এ রাজ্যে জোট হয়েছে কংগ্রেস ও বামেদের মধ্যে। মাঝে মাঝে সংবাদ মাধ্যমে অধীর-সেলিমের হাসি হাসি মুখের ছবি উঠছে ভেসে। দুজনেই শাসক দলের প্রতি খড়গহস্ত। কেন এতদিন শাসক দলের পালের দুই গোদাকে কেন্দ্রীয় এজেন্সি গ্রেপ্তার করছে না, সে প্রশ্ন গম্ভীরমুখে ছুঁড়ে দিচ্ছেন তাঁরা। আবার অন্য রাজ্যে বিরোধী নেতাকে কেন্দ্রীয় এজেন্সি গ্রেপ্তার করলে বিজেপির গণতন্ত্রহত্যা বলে সামিল হচ্ছেন চিৎকারে। লোকসভা ভোটের ফলাফলের আগেই সেলিমের বিজয় ঘোষণা করে দিচ্ছেন অধীর। একেই বলে দোস্তি। তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ।
আমি এই দুই দলের সমব্যথী। বড় ব্যথা এঁদের বুকে। সেই ব্যথাই এঁদের মিলিয়েছে। মেলাবেন তিনি মেলাবেন। তা না হলে যে কংগ্রেসের ‘আধা ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসে’ বামেরা পর্যুদস্ত হয়েছিলেন, ‘স্বৈরাচারী’ ইন্দিরা গান্ধীকে হারাতে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে কসুর করেন নি, তাঁরা কি করে মিলে যাচ্ছেন কংগ্রেসের সঙ্গে? ব্যথা, সেই ব্যথা। বামেদের ব্যথাটা কি? ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে দিলেন এক নারী? এক লহমায়? কংগ্রেসের (পশ্চিমবঙ্গ) ব্যথাটা কি? ঢাল নেই তরোয়াল নেইকে দাদাগিরি করতে না দেওয়ার ব্যথা। একদা কংগ্রেসে ছিলেন যে নারী, তিনি কি না কংগ্রেসকে কোন পাত্তাই দিচ্ছেন না? এ কি কথা? তার উপর আছেন অধীর চৌধুরী। তাঁর তো সেই নীতি : যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। ইগো, ইগোর খেলা। ইগো আছে তৃণমূল নেত্রীরও। তিনিও মানবেন না এঁদের। তবু কংগ্রেসকে দু-চারটে সিট দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বামেদের দিকে মুখ ফিরে তাকান নি।
তা এই কংগ্রেস আর বামেরা কি কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনরাই বিজয়নের কথা শুনতে পাচ্ছেন? সিপিএম নেতা সেই বিজয়ন, যিনি কেরালার বাম গণতান্ত্রিক জোটেরও নেতা। এই তো ১লা এপ্রিল বিজয়ন বলেছেন সেই কথা। কোন প্রসঙ্গে বলেছেন? বলেছেন ওয়েনাড় থেকে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে। ২০১৯-এ এখান থেকে জিতেছিলেন রাহুলই। এবার সেখানে এল.ডি.এফ দিচ্ছেন প্রার্থী। প্রার্থী হলেন সি পি আইএর নেত্রী, ডি রাজার স্ত্রী আন্নে রাজা। রাহুল প্রার্থী হতেই বিজয়ন উচ্চকণ্ঠ।
কি বলছেন তিনি?
বলছেন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই না করে কংগ্রেস বামেদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এসেছেন। ইণ্ডিয়া জোটে দাদাগিরি করতে চান যে কংগ্রেস, তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজয়ন। আজ যে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেপ্তার নিয়ে গলা ফাটাচ্ছে রাহুলের কংগ্রেস, মনীশ শিশোদিয়ার গ্রেপ্তারের পরে সেই কংগ্রেসের মুখপাত্র বলেছিলেন, শুধু মনীশ কেন, ঘোটালার পালের গোদা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে কেন গ্রেপ্তার করছে না এজেন্সি? ঠিক যেমন এ রাজ্যে কংগ্রেস আর বামেরা মমতা ব্যানার্জী ও অভিষককে গ্রেপ্তারের দাবি যাচ্ছেন। সি এ এ সম্বন্ধে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজয়ন। ভারত জোড়ো যাত্রায় সিএএ নিয়ে একটি বাক্যও ব্যয় করেন নি রাহুল গান্ধী। কেন তিনি এ ব্যাপারে নীরব? সিএএ লাগু করার সময় নিয়ে শুধু প্রশ্ন করেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র বেনুগোপাল। ব্যস?
রাজ্যে যে বামেরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে বলা হচ্ছে, সেই বামের সদস্যদের মনে বিজয়নের কথাগুলি কি রেখাপাত করবে না? তাঁরা কি রাজ্যের বামেদের দ্বিচারিতা নিয়ে প্রশ্ন করবেন না? এই দ্বিচারিতা নিয়ে ‘স্বৈরাচারী’ ও ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ শাসক দলের বিরুদ্ধে লড়াই শেষ পর্যন্ত সফল না হবার সম্ভাবনা। ভাবের ঘরে চুরি করে কেউ কোনদিন সফল হন নি।