বৃহস্পতিবার | ১৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১লা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:৫৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পের কাজ ভাবাদিঘিতে ফের জোর করে বন্ধ করা হলো : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর — অনেক বিদ্যাসাগর মাঝে তিনি একক : প্রলয় চক্রবর্তী আমেরিকা-ইসরায়েল সম্পর্কের শেকড় অনুবাদ ফাতিন ইশরাক নিয়ম নীতি আচারে লক্ষ্মী পূজার তোড়জোড় : রিঙ্কি সামন্ত আমার প্রথম বই — ঘুণপোকা : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘কে জাগ রে’ জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন একটি বিপ্রলম্ভের কবিতা : প্রসেনজিৎ দাস আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী রেখা দাঁ ও বিজ্ঞান আন্দোলন : দীপাঞ্জন দে বাংলা উপন্যাসে নিম্নবর্গ : মিল্টন বিশ্বাস বদলে যাওয়ার অসুখ : বিষ্ণু সরকার বিবেকের মুখ : পার্থ রায় কল্লোলের কাল : তপন মল্লিক চৌধুরী দশমীর বিকেল, জলঙ্গী নদীতীরে মেলবন্ধনের আনন্দমুখর ছবি : অমৃতাভ দে উৎসবে ফেরাই জীবন…. : অশোক মজুমদার দ্বিশতবর্ষে পদার্পণ করলো বাঁকুড়ার অযোধ্যার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো : কমল ব্যানার্জী একটি গ্রামের বাড়ির পুজো… : বিজয় চৌধুরী আয় রে ছুটে আয় পুজোর গন্ধ এসেছে… : লুৎফর রহমান রিটন ময়নাপুর দেওয়ান বাড়ীর পুজো : কমল ব্যানার্জি মা দুর্গার মহাস্নান পর্ব : রিঙ্কি সামন্ত কোষ্টিয়া গ্রামের শীট বাড়ির দুর্গাপুজো : কমল ব্যানার্জী অয়দিপাউস : রিমি মুৎসুদ্দি পোড়খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবনকথা : হরিশংকর জলদাস সাজসজ্জার পুজো : নন্দিনী অধিকারী আঠেরো শতকে কলকাতার ভেড়া যেত অস্ট্রেলিয়ায় : অসিত দাস জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (অষ্টম পর্ব) : বিজয়া দেব হরিয়ানায় হ্যাট্রিক করলেও উপত্যকার মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়ে গান্ধী জয়ন্তী : দীপাঞ্জন দে পটের পাড়ায় মাজরামুড়ায় : রঞ্জন সেন একটি ড্যান্স হাঙ্গামা : শৈলেন সরকার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই মহাঅষ্টমীর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

মনোজিৎকুমার দাস-এর ছোটগল্প ‘লেপ’

মনোজিৎকুমার দাস / ৪০৩ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৪

অনুদীপ এখন পুরু লেপের ভেতরে বউকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। পূর্ণিমার রাত। চারদিক জোৎসনার আলোয় ভাসছে। লেপের ভেতরে যাওয়ার আগে ব্যালকোনীতে দাঁড়িয়ে অনুদীপ ও সুচরিতা চাঁদের আলো দেখতে দেখতে দু’জনেই আনন্দে বিহ্বল! সুচরিতা চাঁদের আলোয় উচ্ছ্বসিত হয়ে গান ধরে, ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে, উছলে পড়ে আলো’ —

লেপের ও বউয়ের শরীরের ওমের আমেজে অনুদীপের মন ভরে যায়।

ছাত্রাবস্থায় সে লজিং-এ থেকে পড়াশোনা করত, সে সময়ে যশোরের দড়াটানা রোডের মালু বিহারীর লেপের দোকান থেকে তেরো টাকায় কেনা লেপের কথা ভাবলে অনেক কথাই এখনও মনে পড়ে অনুদীপের। লেপটা ছিল তার অমলা বউদির পরণের খাটো শাড়ির মতো। দীর্ঘাঙ্গী অমলা বৌদির পরণের শাড়ি আচল দিয়ে মাথায় ঘোমটা দিলে পা আলগা হয়ে যেত। পা ঢাকলে মাথায় ঘোমটা থাকতো না। সে সময় অনুদীপের তেরো টাকায় কেনা লেপের অবস্থা ছিল ঠিক তেমনই। প্রচন্ড ঠান্ডায় লেপটা দিয়ে মাথা ঢাকলে পা দু’খানা আলগা হয়ে থাকতো। সেবারের প্রচন্ড শীতে অনুদীপ পাতলা আর খাটো লেপ গায়ে দিয়ে কাহিল! সে সময় সে মনে মনে ভাবতো, এ বাড়িতে তো লেপের কোন অভাব নেই। একটা লেপ দিলে তাকে এত কষ্ট পেতে হতো না!

অনুদীপ তার এই লজিং বাড়িতে আসার কয়েকদিন পরে তার বয়সী একটা দোকানদার ছেলে তাকে বলল, ‘তুমি ঘোষবাবুদের বাড়িতে লজিং থাকো?’

‘হ্যাঁ।’

‘ও বাড়িতে যে ছেলে লেজিং থাকে সে তো ওই বাড়ির জামাই হয়।

‘বড়লোকের বাড়ির জামাই হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।’ অনুদীপ বললো।

ছেলেটির কথা শুনে অনুদীপের মনে তেমন ভাবান্তর না হলেও সে ভাবলো, তাকে তো ঘোষবাবুর দুই মেয়েকে পড়াতে হয়। তখনকার বড় মেয়েটি পাঁচ ক্লাসে, আর ছোটটি তিন ক্লাসে পড়ে। কৃষ্ণা নামের মেয়েটি পাঁচ ক্লাসে পড়লেও শরীর স্বাস্থ্যে একটু বড়সড়। গ্রামের গরীব বাবা মায়ের নিরীহ ছেলে অনুদীপ। সে গায়ে বাংলা জামা আর পরনে পাজামা পরে। তার কথাবার্তায় গেঁয়ো ভাব বর্তমান। অনুদীপ বুঝতে পারলো, বয়সের তুলনায় কৃষ্ণা বেশ একটু পাকা স্বভাবে। তার কথাবার্তা আর পোশাক আশাক মেয়েটির পছন্দের নয়।

কয়েকদিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ চলছিল, রাতে প্রচন্ড ঠান্ডায় হিম হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। পাতলা লেপ, তার ওপরে লেপের ভেতরে রাবিশ তুলো ভরা। লেপটা গায়ে দিলে শীতে ঠকঠক করে কাঁপতে হয়, আর লেপের ভেতরের তুলোতে যতরাজ্যের পাটকাটির টুকরো গায়ে বেঁধে। অনুদীপের মা লেপটাতে পুরনো কাপড়ের কভার দিয়ে দেওয়ায় তবু কিছুটা রক্ষে।

কথায় বলে মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে, অনুদীপ বুঝতে পারলো মাঘের শীতে মানুষও কাঁপে। প্রচন্ড শীতের এক রাতে অনুদীপের মনে হলো, দোকানদার ছেলেটির কথা সত্যি হলে তাকে হয়তো প্রচন্ড শীতে রাবিশ লেপটা গায়ে দিতে হতো না হয়তো। কৃষ্ণার বাবা মায়ের কাছ থেকে জামাই আদর পেতে হলে তাকে ভাল পোশাক আশাকে সেজেগুজে থাকতে হতো। চালচলন, কথাবার্তায় স্মার্ট হওয়ার দরকার হবে। কিন্তু তা তো অনুদীপের পক্ষে করা সম্ভব না। বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করে ঘোষ বাড়ির জামাই হওয়ার চেয়ে রাবিশ মার্কা তের টাকায় কেনা লেপটাই ভাল!

অনুদীপ এক সময় তের টাকায় কেনা লেপটাকে রাবিশ ভাবলেও এখন কিন্তু সে লেপটাকে অপয়া না ভেবে পয়াই ভাবে। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালেও ওই লেপটাই ছিল অনুদীপের সঙ্গের সাথী। ওই লেপটাই শীতের রাতে সামান্য হলেও ওম দিয়েছিল। ভাল রেজাল্ট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করার পর একটি ওভারসিজ মাল্টিন্যাশানাল এন্টারপ্রাইজে চাকুরী পাওয়ার পর অনুদীপের ভাগ্যের চাকা সামনের দিকে ঘুরতে থাকে।

কলকাতা, সিঙ্গাপুর এবং কুয়ালামপুর অফিসে কাজ করার পর গত বছর থেকে অনুদীপ ঢাকা অফিসের দায়িত্বে আছে। বাবা মায়ের পছন্দের মেয়ে সুচরিতার সঙ্গে অনুদীপের বিয়ে হয়েছে দু-মাস আগে, সুচরিতা ঢাকার একটা বেসকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। বিয়ের পরে অনুদীপ তের টাকায় কেনা লেপটা গল্প সুচরিতাকে শোনাতে ভোলেনি। অনুদীপের কাছ থেকে তের টাকায় কেনা লেপটা গল্প শুনে সুচরিতা তাকে বলেছিল, ‘তোমার পয়া লেপটাকে আমি যত্ন করে তুলে রাখবো।’ সুচরিতার কথা শুনে অনুদীপ স্বস্তিবোধ করে।

মনোজিৎকুমার দাস, কথাসাহিত্যিক, লাঙ্গলবাঁধ, মাগুরা, বাংলাদেশ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন