কাগজটাগজ পড়ি না, টিভিফিভিও দেখি না — আমার খবরের সূত্র বন্ধুরা। গত কয়েক দিনের হট টপিক, ৫৪ হাজার আধার কার্ড বাতিল বা ডিএ্যাক্টিভেট করা নিয়ে সঙ্ঘীদের এপোলোজেটিক টোনে যেমন বিষম মজা পেয়েছি তেমনি সঙ্ঘী নেতাদের আবাল্পনায় বিস্মিতও হয়েছি বেশ কিছুটাই। এই বিষয়ে কিছু কথা বলার অনুমতি চেয়ে নিচ্ছি পাঠকদের থেকে।
২০১৯-এর লোকসভার পরের ৫ বছরের রুলফ্রেম করা নিয়ে দোদুল্যমানতার ঘটনাক্রম থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, যত সহজে সঙ্ঘীরা এনআরসি-সিএএ বাংলার উইপোকাদের জন্যে রূপায়ন করে বাংলায় ক্ষমতায় আসার কথা ভেবেছিল, আসামে যত সহজে ডি-ভোটার করতে পেরেছিল, সঙ্ঘীদের দৃষ্টিভঙ্গীতে সেই দুটো গুরুত্বপূর্ণ কাজই খুব সহজে বাংলায় হচ্ছে না। ৪৫ হাজার আধার কার্ড বাতিলের ফিয়াস্কো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রকে কড়া চিঠি দিয়েছেন, কড়া বার্তাও দিয়েছেন — কয়েক কদম এগিয়ে বলেছেন বাংলা সরকার আলাদা কার্ড জারি করবে। মাথায় রাখতে হবে কয়েক দিন আগে যেভাবে কেন্দ্রর বিজেপি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভাঙার কাজ করছে সে বিষয়ে সরব হন।
মুখ্যমন্ত্রীর কড়া অবস্থান আর জনগণের প্রতিক্রিয়ায় সঙ্ঘীরা দিশাহারা। তার হাতে গরম প্রমান বর্তমান আর্যাবর্তের ২ নম্বর ব্যক্তি অমিত শাহকে নিয়ে বাধ্য হয়ে দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক আয়োজন করা। শুধু দুধেভাতে শুভেন্দু, শান্তনু আর সুকান্তর ত্রিমূর্তিকে দিয়ে এই ড্যামেজ কন্ট্রোল করা যাবে না এটা সঙ্ঘী থিঙ্কট্যাঙ্ক বুঝে গিয়েছিল।
বিজেপির ২১-এর ‘আব কী বার ২০০ পার’-এর তুঙ্গ মুহূর্তেও শান্তনু ঠাকুরের [ত্রিপুরার একটা খবর কাগজের কাটিংএ দেখলাম শান্তনু ঠাকুর টাইটেল ব্যবহার করছেন না, মতুয়া সঙ্ঘী নেতার গায়ে সোসালিস্টদের হাওয়া গায়ে লাগল নাকী?] এলাকায় গণ্ডগোলের অজুহাত দেখিয়ে অমিত শাহের সভা বাতিল করতে হয়েছে। শুভেন্দু আর শান্তনুর নিয়মিত এনআরসি-সিএএ লাগু করা আর রুল ফ্রেম হয়ে যাওয়ার দাবি সেই ২১-এর ভোট থেকেই ফাটা কাঁসির মত বেজে চলেছে, সুরে আর বাজছে না।
মাননীয় জনগণ, আপনারা কেন প্রশ্ন করবেন না, যে সঙ্ঘীরা অবলীলায় ৩৭০ বাতিল করে জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখ ভেঙ্গে দেয়, গোটা মুসলমান সমাজকে ব্ল্যাকমেল করে রামমন্দির তৈরি করে, তারা কেন বাংলায় সিএএ নিয়ে ৫ বছরেও রুল ফ্রেম করতে পারে না শুধু নয়, গত কয়েক দিন ধরে রুল ফ্রেম করলে কী হতে পারে, তার মুখড়া হিসেবে কয়েক হাজার আধার কার্ড বাতিল করার স্যাম্পল টেস্ট করছিল কোন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়?
আধার বাতিল নিয়ে সংঘী এক্সপেরিমেন্ট বাংলায় প্রবল ধাক্কা খেয়েছে। ডিসেম্বর থেকেই সঙ্ঘী চূরামণি অমিত শাহের নেতৃত্বে কুচো সঙ্ঘীরা ভুয়া আধার বাতিল, রুল ফ্রেম ইত্যাদি, তার সঙ্গে ছিল ‘বঞ্চিত’ উত্তরবঙ্গ ভেঙে আলাদা রাজ্য করার পরিকল্পনা নিয়ে প্রচার তুঙ্গে তুলছিল। গত কয়েকদিনের ৫৪ হাজার বাতিল আধার কার্ড ফিয়াস্কো থেকে পরিষ্কার অসমে বিজেপি যত স্মুথভাবে ডি-ভোটার তৈরি করে বাঙালিকে [উভয় ধর্মের] তাদের স্বপ্নের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে রাখতে পেরেছে, সেটা খুব সহজে বাংলায় করতে পারছে না।
গত কয়েক দিনের আধার কার্ড বাতিলের খবরের দিকে নজর রাখুন, বুঝুন যে বাংলায় রাজনীতি অন্তত সঙ্ঘীদের পক্ষে খুব কুসুমাস্তীর্ণ হবে না — যতই বাংলা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের জন্মস্থান হোক না কেন। রাক্ষসের সোজা বক্তব্য —
১) আধার বাতিলের খবর এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল যে সাংবাদিক সম্মেলনে সঙ্ঘী প্রবর অমিত শা, অশ্বিনী বৈষ্ণবকে নিয়েই শান্তনু, শুভেন্দু আর সুকান্তকে দিল্লিতে এই খবর ডিনায়াল করতে হয়েছে। পরিষ্কার একটা হাল্কা ঘটনা জটিলাকার ধারণ যে করেছে সেটা সঙ্ঘীদের নি-জার্ক প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট।
২) যে শান্তনু, শুভেন্দু আর সুকান্ত গত ৫ মাস [এবং ৫ বছর] ধরে যে কোনও মুহূর্তে রুল ফ্রেম হয়ে যাওয়া আর তাকে বাংলায় প্রয়োগ করার দাবি করে আসছিলেন, তাদের অবস্থা দেখুন, প্রত্যেকেই ঢোক গিলছে — কেউ একে ফেক খবর বলছে, কেউ একে যান্ত্রিক ত্রুটি বলছে। কেউ দায় নিতে চাইছে না! হাস্যকর বালখিল্যপনা!
৩) যারা ঘুরপথে ক্ষমতায় আসার সিঁড়ি হিসেবে রুলফ্রেমকে হাতিয়ার করার কথা বলে আসছে, তারাই বলছে মমতা ভোট পাওয়ার জন্যে ভুল প্রচার করছে। অর্থাৎ তাদের বক্তব্যে পরিষ্কার অটোমেটিক আধার বাতিল হওয়াটা সঙ্ঘীদের পক্ষে যাচ্ছে না।
বাংলায় বিধানসভা বা লোকসভা ভোট, সঙ্ঘীদের কাছে অন্তত অতি বিষম বস্তু। গত বিধানসভায় ৭০+ আসন পাওয়া দল, তিনুদের ১০০ বিধায়ক ভাঙিয়ে ক্ষমতায় আসতে চাওয়া দল, দেখল দল/সরকার তো ভাঙলই না, রুলফ্রেম করার মুখড়া হিসেবে আধার বাতিল করার যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাংলায় করতে চেয়েছিল সেটা ব্যুমেরাং হয়ে ভাজপাকেই বিঁধছে। তারা বুঝতে পারছে না তারা কীভাবে ক্ষমতায় আসার রাস্তা তৈরি করবে, দিল্লিতে আরও বেশি সাংসদ পাঠাবার পরিকল্পনা কী হবে?
বাংলার মাটি, মিঠে-কড়া মাটি — বুঝে নিক দুর্বৃত্ত।
লে পচা কোমর নাচা।