শুক্রবার | ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:১২
Logo
এই মুহূর্তে ::
শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (সপ্তদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (প্রথম পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী নজরুল ও মধুপুর (প্রথম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (ষোড়শ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আলাউদ্দিন অল আজাদ-এর ছোটগল্প ‘আমাকে একটি ফুল দাও’ ধর্ম আর সাম্প্রদায়িকতাকে বিজেপি বড্ড বেশি জরুরি করে ফেলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকগীতি ঘাটু গান আজ অবলুপ্তির পথে : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (পঞ্চদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন হাসান আজিজুল হক-এর ছোটগল্প ‘স্বপ্নেরা দারুণ হিংস্র’ বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বেদেদের বৈচিত্র্যময় জীবনযাপনের কথা : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (চতুর্দশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন নাইন্টিন সেভেন্টিন ওয়ান : শৌনক দত্ত বিশ্বপরিব্রাজক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (ত্রয়দশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন নন্দিনী অধিকারীর ছোটগল্প ‘শুভ মাতৃদিবস’ গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘ফ্লোরেন্স থেকে রাধানগর রেনেসাঁস ও রামমোহন’-এর মোড়ক উন্মোচন : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ১৯২১-এ কথা দিয়েও স্পেনে গেলেন না কেন রবীন্দ্রনাথ : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথ : তারাপদ রায় ও তার অন্ত নাই গো নাই : প্রব্রাজিকা বেদরূপপ্রাণা পেজফোরনিউজ-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ২০২৪ শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (দ্বাদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন কাশ্মীরে বিজেপির প্রার্থী নেই, মোদীর সফরও বাতিল উপত্যকা ও লাদাখে : তপন মল্লিক চৌধুরী অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্যলগ্নে অক্ষয় হোক সম্পদ সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি : রিঙ্কি সামন্ত শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (একাদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন রবীন্দ্রনাথরা কি কবিয়ালের বংশধর? : অসিত দাস নিমাই ভট্টাচার্য-এর বড়োগল্প ‘প্রাইভেট প্রাকটিশ’ উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে নজর কাড়ল আরামবাগ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (দশম পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আমার রবীন্দ্রনাথ : লুৎফর রহমান রিটন রবীন্দ্র সাহিত্যের নতুন প্রান্ত : মিল্টন বিশ্বাস
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই অক্ষয় তৃতীয়া-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

অঞ্জনার উৎসমুখ অভিযান : দীপাঞ্জন দে

দীপাঞ্জন দে / ৬৭৯২ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩

নদী ও পরিবেশ বাঁচাতে আগামীর দিন হোক যৌথতার মেলবন্ধন— এই স্লোগান তুলে নদিয়া জেলার পরিবেশকর্মীদের এক ঐতিহাসিক কর্মকাণ্ডে সামিল হতে দেখা গেল। নদিয়া জেলার দুই পরিবেশ সংগঠন ’জলঙ্গি নদী সমাজ’ এবং ‘অঞ্জনা বাঁচাও কমিটি’ ২০২৩ সালের দুর্গোৎসব শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অঞ্জনার উৎসমুখ অভিযানের ডাক দিয়ে এই অভূতপূর্ব কাণ্ডটি ঘটালো। অঞ্জনার অবরুদ্ধ উৎসমুখের মাটি কেটে জলঙ্গি নদীর জলধারার সঙ্গে তার জলধারাকে মিশিয়ে দেওয়ার প্রতীকী পদক্ষেপ এদিন নেওয়া হয়। নগেন্দ্রনগরে শ্মশান কালিবাড়ির কাছে অঞ্জনার উৎসমুখ ও জলঙ্গি নদীর সংযোগস্থলে এদিন পরিবেশকর্মীরা কোদাল নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। জলঙ্গি নদী সমাজ এবং অঞ্জনা বাঁচাও কমিটির আহ্বানে জেলার গুটিকয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।

নদিয়ার সদর শহর কৃষ্ণনগরের একটি অন্যতম জলধারা হলো অঞ্জনা, যার অনাবিল বহমানতা ও সৌন্দর্য একদা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের মতো কবি সাহিত্যিকদের সৃষ্টির অংশ হয়েছিল। সেই অঞ্জনা আজ মৃতপ্রায়। এই জনপদের বহু বিচিত্র ইতিহাসের সাক্ষী অঞ্জনা। তবে নাগরিক চরিত্রের ব্যাপ্তি তাঁকে কৃষ্ণনগর শহরে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র করতে করতে একেবারে মেরেই ফেলেছে। আজ অঞ্জনার জলধারা দেখতে হলে সন্নিহিত জনপদ দোগাছি বা বাদকুল্লায় যেতে হয়, কারণ কৃষ্ণনগর শহরে সে বৃহদাংশে অবরুদ্ধ ও মৃত। ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ (বুধবার) সকাল দশটা নাগাদ অঞ্জনার উৎসমুখ অভিযান করে অঞ্জনা নদীকে রক্ষা করার বার্তা দেন জেলার একদল পরিবেশকর্মী। অঞ্জনার উৎসমুখ প্রতীকী খনন করে পরিবেশকর্মীদের এই প্রতিবাদ জানানো বিশেষ তাৎপর্যবাহী। তাদের এই কর্মকাণ্ড নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কান পর্যন্ত পৌঁছানো বিশেষ প্রয়োজন।

আসলে নগেন্দ্রনগরের যেখানে অঞ্জনা নদীর উৎসস্থল সেই জায়গাটি দীর্ঘকাল অবরুদ্ধ। জায়গাটি হলো দুই জলধারা— জলঙ্গি ও অঞ্জনার সংযোগস্থল। কিন্তু অবরুদ্ধ হওয়ার কারণে জলঙ্গি নদী থেকে অঞ্জনায় জল প্রবেশ করতে পারে না। উৎসমুখের সন্নিকটে অঞ্জনা নদীর খাত হেঁটে পারাপার করা যায় (ছবিতে দৃশ্যমান, অক্টোবর ২০২৩)। যদিও বর্ষাকালে এমনটি থাকে না, এই মজে যাওয়া নদীখাতেও জল জমতে দেখা যায়। সেই সময় অঞ্জনার চেহারা আরও কিছুটা পরিষ্কার বোঝা যায়। এমনিতেও অঞ্জনার নদীখাতের বেশিরভাগ অংশই কৃষ্ণনগরের বুকে প্রায় বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে কৃষ্ণনগর তথা নদিয়া জেলায় অঞ্জনার অবরুদ্ধতার প্রতিবাদে বেশ কিছু কর্মসূচি হয়েছে। প্রায় দুই দশক আগে কৃষ্ণনগরের কয়েকজন উদ্যোগী মানুষ নিজেদের প্রচেষ্টায় অঞ্জনার নদীখাত সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে সমীক্ষা করেছিলেন।

মৌজা মানচিত্রে অঞ্জনার নদীখাত সর্বনিম্ন চব্বিশ ফুট চওড়া, আবার কোথাও কোথাও তার কলেবর প্রায় দেড়শো ফুটেরও বেশি। কিন্তু বাস্তবে অঞ্জনার খাতকে দেখে কেউ নদী বলে ভাবতেই পারবেন না, এখন সে কৃষ্ণনগরে একটি নর্দমার রূপ নিয়েছে। এই জলধারাই একদিন কৃষ্ণনাগরিকদের ভয়াবহ বন্যার হাত থেকে রক্ষা করেছিল। কৃষ্ণনগর শহরের সুষ্ঠু জলনিকাশি ব্যবস্থার জন্য অঞ্জনার খাত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অতিবৃষ্টির সময় শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা এই অঞ্জনার সুবিশাল খাত বিপুল জলরাশি ধারণ করে শহরকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতো। ২০০০ সালের বন্যার সময় শহরবাসী অঞ্জনার গুরুত্ব প্রত্যক্ষরূপে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। বলা ভালো হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন তারা এই মৃত নদীখাত মানুষের জন্য কতটা প্রাণদায়ী। অঞ্জনা তার পূর্ব রূপে থাকলে এই বন্যা কৃষ্ণনগরের হাজার হাজার মানুষকে বিপর্যস্ত করতে পারত না। কিন্তু কৃষ্ণনগরের বাসিন্দারা ক্রমান্বয়ে বছরের পর বছর ধরে অঞ্জনাকে একটু একটু করে মেরে ফেলেছে। শহরের বুকে অঞ্জনাকে বেআইনি ভাবে দখল করা হয়েছে।

অঞ্জনাকে জলঙ্গি নদী ও চূর্ণী নদীর সংযোজক বলা যায়। প্রায় ২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের অঞ্জনা নদীর গতিপথটি এইরূপ— কৃষ্ণনগরের নগেন্দ্রনগরে জলঙ্গি নদী থেকে এর জন্ম, তারপর নদিয়া জেলা পরিষদ ও কৃষ্ণনগর উচ্চ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের মাঝের অংশ দিয়ে বয়ে কৃষ্ণনগর ক্যাথিড্রালের পাশ দিয়ে বেজিখালি হয়ে কৃষ্ণনগরের রাজবাড়িকে বাঁদিকে রেখে শক্তিনগরে প্রবেশ করেছে। সেখানে জেলা হাসপাতালের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়ে অঞ্জনা দোগাছি পঞ্চায়েত এলাকায় প্রবেশ করেছে। কৃষ্ণনগর শহরেই অঞ্জনার গতিপথ প্রায় সাত কিলোমিটার। দোগাছি থেকে অঞ্জনা নদী হাটবোয়ালিয়া, ধর্মদহ, গোপালপুর, খামার শিমুলিয়া, বাদকুল্লার পাটুলি, সুরভীস্থান, জলকার পতুলি, গাগরাখালি, চন্দনদহ হয়ে রানাঘাটের ব্যাসপুরে পৌঁছেছে। সেখানে অঞ্জনার জলধারা চুর্ণী নদীর সঙ্গে গিয়ে মিশেছে।

অঞ্জনা যত অবরুদ্ধ হয়েছে, কৃষ্ণনগর শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ততোই ভেঙে পড়েছে। তবে অঞ্জনা সংস্কারের প্রচেষ্টাও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে করা হয়েছে। কিন্তু খুব পরিকল্পিতভাবে সেগুলি করা হয়নি বলে বাস্তবে সেগুলির প্রভাবও সেভাবে দেখা যায় নি। ২০১৯ সালের ২৪-২৫ আগস্ট (শনিবার, রবিবার) অঞ্জনা বাঁচানোর দাবিতে ‘কিশোর বাহিনী’ সংগঠনের পক্ষ থেকে দুই দিনের পদযাত্রা করা হয়েছিল। ২৪ আগস্ট রানাঘাটের ব্যাসপুর অর্থাৎ অঞ্জনা যেখানে চূর্ণী নদীতে মিশেছে সেখান থেকে হাঁটা শুর হয়। তারপর অঞ্জনার খাত অনুসরণ করে হাঁটতে হাঁটতে অঞ্জনার উৎসমুখ পর্যন্ত যাওয়া হয়। ২৫ আগস্ট (রবিবার) কৃষ্ণনগরের নগেন্দ্রনগরে শ্মশান কালিবাড়ির কাছে যেখানে জলঙ্গি নদী থেকে অঞ্জনার উৎপত্তি, সেখানে এসে পদযাত্রা শেষ হয়। ২০২২ সালের একেবারে সূচনায় জলঙ্গি নদী সমাজের পক্ষ থেকে অঞ্জনার গতিপথ ধরে সাইকেল মিছিল আয়োজন করা হয়েছিল। ২ জানুয়ারি, ২০২২ সংগঠিত সেই সাইকেল মিছিলে একাধিক বন্ধু সংগঠনের প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেছিলেন।

শহর এলাকায় অঞ্জনার খাত দখলমুক্ত করা প্রায় অসম্ভব। অঞ্জনার সংস্কার করা গেলেও বাস্তবে তার আদিরূপ ফিরিয়ে দেওয়া আজ আর সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। অঞ্জনার খাত দখলমুক্ত করা নিয়ে ইতিপূর্বে কৃষ্ণনগর পৌরসভাকে মামলা মোকদ্দমাতে জড়িয়ে পড়তেও দেখা গেছে। সময়ে সময়ে অঞ্জনার সংস্কার করা হয়েছে, জঞ্জাল মুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু দখলমুক্ত করা যায়নি।

২০১৮ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নদিয়া জেলা সফরে এসে কৃষ্ণনগরে অঞ্জনার নদীখাত সংস্কারের প্রকল্প তৈরি করে সরকারের নির্দিষ্ট দফতরে পাঠাতে বলেছিলেন। এরপর কৃষ্ণনগর পৌরসভা একটি সংস্থাকে দিয়ে পৌর এলাকায় অঞ্জনার সমীক্ষাও করিয়েছিল। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে পৌরসভা একটি প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রেরণ করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পে প্রায় এক কোটি ছিয়াশি লক্ষ টাকা অনুমোদন করা হয়েছিল বলে জানা যায়। তারপর যে কী হলো সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছুই জানা যায় না। তবে অঞ্জনার বুকের উপর যেভাবে ইট পাথরের এই নগর বেড়ে উঠেছে, বাস্তবে যদি অঞ্জনাকে কখনও সম্পূর্ণ অবরোধমুক্ত করাও যায়, তা হবে এক অসাধ্য সাধন।

একই দিনে কৃষ্ণনগরের কলেজ মাঠ সাফাই কর্মসূচিও সংগঠিত করা হয়। কৃষ্ণনগর শহরের ফুসফুস স্বরূপ কলেজের মাঠকে জঞ্জাল ও বর্জ্যমুক্ত করতে পরিবেশকর্মীরা এগিয়ে এসেছিলেন। উক্ত দিনে সকাল ৮টায় কলেজের মাঠে সকলে জমায়েত হন এবং প্রায় দুই ঘন্টা ধরে মাঠকে জঞ্জালমুক্ত করা হয়। একাদশীর দিন এটাই ছিল সমাজকর্মীদের বিজয়া সন্মেলন। কলেজের মাঠে পড়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা, প্লাস্টিক ও চায়ের কাপ পরিষ্কার করে পৌরসভার গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। একাজে কৃষ্ণনগর পৌরসভার ২৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের সহযোগিতা নেওয়া হয়। তাঁর প্রেরিত চারজন সাফাইকর্মী কলেজের মাঠ পরিষ্কার করার কাজে পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। কৃষ্ণনগর কলেজের মাঠকে একটি ঐতিহাসিক ময়দান বললে অত্যুক্তি হয় না। এই মাঠে অনুশীলন করে অলিম্পিক পর্যন্ত গিয়েছিলেন এমন খেলোয়াড়কেও কৃষ্ণনগর দেখেছে। সেই খেলোয়াড়ের নাম সুভাষ সর্বাধিকারী। কৃষ্ণনগরের ভূমিপুত্র প্রখ্যাত ফুটবলার ছিলেন তিনি। কৃষ্ণনগর কলেজেরই প্রাক্তনী। কৃষ্ণনগর কলেজের মাঠে তিনি প্র্যাকটিস করতেন। দুর্দান্ত মিডফিল্ডার ছিলেন। মোহনবাগান ক্লাবের হয়ে খেলতেন। ১৯৫৩ সালের ডুরান্ড কাপ জয়ী মোহনবাগান দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের (হেলসিংকি, ফিনল্যান্ড) ভারতীয় ফুটবল দলে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। কৃষ্ণনগর কলেজের মাঠের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক মাঠকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না। বহু মানুষ সকাল, সন্ধ্যে এই মাঠকে ব্যবহার করেন। কেউ যান কসরত করতে, কেউ খেলতে, কেউ বা হাঁটতে, দৌঁড়াতে। কিন্তু মাঠকে সেভাবে পরিচর্যা করা হয় না। সম্প্রতি কৃষ্ণনগরের কলেজের মাঠে আধুনিক কায়দায় খাবারের গাড়ি অনুপ্রবেশ করেছে। কিন্তু যে মাঠকে এত মানুষ নিত্যদিন ব্যবহার করেন সেখানে কোনও সুনির্দিষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা  দেখতে পাওয়া যায় না। সুবিশাল মাঠের কোথাও কোনও ডাস্টবিন চোখে পড়ে না। আবর্জনা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ কলেজ, বা জেলা প্রশাসন বা পৌর প্রশাসন— নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারলে আজ জেলার পরিবেশকর্মীদের এভাবে কলেজের মাঠ জঞ্জাল মুক্ত করার আহ্বান জানানোর প্রয়োজন হত না। বরং এমনটা হতে পারতো যে— দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ আহ্বান করলেন এবং সেখানে পরিবেশ সংগঠনগুলি নিজেদের সাধ্যমত সহযোগিতা করলেন। কিন্তু এদিন যা হলো তা— ‘উলট পুরাণ’! জলঙ্গি নদী সমাজের পক্ষ থেকে জর্জ গোমেস্ এবং অঞ্জনা বাঁচাও কমিটি-র পক্ষ থেকে দীপক রায়-এর আহ্বানে একই দিনে কলেজের মাঠ পরিষ্কার ও অঞ্জনার উৎসমুখ অভিযান— উভয় কর্মসূচি সংগঠিত হয়। ইউনাইটেড রেড স্টার্স ক্লাব, কৃষ্ণনগর পরিবেশ বন্ধু, নদিয়া পরিবেশ মঞ্চ, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ (কৃষ্ণনগর শাখা), ড. নর্মান বেথুন মেমোরিয়াল ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশন, কিশোর বাহিনী প্রভৃতি সংগঠনের প্রতিনিধিরা এদিনের কর্মসূচিতে যোগদান করেছিলেন। খগেন্দ্রকুমার দত্ত, দীপক রায়, কৌশিক সরকার, ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত, বুদ্ধদেব বিশ্বাস, জ্যোতির্ময় পাল, চয়ন রক্ষিত, নীলা গুহ, আমির চাঁদ শেখ, প্রীতম ভট্টাচার্য, দীপাঞ্জন দে প্রমুখরা অংশগ্রহণ করেছিলেন।

কৃষ্ণনগর কলেজের মাঠকে জঞ্জালমুক্ত করার পর সকাল দশটা নাগাদ অঞ্জনার উৎসমুখে যাওয়া হয়। এদিন জলঙ্গি ও অঞ্জনার অবরূদ্ধ বাঁধ আংশিক কেটে দেওয়া হয়। ফলে জলঙ্গির জল মাটি কাটা নালার মধ্যে দিয়ে কলকলিয়ে ছলছলিয়ে অঞ্জনায় প্রবেশ করছে দেখা যায়। কয়েক বছর আগেও দুটি জলধারার মধ্যে আংশিক যোগসূত্রতা ছিল। জলঙ্গির ওপারেই মায়াকোল গ্রাম, আর এপাড়ে চরের মাঠ (জলঙ্গির চর)। প্রতীকী হলেও জেলার পরিবেশকর্মীদের এহেন পদক্ষেপ খুবই তাৎপর্যবাহী। মরে যাওয়া অঞ্জনা নদী যেন মনে হয় আংশিক প্রাণ ফিরে পেল। তবে অঞ্জনা বাঁচানোর পূর্ববর্তী কর্মসূচিগুলির মতো এই উদ্যম যেন অপরিকল্পিতভাবে না এগোয় এবং সুস্থায়ী হয়, সেটাও দেখতে হবে। এই দুই নদীর সংযোগকে অবরুদ্ধ মুক্ত করা পুরোপুরিভাবে প্রয়োজন, সেটা যতদিন না হচ্ছে এই আন্দোলনকে স্তব্ধ হতে দেওয়া যাবে না।

লেখক: সম্পাদক, ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’ (ত্রৈমাসিক), গোবরডাঙা গবেষণা পরিষৎ।


আপনার মতামত লিখুন :

10 responses to “অঞ্জনার উৎসমুখ অভিযান : দীপাঞ্জন দে”

  1. Khagendra Kumar Datta says:

    সুন্দর উপস্থাপনা এবং সঠিক তথ্য সম্প্রচারের জন্য লেখককে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
    খগেন দত্ত।

  2. Santanu halder says:

    খুব সুন্দর একটা কাজ শুরু হল।

  3. Sudakshina Gupta says:

    জানলাম অনেক কিছু। ঝরঝরে লেখা, পড়তে ভালো লাগলো। যদি কর্তৃপক্ষের কানে পৌঁছায় তো ভালো।

    • দীপাঞ্জন দে says:

      ম্যাডাম, আপনি পড়েছেন বলে ভালো লাগলো। আপনার মূল্যায়ন খুবই মূল্যবান আমার কাছে। আমার প্রণাম ও ভালোবাসা নেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন