মঙ্গলবার | ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:২০
Logo
এই মুহূর্তে ::
মাটির গন্ধমাখা লোকগানে সতেজতার সন্ধানী অমর পাল : রিঙ্কি সামন্ত কোটিপতি সাংসদরাই কি সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি : তপন মল্লিক চৌধুরী বাহের দ্যাশের লোকসংস্কৃতি ও লোকসঙ্গীত নানা বৈচিত্র্যে বৈচিত্র্যময় : মনোজিৎকুমার দাস আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (শেষ পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী মোদি ম্যাজিক ছিল কিন্তু সে ম্যাজিক ফিকে হয়ে গেছে : দিলীপ মজুমদার সুশান্ত দাসের ‘প্রকৃতিগাথা’ : দিলীপ মজুমদার রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহনযোগ্যতা ও আরাকান আর্মি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন কেদারনাথ-বদ্রীনাথ ভ্রমণ : প্রকৃতি আর ঈশ্বর যখন একটি বিন্দুতে মিশে যায়… : অমৃতাভ দে আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (তৃতীয় পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী বসিরহাটে নুনের হাট, শ্যামবাজার নুনের বাজার : অসিত দাস মুর্শিদাবাদের আমকথা (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত জেন অস্টিন নারী স্বাধীনতার অন্যতম পথিকৃৎ : মনোজিৎকুমার দাস ইসবার ইন্ডিয়া জোটকা সরকার, আমরা একাই একশো — মমতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (শেষ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন মুর্শিদাবাদের আমকথা (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (দ্বিতীয় পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী নজরুল ও মধুপুর (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ কবি কুসুমকুমারী দাশ ও পরাবাস্তবতার কবি জীবনানন্দ : বিজয়া দেব হুগলির লোকসভা ভোটে গ্রামীন এলাকায় ১৭১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (সপ্তদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (প্রথম পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী নজরুল ও মধুপুর (প্রথম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (ষোড়শ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আলাউদ্দিন অল আজাদ-এর ছোটগল্প ‘আমাকে একটি ফুল দাও’ ধর্ম আর সাম্প্রদায়িকতাকে বিজেপি বড্ড বেশি জরুরি করে ফেলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকগীতি ঘাটু গান আজ অবলুপ্তির পথে : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (পঞ্চদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন হাসান আজিজুল হক-এর ছোটগল্প ‘স্বপ্নেরা দারুণ হিংস্র’ বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বেদেদের বৈচিত্র্যময় জীবনযাপনের কথা : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (চতুর্দশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই অক্ষয় তৃতীয়া-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

চিরগুরু : সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় / ১১০ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চন্দনাকে সকাল-সন্ধ্যে শেখানো হলো, “হরে কৃষ্ণ, হরে রাম।” পাখি সারাদিন দাঁড়ে বসে কপচায় ‘হরে কৃষ্ণ, হরে রাম।’ বছরের পর বছর। ছোলা খায়, কলা খায়, লঙ্কা খায়, আর থেকে থেকে বলে, ‘হরে কৃষ্ণ, হরে রাম।’ সেই চন্দনা একদিন চলে গেল হুলোর পেটে। বড় চিন্তার কথা! এমন ধার্মিক পাখিকে, রাম অথবা কৃষ্ণ কেউই রক্ষা করতে পারলেন না! কেন রক্ষা করবেন? পৃথিবীতে খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক যে রয়েই গেছে। থাকবেও চিরকাল। এর হাত থেকে তো নিষ্কৃতি নেই। ঠাকুর রামকৃষ্ণ ভীষণ অসুস্থ। শশধর তর্কচূড়ামণি একদিন ঠাকুরকে বললেন : “মহাশয় শাস্ত্রে পড়েছি আপনাদের ন্যায় পুরুষ ইচ্ছামাত্রই শারীরিক রোগ আরাম করে ফেলতে পারেন। আরাম হোক মনে করে মন একাগ্র করে একবার অসুস্থ স্থানে কিছুক্ষণ রাখলেই সব সেরে যায়। আপনার একবার এরূপ করলে হয় না?” ঠাকুর বললেন : “তুমি পণ্ডিত হয়ে একথা কি করে বললে গো? যে মন সচ্চিদানন্দকে দিয়েছি, তাকে সেখান থেকে তুলে এনে এ-ভাঙা হাড়মাসের খাঁচাটার উপর দিতে কি আর প্রবৃত্তি হয়?”

পৃথিবীর তাবৎ ব্যাপারটাকে ভালভাবে বুঝে নিলে, দু-ধরনের সত্য বেরিয়ে আসবে। এক হলো পার্থিব সত্য। পৃথিবীতে যা ঘটে, যা ঘটে আসছে অনন্তকাল ধরে, যা ঘটবে চিরকাল। দেহধারণের খাজনা আমাকে দিতেই হবে। রোগ, শোক, জরা, ব্যাধি। মৃত্যুর কবচ পরেই জন্ম আমাদের। আমি এগোচ্ছি, আমার পাশে পাশে কাঁধে হাত রেখে পরম বন্ধুর মতো হাঁটছে মৃত্যু। তার ঝোলা-ঝুলিতে উপহারের অন্ত নেই। বহু ধরনের অসুখের আড়তদার। বহু বিচিত্র দুর্ঘটনার সংগঠক তিনি। কখন তিনি দয়া করে আমাকে কি দেবেন তিনিই জানেন। আমি জানি না। তিনি এক মহামান্য বিচারকের মতো। যেকোন সময় যেকোন দণ্ড তিনি দিতে পারেন। এমন কোন উচ্চ আদালত নেই, যেখানে আমার আপিল চলবে। এরপর আছে বেঁচে থাকার প্রশ্ন। ঈশ্বরের কোষাগার থেকে আমার জন্যে মোহর আসবে না। খাদ্যভাণ্ডার থেকে ভারে ভারে খাবার আসবে না। সবই আছে এখানে, আমাকে অর্জন করে নিতে হবে। দেহের মাঝখানে লেগে আছে পেট। সেই পেট আমাকে ঘোরাবে নাকে দড়ি দিয়ে। আমি কারোর দাস হব, কেউ আমার দাস হবে। বড় দাস, ছোট দাস, দাসের দাস, দাসানুদাস। কারোরই বলার উপায় নেই, আমি প্রকৃত প্রভু। একমাত্র প্রভু তিনি। পৃথিবীতে মানুষের খেলা যেভাবে সেজে উঠেছে তা হলো, লোভ, লালসা, বঞ্চনা, খুন, জখম, রাহাজানি। মরো অথবা মারো। অনেক স্বপ্ন কিন্তু বাস্তব অন্যরকম। পেঁয়াজী সত্যটা হলো, ঠাকুরের কথায়, খোসার পর খোসা ছাড়িয়ে যাও, শেষে সব শূন্য। হাতে আর কিছুই থাকবে না।

এই উপলব্ধিই মানুষকে ভাবায়, ভাবতে শেখায়, তাহলে আসল সত্যটা কি? পরা সত্য। ঠাকুর একটি গল্প বললেন : “একজন সাধু সর্বদা জ্ঞানোন্মাদ অবস্থায় থাকতেন, কারো সঙ্গে বাক্যালাপ করতেন না, লোকেরা তাঁকে পাগল বলে জানত। একদিন লোকালয়ে এসে ভিক্ষা করে এনে একটা কুকুরের উপর বসে সেই ভিক্ষান্ন নিজে খেতে লাগলেন ও কুকুরকে খাওয়াতে লাগলেন। তাই দেখে অনেক লোক সেখানে এসে উপস্থিত হলো এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁকে পাগল বলে উপহাস করতে লাগল। এই দেখে সেই সাধু লোকদিগকে বলতে লাগলেন, তোমরা হাসছ কেন?

“বিষ্ণু পরিস্থিতো বিষ্ণুঃ

বিষ্ণুঃ খাদতি বিষ্ণবে

কথং হসরি রে বিষ্ণো

সর্বং বিষ্ণুময়ং জগৎ ।।”

এই হলো পরা সত্য। ঠাকুর অসুস্থ অবস্থায় প্রায়ই বলতেন : “যে দুধ খাওয়াচ্ছে, সেই মেরেছে।” এই হলো পরা সত্য। ঠাকুর এই গল্পটি বলতেন ভক্তদের চৈতন্যোদয়ের জন্যে — এক জায়গায় একটি মঠ ছিল। মঠের সাধুরা রোজ মাধুকরী করতে যায়। একদিন একটি সাধু ভিক্ষা করতে করতে দেখে যে, এক জমিদার একটি লোককে ভারি মারছে। সাধুটি বড় দয়ালু; সে মাঝে পড়ে জমিদারকে মারতে বারণ করলে। জমিদার তখন ভারি রেগে রয়েছে, সে সমস্ত কোপটা সাধুটির গায়ে ঝাড়লে, ভারি প্রহার করলে। কেউ গিয়ে মঠে খবর দিলে তোমাদের একজন সাধুকে জমিদার ভারি মেরেছে। মঠের সাধুরা দৌড়ে এসে দেখে সাধুটি অচৈতন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। তখন তারা পাঁচজন ধরাধরি করে তাকে মঠের ভিতরে নিয়ে গিয়ে একটি ঘরে শোয়ালে। সাধু অজ্ঞান, চারিদিকে মঠের লোকে ঘিরে বিমর্ষ হয়ে বসে আছে, কেউ কেউ বাতাস কচ্চে। একজন বললে মুখে একটু দুধ দিয়ে দেখা যাক। মুখে দুধ দিতে দিতে সাধুর চৈতন্য হলো। চোখ মেলে দেখতে লাগল। একজন বললে, ওহে দেখি জ্ঞান হয়েছে কিনা? লোক চিনতে পারছে কিনা? তখন সে সাধুকে খুব চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলে, মহারাজ! তোমাকে কে দুধ খাওয়াচ্ছে? সাধু আস্তে আস্তে বলছে, ভাই! যিনি আমাকে মেরেছিলেন, তিনিই দুধ খাওয়াচ্ছেন।

ঠাকুর ব্যাখ্যা করছেন — যাদের চৈতন্য হয়েছে, যাদের ঈশ্বর সৎ আর সব অসৎ অনিত্য বলে বোধ হয়েছে তাদের আরেক রকম ভাব। তারা জানে যে, ঈশ্বরই একমাত্র কর্তা, আর সব অকর্তা। এই জ্ঞানের নামই প্রজ্ঞান। পৃথিবী পালটাবে না। যা আছে তাই থাকবে। পালটাও নিজেকে। অজ্ঞান থেকে জ্ঞানে। জ্ঞান থেকে বিজ্ঞানে। বিজ্ঞান থেকে প্রজ্ঞানে। সদানন্দে বাঁচার কৌশল আছে আমার ঠাকুরের কাছে। চৈতন্য হলে কি হয়? (১) বেতালে পা পড়ে না, (২) হিসাব করে পাপ ত্যাগ করতে হয় না, ঈশ্বরের উপর এত ভালবাসা যে, যে-কর্ম তারা করে সেই কর্মই সৎকর্ম, (৩) সেই বোধ জাগে, সমস্ত কর্মের কর্তা আমি নই, আমি ঈশ্বরের দাস। আমি যন্ত্র, তিনি যন্ত্রী। তিনি যেমন করান তেমনি করি, যেমন বলান তেমনি বলি, যেমন চালান তেমনি চলি।

ঠাকুর আমার মতো চিরকালের গৃহীর চিরগুরু। সংসারে আছি পূর্ণ বিশ্বাসে তাঁকে আমার হাতটি ধরিয়ে যাতে অন্ধকারে আলের পথে চলতে গিয়ে পড়ে না যাই। জমিদার পৃথিবী মারবে মারুক, যাঁর পৃথিবী তিনি এসে বাতাস করে দুধ খাওয়াবেন। ঠাকুর চেয়েছেন — (১) সাধনা, (২) একটু লজ্জা, (৩) সচ্চিদানন্দ প্রেম, (৪) মৃত্যু-স্মরণ, (৫) বিশ্বাস, (৬) সতর্কতা, (৭) ব্যাকুলতা, (৮) মনে মনে ভাব সব স্বপ্নবৎ। মনে রাখ — “জহাঁ রাম তহাঁ কাম নহীঁ, জঁহা কাম তহাঁ নহীঁ রাম। দুঁহু মিলত নহীঁ রব রজনী নহীঁ মিলত একঠাম।।”

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়-এর লেখা “চিরগুরু” শীর্ষক প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য : “পরমপদকমলে” (অখণ্ড) (পৃঃ ২৫-২৭); উদ্বোধন কার্যালয়, 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন