শুক্রবার | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:১০
Logo
এই মুহূর্তে ::
মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ছোটগল্প ‘সই’ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (৯৯তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ বিজয়া দেব-এর ছোটগল্প ‘ভিজে শালিকের ডানা’ রাম রাজ্য!! : সুকুমারী ভট্টাচার্য শ্রী রামচন্দ্র ও হিন্দু বাঙালি : উৎপল আইচ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (৯৮তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ সাইদ আহমদ এবং তার “শেষ নবাব” নাটকের ঐতিহাসিকতা : আবু জাফর রেহমান সৌরভ হোসেন-এর ছোটগল্প ‘বালুচরি’ ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (৯৭তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ বাঁধের এপার ওপার : মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য কৃষিক্ষেত্র থেকে পৌষ্টিকতন্ত্রে যাত্রা : সুব্রত ঘোষ তোমাদের ঠিকানাটা বলবে ? আমিও সেখানে যেতে চাই : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় নিজের জালেই জড়িয়ে গেলেন রানিমা? : দিলীপ মজুমদার চব্বিশের লোকসভায় বামেরা কি ঘুরে দাঁড়াবে : তপন মল্লিক চৌধুরী ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (৯৬তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ অতীত থেকে আজ, বদলায়নি নববর্ষ : সন্দীপন বিশ্বাস শিবকেন্দ্রিক লোক উৎসবের একটি নাম নবদ্বীপে শিবের বিয়ে : রিঙ্কি সামন্ত নববর্ষের আলোয় : নন্দিনী অধিকারী নববর্ষ ও বাংলার লোকাচার : দেবাশিস শেঠ জেলেপাড়ার সঙ : অসিত দাস নদিয়ার মিষ্টি — সেকাল ও একাল : দীপাঞ্জন দে বাংলার ঐতিহ্যবাহী হালখাতা উৎসব : সুখেন্দু হীরা বারপুজো, বাঙালীয়ানা এবং বহমানতা : যীশু নন্দী বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতিসত্তার স্মারক উৎসব : সনজীদা খাতুন চৈত্র পেরিয়ে বৈশাখ : প্রজ্ঞাপারমিতা রায় নববর্ষ আসে, কবিতার অক্ষর বলে, ‘তুমিও সুন্দর’ : অমৃতাভ দে ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (৯৫তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ মুলক রাজ আনন্দ-এর ছোটগল্প ‘রুপার কঙ্কণ’ অনুবাদ ড. রহমান হাবিব রাঢ়বঙ্গের কেন্দ্রবিন্দু বর্ধমানের গাজন : রিঙ্কি সামন্ত ব্রিটিশ ভারতে উপনিবেশিক বিচার : এলিজাবেথ কলস্কি (৯৪তম পর্ব) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪৩১-এর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কবি আনন্দ বাগচী স্বকীয় পথে হেঁটেছেন আজীবন : স্বপনকুমার মণ্ডল

স্বপনকুমার মণ্ডল / ৬৭৪ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২১

শিল্প-সাহিত্যে মনন ও হৃদয়ের রসায়ন অত্যন্ত অস্পষ্ট। সেক্ষেত্রে সৃজনবিশ্বে সময়ের হাতছানি কতটা সক্রিয়, তা নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা গড়ে তোলাও সম্ভব নয়। আপাতভাবে যা রিক্ততাবোধে নিঃস্বপ্রায়, তাই আবার শূন্যতার পূর্ণতাবোধে নতুন দিগন্তের উন্মোচনে সক্রিয় মনে হয়। সেখানে অভাবের মধ্যেই স্বভাবের আভিজাত্যবোধ নানাভাবে হাতছানি দেয়। তার পরিচয় কবিজীবনেও লক্ষ করা যায়। সময়ের খরায় সেখানে কবিজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে, সৃষ্টিতেও এসেছে বন্ধ্যা প্রকৃতি, তারপরেও কবি ফিরে পেয়েছেন নতুনতর গভীরতর জীবনসত্য। বাংসা সাহিত্যে একদা সাড়া জাগানো কবি আনন্দ বাগচীর (১৫ মে, ১৯৩২-৯জুন, ২০১২) মধ্যেই তা প্রতীয়মান। তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়ার সময় (১৯৫৬) থেকেই কবিতাযাপনকে আপন করে নিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ফার্স্ট ইয়ারে পড়তেন আর ‘এক ডাকসাইটে কবি’ দীপক মজুমদার। সেই ছাত্রজীবনেই আনন্দ বাগচী উদীয়মান কবি হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর কৃত্তিবাসী কথাপ্রসঙ্গে সেকথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায় : ‘১৯৫৩ সালের বর্ষাকালে (শ্রাবণ ১৩৬০) প্রকাশিত হয় প্রথম সংখ্যা কৃত্তিবাস।

আমি তখন থার্ড ইয়ারের ছাত্র, বয়েস উনিশ। কারাবাসের কারণে দুটি বছর নষ্ট হওয়ায় দীপক (দীপক মজুমদার) পড়ে ফার্স্ট ইয়ারে স্কটিশচার্চ কলেজে ; তাঁর সহপাঠী আনন্দ বাগচী, যাঁর কবিতা তখন সমস্ত পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়।ও-রকম খ্যাতিমান একজনকে সম্পাদকমণ্ডলীতে নিয়ে আমরা পত্রিকায় গৌরব বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলাম।’ আবশ্য প্রথম তিনটি সংখ্যার পর আনন্দ বাগচী ‘কৃতিবাস’ থেকে সরে আসেন। অন্যদিকে সেই ‘কৃত্তিবাসী-প্রকাশন’ থেকেই তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘স্বগত সন্ধ্যা’ প্রকাশিত হয় ১৩৬০-এ এবং কবি হিসাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। সাহিত্যের অন্য শাখাতে বিশেষ করে কথাসাহিত্যেও নিজেকে মেলেধরেন তিনি। অথচ মনে তাঁর কলকাতা, প্রাণে কবির বাস। তার পরিচয় তাঁর উপন্যাসেই প্রতীয়মান। প্রথম উপন্যাস ‘চকখড়ি’ (‘অমৃতধারা’য় ১৯৫৮, বই আকারে ১৯৬১) থেকে প্রথম কাব্যোপন্যাস ‘স্বকালপুরুষ’ (১৩৭০) সর্বত্রেই তা ছড়িয়ে পড়েছে। কাব্যভুবনেই ছিল তাঁর স্বকীয় বাসভূমি। সেই ভুবনেই আনন্দ বাগচীর বিস্তার ছিল সময়ের অপেক্ষামাত্র। ১৩৬৬-তে তাঁর দ্বিতীয় কাব্য ‘তেপান্তর’ প্রকাশিত হয়। একাধিক আধুনিক কবিতা-সংকলনেও তাঁর বিস্তার ঘটে। আবু সয়ীদ আইয়ুব সম্পাদিত ‘পঁচিশ বছরের প্রেমের কবিতা’ (১৩৬৩) ও বিষ্ণু দে সম্পাদিত ‘একালের কবিতা’য় (১৯৬৩) তাঁর কবিতা স্বচ্ছন্দে স্থান লাভ করে।

বাংলা কাব্যের সেই উদীয়মান কবিপ্রতিভাকে প্রকাশের মধাহ্নে পৌঁছানের পরিসরেই তা থেকে দূরত্ব বাড়াতে হয়েছিল। তীব্র অনিচ্ছা নিয়েই একপ্রকার বাধ্য হয়ে আনন্দ বাগচী ত্রিশ বছর বয়সে (১৯৬২তে) বাঁকুড়া খ্রিশ্চান কলেজে অধ্যাপনায় যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর ষোলোটি বছর (১৯৬২-১৯৭৮) অতিবাহিত হয়। তাঁর সেই অনাসৃষ্টির বেদনামুখর দীর্ঘ কালপর্বের কথা অকপটে ব্যক্ত করেছেন ‘দেশ’-এ প্রকাশিত (সাহিত্য সংখ্যা, ১৩৮৭) স্মৃতিকথায়। সেদিনের সেই সময়ের খরা আকস্মিক হলেও অস্বাভাবিক ছিল না। আনন্দ বাগচী নিজেই সেকথা পরোক্ষে জানিয়েছেন : ‘আমার অজ্ঞাতবাস এবং নির্বাসনের পালা শুরু হতে যাচ্ছে এই সময়। প্রেমের দায়ে প্রায় আকণ্ঠ ডুবে আছি তখন। লেখালেখি, বন্ধুবান্ধব, আড্ডা–সামাজিক সব বন্ধনগুলোই আলগা হতে শেষ পর্যন্ত ছিঁড়ে গেছে। এইভাবে প্রায় বছর দুই প্রেম নামক বেকার ভাতায় দিনযাপন প্রাণধারণ করে কলকাতা থেকে আচমকা বিদায় নিলাম।’ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৬১-তে আনন্দ বাগচীর সঙ্গে সঙ্গীতশিল্পী মানসী পালের বিয়ে হলেও তা অস্থায়িত্বের দিকে এগিয়েছিল। বছরকয়েকের মধ্যে তাঁদের মধ্যে বিচ্ছেদও ঘটে। অন্যদিকে ‘কলকাতা থেকে মাত্র একশচুয়াল্লিশ মাইল দুরে’র বাঁকুড়াতে এসে তাঁর বিচ্ছেদবিরহ তাঁকে কুরে কুরে খেত। সেকথা তিনি অকপটে ব্যক্ত করেছেন। তাঁর কথায় : ‘প্রাচীন পুঁথির মত ধুলোয় ভরা এই আদিম শহর এবং শহরতলী…শাল পিয়াল মহুয়া সেগুনের পাতা পোড়ানো লু…প্রবল জ্বরের ঘোরের মত এর আসন্ধ্যা দুপুর আমাকে নিঃশব্দে কেড়ে নিল।’ বাঁকুড়া সেই রিক্ত পরিসর তাঁকে শুধু নিঃস্ব করে তোলেনি, সৃজনবিশ্বে বিচ্ছিন্নতাবোধেও সক্রিয় করে তোলে। আনন্দ বাগচীর ভাষায় : ‘বাঁকুড়া আমার জীবনে প্রকৃত অর্থেই মল্ল-ভূমি। দুঃখ-মৃত্যু-সফলতা-বিচ্ছেদ মিলিয়ে কেবল ঘটনার পর ঘটনা, কেবলই ভাঙচুর আর একলা হওয়ার ইতিহাস; উপচে-পড়া সময়ের নিস্তরঙ্গ গুরুভার বহন করে যাওয়া। এই সময়টা বলতে গেলে আমার না-লেখার  নৈরাজ্য। যা লিখেছি সে নিতান্তই অনিয়মিত অভ্যাসবশে, বা বাইরের ফরমাসে।’ সেই সময়ের খরাতে প্রথম উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি তাঁর ‘স্মৃতিজীবী কলকাতা’র আধারে লেখা ‘স্বকাল পুরুষ’। সুশীল রায়ের আবেদনে সাড়া দিয়ে লেখা কাব্যোপন্যাসটি তাঁর ‘ধ্রুপদী’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে বাঁকুড়াবাসের উপান্তে তাঁর তৃতীয় কাব্য ‘উজ্জ্বল ছুরির নীচে’ (১৯৭৭) বেরিয়েছে। স্থানিক দূরত্বে কলকাতার যাপনকে কবি ভুলতে পারেননি, বরং বিচ্ছেদবোধে তার স্মৃতি আরও সুধা হয়ে উঠেছে। সেই সুধাপানে কখনও-সখনও কলকাতায় ছুটে গিয়েছেন। কবিতাযাপনেও ভিড়েছেন। ১৯৬৬-তে ৭ মে সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটার ঐতিহাসিক ‘কবিতা-ঘণ্টিকী’র ‘প্রতি ঘণ্টায় একটি’ কাব্যপত্রের সম্পাদনাতেও সামিল হয়েছিলেন। সেখানে শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়, প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায় ও শান্তনু দাসের সঙ্গে আনন্দ বাগচীও সম্পাদক ছিলেন। অন্যদিকে বাঁকুড়াতেও তাঁর ‘অনিয়মিত’ সাহিত্যচর্চার পরিচয় বর্তমান।

আসলে আনন্দ বাগচী বাঁকুড়ার প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও তাঁর সৃজনশীল মননকে নানাভাবে বিস্তার করায় সক্রিয় হয়েছিলেন। এজন্য দলবেঁধে যেমন পত্রিকা সম্পাদনা করে প্রকাশ করেছেন, তেমনি আবার তাতে লেখনীধারণও করেছেন। শুধু তাই নয়, কলকাতার পত্রিকাতেও লিখেছেন। বাঁকুড়ার অবনী নাগকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে মাসিক পরে ত্রৈমাসিক ‘পারাবত’ সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বছরচারেক (১৩৭২-১৩৭৬) চলেছিল পত্রিকাটি। এতে প্রথম সংখ্যাতেই আনন্দ বাগচীর উপন্যাস ‘আক্ষেপানুরাগ’ প্রকাশিত হয়। ‘পারাবত’-এর প্রথম বর্ষের চতুর্থ ও পঞ্চম সংখ্যায় তিনি ‘শ্রীহর্ষ’ ছদ্মনামে ‘রূপান্তর’ শীর্ষক নাটকও লিখেছিলেন। অন্যদিকে অবনী নাগ ও বিবেকজ্যোতি মৈত্রের সঙ্গে একটি ভিন্নধর্মী ব্যঙ্গাত্মক মাসিক পত্রিকা ‘বৃশ্চিক’ সম্পাদনা করেছিলেন তিনি। সেটি ১৯৭৩-৭৪ পর্যন্ত চলেছিল। আবার তাঁর লেখা উপন্যাস ‘খোয়াই’ কলকাতার ‘প্রসাদ’ পত্রিকায় ১৯৭৭-এর এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। বাঁকুড়ার শুষ্ক পরিসরে আনন্দ বাগচী তাঁর স্বকীয় প্রতিভায় সাহিত্যচর্চার পরোক্ষে প্রাণের সঞ্চার করে যেভাবে নিজেকে সজীবিত  করতে চেয়েছিলেন, তাতে তাঁর সাহিত্যের বহুমুখী বিস্তার সক্রিয় হলেও স্বীয় কবিজীবনের শূন্যতাবোধ তাঁকে কখনো স্বস্তি দেয়নি। এজন্য ‘দেশ’-এর সম্পাদনার দায়িত্বে কলকাতায় ফিরে গেলেও তাঁর তীব্র কবিসত্তায় ফিরে আসার সম্ভাবনায় আশাবাদী হতে পারেননি। তাঁর কথায় : ‘কলকাতায় ফিরে এসেছি কিন্তু এখনো আমার না-লেখার পর্বই চলেছে। ইতস্তত কিছু খাপছাড়া গদ্যে কলম জ্বালিয়ে রাখলেও মন তৈরী হয়নি এখনও। যতদূর তাকিয়ে আছি কবিতার চিহ্নও নেই।….নতুন বিষয় নতুন মাধ্যম খুঁজছি, পাচ্ছি না, পাবো কিনা তাও জানি না। সেই বয়স নেই আবেগ হারিয়ে গেছে।’ আনন্দ বাগচীর সেই আত্মসমীক্ষা তাঁর বাংলা কবিতায় বিস্মৃতির মধ্যেই প্রতীয়মান। সেখানে তাঁর সাহিত্যের বহুমুখী বিস্তারে কবি আনন্দ বাগচীর পরিসর ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। তাঁর বাঁকুড়ার জীবন সেখানে ব্যর্থতার আধার হয়ে ওঠে। অবশ্য বাঁকুড়াকে তিনিও ভুলে যাননি। তাঁর সঙ্গে বাঁকুড়ার সংযোগ আজীবন অটুট ছিল। আনন্দ বাগচী যখন জীবনের শেষ পর্যায়ে অসুস্থ অবস্থায় পঙ্গুপ্রায় হয়ে হালিশহরে দীন-হীন সঙ্গীন অবস্থায় পড়েছিলেন, তখনও বাঁকুড়ার সুহৃৎদের পাশে পেয়েছিলেন। অবনী নাগের নেতৃত্বে ‘আনন্দ বাগচী সাহায্যার্থ কমিটি’ গড়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, ২০১২-তে তাঁকে নিয়ে ‘পারাবত’ পত্রিকা সংখ্যা প্রকাশ করে সম্মান জানিয়েছে। আনন্দ বাগচীও তাঁর ‘প্রথম প্রেম’ (১৯৮১) উপন্যাসটি উৎসর্গে বাঁকুড়াকে স্মরণ করেছেন। যে-চারজনকে উৎসর্গ করেছেন, তার মধ্যে অবনী নাগও রয়েছেন। অন্যদিকে আলোকে নিবিড় ভাবে পাওয়ার মধ্যেই অন্ধকারের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় না, উভয়ের পারস্পরিক স্থিতির মধ্যে চলমান জীবনের পরশ পাওয়ার জন্যও তা আবশ্যক হয়ে ওঠে। আনন্দ বাগচী সেই শূন্যতাবোধের মধ্যেই তার হদিশ পেয়েছিলেন। তাঁর ‘এবং তারপর’ কবিতার সূচনাতেই উঠেছে সেই অভিজ্ঞান, ‘জন্ম মৃত্যু নয়, শেষ কথা বুঝি চুপ করে থাকা।’  কবির সেই অমোঘ উচ্চারণ নিবিড়তা লাভ করেছে কবিতার শেষে : ‘একজন অন্ধকারে, অন্যজন আলোতে বসেছে, / দুজনেরি রয়ে গেল দুজনের কাছে বহু ঋণ; / মৃত্যু বারবার এই জীবনের মুখ চেয়ে বাঁচে / দিনের হৃদয়ে রাত্রি রাত্রির হৃদয়ে কাঁদে দিন।’ সেখানে বাঁকুড়ার শূন্যতাবোধের আধারে আনন্দ বাগচীর কবিমানসে পূর্ণতার অভিব্যক্তি প্রাসঙ্গিকতায় ফিরে এসেছে কবিসুলভ সত্যতায়।

লেখক : প্রফেসর, বাংলা বিভাগ, সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়, পুরুলিয়া-৭২৩১০৪।

ছবি : (প্রথম) (বাঁ দিক থেকে) আনন্দ বাগচী, জ্যোতিষ দাশগুপ্ত ও সাগরময় ঘোষ।

ছবি : (দ্বিতীয়) (বাঁ দিক থেকে) আনন্দ বাগচী, সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, রমাপদ চৌধুরী, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

বাংলা নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩০ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন