রবিবার | ১লা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | দুপুর ২:৫৯
Logo
এই মুহূর্তে ::
কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির নেহরুকে দোষারোপ ধোপে টেকেনা : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্র নাটকের দুই ট্র্যাজিক রাজা : শৌনক দত্ত কবির মৃত্যু : দিলীপ মজুমদার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সপ্তসঙ্গিনী : স্বামী তেজসানন্দ মহারাজ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক : সন্দীপন বিশ্বাস সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস শতবর্ষে অন্য বিনোদিনী — তৃপ্তি মিত্র : শৌনক দত্ত আমার প্রথম অভিনয় দেখে সত্যেন বসুই বলেছিলেন— তোর হবে : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রজিৎ আমাকে ক্লান্ত করে কেবলই ক্লান্ত : তপন মল্লিক চৌধুরী মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রেস কটেজ বুলেটিন প্রকাশ : দীপাঞ্জন দে অথ ওয়াইন কথা : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসাবিভ্রাট : অসিত দাস বাংলা ইসলামি গান ও কাজী নজরুল ইসলাম : আবু বকর সিদ্দিকি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি : মনোজিৎকুমার দাস কঠোর শাস্তি হতে চলেছে নেহা সিং রাঠোরের : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিন্ধু সভ্যতার ভূখণ্ড মেলুহা-র সঙ্গে বাণিজ্যে মাগান দেশ : অসিত দাস তদন্তমূলক সাংবাদিকতা — প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি : দিলীপ মজুমদার হেমন্তকুমার সরকার ও নজরুল-স্মৃতিধন্য মদনমোহন কুটির : ড. দীপাঞ্জন দে রামমোহন — পুবের সূর্য পশ্চিমে অস্তাচলে গেলেও শেষ জীবনে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাওবাদী দমন না আদিবাসীদের জমি জঙ্গল কর্পোরেট হস্তান্তর : তপন মল্লিক চৌধুরী জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষে শ্রী অপরা একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত পর্যটন মানচিত্রে রামমোহনের জন্মভূমিতে উন্নয়ন না হওয়ায় জনমানসে ক্ষোভ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সংগীতে রবীন্দ্রনাথ : সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর গোয়ার সংস্কৃতিতে সুপারি ও কুলাগার কৃষিব্যবস্থা : অসিত দাস পুলওয়ামা থেকে পহেলগাঁও, চিয়ার লিডার এবং ফানুসের শব : দিলীপ মজুমদার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

মাতৃভাষা দিবসে বাংলা : দেশীভাষা উপদেশ মনে হিত অতি : প্রলয় চক্রবর্তী

প্রলয় চক্রবর্তী / ৩৫৭ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

“মাতা-পিতামহাক্রমে বঙ্গেত বসতি/দেশীভাষা উপদেশ মনে হিত অতি” — লিখেছিলেন মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম। এমন কথা উচ্চারিত হলেও মুসলমান বাঙালি ভাষাগত সঙ্কটে ভুগেছে অনেককাল। বাংলা ভাষা গরীবের ভাষা, নিচুস্তরের (আতরাফ) লোকেদের কথ্য — এমত ধারণা বিরাজমান ছিল বাংলার মুসলিম সমাজের উচ্চ-কোটি স্তরের মুষ্টিমেয় আশরফীদের মধ্যে। এরা নিজেদের আফগানি বা মুঘল ঘরানার বলেই গর্বিত ছিলেন। এরা বাংলা ভাষা কেন, বাঙালি মুসলমানদেরও অত্যন্ত নিচু চোখে দেখতেন। বাংলা ছিল তাদের কাছে মূর্তিপূজক হিন্দুর ভাষা। নবনূর পত্রিকায় লেখাই হয়েছিল, বাঙ্গালা ভাষা হিন্দুগণের ভাষা। এমনকি বাঙালি মুসলমানরা একটু বিত্তশালী হলে উর্দুভাষী আশরফীদের জাতে উঠতে চাইতো! মাতৃভাষাকে অবদমনের এই আপওয়ার্ড ট্রেন্ড কি এখনও দুই বাংলার বাঙালিকে তাড়িত করেনা?

এরও কতপরে ৫২-র ভাষা আন্দোলনের দিনগুলোতে একইরকম আক্রমন, একটু ভিন্ন মাত্রায় সক্রিয় ছিল ওপার বাংলায়। বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন আসলে পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র, মুসলমানের ভাষা উর্দু, বাংলা হিন্দুর ভাষা — এমন এক সাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা সক্রিয় ছিল পাক শাসকদের আচরণে। এ পারের বাঙালি ওপার বাংলার ঘটনায় নিষ্ক্রিয় ছিলনা। ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা ভাগ হলেও দুই বাংলার মুখের বুলি বাংলা। এপারের পত্রপত্রিকায় খবর আসছিল নানারকম। আনন্দবাজার পত্রিকা বেশ কয়েকটি সম্পাদকীয় মন্তব্যে পূর্বপাকিস্তান সরকারের ধর্মীয় জিগির এর প্রতিবাদ করে। আন্দোলনকারী মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। ১৯৫২-র ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘ভাষা দমনে গুলী’ শীর্ষক সম্পাদকীয় তে বলা হয়, “বাঙলা ভাষাই পাকিস্তানের বৃহত্তম ভাষা। পূর্ববঙ্গের অধিবাসীর সংখ্যা সাড়ে চার কোটি, সমগ্র পাকিস্তানী জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ। রাষ্ট্রের বৃহত্তম সংখ্যক অধিবাসী যে ভাষা ব্যবহার করেন, তাহার মর্যাদা রাষ্ট্রে স্বীকৃত হইবে না ইহা কোন ধরনের শাসন?” ‘পূর্ববঙ্গ কি লাহোর- করাচির অধীন এক নামরাজ্য?’ লাহোর থেকে আট শতাধিক মাইল দূরের শাসকরা কি এমনই শক্তিমান, এ প্রশ্নও উঠে আসে। এরপর ‘মাতৃভাষার জন্য’, ‘যৎকিঞ্চিত’, ‘দুর্বুদ্ধি’ শীর্ষক কয়েকটি সম্পাদকীয় নিবন্ধ আনন্দবাজারে প্রকাশিত হয়। ‘মুস্কিল আসান’ নামক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধী লোক যদি পূর্ববঙ্গে থাকে তাহলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক, “কিন্তু মুসলমান সাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্য হিন্দু, ভারত এবং কলকাতার সংবাদপত্র লইয়া এই অপপ্রয়াস কেন?” কেবল হিন্দু বলেই কেউ মাতৃভাষার পক্ষে কথা বলার অধিকারী নয়! ‘দুর্বুদ্ধি’ শীর্ষক সম্পাদকীয় তে প্রশ্ন তোলা হয় যে পূর্ববঙ্গের হিন্দুর কোন কথা বলা বা কোন কাজ করার অর্থই হল ‘সাম্প্রদায়িক ও রাষ্ট্রবিরোধী’? ধুতিপরা হিন্দুর জুজু দেখছে পাক সরকার! তাই “সর্বাগ্রে ধুতিপরা হিন্দুকে গ্রেপ্তার কর” কারণ এরা রাষ্ট্রবিরোধী! আনন্দবাজার স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল এই মিথ্যাচার, এই ধোকা পূর্ববঙ্গের মানুষ মেনে নেবেনা। ৫২ থেকে ৭১-এর সময়পর্বে বাংলাদেশের উত্থান এই কথাই প্রমান করে।

বাংলাভাষার বিরুদ্ধে ধর্মীয় জিগির এর সঙ্গে ছিল আতরফী কথা- বাংলা অশিক্ষিতের বুলি, ভদ্রজনোচিত নয়। তাই যেমন তেমনে কাজ চলে! হিন্দু কলেজের বাংলার শিক্ষক একসময় ছিলেন বাবু রামকমল সেন এর রাঁধুনি! রাজনারায়ণ বসুরা সেই শিক্ষকের কাছে বাংলা শেখার চেয়ে রান্নার কথাই আলোচনা করতেন বেশী। ১৮৪৪ সালে আবগারি বিভাগের কমিশনার দুঃখের সঙ্গে জানিয়েছিলেন বাঙালি ছেলেরা মাতৃভাষা শিক্ষায় একদমই আগ্রহী নয়। তার অফিসে রাজেন্দ্রনাথ মিত্র নামে হিন্দু কলেজের একটি ছাত্র কর্মরত। কিন্তু সে স্বচ্ছন্দে বাংলা পড়তে পর্যন্ত পারেনা। প্রশ্ন উঠতেই পারে আশৈশব বিলেতে লালিত শ্রীঅরবিন্দের অ-স্বাচ্ছন্দের বাংলা ভাষাই কি তাঁকে জেল কুঠরীতে ধীরস্থির, নিশ্চুপ,বাক্যরহিত ঋষিকল্প হতে সাহায্য করেছিল! ইংরেজি শিক্ষিত অগ্রসর বাঙালির বাংলা সম্পর্কে মনোভাব কেমন ছিল প্রমথনাথ বিশী তা উল্লেখ করেছেন। তিনি বাংলায় এম. পাশ করলে জনৈক হিতৈষী বলেছিলেন, বাপু চাকরি পেতে হলে ভুলেও ওই বাংলায় এম. এ-র কথা বলবে না, ওই ইংরেজি অনার্সের কথাটাই লিখো, ওতে সুফল হতে পারে। বাংলায় এম. এ শুনে আরেকজন বলেছিলেন, আশু মুখুজ্জের কান্ড দেখো, অবশেষে বাংলায় এম. এ করে বসলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কি? এসব ঘটনা গত শতকের তিরিশের দশকের। এখনও কি কিছু অন্যরকম হয়েছে? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২০ সালে বাংলায় এম. এ পরীক্ষা গৃহীত ও ডিগ্রি প্রদান শুরু হলেও ১৯৫৩ সালের আগে পর্যন্ত ‘বাংলা’ বিষয়ের প্রশ্ন ইংরেজিতেই হত! এমন কতই না আশ্চর্য কান্ডে ভরা আ মরি বাংলা ভাষা।

সহজ বাংলার জনপথে এখন ভাষা নির্যাতনের কলরব। কখনো তা ধর্মের মোড়কে আসে, কখনো বর্গ-ভেদে, উচ্চ-নীচে, কখনো বা খিচুড়ি ভাষার দাপটে। মোদের গরব মোদের আশা, বাংলা ভাষা ফাল্গুনেই থিতু হয়, ‘মাতাপিতামহাক্রমে’ ব্যবহারের কাজে আসেনা!


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন