আরামবাগের মানুষের জেলার দাবি কি শেষ পর্যন্ত আশাপূরণ হতে চলেছে! বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, নবান্ন আরামবাগের মানুষকে খুব শীঘ্রই নতুন জেলা উপহার দিতে চলেছে। আর তা যদি বাস্তব হয় তাহলে এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের হয়রানি বন্ধ হবে। জেলার প্রশাসনিক কাজ ও আর্থিক দিক থেকে সুবিধা পাবেন লক্ষাধিক মানুষ। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। এমনটাই মনে করছেন বুদ্ধিজীবী মহল।
প্রসঙ্গত, হুগলির আরামবাগ মহকুমা ছ’টি ব্লক নিয়ে গঠিত। মুখ্যভাগ কৃষিপ্রধান ও নদীবাহিত এলাকা। এখানকার মানুষের প্রশাসনিক কাজ করতে গেলে প্রায় ১৫০ কি.মি, কোথাও ৭০-৮০ কি.মি দূরে যেতে হয় সদর শহর চুঁচুড়ায়। দিনের পর দিন এই কাজ করতে গিয়ে যেমন নাকাল হচ্ছেন, তেমনি আর্থিক দিক থেকেও অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এখানকার মানুষ বহুবার আবেদন নিবেদন করেছেন প্রশাসনের কাছে আরামবাগকে নতুন জেলা করা হোক। মানুষের দাবি, হুগলির আরামবাগ এমন একটি জায়গায় অবস্থান করছে, যা সদর চুঁচুড়া থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন বলা যেতে পারে।অথচ আরামবাগকে জেলা করার যে পরিকাঠামো দরকার তার অনেকটাই আছে বলে মনে করেন অনেকে। রেলওয়ে সংযোগ, প্রশাসনিক ভবন ও অফিস, মেডিক্যাল কলেজ, ৬টি মহাবিদ্যালয় ছাড়াও বেশকিছু টেকনিক্যাল স্কুল আছে। তা সত্ত্বেও এখানকার মানুষকে জেলার প্রশাসনিক সম্পর্কিত কাজে চুঁচুড়া যেতে হচ্ছে। গোঘাট-২ ব্লকের বদনগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা তপন ব্যানার্জি জানান, প্রায় দেড়শো কি.মি দূরে চুঁচুড়া। অনেক সময় কাজ সেরে ফেরা যায় না। থেকে যেতে হয়। একইভাবে খানাকুল-২ ব্লকের নতীবপুর এলাকার সুভাষ দিন্দা বলেন, তিন-চারটে নদী পার হয়ে প্রায় ৮০ কি.মি দূরে চুঁচুড়া যেতে হয় সরকারি বেশ কিছু কাজে। যেটা সকল মানুষের কাছে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অবিলম্বে আরামবাগ জেলা হলে মানুষ কষ্ট ও আর্থিক দিক থেকে মুক্তি পাবেন।
আরামবাগের আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক দেবাশিস শেঠ বলেন, হুগলির আরামবাগের গোঘাটের শেষ প্রান্তে পশ্চিম মেদিনীপুর সীমান্তে যিনি বাস করেন, তাঁর পক্ষে চুঁচুড়া গিয়ে কাজ সেরে বাড়ি ফেরা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। খানাকুলের মানুষের অবস্থাও একই। আরামবাগ জেলা হলে সেই কষ্ট লাঘব হবে। এছাড়া হুগলির আয়তন অনেকটাই বড়ো। আরামবাগ জেলা হলে খানাকুল, কামারপুকুর, রাজহাটি, হেলান, রাধানগর, চাঁপাডাঙ্গা ও পুরশুড়া মতো জায়গাগুলি পুরসভা গড়ে ওঠার সুযোগ থাকবে। তাতে মানুষ আরো বেশি সুযোগ সুবিধা পাবেন। দেবাশিসবাবু আরও বলেন, আরামবাগ জেলা হলে সরকারি প্রশাসনিক ভবন ও অন্যান্য পরিকাঠামো যথেষ্ট আছে। সর্বোপরি আরামবাগ জেলা হলে এখানকার মানুষের উন্নয়ন ও আর্থিক পরিকাঠামো অনেকটাই বদলে যাবে। হুগলি জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সেখ আলহাজ্ব মেহবুব রহমান বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায় ইতিমধ্যে বেশকিছু নতুন জেলা গড়ে উঠেছে। উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করতে দিদি চান আরও বেশ কয়েকটি নতুন জেলা তৈরি করতে। তার মধ্যে আরামবাগ আছে। প্রশাসনিক কাজে মানুষ যাতে বেশি করে সুযোগ পান সেটা দেখাই মূল উদ্দেশ্য।
প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক মানস মজুমদার জানান, আরামবাগ জেলা হলে গোঘাট ও খানাকুলের মানুষের চরম উপকার হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একগুচ্ছ প্রকল্পের উন্নয়নে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। বড়ো জেলাগুলোকে ছোট করে আরও নতুন জেলা তৈরি করে প্রশাসনিক কাজের সুযোগ মানুষ যাতে পান সেটাই করতে চান। আরামবাগের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দুর্গাপ্রসাদ সরকার বলেন, আরামবাগ জেলা করার দাবি মানুষের দীর্ঘদিনের। আশাকরি জনদরদী ও মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের দাবি মেনেই আরামবাগকে নতুন জেলা উপহার দেবেন। যেভাবে রাজ্য জুড়ে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে তাতে মানুষ আপ্লুত। আরামবাগ জেলা হলে নদীবাহিত এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।
এদিকে আরামবাগকে পৃথক জেলা করার দাবি জোরালো হচ্ছে। পৃথক জেলার দাবিতে আরামবাগ জেলা চাই পক্ষ লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। মহকুমাজুড়ে পথসভা ও সই সংগ্রহ শুরু হয়েছে। আন্দোলনে শামিল হতে মহকুমাবাসীর কাছে আবেদন করা হচ্ছে। মহকুমার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ থেকে সর্বস্তরের মানুষ এই আন্দোলনে শামিল হচ্ছেন। ধারাবাহিকভাবে চলছে পথসভা ও সই সংগ্রহ। ভৌগলিক অবস্থান, সংস্কৃতি ও জনবৈচিত্র্য নিয়ে আরামবাগের পৃথক অবস্থান রয়েছে। প্রশাসনের তরফেও আরামবাগকে বরাবর পৃথক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৭৯৫ সালে হুগলি জেলা গঠিত হয়। প্রশাসনিক কাজে সুবিধার জন্য ১৮৪৬ সালে হুগলি জেলাকে মহকুমা হিসেবে দু-ভাগে ভাগ করা হয়। একটি শহরকেন্দ্রিক দ্বারহাট্টা বা শ্রীরামপুর। অন্যটি গ্রামকেন্দ্রিক জাহানাবাদ বা আরামবাগ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরামবাগ শহর হয়ে উঠেছে মহকুমার প্রাণকেন্দ্র। স্বাভাবিক ভাবেই আরামবাগকে জেলা করার দাবি ওঠে। সেই দাবিকে মেনে এবার মানবদরদী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব শীঘ্রই আরামবাগের মানুষকে নতুন জেলা উপহার দিতে পারেন। এমনটাই বিশ্বস্ত সূত্রের খবর।
আরামবাগ বাসীর অনেক দিনের স্বপ্ন, আশা করি দিদি খুব শীঘ্রই পূরন করবেন।
আরামবাগ জেলা ঘোষণা আরামবাগ মহকুমা বাসীর জন্য খুব খুব প্রয়োজন
#আরামবাগ জেলা চাই
আরামবাগ জেলা হলে আরামবাগ বাসীর কষ্ট দূর হবে।চুঁচুড়া যাওয়ার যন্ত্রণা কমবে।
আরামবাগ জেলা পক্ষের এই আন্দোলন আগামী দিনে সফল হবেই,”আরামবাগ জেলা” হিসাবে প্রতিষ্ঠা শুধু সময়ের অপেক্ষা
আরামবাগ জেলা হলে আক্ষরিক অর্থেই আরামবাগের উন্নয়ন হবে । প্রশাসনের ইচ্ছে থাকলেও বন্যাপ্রবণ খানাকুল, পুরশুড়ার উন্নতি সম্ভব না কারণ যথেষ্ট টাকা আরামবাগে এসে পৌঁছায় না । রাজহাটি খানাকুল , কামারপুকুর , কৃষ্ণগঞ্জ বদনগঞ্জ পৌরসভা হবার মত সব পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও পৌরসভা নয় , বিশাল ঘনবসতির এলাকা হবার পরেও থানা বাড়েনি । তিলাড়ি বা পানশিউলি থেকে কেন গরীব খেটে খাওয়া মানুষকে রুজিরুটি বন্ধ করে দেড়শো কিমি দূরের সদর যেতে বাধ্য করা হবে ? মানবদরদী মুখ্যমন্ত্রী যখন চাইছেন প্রশাসনকে মানুষের কাছাকাছি আনতে তখন কারা স্বার্থপূরণের জন্য আরামবাগকে জেলা ঘোষণায় বাধা দিচ্ছেন , ভাবার বিষয় ।
1-100 to 130 km যাতায়াত বন্ধ হবে সদরের কাজে।
2-প্রশাসনের কাজ করতে সুবিধা।
3-বর্তমানে সময়ের দাম অনেক তাই সময় বাঁচবে।
4- জেলা হবার জন্য সমস্ত পরিকাঠামো আছে আরামবাগ এ।
5- আরামবাগ জেলা হলে হয়তো 4 টে পৌরসভা পাবে
3 টে থানে পাবে আর এগুলো খুবই দরকার।
আরামবাগ জেলা নিছক আবেগের নয়
অভিষেক মুখোপাধ্যায়
নতুন জেলা গঠিত হয় প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে। বিষয় এবং প্রয়োজন দুটিই সরকারের।
কিন্তু আজ যখন ‘আরামবাগ জেলা পক্ষ’ নাম নিয়ে উদ্বেলিত আন্দোলন জন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে তখন এই স্বতঃস্ফূর্ততা বা চাহিদা ইঙ্গিত করে যে এ আন্দোলন বা জেলা পাওয়ার আবেগ তাৎক্ষণিক নয়। এর সু বিশাল ঐতিহাসিক পটভূমি আছে। ১৭৯৫ সালে হুগলি জেলা গঠিত হওয়ার অর্ধশতকের মধ্যেই ( ১৮৪৬ সাল) তৎকালীন প্রশাসনিক প্রধানরা বুঝে যান যে এই সুবিশাল ক্ষেত্রকে এত দূর থেকে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই প্রশাসনিক কাজের উদ্দেশ্যে জেলা কে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়, একটি শহরকেন্দ্রিক দ্বারহাট্টা যা বর্তমানে শ্রীরামপুর অঞ্চল এবং অপরপ্রান্তটি জাহানাবাদ পরগনা যা বর্তমানে আরামবাগ নামে পরিচিত।
এরপর দামোদর নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। কেটে গেছে প্রায় দুশো বছর। কিন্তু পরবর্তীকালে প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য একাধিক ছোট ছোট জেলা গঠিত হওয়া সত্বেও আরামবাগ জেলার মর্যাদা পেল না। এটা যন্ত্রণার!
যন্ত্রণাটা তখন বোঝা যায় যখন সদর শহর চুঁচুড়ায় কোন কাজকর্ম করতে বদনগঞ্জ বা খানাকুলের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ভোররাত্রে বেরিয়ে গভীর রাত্রে কার্য সমাপ্ত বা অসমাপ্ত করে বাড়ি ফিরতে হয়। হতাশা তখন সৃষ্টি হয় যখন দেখা যায় স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও দামোদর নদীর ওপারে ১১ টি পৌরসভা থাকা সত্ত্বেও নদীর এপার একটা পৌরসভা আরামবাগ নিয়ে না পাওয়ার হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, কামারপুকুর বদনগঞ্জ দেওয়ানগঞ্জ ও খানাকুলের মত ইতিহাস প্রসিদ্ধ সমৃদ্ধ জনপদ গুলি। যারা হতেই পারতো এক একটি পৌরসভা।
পৃথক জেলার দাবিটা আরো একধাপ এগিয়ে যায় যখন ভূ প্রকৃতিগত সমস্যা দ্বারহাট্টা অঞ্চল থেকে জাহানাবাদ পরগনাকে অনেকটাই পৃথক করে। প্রতিবছর বন্যায় ডুবে যায় এই অঞ্চলের বিস্তৃত অংশ। জেলাগতভাবে পৃথক বাজেট হলে ভূপ্রকৃতিগত সমস্যা ও তার প্রতিকার অনেকাংশে অগ্রাধিকার পাবে। তাই আরামবাগ জেলার দাবি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। শস্য শ্যামলা নদীমাতৃক এই বিস্তৃত তটভূমি তার গর্বের ইতিহাসকে বুকে ধরে নিজ বৈশিষ্ট্যে ও উন্নয়নের জোয়ারে হয়ে উঠতে পারে এক পৃথক স্বপ্নের ক্ষেত্র, ‘আরামবাগ জেলা’।
Arambagh abhilombe zela chai