উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বহু এলাকায় প্রবল বৃষ্টিতে নিচু জমিতে জল দাঁড়িয়েছে। গত দু-দিনের বৃষ্টিতে সবজি নষ্ট হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাড়তে পারে সবজীর দাম। রাজ্য সরকার যদিও বাজারগুলোতে সবজির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে নজরদারি শুরু করেছে। দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও, সম্প্রতি বৃষ্টিতে সবজি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবার গৃহস্থের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
সম্প্রতি নিম্নচাপের বৃষ্টি রাজ্যের প্রায় সর্বত্র হয়েছে।
প্রায় প্রতিটি জেলায় ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যদিও ঘাটতি রয়ে গেছে অনেক জেলাতেই। তবুও নিম্নচাপের বৃষ্টি নিচু এলাকাতে জল জমায় বহু সবজি নষ্ট হয়েছে। তাই আশঙ্কা সবজির দাম বাড়তেই পারে। বিশেষ করে বেগুন, ঢ্যাঁড়স, করলা, পটল, বরবটি, কুমড়ো, ঝিঙে, পালং, নটে ইত্যাদি সবজির।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, কোচবিহার, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর ইত্যাদি জেলায় নিচু এলাকাগুলিতে সম্প্রতি বর্ষণে জল জমেছে। ফলে ওই সমস্ত
এলাকার সবজি নষ্ট হতে শুরু করেছে। জেলার অধিকাংশ চাষিরা জানাচ্ছেন, নিচু জমিতে জল জমায় তা নিকাশি করা যায়নি। ফলে লঙ্কা, বেগুন, পটল, মুলো, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়স, কুমড়োর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির গাছ পচে গেছে। এজন্য নতুন করে সবজি জন্মাচ্ছে না। জল নামলে নতুন করে জমি তৈরি করতে হবে। তারপর সবজি চাষ সম্ভব হবে। এটা করতে গেলে আরও দু-মাস সময় লাগবে। পুজোর সময় সেই সমস্ত সবজি উঠে আসবে। মাঝে দু-মাস সবজির দাম বাড়তেই পারে। এমনটাই জানাচ্ছেন অধিকাংশ চাষি।
ব্লক কৃষি আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, নিচু এলাকাতে জল জমায় কিছু সবজি নষ্ট হয়েছে ঠিকই, তবে চাষিরা নতুন করে আবার সবজি চাষে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। পুজোর আগেই যাতে নতুন পালং ও নটে শাক উঠে আসে এবং সেই সঙ্গে ফুল ও বাঁধাকপি চাষের কাজেও নেমেছেন চাষিরা। বর্ষার সময় প্রতি বছরই বৃষ্টিতে সবজি নষ্ট হয়। এসময় দামও কিছুটা বাড়তে থাকে। এবারেও তার ব্যতিক্রম নয়। ব্লক আধিকারিকরা আরও জানাচ্ছেন, চাষিরা জানেন যে সবজি চাষ লাভজনক। তাই এর চাষ বাড়ছে। বর্ষায় নতুন করে উঁচু জমিতে চাষের কাজে নেমেছেন চাষিরা।
আরামবাগ মহকুমা কৃষি আধিকারিক বিকাশ দে বলেন, বর্ষায় আমন চাষের জন্য যে সমস্ত জমিতে সবজি চাষ হয় সেগুলি থেকে সবজি তুলে নেওয়া হচ্ছে। সবজি তুলে ধান চাষ করা হয়। বিশেষ করে লঙ্কা, বেগুন, মুলো, ঝিঙে, করলা, পালং, নটের মতো সবজি তুলে ফেলা হয় এই সময়টা। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বর্ষায় বেশিরভাগ সবজি গাছের বয়স হয়ে আসে। কারণ দু-তিন মাস আগে লঙ্কা, বেগুন, মুলো, পটল, ঝিঙে ইত্যাদির মতো সবজির চাষ হয়েছিল। বর্ষার সময় সেগুলি বুড়ো হয়ে যায়। ফসল কম হয়। তাছাড়া চাষিরা সেগুলি তুলে ওই সমস্ত জমিতে আমন ধান কিংবা নতুন করে সবজি চাষ করেন। দেখা দেয় সবজির ঘাটতি। আর তার ফলে এই সময়টা সবজির বাজার দর বাড়তে থাকে। তবে প্রধান সবজি আলুর দাম বেড়েছে। যা মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।
প্রসঙ্গত, বর্ষায় যেভাবে সবজির দাম বাড়ছে তাতে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এমনটাই জানালেন নির্মল চৌধুরি, স্বপন পাল, বিনয় দাস, আরশাদ আলি-দের মতো মধ্যবিত্ত মানুষেরা। এঁরা জানান, দাম বেড়েছে সমস্ত সবজির। চাষিরা বলেন, বন্যা হলে কিংবা বর্ষার দাপট বাড়লে এই সমস্ত সবজির দাম আরও বাড়বে। জোগান কম থাকলেই সবজির দাম আকাশছোঁয়া হবে।