আসলে ভালো বা খারাপ বাজেট বলে কিছু হয়না। বহু বাজেটেই ভাল ভাল কথা থাকে, কিন্তু তা রূপায়ণের সদিচ্ছা থাকে কম। কর্মসূচিটি রূপায়ণের টাকা আসবে কোথা থেকে? কীভাবে ধাপে ধাপে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছনো যাবে, সরকারের অন্যান্য কর্মসূচিগুলির একটি নির্দিষ্ট কর্মসূচি কীভাবে তা তাল মিলিয়ে চলবে তার কোন মিলজুল থাকেনা। ফলে একটি কর্মসূচি অন্য আরেকটি কর্মসূচির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। বোঝাই যায় এব্যাপারে সরকারের কোন দায়বদ্ধতা নেই। এবারের বাজেটে কার্বন দূষণ কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে বাজেট বরাদ্দ করেছে তাতে মনে হচ্ছে ব্যাপারটাকে মোটেই তেমন কোন জরুরি ব্যাপার বলে মনে করছেন না তারা। সরকারি ঘোষণাগুলি রূপায়িত হলে দেশে কার্বন নিঃসরণ কমতো, কিন্তু তা সম্ভব নয় আর্থিক বরাদ্দের পরিমাণ কম বলেই। স্বচ্ছ বায়ু এবং পরিবেশ দূষণ রোখার জন্য পঞ্চামৃত নামে কেন্দ্রীয় সরকার যে কর্মসূচিটি ঘোষণা করেছেন, তাকে মনে হয় পরিহাস।
নগরোন্নয়নের কথাই ধরা যাক। নগরে বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, কার্বন নিঃসরণ সবই বেশি। ‘দূরদর্শী’ সরকার সঠিকভাবেই ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রের শতবর্ষে দেশের অর্ধেক মানুষই থাকবে শহরে। ন্যাশানাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রামে ২০২৪ এর মধ্যেই কার্বন দূষণের লক্ষ্যমাত্রা অন্তত ২০-৩০ শতাংশ কম করার কথা ধরা হয়েছিল। এই কর্মসূচি শেষ হতে মাত্র দুবছর বাকি। একাজে যে খুব একটা এগোনো যায়নি তা শহরগুলির বায়ু দূষণের হাল দেখলেই বোঝা যায়। এবারের বাজেটেও বায়ু দূষণ রুখতে আর্থিক বরাদ্দ কম। ‘পঞ্চামৃত’তে জীবাশ্মবিহীন জ্বালানি ৫০০ জিডব্লিউ করা এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য উৎস থেকে ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিছুদিন আগে গ্লাসগো সন্মেলনে দূষণ কমানোর ব্যাপারে ভারত তা রূপায়িত করার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু এত কম বরাদ্দে তো তার ধারেকাছেও পৌঁছনো যাবেনা! শহরে দূষণ কমানোর প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রিইমাজিনিং সিটিস’। অথচ মফঃস্বলের জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিতে বায়ু দূষণ কমানোর কোন উপযুক্ত আর্থিক সংস্থান এই বাজেটে নেই। নাম গালভারি, কিন্তু আর্থিক পরিকল্পনার কোন অভিনবত্ব নেই।
ব্যাক্তিগত যান ব্যবহার কমানোর জন্য গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে জোরদার করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তার অর্থ আসবে কোথা থেকে? ‘গ্রিন এনার্জি’, ক্লিন মবিলিটি সিস্টেম’ ‘জিরো ফুয়েল পলিসি’ এসব কথা নেতা-মন্ত্রী-পরিকল্পনাবিদদের মুখে মুখে ঘুরছে। এই ক্ষেত্রটিকে ঘিরেই বিকশিত হতে পারে আগামি দিনের অর্থনীতি। কিন্তু এই সানরাইজ সেক্টরটির জন্য বরাদ্দ কম। ‘জিরো এমিশন’ টার্গেট নিয়েও বাজেট নীরব। গত কয়েক দশকের বাজেট লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ভাল ভাল কথা বলা হলেও আর্থিক বরাদ্দ ও সরকারের ঘোষণা নিয়ে চিন্তাভাবনার স্বচ্ছতা না থাকায় দূষণ বিরোধী পরিকল্পনা গতি পায়নি। ঘোষণার সঙ্গে সরকারের আর্থিক বরাদ্দের কোন মিলই থাকছে না। এক্ষেত্রে সরকারি অস্বচ্ছতার অভাবেই পরিবেশ স্বচ্ছ হয়নি।