বুধবার | ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:৩৩
Logo
এই মুহূর্তে ::
রামগতপ্রাণ দাস্যভক্তির শ্রেষ্ঠ বিগ্রহ হনুমানজি : রিঙ্কি সামন্ত লুইজ গ্লিক ও সাহিত্যে সমকালীনতা : সাইফুর রহমান ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৪তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে কি করা হচ্ছে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন সাহিত্যে যুদ্ধ, যুদ্ধে সাহিত্য : মিল্টন বিশ্বাস রবীন্দ্রনাথ কখনও শিমুলতলা আসেননি : জমিল সৈয়দ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০৩তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়-এর ছোটগল্প ‘বিকাশের বিয়ে’ গরমের সময়ে চোখের যত্ন না নিলে অন্ধত্ব এবং ক্যানসারের ঝুঁকিও থাকে : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী হরিশ মুখার্জীর সন্ধানে (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০২তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘ইস্টিশনের অজয়’ হরিশ মুখার্জীর সন্ধানে (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০১তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ যাত্রায় নতুন প্রজন্ম তৈরি করেছিলেন কিংবদন্তি যাত্রাভিনেতা মোহিত বিশ্বাস : সন্দীপন বিশ্বাস আর. কে. নারায়ণ-এর ছোটগল্প ‘ছায়া’ অনুবাদ আনিকা শাহ হরিশ মুখার্জীর সন্ধানে (প্রথম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (১০০তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ছোটগল্প ‘সই’ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (৯৯তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ বিজয়া দেব-এর ছোটগল্প ‘ভিজে শালিকের ডানা’ রাম রাজ্য!! : সুকুমারী ভট্টাচার্য শ্রী রামচন্দ্র ও হিন্দু বাঙালি : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (৯৮তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ সাইদ আহমদ এবং তার “শেষ নবাব” নাটকের ঐতিহাসিকতা : আবু জাফর রেহমান সৌরভ হোসেন-এর ছোটগল্প ‘বালুচরি’ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (৯৭তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ বাঁধের এপার ওপার : মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য কৃষিক্ষেত্র থেকে পৌষ্টিকতন্ত্রে যাত্রা : সুব্রত ঘোষ তোমাদের ঠিকানাটা বলবে ? আমিও সেখানে যেতে চাই : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪৩১-এর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

শেখ রাসেল : অনাবিল প্রাণের স্মৃতিময় প্রসঙ্গ

ড. মিল্টন বিশ্বাস / ১১৬০ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২০

১৯৪৮ সালে সচিবালয়ের সামনে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজের সাইকেল নিয়ে অবস্থানের একটি আলোকচিত্র রয়েছে। ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করে তারও প্রিয় সঙ্গী হিসেবে একটি সাইকেল ছিল। ঘাতকের বুলেট শিশুটির মগজ ও চোখ বের করে নিয়েছিল। মার কাছে যেতে চাইবার আগে ভয়ে যখন কেঁদে উঠে বলেছিল ‘আমাকে ওরা মেরে ফেলবে নাতো’ তখনো সেই নারকীয় ঘটনার সাক্ষী ও ৩২ নম্বর সড়কের বিখ্যাত বাড়ির গৃহকর্মীর মনে হয়নি শিশুটিকে হত্যা করতে পারবে জল্লাদরা। আর স্নেহময়ী মাতার মৃতদেহ দেখে আর্তচিৎকারে যখন সে তাকে হাসু আপার কাছে পাঠিয়ে দিতে বলেছিল ঠিক তখনই পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে এসেছিল। শিশুটির সাইকেলটি তখন গ্যারেজে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ রচনায় লিখেছেন রাসেলের জন্ম ইতিবৃত্ত—‘রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিল ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা কাকা বাসায়। বড় ফুফু ও মেজ ফুফু মার সাথে। একজন ডাক্তার এবং নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আর জেগে ওঠে। আমরাও ঘুমে ঢুলঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমনবার্তা শোনার অপেক্ষায়।মেজ ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখব। ফুফু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালো চুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড়সড় হয়েছিল রাসেল। মাথার চুল একটু ভেজা মনে হলো। আমি আমার ওড়না দিয়েই মুছতে শুরু করলাম। তারপরই এক চিরুনি নিলাম মাথার চুল আচড়াতে। মেজ ফুফু নিষেধ করলেন, মাথার চামড়া খুব নরম তাই এখনই চিরুনি চালানো যাবে না। হাতের আঙ্গুল বুলিয়ে সিঁথি করে দিতে চেষ্টা করলাম। আমাদের পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রাসেল। অনেক বছর পর একটা ছোট বাচ্চা আমাদের ঘর আলো করে এসেছে, আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে।

আব্বা বার্ট্র্যান্ড রাসেলের খুব ভক্ত ছিলেন, রাসেলের বই পড়ে মাকে ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। মা রাসেলের ফিলোসফি শুনে শুনে এত ভক্ত হয়ে যান যে নিজের ছোট সন্তানের নাম রাসেল রাখলেন। ছোট্ট রাসেল আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। মা রাসেলকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সংসারের কাজ করতেন, স্কুল বন্ধ থাকলে তার পাশে শুয়ে আমি বই পড়তাম। আমার চুলের বেণি ধরে খেলতে খুব পছন্দ করতো ও। আমার লম্বা চুলের বেণিটা ওর হাতে ধরিয়ে দিতাম। ও হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে হাসতো। কারণ নাড়াচাড়ায় মুখে চুল লাগতো তাতে খুব মজা পেত।জন্মের প্রথম দিন থেকেই ওর ছবি তুলতাম, ক্যামেরা আমাদের হাতে থাকতো। কত যে ছবি তুলেছি। ওর জন্য আলাদা একটা অ্যালবাম করেছিলাম যাতে ওর জন্মের দিন, প্রথম মাস, প্রতি তিন মাস, ছয় মাস অন্তর ছবি অ্যালবামে সাজানো হতো। দুঃখের বিষয় ওই ফটো অ্যালবামটা অন্যসব জিনিসপত্রের সঙ্গে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী লুট করে নেয়। হারিয়ে যায় আমাদের অতি যত্নে তোলা আদরের ছোট্ট ভাইটির অনেক দুর্লভ ছবি।’

‘মুজিববর্ষে’ (২০২০) ৫৬তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠিত হচ্ছে শেখ রাসেলের। শেখ হাসিনার লেখা থেকে পাঠকরা জানতে পেরেছেন, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল এই দিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করে। মাত্র ১০ বছর বয়সে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে অন্য সবার সঙ্গে না ফেরার দেশে চলে যায় সে। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালের নারকীয় হত্যাকান্ডের পর ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার রোডের বাড়িটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ১৯৮১ সালে ৭ জুন শেখ হাসিনা বাড়িটি ফেরত পান। সেদিন শেখ হাসিনার সঙ্গে যারা সেই বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন তারা সবাই দেখতে পান ঘাতকদের বীভৎসতার নানা আলামত। আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি ও রক্তের দাগ তখনো মেঝেতে লেগে আছে। দেয়ালে, সিঁড়িতে দগদগ করছে দাগগুলো। গুলির আঘাতে দেয়ালে ক্ষতচিহ্ন, জানালার কাঁচ, কাঠের দেয়াল নির্মম ইতিহাসের চিহ্ন বহন করে চলেছে। আর তার ভেতর থেকে শেখ হাসিনাসহ সবার অন্তরে ঘাতকদের বিচারের দাবির প্রশ্ন উচ্চকিত হয়ে উঠছিল। গুলিবিদ্ধ রাসেল যে স্থানে ধড়ফড় করে কাতরাতে কাতরাতে মারা যায়, বঙ্গ মাতা ফজিলাতুন্নেQv যেখানে ছটফট করে গোঙাতে গোঙাতে প্রাণবিসর্জন দেন, জাতির পিতা সিঁড়ির গোড়ায় যে জায়গায় বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে পড়েছিলেন সেসব স্থানের প্রতিটি চিহ্ন সজীব হয়ে উঠেছিল। ১৩ জুন ১৯৮১ সালে দৈনিক সংবাদ বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পরিবেশ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সমস্ত বাড়িটাজুড়েই বিরাট এক হাহাকার, অব্যক্ত কান্না জমেছিল তখনো। তার কিছু অংশ নিম্নরূপ :

‘বাড়ির ভেতরে ১৫ আগস্টের কালোরাতে যে অবস্থা ছিল এখনো তাই রয়েছে। শুধু রক্তের দাগ মুছে ফেলা হয়েছে। দোতলায় সিঁড়ির বাম দিকে বঙ্গবন্ধুর লাশ পড়েছিল। জায়গাটা দেখে মনে হয় রক্তের দাগ মোছার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু গভীর কালো দাগ আরো গভীর হয়ে আছে, মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি। বঙ্গবন্ধুর ঘরের বিছানাপত্র এলোমেলো পড়ে আছে। এই ক’বছর ভেতরে প্রচুর ধুলা জমেছে। ঘরের ভেতরে ধুলাবালির স্তর পড়ে আছে। সিঁড়িতে জামাল-কামালের বিয়ের আলপনার দাগ এখনো রয়েছে। রাসেলের সাইকেলটাও গ্যারেজেই পড়েছিল।’

হত্যাযজ্ঞের শিকার হওয়ার সময় রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে উঠছিল রাসেল। তবে তার বেড়ে ওঠার প্রথম পথ ছিল রাজনৈতিক সঙ্কটের কাল। তারপর যুদ্ধে জয়ী হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স সাত। পিতার জন্য তার কাতরতা ছিল। পিতা পাকিস্তানের কারাগারে কিন্তু তার জেদ ছিল পিতার কাছে যাবে সে। স্বাধীন দেশে পিতা প্রধানমন্ত্রী, তার ব্যস্ততার শেষ নেই। এরই মধ্যে রাসেল তার চিরসঙ্গী সাইকেলটি নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিল। তার সাইকেলটি ছিল পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতই প্রিয়। যেটি এখন তার স্মৃতিকে বহন করে নীরব সাক্ষী হয়ে রয়েছে। পিতার একান্ত সান্নিধ্যে তার সময় কাটত কখনো কখনো। যদিও সেই মহান পিতাকে দেখার সুযোগও তার জীবনে কম হয়েছিল।

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বেডরুমে এক এক করে সবাইকে হত্যা করার পরে বাড়ির নিচে আনা রাসেল ঘাতকের লক্ষ্যে পরিণত হয়। বুলেটবিদ্ধ করার আগে ওয়ারলেসে কথা বলে নেয় হত্যাকারীরা। কান্নারত ভীত শিশুটিকে তার মাকে দেখাতে নিয়ে যেতে বলা হয়। বন্দুকধারী ঘাতকরা তাকে মৃত্যু ও রক্তের স্রোতের ভেতর দিয়ে হেঁটে নিয়ে মৃত মায়ের কোলের কাছে উপস্থিত করে। মার মৃতদেহ দেখে আর্তচিৎকার করে কেঁদে উঠে মিনতি করেছিল রাসেল। বেঁচে থাকার জন্য ‘আমাকে হাসু আপার কাছে পাঠিয়ে দিন’ বলেছিল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কিত রাতের শেষ ভোরের কান্না সেই বাড়ি থেকে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। মার মৃতদেহ দেখে তার প্রিয় বোন শেখ হাসিনার কাছে সে যেতে চেয়েছিল কেন? সে সময় শেখ হাসিনা বিদেশে ছিলেন। মৃত্যুর হিমশীতল আস্তানার মধ্যে রাসেল বুঝেছিল কি তার হাসু আপা একদিন ঘাতকদের বিচার সম্পন্ন করবেন?
রাসেল তুমি জানতে পারলে না— কি অধীর আগ্রহে আমরা প্রতীক্ষা করেছিলাম ঘাতকদের বিচারের আশায়। সেই আশা তোমার হাসু আপা পূরণ করেছেন রাসেল। তুমি ঠিক মানুষটির কাছে যেতে চেয়েছিলে কারণ শেখ হাসিনা দুঃখ জয় করে সমগ্র দেশের মানুষের মাঝখানে তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন। সেদিন সৃষ্টিকর্তার এক নাটকীয় আখ্যান প্রস্তুত হচ্ছিল। তুমি যে হাসু আপাকে ডাকবে এটা ছিল সেই প্রতীক যা এখন আমরা বুঝতে পারি।

জন্ম থেকে অনেক আলোকচিত্র সংরক্ষিত হয়েছে রাসেলের। শেখ হাসিনার কোলে চড়ে এক কি দেড় বছরের রাসেল। মিষ্টি হাসিতে চেয়ে থাকা, পিতার কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা রাসেল; তার সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়া অথবা খাবার টেবিলে বাবার ডান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা। ১৯৭৫ সালে শেখ কামাল ও সুলতানা কামালের বৌভাতের দিন বঙ্গবন্ধু ও সুলতানা কামালের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা কৌতূহলী বালক রাসেল। বঙ্গবন্ধুর কোলে কিংবা অন্য দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামালসহ পিতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা। আবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের যে ছবি আছে সেখানেও রাসেল বঙ্গবন্ধুর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। পরিবারের সবচেয়ে ছোট সন্তান হিসেবে পিতার স্নেহে ধন্য ছিল রাসেল; আলোকচিত্রগুলো তার সাক্ষ্য বহন করে।বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা ‘কারাগারের রোজনামচা’য়ও রাসেল জীবন্ত হয়ে আছে। শেখ হাসিনা জেলখানায় দেখা করার সে ঘটনায় লিখেছেন-‘আব্বার সঙ্গে প্রতি ১৫ দিন পর আমরা দেখা করতে যেতাম। রাসেলকে নিয়ে গেলে আর আসতে চাইতো না। খুবই কান্নাকাটি করতো। ওকে বোঝানো হয়েছিল যে আব্বার বাসা জেলখানা আর আমরা আব্বার বাসায় বেড়াতে এসেছি। আমরা বাসায় ফেরত যাবো। বেশ কষ্ট করেই ওকে বাসায় ফেরত আনা হতো। আর আব্বার মনের অবস্থা কী হতো তা আমরা বুঝতে পারতাম। বাসায় আব্বার জন্য কান্নাকাটি করলে মা ওকে বোঝাতো এবং মাকে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন।মাকেই আব্বা বলে ডাকতো।’

তবে বঙ্গবন্ধু ১৯৬৪ সালের পর যতদিন জেলের বাইরে ছিলেন তার পুরো সময়টাই রাসেলের সঙ্গে নিবিড় মমতায় জড়িয়েছিলেন। এমনকি স্বাধীনতার পর জাপান সফরে তিনি এই ছোট পুত্রকে সঙ্গী করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাসেলই ছিল তাঁর আনন্দের সঙ্গী। ১৯৬৬ সালের ১৫ জুন বন্দি বঙ্গবন্ধু লিখেছেন-‘সাড়ে চারটায় জেলের লোক এসে বলল-চলুন আপনার দেখা আসিয়াছে, আপনার স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে বসে আছে জেল অফিসে। তাড়াতাড়ি রওয়ানা করলাম। দূর থেকে দেখি রাসেল, রেহানা ও হাচিনা চেয়ে আছে আমার রাস্তার দিকে। ১৮ মাসের রাসেল জেল অফিসে এসে একটুও হাসে না—যে পর্যন্ত আমাকে না দেখে। দেখলাম দূর থেকে পূর্বের মতোই আব্বা আব্বা বলে চিৎকার করছে। জেল গেট দিয়ে একটা মাল বোঝাই ট্রাক ঢুকেছিল। আমি তাই জানালায় দাঁড়াইয়া ওকে আদর করলাম। একটু পরেই ভিতরে যেতেই রাসেল আমার গলা ধরে হেসে দিল। ওরা বলল আমি না আসা পর্যন্ত শুধু জানালার দিকে চেয়ে থাকে, বলে আব্বার বাড়ি’। এখন ওর ধারণা হয়েছে এটা ওর আব্বার বাড়ি। যাবার সময় হলে ওকে ফাঁকি দিতে হয়।’

কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকান্ডর পর বা ৩ নভেম্বর জেল হত্যা, একের পর এক মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, সিপাহি-জনতার বিপ্লবের নামে একটার পর একটা ক্যু তান্ডব ও হত্যাকান্ড; অন্যায়ভাবে ফাঁসি বা ফায়ারিং স্কোয়াডে সামরিক অফিসার ও সৈনিকদের হত্যা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষক রিমান্ড ও হত্যাকান্ড ঘটানোর ইতিহাস থেকে আমরা কি শিক্ষা পেলাম? মানুষের বিবেক জাগ্রত হয়নি কেন? বরং ঘাপটি মেরে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে ঘাতকের অনুসারীরা সময়ের সুযোগে উদয় হওয়ার জন্য? ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দিয়েছে। দুষ্কৃতকারীরা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রামের লক্ষ্য করেছে ব্যাহত। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর প্রতি রাতে কার্ফু দেয়া হতো। শাসকদের হাতে জনগণ ছিল জিম্মি। শাসকরা জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়েছে। আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তার পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। রাসেলের জন্মদিন আমরা সেই মু³ পরিবেশে পালন করতে পারছি।

রাসেলের জন্মবার্ষিকীতে শিশুদের প্রকৃত ইতিহাস জানানোর প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। জানাতে হবে কারা সেই ঘাতক যারা সপরিবারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে শেষে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল; তাদের অনুসারী কারা যারা আজো সক্রিয় দেশের রাজনীতিতে। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস শেখাতে পারলে রাসেলের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে তথা যুদ্ধাপরাধীর বিপক্ষে আমরা মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে পারব। আর বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের পলাতক খুনিদের ফাঁসি কার্যকর করতে পারলে আমরা শান্তি অনুভব করব।

(লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস,  বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, email-drmiltonbiswas1971@gmail.com)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

বাংলা নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩০ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন