মঙ্গলবার | ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:১৫
Logo
এই মুহূর্তে ::
অদ্বৈত মল্লবর্মণ — প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য-সমালোচক (তৃতীয় পর্ব) : রহমান হাবিব কাশ্মীরী মন্দির — অবহেলায় না অনীহায়? অবন্তীস্বামী ও মার্তন্ড মন্দির : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী মমতার স্পষ্ট বার্তা — আগে বাংলার মানুষ আলু খাবে, তারপর বাইরে পাঠানো হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় অদ্বৈত মল্লবর্মণ — প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য-সমালোচক (দ্বিতীয় পর্ব) : রহমান হাবিব লঙ্কা চাষ বাড়ছে, লাভবান চাষিরা, রপ্তানি বাড়াতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পাশাপাশি, তবে প্রাণ নেই, চিহ্ন বইছে ভেলুগোন্ডা, রবিবার জল সরার পরে : অশোক মজুমদার নলিনী বেরার কবিতা — স্বভূমি, স্বদেশ, স্বজন : ড. পুরুষোত্তম সিংহ অদ্বৈত মল্লবর্মণ — প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য-সমালোচক (প্রথম পর্ব) : রহমান হাবিব রংবাহারি ক্যাপসিকাম : রিঙ্কি সামন্ত রাজ্যের কৃষকমান্ডিতে কৃষকদের ধান বিক্রিতে দালাল মুক্ত করার নির্দেশ সরকারের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘উচ্ছেদ’ আমাদের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং নানা মত : তপন মল্লিক চৌধুরী বেঙ্গল গোট গ্রামীণ অর্থনীতিতে এনে দিতে পারে স্বচ্ছলতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পিটার নাজারেথ-এর ছোটগল্প ‘মালদার’ অনুবাদ মাসুদ খান আমরা নারী-আমরাও পারি : প্রসেনজিৎ দাস ঝুম্পা লাহিড়ীর ছোট গল্প “একটি সাময়িক ব্যাপার”-এ অস্তিত্ববাদ : সহদেব রায় ঝুম্পা লাহিড়ী-র ছোটগল্প ‘একটি সাময়িক বিষয়’ অনুবাদ মনোজিৎকুমার দাস ঠাকুর আমার মতাে চিরকালের গৃহীর চিরগুরু : সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ভাবাদিঘির জট এখনও কাটেনি, বিষ্ণুপুর থেকে জয়রামবাটি রেল চলাচল শীঘ্রই : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (শেষ পর্ব) : অভিজিৎ রায় উৎপন্না একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত মারাঠাভুমে লাডকি বহিন থেকে জয়, ঝাড়খণ্ডে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী প্রচারে হার : তপন মল্লিক চৌধুরী কিন্নর-কৈলাসের পথে : বিদিশা বসু হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (চতুর্থ পর্ব) : অভিজিৎ রায় ভনিতাহীন চলন, সাইফুর রহমানের গল্প : অমর মিত্র সাইফুর রহমান-এর বড়োগল্প ‘করোনা ও কফিন’ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (তৃতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় নানা পরিচয়ে গৌরী আইয়ুব : গোলাম মুরশিদ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় কেন বারবার মণিপুরে আগুন জ্বলে আর রক্ত ঝড়ে : তপন মল্লিক চৌধুরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

বিশ্বকাপ না খেলেও ব্যলন ডি অর জেতা একজন উদাসীন তারকার নাম বেস্ট : যীশু নন্দী

যীশু নন্দী / ৩৩১ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ২৫ মে, ২০২৪

বেলফাস্টের অন্ধকার ঘরে ল্যাম্পের একচিলতে আলো জ্বেলে টেলিফোনের ডায়ালটেবিলটা বেশ কয়েকবার ঘোরালেন এক ভদ্রলোক। অপরপ্রান্তে ফোনটা ধরা হলে তাকে নির্দেশ দেওয়া হলো ওল্ড ট্র‍্যাফোর্ডের উদ্দেশ্যে একটি টেলিগ্রাম যাবে, টেলিগ্রামের ভাষাটা নিজেই ঠিক করে দিলেন — “I think I’ve found a genius for you”।

যিনি টেলিফোনটা করেছিলেন, তাঁর নাম বব বিশপ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রবাদপ্রতিম স্কাউটার, বেলফাস্টে এসেছিলেন স্কাউটিং এর জন্য। অপরপ্রান্তে ফোনটি কে ধরেছিল তা জানা নেই, কিন্তু ওল্ড ট্র‍্যাফোর্ডের যে মানুষটির উদ্দেশ্যে টেলিগ্রামটি করতে বললেন, তিনি আর কেউ না — দ্য গ্রেট ম্যাট বাসবি, জন্মলগ্নের পর থেকে রেড ডেভিলসদের প্রথম স্বপ্নের পথ দেখানো বাসবি বেইবসদের কারিগর। আর জিনিয়াসটি কে? পেলের মতে “All time Greatest of Europe”। মারাদোনার মতে তার “Inspirational Idol”। — ভুল পথে পা বাড়িয়ে নিজের কেরিয়ারকে স্বল্পস্থায়ী করে তোলা এক বিশ্বকাপ না খেলা বিশ্বজয়ী, যাঁর মৃত্যুর ঠিক আগে বলে যাওয়া শেষ বাক্য ছিল —”Don’t Die Like Me”। এক নাম না জানা “ফিফথ বিটল”, যার জন্মের তারিখটাও মনে রাখে না কেউ — দ্য জর্জ বেস্ট। আমি নিজেও বেশী কিছু জানতামনা তার ব্যাপারে। নাম তো শুনেই ছিলাম, আর সেটা শুনে একজন স্রেফ “বিখ্যাত খেলোয়াড়, যে অল্প সময়েই হারিয়ে গেল” এমনসুলভ একটা ধারণাই ছিল। কিন্তু ইউটিউবে রয়ে যাওয়া কিছু স্কিলের ছটা, “বিখ্যাত” জীবনের অগাধ রসালো “দর্শন”-গুলো পড়ে মনে হলো, হি ইজ কমপ্লিটলি ডিফারেন্ট। সত্যি, পেলে মারাদোনারা যাকে “গ্রেটেস্ট” বলে, তাকে ব্যাখ্যা করার আমি কে। যাই হোক, যেখানে শেষ করেছিলাম, সেখান থেকেই শুরু করি —

দুই.

বিশপের হাত ধরে সে পা রেখেছিল ম্যানচেস্টারে। কিন্তু তাতে কি হবে, তিনি যে অত্যন্ত ঘরকুনো। চব্বিশ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই বন্ধু ম্যাকমের্ডির সাথে ম্যানচেস্টার থেকে সটান পাড়ি দিয়ে দিল সেই বেলফাস্টে। যাই হোক, বাবার হস্তক্ষেপে অনেক বুঝিয়ে তাকে আবার ইংল্যান্ডে ফেরানো হয়। শুরু হলো “বাসবি বেইবস” এর নতুন অধ্যায়।

গল্পটা কনটিনিউ করার আগে একটু ম্যাঞ্চেস্টারের কথা বলে রাখি। বার্লিন দুর্ঘটনার পর ম্যানচেস্টারের অবস্থা ছিল শোচনীয়। বেস্ট আসার সময়ে, বিগত পাঁচ বছরে কোনো ট্রফি নেই। তখন প্রিমিয়ার লিগে শুধুই লিভারপুল, নিউক্যাসলদের রমরমা। আর সর্বক্ষণের সাথী ছিল লিভারপুল সমর্থকদের বিদ্রুপ। এবার চলুন, আসল গল্পে ফেরা যাক।

তিন.

“ওই ছোকরা, একটু দাঁড়াও এখানে। একটু ভালো করে দেখি তোমাকে। গোটা ম্যাচে শুধু তোমার পিঠটা দেখতে পেয়েছি, যেটা টাচলাইনের ওপর ওঠানামা করছিল শুধু” — কথাটা বললেন ওয়েলেসের ডিফেন্ডার গ্রাহাম উইলিয়ামস। সেটা ছিল সতেরো বছরের সেই “জিনিয়াস”-এর ম্যাঞ্চেস্টার অভিষেক। বিপক্ষে ওয়েলেস। ম্যাচটায় কোনো গোল পাননি, কিন্তু কতটা প্রভাব ছিল, সেটা মাপতে হয়তো উইলিয়ামসের বক্তব্যটাই যথেষ্ট। এভাবেই শুরু হলো লাল জার্সির “বিটল” এর পথচলা। বেস্ট-ববি চার্লটন — ডেনিশ ল-এর ত্রিভুজ তখন ইউরোপ কাঁপাচ্ছে। লম্বা ঝাঁকরা চুলের সুদর্শন বেস্টের নয়নাভিরাম খেলায় মুগ্ধ হতে থাকল ওল্ড ট্র‍্যাফোর্ডের দর্শক। ম্যানচেস্টারে একটা কথা খুব প্রচলিত —” In every Saturday, people pay not to watch Goals, but to watch Beautiful Football in Old Trafford”। সত্যিই, গোলই তো শেষ সৌন্দর্য নয়। শেষ সৌন্দর্য ফুটবলের পায়ে পায়ে ঘোরা সেই মহাজাগতিক স্কিলের মাদকতা যা দর্শককে বসিয়ে রাখতে পারে ঘন্টার পর ঘন্টা, গোল না হবার পরেও। আর জর্জ বেস্ট যেন রেড ডেভিলসদের সেই চাহিদার বেশী কিছু দিয়ে বসল। সুদর্শন বেস্টে মুগ্ধ হয়ে গোটা ইউরোপ সেই সময়কার বিখ্যাত “বিটলস” ব্যান্ডের সুদর্শন চারজন গায়কদের অনুসারে তার নাম দিল “ফিফথ বিটল”। সত্যি, বেস্ট ফুটবল নয়, সঙ্গীত নিয়ে খেলতেন যেন। দেখতে দেখতে ৬৬’-এর ইউরোপা কাপের কোয়ার্টারে মুখোমুখি ম্যানচেস্টার আর বেনফিকা। সেই সময়কার শক্তিশালী বেনফিকা। ইউসেবিওর বেনফিকা। আগের লেগে পিছিয়ে থাকা ম্যাঞ্চেস্টারের বিদায় যখন সবাই ধরে নিয়েছে, তখনই জ্বলে উঠল “বাসবি বেইবস”। ৫-২ গোলে কার্যত পর্যুদস্ত করল ইউসেবিওদের। কিন্তু সেইবার বেস্ট চোট পাওয়ায় ইউরোপা কাপ অর্থাৎ চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা হলো না ইউনাইটেডের। এরপর সোজা চলে আসুন ১৯৬৬/৬৭ মরশুমে। বেস্টের ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠ পর্যায়। সেইবার আবারো ইউরোপা কাপের ফাইনালে বেনফিকা আর ইউনাইটেড। নব্বই মিনিট অবধি স্কোর ১-১। এমন সময় পোস্টের পঁচিশ গজ আগে বল পেয়ে একজন, দুইজন, তিনজনকে কাটিয়ে আগুয়ান গোলরক্ষককে ডজ করে জালের উদ্দ্যেশ্যে বল ঠেলে দিয়ে দু হাত তোলা উচ্ছ্বাসে মাতলেন জর্জ বেস্ট। সেই গোলের পর দাঁড়াতে পারেনি বেনফিকা। তৈরী হয়েছিল ইতিহাস। ইতিহাসে প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ এলো রেড ডেভিলসদের ট্রফি ক্যাবিনেটে। সেইবার ব্যালন ডি ওরটাও এসেছিল বেস্টের দখলে। আমার জ্ঞান অনুযায়ী তিনিই একমাত্র যে বিশ্বকাপ না খেলেও বিশ্বসেরা হয়েছিলেন।

চার.

কাট টু ১৯৭৬। তখন গোটা বিশ্বে ক্রুয়েফ নামের এক ব্যক্তির রমরমা। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে টোটাল ফুটবলের দর্শন। এমনসময় আয়ারল্যান্ড বনাম নেদারল্যান্ডসের এক ম্যাচের আগে সাংবাদিক বিল এলিয়ট প্রশ্ন করে ফেললেন জর্জ বেস্টকে —

— ” কে সেরা আপনি না ক্রুয়েফ?

—.”শিশুসুলভ প্রশ্ন। দেখবেন এই ম্যাচেই আমি ক্রুয়েফকে নাটমেগ করবো, তাও প্রথম সুযোগেই।”

যেমন বলেছিলেন, কাজেও করে দেখান। ম্যাচের প্রথম সুযোগেই নাটমেগ করেছিলেন বেস্ট। ফুটবলের লজিকে নাটমেগটা নেহাতই একটা ড্রিবল নয়, কিছুটা অপমানও। ম্যাট বাসবি একবার বলেছিলেন — “তুমি বেস্টকে কোচিং করাতে যেওনা, ওকে নিজের মতো থাকতে দাও”। বাসবি চলে যাবার পর এই সূত্রটা হয়তো পরবর্তী কোচেরা মেনে চলেননি। তাই মুখ থুবড়ে পড়েছিল ম্যানচেস্টার, কিন্তু তা সত্ত্বেও বেস্টের শ্রেষ্ঠত্ব একটুকুও হ্রাস পায়নি। এমনও হয়েছে লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতা বেস্ট (২৬), আর তারপরে ম্যান ইউ-এর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ডেনিশ ল’এর গোলসংখ্যা মাত্র নয়টা।

কিন্তু ম্যানেজারদের সাথে ক্রমাগত ঝামেলা মাত্র ২৮ বছর বয়সেই ফর্মের শীর্ষে থেকে অবসর নিয়েছিলেন বেস্ট। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল অসংযমী জীবন, একাধিক নারীসংযোগ। কিন্তু এসব ব্যাপারে তাঁর মতো উদাসীন তারকা আরেকজনকেও দেখিনি। একবার বলেছিলেন — “১৯৬৯ সালে আমি নারী আর মদ ছেড়ে দিই। এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে ২০ মিনিট। “একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল — “মিস ব্রিটেন-সহ একাধিক নারীর সাথে সংযোগ নিয়ে কি বলবেন”। তিনি বলেছিলেন — ” But I missed a lot, Miss Canada Miss Universe Miss World”। আসলে ফুটবলের ব্যাপারে তিনি বরাবরই উদাসীন। অবসর নেবার পর পরিযায়ী পাখির মতো বিভিন্ন দেশে একটু-আধটু ফুটবল খেলে বেরিয়েছেন, কিন্তু প্রতিটাই খুবই স্বল্পক্ষণের পিরিয়ড। এক উজ্জ্বল তারকার পরিসমাপ্তি এভাবেই হয়েছিল। না হলে হয়তো পেলে মারাদোনা ক্রুয়েফের সাথে তার নামটা একইসাথে উচ্চারিত হতো। কিন্তু এ নিয়েও কোনো আক্ষেপ তার মধ্যে দেখা যায়নি। তিনি এও বলেছিলেন — “লিভারপুলের বিরুদ্দে ত্রিশ গজ দূর থেকে করা গোল আর মিস ওয়ার্ল্ড এর সাথে পরিভ্রমণের অপশন দিলে কোন অপশনে যাব সেটা বলা খুবই কঠিন।” সময়টা ২০০২ কি ০৩’। অত্যন্ত মদ্যপানে তার লিভার-সহ মাল্টি অর্গান ফেলিওর হয়। তাঁর লিভার মাত্র কুড়ি শতাংশ কাজ করছিল, কিন্তু তারপরেও মদ্যপান একটুও কমাননি।

তিনবছর পর, তখন রাত একটা। ক্রমওয়েল হাসপাতালে মারা যান জর্জ বেস্ট। হয়তো মৃত্যুর ঠিক আগে কিছুটা হলেও আক্ষেপ হয়েছিল নিজের জীবন নিয়ে, মারা যাবার আগে শেষবার বলে গেলেন — ” Don’t Die Like Me”।

বেস্ট কোথায় সেরা? ফুটবল কেরিয়ার বিচার করলে ব্যাপারটা অনেক বিতর্কিত। কিন্তু মন দিয়ে বিচার করলে ষাটের দশকে অবনমিত ম্যান ইউয়ের পতাকা তুলে ধরবার একজন লোকের অভাব ছিল, বেস্ট সেই লোকটা। আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টের বস্তি, যেখানে তারকার অভাব, সেইস্থান থেকে বিশ্বকাপ না খেলেও ব্যলন ডি অর (Ballon d’Or) জেতা একজন উদাসীন তারকার নাম বেস্ট। ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় তিনি তার প্রতিভার পঞ্চাশ শতাংশ ব্যবহার করেছেন। জানিনা, বাকী পঞ্চাশ এলে কি হতো। এ প্রসঙ্গে বেস্টেরই একটা উক্তি মনে পড়ে — ” If I would be Ugly, People would not know the name of Pele”। অনেকে এই উক্তির সাথে পেলেকে বর্ণবিদ্বেষমূলক শ্লেষের অভিসন্ধান পেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে অন্য। তিনি বলতে চেয়েছিলেন, অত্যাধিক সুদর্শন হওয়াতে একাধিক নারীর প্রস্তাবে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি, তা না হলে তাঁর নাম পেলের আগেই থাকতো। অহংকার? নাহ, আসলে তা নয়। একবার মহম্মদ আলীর আত্মজীবনী লিখতে গিয়ে সাংবাদিক বলেছিল বইয়ের নাম “আলি-দ্যা গ্রেট”। মহম্মদ আলি নাম পরিবর্তন করে রাখতে বলেছিলেন — ” আলি-দ্য গ্রেটেস্ট”। এ ব্যাপারে পরে আলি বলেছিলেন — “আমার মতো কেউ সেরা হলে, তার পক্ষে বিনয়ী হওয়াটা খুব কঠিন”। বেস্টের ব্যাপারেও এই একই সূত্র। তা না হলে ক্রুয়েফকে বলে বলে নাটমেগ করেন। মাঝে মাঝে আফসোস হয়, সত্যি এমন প্রতিভার সাথে যদি একটু ডিসিপ্লিন আর ডিটারমিনেশন যুক্ত হতো, তবে বেলফাস্টের বাসিন্দাদের মতো হয়তো আমরাও বলতাম — “Maradona good, Pele Better, George BEST”। কিন্তু এতো কুৎসা এবং অতিস্বল্প কেরিয়ারের পরেও ওয়ার্ল্ড সকারের রিপোর্ট অনুযায়ী একশ জন সর্বকালের শ্রেষ্ঠদের মধ্যে বেস্টের স্থান সপ্তম।

একটা পুরোনো আফ্রিকান প্রোভাব খুব মনে পড়ে যায় — “Rain can soak leopard’s skin, but can’t wash out the spots”। আর তাইতো বার্লিন এয়ারক্র‍্যাসের পরেও রেড ডেভিলসরা শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠে। এতোকিছুর পরেও জর্জ বেস্ট নামটা ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায়েই রয়ে গেছে। প্রথম, দ্বিতীয়ে না হয় পেলে-মারাদোনাই থাক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন