রবিবার | ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:১৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহনযোগ্যতা ও আরাকান আর্মি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন কেদারনাথ-বদ্রীনাথ ভ্রমণ : প্রকৃতি আর ঈশ্বর যখন একটি বিন্দুতে মিশে যায়… : অমৃতাভ দে আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (তৃতীয় পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী বসিরহাটে নুনের হাট, শ্যামবাজার নুনের বাজার : অসিত দাস মুর্শিদাবাদের আমকথা (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত জেন অস্টিন নারী স্বাধীনতার অন্যতম পথিকৃৎ : মনোজিৎকুমার দাস ইসবার ইন্ডিয়া জোটকা সরকার, আমরা একাই একশো — মমতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (শেষ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন মুর্শিদাবাদের আমকথা (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (দ্বিতীয় পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী নজরুল ও মধুপুর (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ কবি কুসুমকুমারী দাশ ও পরাবাস্তবতার কবি জীবনানন্দ : বিজয়া দেব হুগলির লোকসভা ভোটে গ্রামীন এলাকায় ১৭১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (সপ্তদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (প্রথম পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী নজরুল ও মধুপুর (প্রথম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (ষোড়শ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আলাউদ্দিন অল আজাদ-এর ছোটগল্প ‘আমাকে একটি ফুল দাও’ ধর্ম আর সাম্প্রদায়িকতাকে বিজেপি বড্ড বেশি জরুরি করে ফেলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকগীতি ঘাটু গান আজ অবলুপ্তির পথে : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (পঞ্চদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন হাসান আজিজুল হক-এর ছোটগল্প ‘স্বপ্নেরা দারুণ হিংস্র’ বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বেদেদের বৈচিত্র্যময় জীবনযাপনের কথা : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (চতুর্দশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন নাইন্টিন সেভেন্টিন ওয়ান : শৌনক দত্ত বিশ্বপরিব্রাজক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (ত্রয়দশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন নন্দিনী অধিকারীর ছোটগল্প ‘শুভ মাতৃদিবস’ গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘ফ্লোরেন্স থেকে রাধানগর রেনেসাঁস ও রামমোহন’-এর মোড়ক উন্মোচন : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ১৯২১-এ কথা দিয়েও স্পেনে গেলেন না কেন রবীন্দ্রনাথ : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই অক্ষয় তৃতীয়া-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

স্টেথোস্কোপ আবিষ্কারের কাহিনি : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ১৭৩ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪

ছোটবেলায় খেলনা ডাক্তার সেট নিয়ে খেলার সময় থেকেই মনে মনে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখে অনেকেই। সেই স্বপ্নকেই বাস্তব করার তাগিদে চলতে থাকে পড়াশোনা। দ্বাদশ শ্রেণী অব্ধি সায়েন্স নিয়ে পড়বার পর চিকিৎসকের পেশায় যাওয়ার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন নিট প্রবেশিকা পরীক্ষা বা ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট-এর পরীক্ষায় পাশ করা। এ বছর নিট ইউজি ২০২৪ হয়ে গেলো গত রবিবার। একজন ডাক্তারের চেহারা মনে করলেই চোখে ভাসে, তাঁর গলায় ঝোলানো রয়েছে একটি স্টেথোস্কোপ। মূলতঃ ডাক্তারি পেশার প্রতীকি হিসাবে সর্বপ্রথম দেখা হয় স্টেথোস্কোপকে। এই স্টেথোস্কোপ আবিষ্কারের কাহিনিটা কিন্ত বেশ মজার। আজ বরং সেই কাহিনীই বলি।

১৮১৬ সালের শেষের দিকে প্যারিসের নেকার-এনফ্যান্টস ম্যালাডেস হাসপাতালে ডা. রেনে থিওফাইল হায়াসিনথে ল্যানেক (Dr. Rene Théophile Hyacinthe Laennec) নামে একজন ফরাসি চিকিৎসকের কাছে সম্ভ্রান্ত পরিবারের এক স্থূলকায়া যুবতী আসেন বুকের কষ্ট নিয়ে। ডাক্তার বুঝতে পারলেন, হৃদ্‌যন্ত্রের শব্দটা শোনা দরকার। কাজটা করতে তিনি ইতঃস্তত করছেন কারণ তখন দুই ধাপে রোগীকে পরীক্ষা করা হতো — পারকাসান ও ইমিডিয়েট অ্যা সকালটেশন (Perkasan and Immediate A Salutation)।

ইমিডিয়েট অ্যা সকালটেশনে চিকিৎসকেরা রোগীর শরীরে কান লাগিয়ে ভেতরে শব্দ শুনতেন। এতে শব্দের প্রয়োজনীয় অংশ অনেকটাই মিস হয়ে যেত। অন্যদিকে রোগীর সঙ্গে সরাসরি চিকিৎসকের শারীরিক স্পর্শের কারণে প্রায়ই একটা অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হতো। স্বাভাবিকভাবেই হৃদরোগ নিয়ে আসা রোগীটি কম বয়সী মহিলা হওয়ায় চিকিৎসক রেনের অস্বস্তিও যেমন লাগছিল আবার তরুণী স্থূলকায়া হওয়ায় কিছুটা সন্দেহে ছিলো খুব ভালো শোনা যাবে কিনা। অত্যধিক স্থূলকায়া হওয়ায় রেনে হাত দিয়ে নাড়ীও পরীক্ষা করতে পারছিলেন না।

এমন সময় তাঁর মনে পড়লো সে বছরেরই সেপ্টেম্বর মাসে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা এক সকালে ল্যুভর প্রাসাদের আঙিনা দিয়ে হাঁটার সময় পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী রেনে দেখেন দুটো বিদ্যালয় পড়ুয়া শিশু একটা লম্বা আর ফাঁপা কাঠ নিয়ে খেলছে। একজন এক প্রান্তে পিন দিয়ে আঁচড় কাটছে, অন্যজন আরেক প্রান্তে কান লাগিয়ে শুনছে। কাঠটি আঁচড়ের শব্দকে অ্যামপ্লিফাই করে অপর প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে। ব্যাপারটা তার কাছে দারুন লাগলো। এই ঘটনায় যে একসময় একটি যুগান্তকারি আবিষ্কারের কাজে দেবে তা হয়তো তখন তিনি ভাবেনি।

সমস্যার সমাধানের জন্য তিনি শেষ পর্যন্ত শব্দ বিজ্ঞানের আশ্রয় নেন। লেনেকের মনে পড়ে গেল, ‘শব্দ যখন কোন নিরেট পদার্থের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করে, তখন তার প্রতিধ্বনি ক্ষমতা বেড়ে যায়।’ সঙ্গে সঙ্গে তিনি এক দিস্তা কাগজ রোল করে সিলিন্ডারের মতো বানান এবং সেটার এক পাশ রোগীর বুকে রেখে অপর পাশে নিজের কান লাগান। দারুন স্পষ্ট আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, অবাক হয়ে তিনি লক্ষ্য করলেন বুকে কান রেখে হার্টবিটের যে আওয়াজ তিনি এতদিন শুনতেন এই আওয়াজ তার চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট।

তিনি বুঝতে পারলেন এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে শুধু হার্টের শব্দ নয়, বুকের যে কোন শব্দই অনেক স্পষ্ট করে শোনা যাবে। কারণ বায়ু মাধ্যমের চেয়ে কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগ বেশি। আর এই যে বুকের উপর সরাসরি কান না পেতে বা হাত দিয়ে স্পর্শ না করে মাঝখানে একটি মিডিয়া ব্যবহার করে হৃদস্পন্দন শোনার প্রক্রিয়া, একে বলা হয় Mediate auscultation।

পরবর্তী তিন বছর তিনি শুধু খোঁজ চালালেন কি উপাদান ব্যবহার করলে শব্দ আরো স্পষ্ট এবং সুন্দর শোনা যায়। তার ডিজাইনকে নিখুঁত করতে অসংখ্য উপাদান ব্যবহার করলেন। অবশেষে বানালেন একটি কাঠের ফাঁপা নল যা গঠিত ৩.৫ সেমি (১.৪ ইঞ্চি) ব্যাস এবং ২৫ সেমি (১০ ইঞ্চি) লম্বা যুক্ত মনোওরাল যন্ত্র (এক কানে শব্দ প্রেরণ) সহজেই বিচ্ছিন্ন এবং পুনরায় একত্রিত করা যেতে পারে। বলা যেতে পারে এই যন্ত্রটি ছিল প্রথম স্টেথোস্কোপ।স্টেথোস্কোপ একটি গ্রীক শব্দ, Stethos মানে বুক এবং skopos মানে অনুসন্ধান। পরে তিনি তিনটি আলাদা টুকরায় ভাগ করেন এই যন্ত্রকে।

এই যন্ত্রটি উনিশ শতকের শেষ ভাগের আগে পর্যন্ত চিকিৎসকদের অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্র হিসেবে পরিচিত ছিল। রবারের টিউব দুই নল — এমন সব আবিষ্কারের সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরও উন্নতি আসে। এই সম্পর্কে একটি রিপোর্ট ফ্রান্সের একাডেমি দ্য মেডিসিনের জমা দেন। পরের বছর তিনি এই প্রতিষ্ঠান থেকে স্টেথোস্কোপ আবিষ্কারক হিসেবে সনদ লাভ করেন।

তবে এই যন্ত্রটিকে তৎকালীন চিকিৎসকসমাজ খুশি মনে গ্রহণ করেনি। তাঁর সহকারী চিকিৎসকেরা তার বিরুদ্ধে প্রচারে নামেন। তারা প্রচার চালতে থাকেন, ডাক্তার লেনেক রোগীদের ঘৃণা করেন বলেই রোগীর বুকে সরাসরি কান লাগান না। কাঠের নল ব্যবহার করে রোগীদের তিনি অপমান করছেন। অকৃতজ্ঞদের দাপট দেখে ডক্টর লেনেক ভেঙে পড়েন।

১৮২২ সালে ‘কলেজ দ্য ফ্রান্স’ কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে ডাক্তার লেনের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। সারা পৃথিবীতে লেনেকের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার আবিষ্কৃত যন্ত্রটি বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হতে থাকে। কিন্তু তার স্বদেশী বন্ধু ডাক্তারদের অপপ্রচার তাকে এতটাই মুহ্যমান করেছিল যে ডাক্তার যে ডাক্তারি পেশাই ছেড়ে দেন। নিজেকে ঘর বন্দী করে ফেলেন। ঘরবন্দি অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন।

১৮৫১ সালে আর্থার লিরেড (Arthur Leared) দুই এয়ার পিস যুক্ত আধুনিক স্টেথোস্কোপ উদ্ভাবন করেন এবং বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য ১৮৫২ সালে এটির নকশাকে খুঁত মুক্ত করে জর্জ ক্যামন। এটি স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে আজও বিবেচিত হয়ে আসছে।

এদিকে ঘরবন্দী অবস্থায় শরীর দিনের পর দিন খারাপ হয়ে আসছিলো লেনেকের। কাশি, শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতায় শরীর ভেঙে পড়া এসব লক্ষণ দেখে অনেকেই বলল তার টিউবারকুলেসিস (যক্ষা) হয়েছে। তিনি বাধ্য হয়ে প্যারিস ছেড়ে চলে গেলেন।

জীবনের শেষ সময় ছিল এসে গেছিল বুঝতে পেরে একদিন তিনি ভ্রাতুষ্পুত্র মেরীডাককে বললেন, আমার ফুসফুসের আওয়াজ শোনো আর বর্ণনা দাও। যে আওয়াজে বর্ণনা তিনি দিলেন, চিকিৎসক হিসেবে সেই আওয়াজ তিনি অনেকবার শুনেছেন। এই বর্ণনা থেকে তিনি নিজেই বুঝতে পারলেন তাঁর টিউবারকুলেসিস হয়েছে। যে আওয়াজ শোনার যন্ত্র তিনি আবিষ্কার করেছেন, যেই আওয়াজের বর্ণনাও তার আবিষ্কার — আর সেই আবিষ্কারই তাকে জানিয়ে দিল তিনি অচিরেই মারা যাচ্ছেন। এ হলো নিয়তির পরিহাস।

১৮২৬ সালে মে মাসে রেনের জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্ট চরম আকার ধারণ করে। সুস্থ হওয়ার আশায় তিনি ছুটে গেলেন ব্রিটানি গ্রামে কিন্তু আর তাঁর ফিরে আসা হলো না। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে ১৮২৬ সালের ১৩ই আগস্ট তার মৃত্যু হয়।

রেনেকে বলা হয় ক্লিনিক্যাল অস্কালটেশনের জনক। তিনি সর্বপ্রথম নিজের আবিষ্কৃত স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করে হৃদপন্দনের শব্দ শুনে Bronchiectasis এবং cirrhosis সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেন স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করে তিনি ফুসফুসের বিভিন্ন রং যেমন নিউমোনিয়া, যক্ষা, প্লুরিসি ইত্যাদির শ্রেণীবিভাগ করেন। স্টেথোস্কোপ বুকে বসানোর পর ডাক্তার এবং রোগী যেন এক অদৃশ্য আশায় যুক্ত হন — একজন কষ্ট থেকে মুক্তি দেয়া সংকল্পে আর অন্য জন কষ্ট থেকে মুক্তির আশায়। লেনেক মৃত্যুর প্রায় ২০০ বছর পরও তাঁর দেওয়া বুকের শব্দগুলোর বিভিন্ন নামকরণ ব্যবহার করেন ডাক্তাররা। এখানেই তাঁর জীবনের সার্থকতা।।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন