হাওড়া রামরাজতলার ৫২ নং বাস রুটের শতবর্ষ পূর্ণ হল।
ঐতিহ্যবাহী এই বাস রুটটির একশো বছর পথ চলাকে স্মরণ করে আজ রামরাজতলা থেকে কলকাতা ধর্মতলা পর্যন্ত একটি হেরিটেজ বাস যাত্রার ব্যবস্থা হয়েছিল। উদ্যোগে ‘কলকাতা বাস-ও-পেডিয়া’। ৫২ নং রুটের একটি বাসকে সাজিয়ে গুজিয়ে রামরাজাতলা পুরনো বাস টার্মিনাস থেকে শুরু হয়েছিল এই যাত্রা। বাসটির ভেতর দেওয়ালে লাগান ছিল হাওড়ার বাসের দীর্ঘ পথ চলার নানা সময়ের নানা তথ্য। প্রকৃত অর্থেই যেন একটি মিউজিয়ামের আকার নিয়েছিল বাসটি। মাঝপথে আরও দু’টি বাস সঙ্গী হয়েছিল এই যাত্রায়।
উল্লেখ্য, এর মধ্যে ছিল হাওড়া ৫৬ নং রুটের সেই পুরনো দিনের একটি কাঠের বাস। “একসময় কোলকাতাতেও অনেক ‘Body building shop’ ছিল। বডি বিল্ডিং বলতে আমার জ্ঞান তখনও শরীরচর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। অবশ্য অনেক পরে বডি বিল্ডিং এর অন্য মানে বুঝতে পারি। লোহার স্যাসির উপর কাঠ দিয়ে একখানা গনপরিবহনের ব্যাবস্থা অনেকদিন পর্যন্ত চালু ছিল। পরে এলো কাঠ আর এলুমিনিয়ামের মেশানো ব্যাবস্থা আর পরে পুরোপুরি এলুমিনিয়ামের বাস বডি। একদিক দেখলে ভালই হলো। কিছু গাছ বাচলো। কেমন ছিল সেই যাত্রা?
এই বাসের এক পুরোনো যাত্রীর জবানীতে শুনে নেওয়া যাক সেই গল্প “বিশেষ করে রামরাজাতলা হাওড়া ৫২ নম্বর রুট আমাকে শৈশবে টেনে নিয়ে যায়। আমার মামা বাড়ি ছিল সাঁতরাগাছির সাতাশী’তে। মায়ের সঙ্গেই বেশি এসেছি। শ্রাবণ মাসে রামরাজাতলায় রামঠাকুর পুজোর কয়েকদিন আগেই মা চলে আসতো, আমাকে নিয়ে। রামঠাকুর দেখে মামা আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে কখনও “পার্বতী” বা “শ্যামাশ্রী” কখনও “বঙ্গবাসী” সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যেত। তখন কিছু না বুঝলেও আজকের এই রুটের শতবর্ষের মুখে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারছি কিরকম আবেগময় ছিল এই বাস রাস্তা।
আজকের এই যাত্রাপথে অংশগ্রহণ করেছিল দুটি বাস আর একটি ছিল বয়স্কদের জন্য নতুন এসি বাস। ৫৬ রুটের বাস ড্রাইভার দাদা ছিলেন মুকেশ সিং ও কন্ডাক্টর দাদা এস.কে. ফারুক আর ৫২ রুটের বাস ড্রাইভার ছিলেন উত্তম দে দাদা। তিনজনকেই গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। পাশাপাশি আরও কয়েকটি সংস্থার পক্ষে উত্তরীয়, মিষ্টান্ন দেওয়া হয়। মেট্রোর কাছে অনেকেই অপেক্ষা করছিলেন। বাস ধর্মতলা পৌছাতেই আরো অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। আশার কথা অনেক ছাত্রছাত্রী চোখে পড়লো। রবিবারের পথ চলতি মানুষও অনেকে উৎসুক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন রাজ্য পরিবহন দপ্তরের এম.ডি রজনবীর কাপুর।