রবিবার | ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:১৩
Logo
এই মুহূর্তে ::
আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (শেষ পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী মোদি ম্যাজিক ছিল কিন্তু সে ম্যাজিক ফিকে হয়ে গেছে : দিলীপ মজুমদার সুশান্ত দাসের ‘প্রকৃতিগাথা’ : দিলীপ মজুমদার রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহনযোগ্যতা ও আরাকান আর্মি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন কেদারনাথ-বদ্রীনাথ ভ্রমণ : প্রকৃতি আর ঈশ্বর যখন একটি বিন্দুতে মিশে যায়… : অমৃতাভ দে আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (তৃতীয় পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী বসিরহাটে নুনের হাট, শ্যামবাজার নুনের বাজার : অসিত দাস মুর্শিদাবাদের আমকথা (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত জেন অস্টিন নারী স্বাধীনতার অন্যতম পথিকৃৎ : মনোজিৎকুমার দাস ইসবার ইন্ডিয়া জোটকা সরকার, আমরা একাই একশো — মমতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (শেষ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন মুর্শিদাবাদের আমকথা (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (দ্বিতীয় পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী নজরুল ও মধুপুর (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ কবি কুসুমকুমারী দাশ ও পরাবাস্তবতার কবি জীবনানন্দ : বিজয়া দেব হুগলির লোকসভা ভোটে গ্রামীন এলাকায় ১৭১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (সপ্তদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (প্রথম পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী নজরুল ও মধুপুর (প্রথম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (ষোড়শ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আলাউদ্দিন অল আজাদ-এর ছোটগল্প ‘আমাকে একটি ফুল দাও’ ধর্ম আর সাম্প্রদায়িকতাকে বিজেপি বড্ড বেশি জরুরি করে ফেলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকগীতি ঘাটু গান আজ অবলুপ্তির পথে : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (পঞ্চদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন হাসান আজিজুল হক-এর ছোটগল্প ‘স্বপ্নেরা দারুণ হিংস্র’ বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বেদেদের বৈচিত্র্যময় জীবনযাপনের কথা : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (চতুর্দশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন নাইন্টিন সেভেন্টিন ওয়ান : শৌনক দত্ত বিশ্বপরিব্রাজক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (ত্রয়দশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই অক্ষয় তৃতীয়া-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (নবম পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন

সন্‌জীদা খাতুন / ৭৭ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪

পনেরো.

অনেককাল আগের কথা, শিশির ঘোষ মশাই শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন ছবি আঁকা শিখতে। কলাভবনে পড়া শেষ হলো। তখন তো চলে যেতে হয় তবে! মন তো মানে না। রবীন্দ্রনাথ বললেন, তুমি তো বাঁশি বাজাও, ও নিয়ে থাকো না! যা-ই হোক, এটা-ওটা শিখতে শিখতে করতে করতে শেষ পর্যন্ত থেকেই যাওয়া হলো শান্তিনিকেতনে। আর শুধু বাঁশি বাজানো কেন, গানও তো গাইতেন উনি।

চাকরি করতেন শ্রীনিকেতনে, কলাভবনের বিদ্যা সম্বল করেই। বিনয় ভবনের সঙ্গেও, গানের সূত্রে যুক্ত ছিলেন। আমি তাঁকে পাই তাঁর প্রবীণ বয়সে। বিনয় ভবনের ছাত্রী সান্ত্বনা সেনগুপ্ত তাঁর অনুগত ভক্ত ছিল। আমাকে সে তার কাছে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিল। আমার গানের কথা শুনে উনি এসরাজ বার করে সুর মেলালেন। শুরু হলো তার বাজনার সঙ্গে আমার গান গাওয়া। ওঁর বাড়িটি দূরে (শ্রীনিকেতনের মুখে) বলে বেশি যেতে পারতাম না। উনিও আমার স্কলার্স ব্লকে আসেননি কখনো। কিন্তু আমার জন্যে খুব অপেক্ষা করে থাকতেন শিশিরদা। গান ছাড়া নানা গল্পও চলত।

শৈলজাদা নাকি রবীন্দ্রনাথের গানের সুর নিয়ে কখনো কখনো আপত্তি করতেন। নাকি বলেছেন — এ জায়গাটা আমি অন্য রকম করে নিয়েছি। এ নিয়ে শিশিরদা ক্ষুব্ধ ছিলেন। শান্তিদেব ঘোষও নাকি রবীন্দ্রনাথের ডাক পেয়েও সহজে কাছে যেতেন না। এ কথা আর কারও মুখেও শুনেছি আমি। শিশিরদার কাছে এই অবাধ্যতাগুলো খুবই খারাপ লাগত।

শিশিরদার বাইরের ঘরটা একেক দিন গানে ভেসে যেত। আসর হতো জমজমাট। একবার গানের পরদিন রেজিস্ট্রার্স অফিসে ঢুকছি — ‘শুনি কেউ আবৃত্তি করছেন আর কি কখনো কবে/ এমন সন্ধ্যা হবে’। চমকে উঠে দেখি একটা বেঞ্চে বসে আগের দিন গাওয়া ‘গোধূলিলগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা’ গানের কথা বলছেন শিশিরদা। সত্যি সত্যি ও রকম সন্ধ্যা হয়নি আর কখনো। প্রথম দিকে এসরাজে শিশিরদার হাত বেশ চলত, সুরও বাঁধতেন যত্ন করে। বয়স বেড়ে নব্বই পার হলে সেই দক্ষতা হারিয়ে গেল ক্রমে।

সান্ত্বনা সেনগুপ্তের কথা বলি আর একটু। কানাই সামন্ত মশাইয়ের মাধ্যমে ওদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল আমার। সান্ত্বনা আর প্রীতি। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার স্কুলের শিক্ষক ছিল ওরা। সান্ত্বনা খুব চিঠি লিখতে পারত। ওর সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কানাইবাবু। ওরা দুই বন্ধু খুব বেড়িয়ে বেড়াত। কোনো জায়গায় যাবার আগে টুরিস্ট গাইডজাতীয় বইটই পড়ে সেখানকার দর্শনীয় জায়গা আর ইতিহাস জেনে নিত ওরা।

শান্তিনিকেতনে প্রথম যেদিন ওদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো, সেদিন ওরা বেরিয়েছে শিউড়ি হয়ে দেওঘরের নন্দন পাহাড়, মধুপুর, গিরিডি — ওসব দিকে যাবে। শুনে আমি সুর করে বললাম, আমাকে কেউ নিয়ে যায় না রে! আমাকে সঙ্গে নিতে তক্ষুনি রাজি ওরা। সেই শুরু। পরে জম্মু-কাশ্মীরও ঘুরে এসেছি ওদের সঙ্গে। গেছি কুলু মানালিতে। ভারতে বেড়াবার সুবিধা এই যে পথেঘাটে খাবারের দোকান পাওয়া যায়। পরে তুলনা করে দেখেছি — যশোর থেকে ঢাকা আসবার পথে ওই সুবিধা খুব একটা ছিল না। আর টয়লেটের অভাব তো আর এক দুঃসহ ব্যাপার।

বাংলাদেশে ওদের নিয়ে ঘুরতে পেরেছি নানাজনের সঙ্গে চেনাজানার সূত্রে। একবার কুষ্টিয়ার লালনের আখড়া হয়ে শিলাইদহ কুঠিবাড়ির পাশের সরকারি রেস্টহাউসে রাত্রিযাপন করে চমৎকার ঘুরেছি। কুষ্টিয়ার শিল্পী অশোক সাহা যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ঢাকা থেকে মাইক্রোবাস নিয়ে বগুড়া-জয়পুরহাট হয়ে ঘুরেছি পতিসর, দিনাজপুরের কান্তজির মন্দির। সাহায্য করেছিল জয়পুরহাটের আমিনুল হক বাবুল। থাকা-খাওয়ার কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে নীরবে। শান্তিনিকেতনে আলাপ বলেই এই বন্ধুদের সঙ্গে ভ্রমণের কথা লিখলাম এখানে।

শান্তিনিকেতনের মোহরদি, বাচ্চুদি, শৈলজাদা বাংলাদেশে এলেও কিন্তু মনে হয়, শান্তিনিকেতনই যেন এসেছে বাইরে!

সুতপা ভট্টাচার্যের নাম এসেছে নানা প্রসঙ্গে, কিন্তু তাঁর কথা লেখা হয়নি। স্কলার্স ব্লকের ঘরের দরজায় একদিন চিঠি পেলাম, দেখা করতে এসে আমাকে পাননি সুতপা ভট্টাচার্য। সেই দিনই সত্যেন রায় মশাইয়ের বাসায় গিয়ে সুতপা ভট্টাচার্যের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শুনলাম। তার লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়েছেন সত্যেন রায়। আমাকেও লেখাটি পড়তে দিলেন। সেবার ওই নাম শোনা পর্যন্ত।

কলকাতায় কী একটা সমাবেশে গিয়ে দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (কালান্তর) সঙ্গে দেখা হলে তিনি আমাকে আর একজনের সঙ্গে আলাপ করাচ্ছিলেন, এমন সময়ে এক মহিলা এসে বললেন, আর আমার সঙ্গে পরিচয় করাবেন না? চেনাজানা হলো–ইনিই সেই সুতপা ভট্টাচার্য। তিনি ছায়ানটের মুক্ত করো হে বন্ধ’ প্রবন্ধ সংকলনের ভূমিকায় আমার লেখা পড়ে আমাকে পছন্দ করেছিলেন, শুনলাম। সেই থেকে ঘনিষ্ঠতা।

সেই সময়ে সুতপা কলকাতাতেই থাকতেন। কিছুকাল পরে পাঠভবনের শিক্ষক হয়ে তিনি বিশ্বভারতীতে যোগ দিলেন। স্কলার্স ব্লকে আমার পাশের একটি কামরাই তাঁর আবাসস্থল হলো। ফলে নিত্য দেখাশোনা। তা ছাড়া আমি রবীন্দ্রভবনে পড়তাম, উনিও রবীন্দ্রভবনে পড়াশোনা শুরু করলেন। ‘কবির চোখে কবি’ নামে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে অমিয় চক্রবর্তী আর আরও তিনজন কবির অভিমত সংকলন করে বিশ্লেষণ করছিলেন সুতপা। ফলে বিশেষ স্বভাববশত নিজের কামরায় চশমাটি রেখে পড়তে চলে গেলে, আমাকেই চশমার বাহক হয়ে রবীন্দ্রভবনে ছুটতে হতো। এভাবে আমার ওপরে তার নির্ভরশীলতা বেড়ে চলেছিল। উঁচু-নিচু অসমান পথে চলতে গিয়ে ঠ্যাং ভাঙলে তাকে প্লাস্টার করা পা নিয়ে কলকাতার ট্রেন ধরিয়ে দেওয়া ইত্যাদি অনেক কিছুই করতে হতো। তার স্বামী প্রদ্যুম্ন ভট্টাচার্য স্ত্রীকে কলকাতা থেকে সারিয়ে শান্তিনিকেতনে পৌঁছিয়ে দিতে এসে বলতেন ‘এত দিন প্র-যত্নে ছিল, এবারে সযত্নে রেখে গেলাম’। কাজেই সম্পর্কটি বোঝাই যাচ্ছে।

আমার শান্তিনিকেতনে দীর্ঘ অবস্থান এই সম্পর্কের ওপরে কালিমাও ফেলেছিল একসময়ে। যোগাযোগ যতটা ছিল, বন্ধুত্ব ততখানিই ছিল বলা দুষ্কর। যাহোক, সুতপা ভট্টাচার্য আমার শান্তিনিকেতন বাসকালের দীর্ঘদিনের সহচর বটে। ওর কলকাতার বাসায় কতবার যে নেমন্তন্ন খেয়েছি! রান্নার দিকটা সুতপারই তত্ত্বাবধানে ছিল, কিন্তু খাওয়ার পরের মিষ্টান্নর যে কত রকম বৈচিত্র্য দেখিয়েছেন প্রদ্যুম্ন! আর ছিল মিষ্টি পান। বিশেষ দোকান থেকে কিনে আনা হতো দুপুরের রোদ অগ্রাহ্য করে। কলকাতায় আমি ওদের দুজনের সেবায় পরিতৃপ্ত হতাম। [ক্রমশ]


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন