সাবধান! চা বাগানেও ব্যবহার হচ্ছে কীটনাশকের। অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহারে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে চা-পানীয়দের। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে চায়ের গুণগত মানও নিম্নমানের হচ্ছে। তাই চা- পানীয়দের সাবধান করা হচ্ছে। এমনকি এই ধরনের চা বিদেশের বাজারে রপ্তানি কমেছে। উদ্বেগ বাড়ছে কৃষি বিশেষজ্ঞদের। বাধ্য হয়ে চা চাষিদের সচেতন করতে ময়দানে নেমেছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, চা বাগানে কীটনাশকের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও কিছু অসাধু বাগানমালিক আছেন যাঁরা যথেচ্ছ হারে কীটনাশক ব্যবহার করছেন। অধিকাংশ শেড টি গার্ডেন থেকে বটলিফ চা বাগান। ছোট ছোট চা বাগানও কীটনাশক ব্যবহার করছে। বাদ যায়নি বেশ কিছু বড় বড় চা বাগানও। উল্লেখ্য, চা বাগানের মালিকরা বাগান থেকে অধিক চা পাতা উৎপাদনের জন্য রাতারাতি পোকা মারার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করছেন। যা অত্যন্ত বিষাক্ত, সরাসরি চা পাতার উপর এই বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে চিন্তা বাড়িয়েছে বিশেষজ্ঞদের। দার্জিলিং চা থেকে সাধারণ সিটিসি চা সবক্ষেত্রেই কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। এমনটাই অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। আরও অভিযোগ, এই কীটনাশক ব্যবহারের ফলে চায়ের গুণগত মান একেবারে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে।
এদিকে চা পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়েছে চা বাগান মালিকরা কীটনাশক ব্যবহার করছে বলে রপ্তানি কমছে। এমনকী বিদেশের বাজার থেকে চা ফেরত এসেছে। এ জন্য সমস্ত চা বাগান কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে।
এদিকে চা গাছে ক্ষতিকারক কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে উত্তরবঙ্গের বাগানগুলিতে নজরদারি চালাবে রাজ্যের কৃষি দফতর। এ রাজ্যের উত্তরবঙ্গের প্রায় ৪৫০টি চা বাগানে নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে কীটনাশক। তারফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে চা গাছে কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে নানা মহল থেকে সাম্প্রতিক কালে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, চা গাছে ক্ষতিকারক বা অননুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। অথবা অনুমোদিত কীটনাশক সহায়ক মাত্রার চেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে চায়ে ক্ষতিকারক কীটনাশকের উপস্থিতি মিলছে। দেশীয় বাজারেই নয়, স্বাস্থ্যহানির কারণে রফতানি বাজারেও নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়ছে ভারতীয় চা। উল্লেখ্য,এর আগেও ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়ার বাজারে এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিল ভারতীয় চা। যদিও সার্বিক ভাবে চা শিল্পের দাবি, তারা নিয়ম মেনেই কীটনাশক ব্যবহার করে।
তবুও কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না সরকারি কর্তারা বা চা শিল্পমহলের কেউই। কারণ চা উৎপাদনের বিষয়টি এখন আর শুধু বড় বা সংগঠিত বাগানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রায় ৩৫% চা তৈরি করেন ক্ষুদ্র চাষিরা। তাঁদের কাছ থেকে অনেক বটলিফ কারখানা যেমন চা পাতা কেনে, তেমনই বড় বাগানও পাতা কেনে চা তৈরির জন্য। ফলে বড় বাগান যদি কীটনাশক ঠিকমতো ব্যবহার করেও, ক্ষুদ্র চা চাষিরা নিয়ম মেনে না-চললে তাঁদের বাগানের পাতায় কীটনাশক থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা এড়ানো যায় না।
প্রসঙ্গত, যে-কোনও চাষের মতোই ক্ষতিকারক পোকার হাত থেকে চা গাছ বাঁচাতে কীটনাশক ব্যবহার স্বাভাবিক। সব চাষের ক্ষেত্রেই কোন কীটনাশক কতটা ব্যবহার করা যাবে, তার বৈজ্ঞানিক মাপকাঠি রয়েছে। চা গাছের ক্ষেত্রেও কীটনাশক ও তার ব্যবহারের মাত্রা নির্দিষ্ট। এ জন্য সরকার ও চা শিল্প যৌথ ভাবে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে পৃথক ভাবে গবেষণা চালায়। পাশাপাশি কেন্দ্রেরও এ নিয়ে নির্দেশিকা রয়েছে। গবেষণা ও সেই নির্দেশিকা মেনেই নানা পোকামাকড়, ছত্রাক, আগাছা ইত্যাদি মারার জন্য ৩৭টি কীটনাশকের ব্যবহার অনুমোদন করেছে সেন্ট্রাল ইন্সেক্টিসাইড বোর্ড। কী ভাবে, কতটা মাত্রায় সেগুলির ব্যবহার গাছের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়, চা শিল্পের গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে যৌথ ভাবে তা নির্দিষ্ট করেছে টি বোর্ড।
সরকারি সূত্রের খবর, কীটনাশকের ব্যবসা করার লাইসেন্স দেয় রাজ্য কৃষি দফতর। দফতর সূত্রের খবর, খোলা বাজারে অনেক সময়েই অননুমোদিত কীটনাশক বিক্রির অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে টি বোর্ড তাঁদের সাহায্য চেয়েছে। অনুমোদিত কীটনাশকের তালিকা ও তার ব্যবহারবিধি রাজ্যকে দিয়েছে টি বোর্ড। সেই অনুযায়ী বাগানগুলিতে নজরদারির পাশাপাশি সচেতনতা কর্মসূচিও হাতে নেবে কৃষি দফতর।
ক্ষুদ্র চা চাষিদের সংগঠন সিস্টা অবশ্য কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়নি।এ নিয়ে আগে সচেতনতার অভাব ছিল। প্রশাসনিক স্তরেও সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ যথেষ্ট ছিল না। তবে সংগঠন ও চায় নিয়ম মেনে চা চাষ করতে।