বুধবার | ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:৪০
Logo
এই মুহূর্তে ::
অদ্বৈত মল্লবর্মণ — প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য-সমালোচক (তৃতীয় পর্ব) : রহমান হাবিব কাশ্মীরী মন্দির — অবহেলায় না অনীহায়? অবন্তীস্বামী ও মার্তন্ড মন্দির : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী মমতার স্পষ্ট বার্তা — আগে বাংলার মানুষ আলু খাবে, তারপর বাইরে পাঠানো হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় অদ্বৈত মল্লবর্মণ — প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য-সমালোচক (দ্বিতীয় পর্ব) : রহমান হাবিব লঙ্কা চাষ বাড়ছে, লাভবান চাষিরা, রপ্তানি বাড়াতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পাশাপাশি, তবে প্রাণ নেই, চিহ্ন বইছে ভেলুগোন্ডা, রবিবার জল সরার পরে : অশোক মজুমদার নলিনী বেরার কবিতা — স্বভূমি, স্বদেশ, স্বজন : ড. পুরুষোত্তম সিংহ অদ্বৈত মল্লবর্মণ — প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য-সমালোচক (প্রথম পর্ব) : রহমান হাবিব রংবাহারি ক্যাপসিকাম : রিঙ্কি সামন্ত রাজ্যের কৃষকমান্ডিতে কৃষকদের ধান বিক্রিতে দালাল মুক্ত করার নির্দেশ সরকারের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘উচ্ছেদ’ আমাদের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং নানা মত : তপন মল্লিক চৌধুরী বেঙ্গল গোট গ্রামীণ অর্থনীতিতে এনে দিতে পারে স্বচ্ছলতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পিটার নাজারেথ-এর ছোটগল্প ‘মালদার’ অনুবাদ মাসুদ খান আমরা নারী-আমরাও পারি : প্রসেনজিৎ দাস ঝুম্পা লাহিড়ীর ছোট গল্প “একটি সাময়িক ব্যাপার”-এ অস্তিত্ববাদ : সহদেব রায় ঝুম্পা লাহিড়ী-র ছোটগল্প ‘একটি সাময়িক বিষয়’ অনুবাদ মনোজিৎকুমার দাস ঠাকুর আমার মতাে চিরকালের গৃহীর চিরগুরু : সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ভাবাদিঘির জট এখনও কাটেনি, বিষ্ণুপুর থেকে জয়রামবাটি রেল চলাচল শীঘ্রই : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (শেষ পর্ব) : অভিজিৎ রায় উৎপন্না একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত মারাঠাভুমে লাডকি বহিন থেকে জয়, ঝাড়খণ্ডে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী প্রচারে হার : তপন মল্লিক চৌধুরী কিন্নর-কৈলাসের পথে : বিদিশা বসু হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (চতুর্থ পর্ব) : অভিজিৎ রায় ভনিতাহীন চলন, সাইফুর রহমানের গল্প : অমর মিত্র সাইফুর রহমান-এর বড়োগল্প ‘করোনা ও কফিন’ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (তৃতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় নানা পরিচয়ে গৌরী আইয়ুব : গোলাম মুরশিদ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় কেন বারবার মণিপুরে আগুন জ্বলে আর রক্ত ঝড়ে : তপন মল্লিক চৌধুরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

চলাচল (৩য় কিস্তি) : নন্দিনী অধিকারী

নন্দিনী অধিকারী / ৪০০ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৩

যুগযুগ ধরে আমাদের অনন্ত চলাচল এক অজানিতের পথে। যাত্রাশেষের গান কে, কবে শোনাবে তা জানা নেই। পুরনো পৃথিবীও আবর্তন করছে তার নিজের ছন্দে। রাত্রি শেষে অন্ধকার দূর হচ্ছে। সকালের আলোয় জেগে উঠছে আমাদের প্রিয় ওই গোলকটির অর্ধেক জগত।

ভোর হতে না হতেই কেনিয়ার নাকাড়ু লেকে (lake nakuru kenya) ঝাঁকে ঝাঁকে পেলিক্যান (Pelican) জুটেছে মাছ শিকার করতে। লম্বা ঠোঁটের সাহায্যে তারা দিনে দু-তিন কিলো মাছ একাই সাবড়ে দেয়। তবে ঠোঁটের থলিতে মোটেই সঞ্চয় করে রাখে না বেঁচে যাওয়া খাবার।

লেকের গোলাপি ফ্লেমিঙ্গোরা জলে ফুটে থাকা পদ্মফুলের কুঁড়ির মত সুন্দর।এই মোহময়ী গোলাপি রংয়ের কারণ তাদের খাদ্যাভ্যাস। গোলাপি রঙের ব্রাইন চিংড়ি (Brine shrimp) আর আ্যালগেই (Algae) তাদের পাখনায় রঙ এনে দেয়। সে রোম্যান্টিক গোলাপি রঙই প্রেমের মূল আকর্ষণ। জোড় বাঁধে তারা। সারাজীবন একই জীবনসঙ্গীকে আঁকড়ে ধরে পঞ্চাশ বছরের দীর্ঘজীবন কাটিয়ে দেয় হেসেখেলে।

নাকাড়ু লেকে থাকতে ভালোবাসে উগান্ডার জাতীয় পাখি গ্রে ক্রাউন্ড ক্রেন (Gray Crowned Crane)।

তাদের প্রণয়নৃত্য, মাথার সোনালি ঝুঁটি নেড়ে প্রেমাতুর আহ্বান যেন পূর্বরাগের পালাগান! তাদের প্রণয়ের এই ধারাপাত যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। ছোটোরা শিখে নিচ্ছে বড়দের কাছে প্রেমের পাঠ। পাখিদের এই অদ্ভুত শৈল্পিক জগত থেকে আমার ফিরতে মন চায় না।

নাকাড়ু লেকের আশেপাশের প্লাবনভূমিতে আফ্রিকার দুই খড়্গওলা গন্ডারদের (Two sword-wielding rhinoceroses) বসবাস। দেখতে হবে তাদেরও। ছোট্ট গন্ডার তার মায়ের সঙ্গে দুষ্টুমি করে। মা তাকে প্রশ্রয় দেয়। এ বিরল দৃশ্য আর কোথাও দেখতে পাব কিনা জানিনা। কোন প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ঘাসপাতা খেয়ে বেঁচে আছে এই অদ্ভুত দর্শন প্রাণীটি। একসময় তার এই শারীরিক অস্ত্রটির জন্যে তাদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। এখনো চোরাগোপ্তা সেসব কাজ বন্ধ হয়নি।

এই আনন্দময় জগত ক্ষুধাতৃষ্ণা ভুলিয়ে দেয়। সময় জানিয়ে দেয় দুপুরের খাবার সময় হয়েছে। আমাদের জন্যেও খাবার সাজিয়েছে রিসর্টের রেস্তোরাঁ। সারা পৃথিবীর মানুষ পর্যটক হয়ে এখানে আসেন। তাদের সন্তুষ্ট করতে খাওয়ার টেবিলে বিচিত্র পদ।

আমাদের জন্যে রয়েছে প্রিয় মাছ ভাজা। এখানকার লুইয়া মানুষরা বাঙালিদের মতো “মৎস্য মারিয়া খাইব সুখে”-র নিয়মে দিনাতিপাত করে। নাইভাসা লেকের (lake naivasha) মিষ্টিজলের মাছ তেলাপিয়ার স্বাদ বেশ ভালো। বাঙালিরা সর্বত্র বেড়াতে গিয়ে ছেলেপুলের জন্যে আলুভাজা, আলুপোস্তর খোঁজ করে। এখানে না চাইতেই খাওয়ার পাতে আলুভাজা। কেনিয়ার মানুষ বাঙালিদের মতই আলুপ্রিয়। গোলগোল করে কাটা কুমড়ো সেদ্ধ, পালংশাকও দেখে উল্লসিত আমাদের দলের অনেকেই।

কেনিয়ার নিজস্ব খাবার উগালি (Ugali)। উল্টৌনো বাটির আকারে সাজানো ভাতের মত দেখতে। সাদা আর মেরুণ রঙের কম্বিনেশন পাশাপাশি রাখা। সাদা উগালি ভুট্টা এবং যবের আটা দুধে অথবা জলে ফুটিয়ে মন্ড করা। মুখে দিলে ভুট্টার স্বাদ পাওয়া যায়।

মেরুণ উগালি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে স্বীকৃত। উপকরণে বাজরা আর কাসাভার আটা। কাসাভা একধরণের লাল কন্দমূল। এ অঞ্চলে প্রচুর চাষ করা হয়।

রেস্তোরাঁয় আলাপ হল মারিয়ার সঙ্গে। নাইরোবি থেকে দুই ছেলেমেয়েকে সে নাইভাসায় পাখি দেখাতে এনেছে। পাখিদের মতই অনেক মেয়েরই এখানে চুলে সোনালি, সবুজ, লাল, নীল রঙ। ছেলেরাও বাদ যায়নি, তবে সংখ্যায় কম। মেয়েদের গুচ্ছ গুচ্ছ অজস্র বিনুনি পিঠে ছড়িয়ে আছে। কারোর কবরী চূড়ো করে মাথার ওপরে বাঁধা। বিনুনিতে রঙবেরঙের আঙটি পরেছে কেউ কেউ। পুরোটাই নকল। মাত্র তিনমাসের স্থায়িত্ব। কেশদেবীর দয়া থেকে এরা একেবারেই বঞ্চিত।

খাওয়া দাওয়া সেরে আমরা নাইভাসা লেকে ভাসলাম। আমাদের নৌকার মাঝি জন। গল্পে গল্পে জেনে নিলাম সে লুইয়া উপজাতির। কেনিয়ার বৃহত্তম ৩টি উপজাতির মধ্যে লুইয়া ভাষায় কথা বলে প্রায় ৮০ লাখ জনগণ। যদিও বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন তাদের ইংরেজি বলতে, লিখতে শিখিয়েছে। অনেকেই খ্রীস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে। তবু সভ্যতার বেনোজলে তারা পুরোপুরি ভেসে যায় নি। নিজের ভাষা, সংস্কৃতিকে আঁকড়ে বেঁচে আছে। লুইয়ারা মাঠে চাষ করে, মাছ ধরে, নৌকা চালায় আর ভালোবাসার গান গায়, —

“Let me give you my Luhya love. /We all need love, We all need love.”

নৌকা চালাতে চালাতে জন আমাদের দেখাল জলহস্তিরা পুরো পরিবার নিয়ে জলে গা ডুবিয়ে বসে আছে। তারা দিনের গরমে জলকেলি করে। রাতে ডাঙায় মস্তানি। ভারি শরীর নিয়ে তারা মোটেই সাঁতার কাটতে পারেনা। আট দশ জনের পরিবারে দাদাগিরি করে পুরুষ হিপো (hippo)। ঘাসফুস খেলেও তারা কুমিরের থেকেও হিংস্র! একথা শুনে আমার ছোটবেলায় সার্কাসে দেখা সুন্দরীর হাতে হিপোর পাঁউরুটি খাওয়ার স্মৃতি ফিরে এল! হিপো বিশ্বরূপ দর্শনের হাঁ করে পাঁউরুটি খেতে এক’পা এগোয়। তন্বী বালিকে একপাউন্ড পাঁউরুটি ছোঁড়ে হিপোর মুখে আর একপা পেছোয়! হিপোর হাঁয়ের গহ্বর থেকে নাইভাসার নীলজলে আবার ভেসে যাই জনের সঙ্গে।

সে আমাদের চেনাল অচেনা সাদাকালো মাছরাঙা, কালোডানার চিল, কেনিয়ার পানকৌড়ি, নীল বুলবুলি, লালচোখ ঘুঘু, আরো কত সারস, বক। তারা কেউ গান গাইছে, ডুব দিচ্ছে নীলজলে। চান করে ডানা ছড়িয়ে শুকোচ্ছে শুকনো ডালে বসে। বকধার্মিক চোখ রেখেছে মাছে। তাদের চোখে চোখ রাখতে রাখতে আমরা ছবি তুলতে ভুলে গেলাম।

জন বলল, মেঘপাহাড়ের সংঘাতে এই গ্রেট রিফট ভ্যালিতে (Great Rift Valley) বছরে দু-বার বর্ষা নামে। নাইভাসা আর নাকারুর জল তখন কানায় কানায় ভরে ওঠে। পরিযায়ী পাখিরা এখানে বাসা বাঁধে। সঙ্গী খুজে নেয়। সংসার গড়ে। ছানাপোনার দায়িত্ব পালন করে বাবাপাখি-মাপাখি দুজনেই। অফুরন্ত খাবার ঠোঁটে করে এনে খাওয়ায় শাবককে। এটি তাদের যাত্রাপথের স্টপ ওভার।

বর্ষার ভরন্ত জলে কচুরিপানায় লাফিয়ে বেড়ায় জলফড়িং। অতিরিক্ত জলের তোড়ে বড় বড় গাছের প্রাণসংশয় হয়। কঙ্কালসার হতে হতে তারা ধ্বংসের দিন গোনে। জলভেজা নরম মাটিতে নতুন ঘাস, কীটপতঙ্গের জন্মোৎসব, মৃত্যুৎসব দুইই। কচি ঘাস, পোকামাকড়ে পুষ্টি পেয়ে বেড়ে ওঠে উন্নততর খাদক।

ডিসেম্বর-মার্চের শুকনো আবহাওয়ায় পরিযায়ী পাখিরা আবার উড়ে যায় অন্যকোথা, অন্য কোনোখানে। জীবনের এই পরিক্রমণ চলতেই থাকে চলতেই থাকে। (ক্রমশ)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন