রবিবার | ১৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:২৫
Logo
এই মুহূর্তে ::
হরপ্পার ব্যুৎপত্তি নিয়ে নতুন আলোকপাত : অসিত দাস বল পয়েন্ট কলমের জার্নির জার্নাল : রিঙ্কি সামন্ত মহেঞ্জোদারো নামের নতুন ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস পরিসংখ্যানে দারিদ্রতা কমলেও পুষ্টি বা খাদ্য সংকট কি কমেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী অথ স্নান কথা : নন্দিনী অধিকারী তন্ত্র বিদ্যার বিশ্ববিদ্যালয় চৌষট্টি যোগিনীর মন্দির : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী মেসোপটেমিয়া ও সিন্ধুসভ্যতার ভাষায় ও স্থাননামে দ্রাবিড়চিহ্ন : অসিত দাস ধরনীর ধুলি হোক চন্দন : শৌনক দত্ত সিন্ধুসভ্যতার ভাষা মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলনের রাজা হামুরাবির নামে : অসিত দাস বিস্মৃতপ্রায় জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় ভাষায় সিন্ধুসভ্যতার মেলুহার ভাষার প্রভাব : অসিত দাস বঙ্গতনয়াদের সাইক্লিস্ট হওয়ার ইতিহাস : রিঙ্কি সামন্ত নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘ঝড়ের পরে’ ভালো থাকার পাসওয়ার্ড (শেষ পর্ব) : বিদিশা বসু গাছে গাছে সিঁদুর ফলে : দিলীপ মজুমদার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড : বিদিশা বসু সলিমুল্লাহ খানের — ঠাকুরের মাৎস্যন্যায় : ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা : মিল্টন বিশ্বাস নেহরুর অনুপস্থিতিতে প্যাটেল, শ্যামাপ্রসাদও ৩৭০ অনুমোদন করেছিলেন : তপন মল্লিক চৌধুরী সিঁদুরের ইতিকথা আর কোন এক গাঁয়ের বধূর দারুণ মর্মব্যথা : দিলীপ মজুমদার সাহিত্যিকদের সংস্কার বা বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে শ্রীপাণ্ডবা বা নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত দশহরার ব্যুৎপত্তি ও মনসাপূজা : অসিত দাস মেনকার জামাই ও জামাইষষ্ঠী : শৌনক ঠাকুর বিদেশী সাহিত্যিকদের সংস্কার ও বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভক্তের ভগবান যখন জামাই (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘সময়ের প্ল্যাকটফর্ম’ গুহাচিত্র থেকে গ্রাফিটি : রঞ্জন সেন জামিষষ্ঠী বা জাময়ষষ্ঠী থেকেই জামাইষষ্ঠী : অসিত দাস কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই প্রভু জগন্নাথদেবের শুভ স্নানযাত্রার আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ওয়াকফ সংশোধনী আইন এই সরকারের চরম মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ : তপন মল্লিক চৌধুরী

তপন মল্লিক চৌধুরী / ৪০২ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫

এদেশে হিন্দু সমাজে যা ‘দেবোত্তর সম্পত্তি’ বলে গণ্য, মুসলিম সমাজে প্রায় তারই অবিকল সংস্করণ হল ওয়াকফ। পার্লামেন্টে কয়কদিন আগেই প্রবল আকচাআকচির পর সেই মুসলিম ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলটি পাশ হয়েছে। বিরোধী দলগুলি একজোট হয়েও বিল পাস হওয়া ঠেকাতে পারেনি, রাজ্যসভাতেও তা অনায়াসে উতরে গিয়েছে আর তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সেই বিলটিতে সিলমোহর বসিয়ে দেওয়ায় এখন সেই বিল দেশে একটি আইনে পরিণত হয়েছে। ফলে এদেশ জুড়ে থাকা কোটি কোটি মূল্যের যাবতীয় ওয়াকফ সম্পত্তি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা হবে, তার পুরো পদ্ধতিটাই গিয়েছে বদলে। যদিও বিলটিকে চ্যালেঞ্জ করে অন্তত চারটি পিটিশন সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা হয়েছে এবং প্রত্যেকটিতেই দাবি করা হয়েছে যে, এই বিলটি চূড়ান্ত অসাংবিধানিক এবং দেশের সংখ্যালঘু নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। এখন সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে কী অবস্থান নেয় এবং মামলাগুলি শুনানির জন্য গ্রহণ করে কি না, সেটাই দেখার। উল্লেখ্য, ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড’-সহ ভারতের মুসলিম সমাজের একাধিক সংগঠন একই যুক্তিতে বিলটির তীব্র বিরোধিতা করছে। সরকারের যুক্তি, দেশে মুসলিমদের ওয়াকফ সম্পত্তির পরিচালনা পদ্ধতিকে স্বচ্ছ্ব ও দুর্নীতিমুক্ত করে তুলতেই এই আইনটি প্রণয়ন করা দরকার ছিল।

ভারতে ওয়াক্‌ফ বোর্ডে দুর্নীতি যে রয়েছে সেকথা মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিরাও স্বীকার করেন। উল্লেখ্য, বিচারপতি রাজেন্দ্র সাচার কমিটি (২০০৬)-এর বক্তব্য, বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও ওয়াক্‌ফ বোর্ডের রাজস্ব ছিল খুবই কম। কমিটি জানায়, যদি জমিগুলি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার কোটি রুপি আয় করা সম্ভব। অথচ বর্তমানে বার্ষিক আয় মাত্র ২০০ কোটির মতো। কমিটি এও জানায়, ওয়াক্‌ফ-এর রক্ষণাবেক্ষণ করে রাষ্ট্র যে নিজেই বহু জমি দখল করে রেখেছে। কেবল তাই নয়, কমিটি যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে জমি-বাড়ি-সম্পত্তি দখলে রেখেছে তাদের একটি তালিকাও দিয়েছিল। সরকারের যুক্তি, সংশোধীত ওয়াক্‌ফ নাকি এইসব সমস্যার সমাধান করবে এবং সাচার কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। কিন্তু তাতেও আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে তার একটি কারণ, মালিকানাসংক্রান্ত নীতি পরিবর্তনের ফলে ঐতিহাসিক মসজিদ, দরগা ও কবরস্থানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এগুলির একটা বড় অংশ বহু প্রজন্ম ধরে ব্যবহৃত হলেও বেশির ভাগেরই কোনো লিখিত দলিল নেই। অনেক ক্ষেত্রে অন্তত একশো বছর আগে মৌখিকভাবে কিংবা প্রমাণ ছাড়া দান করা হয়েছে। যদিও ১৯৫৪ সালের ওয়াক্‌ফ আইনে এই সম্পত্তিগুলিকে ‘ব্যবহারভিত্তিক ওয়াক্‌ফ’ বা দখলিস্বত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল কিন্তু সংশোধিত নতুন আইনে এই ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে একটা বিরাট সংখ্যক ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় সম্পত্তির আইনি স্বীকৃতি প্রশ্নের মুখে পড়তে বাধ্য। আরেকটি উদ্বেগজনক বিষয় হল, সংশোধিত আইনে ওয়াক্‌ফ বোর্ডে এখন থেকে অমুসলিম সদস্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বোর্ডে সব ধর্মের মানুষ রাখা বাধ্যতামূলক করার আইন গ্রহণযোগ্য হতেই পারে যদি তার প্রক্রিয়াকে ধর্মনিরপেক্ষ করে তোলা যায়। কিন্তু ওয়াকফের ক্ষেত্রে যেভাবে সেটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা হচ্ছে, তাতো সংখ্যাগরিষ্ঠের রাজনৈতিক সুবিধার সবার্থে। কারণ, শুধু তো রাষ্ট্রের মাধ্যমে মুসলমানদের সম্পত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং হিন্দু সমাজের মাধ্যমে মুসলিম সমাজ জীবনের উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। প্রশ্ন, এদেশে হিন্দু মন্দির পরিচালনা কমিটিতে কি অন্য ধর্মাবলম্বীরা স্থান পান? তাহলে ওয়াক্‌ফ বোর্ডে অমুসলিমদের রাখা হবে কেন? স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে যে ওয়াক্‌ফ সংশোধোনী আইন আসলে এদেশে মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদীদের বৈষম্য ও নিপীড়নের আরেকটি পদক্ষেপ।

প্রসঙ্গত, আগস্ট মাসে বিজেপি জোট সরকার যখন ওয়াকফ আইন সংশোধন করার জন্য আনা বিলে জানিয়েছিল, ওয়াক্‌ফ প্রশাসন আধুনিক এবং আইনের ফাঁকফোকরগুলি বন্ধ করতেই এই বিলটির প্রস্তাবনা। কিন্তু তখন থেকেই কেবল দেশের মুসলিম নেতারাই নয়, বিরোধী দলগুলিও বলেছিল, বিজেপি সরকার মুসলিমদের সম্পত্তির উপর আরও বেশি ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সংশোধনী আনতে চাইছে। ওয়াক্‌ফ আইনের নতুন সংশোধনীতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হল কোনটিকে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি বলে চিহ্নিত করা হবে, সেই সংজ্ঞাটাই পাল্টে দেওয়া! ঐতিহাসিকভাবে দেশের বহু বাড়ি থেকে জমি এতকাল আইনগতভাবে বৈধ ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি বলে স্বীকৃতি পেয়ে এসেছে কেবল মুখের কথায় বা ওরাল ডিক্লারেশনে। এখন নতুন আইনে কোনো সম্পত্তিকে ওয়াক্‌ফ বলে দাবি করতে হলে ওয়াক্‌ফ বোর্ডকে তার স্বপক্ষে বৈধ নথিপত্র জমা দিতে হবে। আবার সেই জমি যদি সরকারি মালিকানাধীন বা খাস জমি হয় তাহলে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের। নতুন আইনে অমুসলিম ব্যক্তিরাও ওয়াক্‌ফ বোর্ড ও ট্রাইব্যুনালের সদস্য নিযুক্ত হতে পারবেন। এতদিন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি নিয়ে কোনো বিতর্কের ক্ষেত্রে ওয়াক্‌ফ ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত। কিন্তু নতুন আইনে বিচারবিভাগীয় হস্তক্ষেপেরও সুযোগ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, কোনো পক্ষ চাইলে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন। এছাড়া নতুন আইনে দেশের সব ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির জন্য একটি ‘সেন্ট্রালাইজড রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম’ গঠনেরও প্রস্তাব রয়েছে। তার মানে এখন সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তিকে ওই রেজিস্টারে নথিভুক্ত করাতে হবে।

শুধু তাই নয়, নতুন কোনো সম্পত্তি যদি ওয়াক্‌ফ হিসেবে নথিভুক্ত করাতে হয়, সেক্ষেত্রেও এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সংশ্লিষ্ট ওয়াক্‌ফ বোর্ডের কাছে আবেদন পেশ করতে হবে। একটা ব্যাপার স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে সরকারের ভূমিকা এখন থেকে আগের চেয়ে অনেক বেশি থাকবে, বস্তুতপক্ষে সরকারই ওয়াক্‌ফ বোর্ডের চেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী হবে। অর্থাৎ এদেশের জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ বা প্রায় ২০ কোটি মুসলমানের ধর্মীয় ঐতিহ্য, অধিকার, সংস্কৃতির উপর বিজেপি সরকারের আইনকে অপব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, যা ইসলামী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাপক বিপর্যয় ঘটাবে। এদেশে সামরিক বাহিনী ও রেলওয়ের পর ওয়াকফ মালিকানাধীন জমির পরিমাণই সবথেকে বেশি। নতুন ওয়াকফ আইন কাজে লাগিয়ে বিজেপি সরকার যে ওয়াকফ সম্পত্তি যে অবাধে নিয়ন্ত্রণ করবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, আর সেটাই হবে মুসলিমদের উপর চরম আঘাত। সব মিলিয়ে ওয়াকফ সংশোধনী আইন ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের চরম মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন