে আসে।

সত্যেন কয়েকদিন ধরেই অফিসে খুব জড়সড়। ভাবখানা এমন যেন অফিসের সবাই অলরেডি জেনে ফেলেছে তাঁর যৌনাঙ্গ নিখোঁজ, অফিসের সবাই খেয়াল করেছে সত্যেন কয়েকদিন ধরে চুপচাপ কারো সাথে কথা বলছে না। অন্যদিনগুলোয় অফিসে ঢুকেই সে খবরের কাগজ পড়ার জন্য পত্রিকার খোঁজ করে। দেশ নিয়ে তর্ক করে, কেউ দেশ নিয়ে উল্টাপাল্টা বললেই সত্যেন ক্ষ্যাপে যায়, এছাড়া সে কলিগদের সাথে ঠাট্টা মমকরা করে সময় কাটায় এবং সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে সবার সুখ দুঃখের খোঁজখবর নেয়। অনেক সময় কলিগদের কাজেও সাহায্য করে। কিন্তু এই সত্যেন বড্ড অচেনা। সত্যেনকে ক্ষ্যাপাতে কলিগরা দেশ নিয়ে অনেক বাজে কথা বলে সত্যেন সেসবে উত্তর করেনা, অফিসে যতক্ষণ থাকে হয় তাঁর কেবিনে বসে অফিসের কাজ করে, নতুবা নির্বিকার বসে গভীর ভাবনায় নিমগ্ন থাকে। বাড়িতেও একই আচরণ করছে সত্যেন কেমন জানি আনমনা মাঝে মাঝে টেলিভিশন চালিয়ে বসে থাকে কিন্তু কিচ্ছু দেখে না। যেখানেই বসে মাথা নিচু করে তলপেটের দিকে অপলক নির্বাক তাকিয়ে থাকে।

রোদের বিবর্ণ আলোয় সত্যেনের ক্ষণস্থায়ী ভ্রান্ত ধারণা জন্মেছিল যে হারিয়ে যাওয়া যৌনাঙ্গ পুনরায় ফিরবে তাঁর জীবনে। তাঁর মনে পড়ে, বহু বছর আগের দৃশ্য। তখন তাঁর ঘর জুড়ে অনিয়ন্ত্রিত যৌনতা ভরা থাকত। তিন কন্যা সন্তানের জন্মের পরে ছেলের জন্ম হওয়ার সুবাদে বাড়িতে আনন্দ-উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সত্যেন এবং তাঁর স্ত্রীর মনে হতো তারা দু-জনেই জীবনের সমস্ত সুখ-শান্তি পেয়েছে এবং সবটুকু আনন্দ উপভোগ করেছে। তাঁদের কোনো কিছুতেই অভাব নেই, এমনকি কোনো ব্যাপারে তাঁরা নিঃসহায়ও ছিল না।

সত্যেন অথৈ ভাবনার গভীরে হারিয়ে গেলে তাঁর চোখ আটকে থাকে যৌনাঙ্গহীন তলপেটে। অকস্মাৎ সত্যেনের ছেলে ঘরে ঢুকে টিভি চালায়। তখন সন্ধ্যার খবর হচ্ছিল। সত্যেন খবর শুনে চমকে ওঠে যখন সে স্পষ্ট শুনেছে, ‘দুইশ পঙ্গু পিতার ছেলেকে চাকুরি দেবে সরকার।’

তাহলে শেষপর্যন্ত সরকার একটা কিছু করার পদক্ষেপ নিয়েছে। ঈশ্বর যদি সহায় থাকেন, তাহলে আমার ছেলেটার একটা চাকরী হবে’— সত্যেন স্বগোক্তির মতো করে বললো। একটু থেমে সে আপনমনে আরো বললো, যৌনাঙ্গহীন প্রতিটি দিনই পাহাড়ের মতো ভারী মনে হয়। প্রতিবাদী সত্যেন এখন মৃত্যু কামনা করে রোজ। কিন্তু ছেলেটা কী করবে? মেয়ে তিনটির বিয়ে হয়েছে, কিন্তু ছেলে বেকার বসে আছে। সত্যেন খুশি এই ভেবে বেতনের সামান্য অর্থকড়ি নিয়ে কোনোভাবে সংসার চলছে। কিন্তু সে মরে গেলে এই সংসার ভেসে যাবে, তাই সে আশা করে আছে তাঁর ছেলেটা একটা চাকুরি পাবে। আর সে শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে।

এসব ভাবনা-চিন্তা মাথায় নিয়ে সত্যেন পুনরায় যৌনাঙ্গহীন তলপেটের দিকে তাকায়। গোধূলির আলো প্রায় নিভে গেছে। সারিবদ্ধভাবে লাগানো ফুলগাছের সঙ্গে জবা গাছের শুকনো অংশ সত্যি বেমানান লাগছিল। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে সে দেওয়ালে ভর করে উঠে দাঁড়ায় এবং শোবার ঘরে প্রবেশ করেন।

একটু পরে ছেলে এসে তাঁকে ঔষধ খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করে। সত্যেন ঔষধ সম্পর্কে কিছুই বলে না, বরং সে আনন্দে ছেলেকে জিজ্ঞেস করে সে খবর শুনেছে কি না।

‘খবরে বলেছে যে, সরকার দুইশ যুবককে চাকুরি দেবে’—ছেলে বলল। বলার সময় তার কপালে বিরক্তির রেখা ফুটে উঠে।

‘তাহলে তুমি কাগজপত্র নিয়ে চাকরীর জন্য তৈরি হও কিছু অর্থকড়ি লাগলেও আমি দেবো কিন্তু তুমি নিজের জীবন শুরু কর। তোমার চাকরি হয়েছে দেখে মরলেও শান্তি পাবো—সত্যেন চক্রবর্তী খুবই আবেগী গলায় কথাগুলো বলল।

‘কীসব আজেবাজে বলছো? একাত্তরের সময়ে যারা আত্মীয়-স্বজন হারিয়েছে বা পঙ্গু হয়েছে যুদ্ধে, দুইশ চাকুরি তাদের জন্য’—মুখ ঝামটা দিয়ে বলল ছেলে। তারপর সে আরো বলল, ইনসান বেপারীর নাতি, আমার বন্ধু, তুমি তো ওকে চেনো, চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছে। তুমি তো জানো, ওর দাদা যুদ্ধের সময় চায়ের দোকানে রেডিও শোনাতো এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের, পাক ক্যাম্পের নানান খবরও দিতো মুক্তিযোদ্ধাদের। তার নাতি শুধু চাকুরিই পায়নি, তার সঙ্গে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক লক্ষ টাকাও পেয়েছে—বলেই ছেলে আরেকবার মুখ ঝামটা দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

ছেলের কথা শোনার পরে সত্যেন চক্রবর্তীর সারা শরীরে ঠান্ডা ঘামের স্রোত বয়ে যায়। সে রীতিমতো স্তম্ভিত, হতবাক। সে অনুভব করতে শুরু করে, কয়েকজন পাক সেনা তাকে বুট দিয়ে লাথি মারতে মারতে রক্তাক্ত করছে আর রাজাকার তাইজুল তাঁর যৌনাঙ্গ কেটে নিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে আর লাথি খেতে খেতে সত্যেন চক্রবর্তীর চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।

বাসা, ০৩ মার্চ, ২০২৪


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন