মঙ্গলবার | ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:৫৩
Logo
এই মুহূর্তে ::
মাটির গন্ধমাখা লোকগানে সতেজতার সন্ধানী অমর পাল : রিঙ্কি সামন্ত কোটিপতি সাংসদরাই কি সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি : তপন মল্লিক চৌধুরী বাহের দ্যাশের লোকসংস্কৃতি ও লোকসঙ্গীত নানা বৈচিত্র্যে বৈচিত্র্যময় : মনোজিৎকুমার দাস আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (শেষ পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী মোদি ম্যাজিক ছিল কিন্তু সে ম্যাজিক ফিকে হয়ে গেছে : দিলীপ মজুমদার সুশান্ত দাসের ‘প্রকৃতিগাথা’ : দিলীপ মজুমদার রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহনযোগ্যতা ও আরাকান আর্মি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন কেদারনাথ-বদ্রীনাথ ভ্রমণ : প্রকৃতি আর ঈশ্বর যখন একটি বিন্দুতে মিশে যায়… : অমৃতাভ দে আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (তৃতীয় পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী বসিরহাটে নুনের হাট, শ্যামবাজার নুনের বাজার : অসিত দাস মুর্শিদাবাদের আমকথা (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত জেন অস্টিন নারী স্বাধীনতার অন্যতম পথিকৃৎ : মনোজিৎকুমার দাস ইসবার ইন্ডিয়া জোটকা সরকার, আমরা একাই একশো — মমতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (শেষ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন মুর্শিদাবাদের আমকথা (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (দ্বিতীয় পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী নজরুল ও মধুপুর (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ কবি কুসুমকুমারী দাশ ও পরাবাস্তবতার কবি জীবনানন্দ : বিজয়া দেব হুগলির লোকসভা ভোটে গ্রামীন এলাকায় ১৭১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (সপ্তদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (প্রথম পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী নজরুল ও মধুপুর (প্রথম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (ষোড়শ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আলাউদ্দিন অল আজাদ-এর ছোটগল্প ‘আমাকে একটি ফুল দাও’ ধর্ম আর সাম্প্রদায়িকতাকে বিজেপি বড্ড বেশি জরুরি করে ফেলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকগীতি ঘাটু গান আজ অবলুপ্তির পথে : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (পঞ্চদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন হাসান আজিজুল হক-এর ছোটগল্প ‘স্বপ্নেরা দারুণ হিংস্র’ বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বেদেদের বৈচিত্র্যময় জীবনযাপনের কথা : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (চতুর্দশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই অক্ষয় তৃতীয়া-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ড্যাঞ্চিবাবুদের দেশ, মধুপুর, বাঙালির স্বর্গ (দ্বিতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ

জমিল সৈয়দ / ১২৭ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪

মধুপুর : যেখানে দেবতারা বেড়াতে আসতেন

গত শতকে গোবিন্দচন্দ্র দাস নামে একজন কবি ছিলেন, যাঁকে “স্বভাবকবি” আখ্যায় ডাকা হতো। আমিও তাঁর লেখা কবিতা স্কুলের পাঠ্যবই থেকে মুখস্থ করেছিলাম। গোবিন্দচন্দ্র দাস ১৮৯৫ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ে ‘মধুপুর’ নামে একটি কবিতায় লিখেছেন —

“বড় শোভা মধুপুরে সুখ মধুমাসে,

লইয়া উৎসাহ আশা, সুখ শান্তি ভালবাসা,

ত্রিদিবের দেবতারা বেড়াইতে আসে!

কেবলি উল্লাস স্ফূর্তি, সকলি সজীব মূর্ত্তি

স্বর্গের আরোগ্য আনে বসন্ত-বাতাসে!”

ঠিক তাই, মধুপুর-গিরিডি-শিমুলতলার জল ও হাওয়ায় আরোগ্য লাভ করার জন্য বাঙালিরা ছোটনাগপুর মালভূমির সাঁওতাল পরগনায় প্রায় ১০০ বছর যাওয়া-আসা করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ কি কখনও মধুপুরে রাত্রিবাস করেছেন? সম্ভবত, না।

রবীন্দ্রনাথ যেতেন গিরিডি। রাত্রে হাওড়া থেকে ট্রেনে চেপে ভোরবেলা মধুপুরে নামতে হতো, সেখান থেকে অন্য ট্রেনে গিরিডি।

দু-একবার হাজারিবাগও গেছেন — মধুপুরে ট্রেন বদল করে গিরিডি — গিরিডিতে ডাকবাংলোয় স্নান ও আহারাদির পরে — “এখান হইতে ডাক গাড়িতে যাইতে হইবে। ডাক গাড়ি মানুষে টানিয়া লইয়া যায়। একে কি আর গাড়ি বলে? চারটে চাকার উপর একটা ছোটো খাঁচা মাত্র।” — লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ।

১৯০৩ সালে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি থেকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর বন্ধু প্রিয়নাথ সেনকে লিখছেন, “রেণুকার অসুখ নিয়ে আমি আজকাল ব্যস্ত হয়ে আছি। দীর্ঘকাল থেকে তার জ্বর কিছুতেই উপশম হচ্চেনা সঙ্গে কাশিও আছে। বোলপুরে তার কোন উপকার হল না — এখন কোন স্বাস্থ্যকর জায়গায় বায়ু পরিবর্তনের উপযোগী একটা বাড়ির সন্ধানে আছি। আজকাল পশ্চিমে প্লেগের দৌরাত্ম্য — সাঁওতাল পরগনা, ছোটনাগপুর প্রভৃতি অঞ্চলের মধ্যে বাড়ি খুঁজচি — এখনো পাইনি — যাই হোক্ শীঘ্রই কোথাও যেতেই হবে।”

কয়েক দিন পরেই কবি আবারও লিখছেন, “বোধ হয় বৃহস্পতিবারে হাজারিবাগ যাইব। রেণুকা ভালই ছিল — আজ আবার হঠাৎ তাহার জ্বর বাড়িয়াছে।”

হিন্দি সংবাদপত্র দৈনিক ‘জাগরণ’-এর একটি প্রতিবেদনে দেখলাম, সেখানে একজন বাঙালি অধ্যাপককে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ওই অধ্যাপক বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ একবার ভুল করে মধুপুর স্টেশনে ফেলে গেলেন এক বন্ধু ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের উপহার দেওয়া হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার বই।

ওই প্রতিবেদনে বাঙালি অধ্যাপককে উদ্ধৃত করে আরও বলা হয়েছে, রবীন্দ্রনাথের দ্বিতীয়া কন্যা রেণুকা, যাঁকে রবীন্দ্রনাথ আদর করে ‘রানী’ নামে ডাকতেন, সবসময়ই অসুখে ভুগতেন, তাই রেণুকাকে সঙ্গে নিয়ে সেবারে হাজারিবাগে যাচ্ছিলেন কবি স্বাস্থোদ্ধারের উদ্দেশ্যে। রেণুকার চিকিৎসার জন্য ওই বইটি রবীন্দ্রনাথের কাছে খুব প্রয়োজনীয় ছিলো।

রবীন্দ্রনাথ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখে হারিয়ে যাওয়া বইটির কথা জানিয়েছিলেন ও অনুরোধ করেছিলেন যদি বইটি খুঁজে পাওয়া যায় — তবে যেন তাঁর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

তবে বইটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এই গল্পের সত্যাসত্য এখনও বিচার করতে পারিনি। তবে ওই বাঙালি অধ্যাপক যখন আনন্দবাজার পত্রিকায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে একটি লেখা লিখলেন, তখন ওই গল্প চেপে গেলেন।

বরং রবীন্দ্রনাথের একটি চিঠি উদ্ধৃত করে অধ্যাপক জানালেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁর বন্ধু প্রিয়নাথ সেনকে আলমোড়া থেকে লিখেছেন, “আমার ঝড় তুফানের মধ্যে তোমার বইখানি মারা গেছে। যখন রেণুকা ও দলবল নিয়ে হাজারীবাগের পথে চলেছিলাম তখনই বোধ হচ্ছে মধুপুর স্টেশনের ভোজনাগারে বা স্নানাগারে কিংবা আর কোথাও সেখানি হারিয়েছে। পথক্লেশ নিবারণের জন্য সেই একখানি মাত্র বই আমার সম্বল ছিল। বালক-বালিকা, দাস-দাসী, সিন্দুক-বাক্স, পোঁটলা-পুঁটলি নিয়ে নানা পথ দিয়ে বিচিত্র যানবাহনযোগে যাওয়া যে কি দুঃখ এবার তা পেট ভরে বুঝে নিয়েছি।… তাই তো তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি “কোথা এই যাত্রা হবে শেষ?” (৩০ মে ১৯০৩ শনিবার)।”

অর্থাৎ বই হারানোর কাহিনী সত্য। কিন্তু সেটি বন্ধু প্রিয়নাথ সেনের লেখা কোনও প্রবন্ধের বই। কোনও হোমিওপাথি চিকিৎসা সংক্রান্ত বই নয়।

*********

সে সময়ে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় মধুপুরে একটা বাড়ি কেনেন। বাড়িটা মধুপুর বাজারের কাছে। বাড়ির নাম —“দ্বিজাশ্রম”।

মধ্যে-মধ্যে অবসর পেলেই দ্বিজেন্দ্রলাল তখন ৫/৭ দিনের জন্যও মধুপুরের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হতেন।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জীবনচরিতকার লিখছেন, “মধুপুর তখন অতিশয় সুদৃশ্য ও স্বাস্থ্যকর স্থান ছিল। তখন এখানকার মত সেখানে অসংখ্য স্বাস্থ্যকাম লোকের সমাবেশ ঘটে নাই। দৃষ্টিসীমার সুদূরতম শেষ প্রান্তে, দিগন্ত-বিস্তৃত, তরঙ্গায়িত প্রান্তরের উদার-ধুসর, উন্মুক্ত বক্ষে, যেদিকে চাহ — অনন্ত নীলাম্বর আসিয়া ঢলিয়া-ঢলিয়া পড়িয়াছে — সে কি শোভন-উদাস দৃশ্যই ছিল! কৃত্রিমতায় পরিপূর্ণ, প্রাণহীন মহানগরীর কলুষিত ও বদ্ধ বাতাসে হাঁফাইয়া-উঠিয়া, মাঝে-মাঝে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রুদ্ধশ্বাসে এখানে ছুটিয়া-আসিয়া, প্রকৃতির এই প্রশান্ত ও সুরম্য সরোবরে অবগাহনপূর্বক স্নিগ্ধ ও সুস্থ হইয়া, আবার কর্মক্ষেত্রে ফিরিয়া যাইতেন। তৎকালে তাঁহার জীবনখানি কেমন লঘু, নিশ্চিম্ত ও সুখময় ছিল, এই নিম্নোক্ত পত্রখানিতেও তাহার কিছু আভাস আছে। তাঁহার পত্নী ও শ্যালক-শ্যালিকারা তখন মধুপুরে। তিনি তথায় পৌছিয়া এ পত্রখানি কলিকাতায় তাঁহার শ্যালীপতি শ্রীযুক্ত গিরিশ শর্মা মহাশয়কে লিখিতেছেন, —

“দ্বিজাশ্রম, মধুপুর।

“প্রিয়তম গিরিশদাদা | এইছি আমি মধুপুরে ;

আছি আমি ভারি মজায়’ — দিবারাত্রিই বেড়াই ঘুরে’।

এখানেতে মেলা লোকে — সারতে এসে নানান রোগ,

কর্চ্ছে সদাই ‘কিচিমিচি’, দিবারাত্রই গোলোযোগ।

সকাল বেলায় ভারি ঠাণ্ডা, দুপুর বেলায় ভারি গরম;

রাত্রিবেলায় (আপাততঃ এই) বিছানাটা বেজায় নরম!”

*********

দাঁড়িয়ে ছিলাম মধুপুর স্টেশনে। গুটখা ও পানের রঙে রঞ্জিত দেওয়ালের কোণ। একটা লোকাল ট্রেন এসে থামতেই দলে দলে পুরুষ ও নারী বিচিত্র বেশভূষায় নেমে এলো ট্রেন থেকে, মিছিল করে চলতে লাগল তারা বাইরে যাওয়ার রাস্তায়।

আমি কল্পচক্ষে দেখছিলাম, একদিন হাওড়া থেকে একটি ট্রেন ভোরবেলা এসে থামলো মধুপুর স্টেশনে।

দিলীপকুমার রায়ের আমন্ত্রণে মধুপুর আসছেন গায়িকা সাহানা দেবী।

ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে পা দিলেন সাহানা দেবী।

হঠাৎ মাথা ঘোরাতেই চমকে উঠলেন, অন্য একটি কামরা থেকে নেমে আসছেন “অতুলদা” — অতুলপ্রসাদ সেন !!!

এর চেয়ে বিস্ময়কর আর কী হতে পারে! দিলীপকুমারের আমন্ত্রণে অতুলপ্রসাদ আসছেন, সেটা সাহানা দেবী জানতেন না।

দিলীপকুমার রায়েরা এসেছিলেন স্টেশনে, তাঁদেরকে রিসিভ করার জন্য।

সাহানা দেবীকে রাখা হলো “প্রসাদ ভবন” নামক বাড়িতে।

অতুলপ্রসাদ সেন রইলেন দিলীপের বড়মামা সুবিখ্যাত ডাক্তার জিতেন্দ্রনাথ মজুমদারের বাড়িতে। পাশাপাশি তিনটি বাড়ি — মজুমদারদের তিন ভাইয়ের। একটির ভিতর দিয়ে অন্য বাড়িতে যাওয়া যায়। “প্রসাদ ভবনে”র লম্বা বারান্দায় অতিথিরা বসে পড়তেন আহারে। [ক্রমশ]


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন