সবুজ বিপ্লবের হাত ধরে দেশের মানুষ আর রাষ্ট্র ব্যবস্থার চাপে কয়েক লক্ষ দেশি পুষ্টিকর, চাষে শস্তা ধান দক্ষিণ এশিয়ার মাঠ থেকে চলে গেছে রাইস রিসার্চ ইন্সটিটিউটে নানান ‘গবেষক’ এবং বিদেশি কনসালট্যান্টের চেষ্টায়। আমরা অনেকেই জানি কীভাবে ধান গবেষক ডক্টর রিচারিয়াকে অপমান করে ভারত সরকারের কৃষি দপ্তর থেকে অবসর নিতে বাধ্য করা হল; তার জায়গা নিলেন ডক্টর স্বামীনাথন, যিনি আজ কর্পোরেট জৈব কৃষির মসিহা।
আমরা যারা বাংলার কারিগর হকার চাষী সারা এশিয়াকে চাল খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম, তাদের কাজ হল সেই সব হারিয়ে যাওয়া ধানের নামপত্র খুঁজে বার করা। গবেষণায় আমরা দেখলাম ড. বুকানন হ্যামিল্টনকে উদ্ধৃত করে ডবলিউ হান্টারের লেখায় সমগ্র উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে দিনাজপুর ও রংপুরে ১৭০ জাতের রোপা আমন ধানের বর্ণনা পাচ্ছি। এই তালিকার সঙ্গে আমরা দেব চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু ধানের নাম। জীবন সৃষ্টির কী সব কাব্যিক নাম দিয়েছেন গবেষণাগারকে মাঠঘাটে নামিয়ে আনা কৃষিবিদেরা। তাঁদের জ্ঞান, কাব্য প্রতিভা এবং অনুসন্ধিৎসাকে প্রণাম। অযোগ্য আমাদের প্রজন্মকে ধিক্কার এগুলোর কোনওটাই আমরা রাখতে পারি নি। হয় তুলে দিয়েছি বিদেশি লুঠেরাদের হাতে না হয় উন্নয়নের যুপকাষ্ঠে ধ্বংস করে দিয়েছি।
দিনাজপুর ও রংপুরে ধানের নাম
মালশিরা, কচুডুমা, শাটিয়া, ঢেপা, মোটা গাঞ্জিয়া, তিলা ফুর, উক্নিমধু, বিবি পাকড়ি, জশোয়া, শাল কুমার, বড়োপানি শাইল, বাঘফুল, শাওবাজ, কাটি শাওবাজ, খিরশাপাত, কালিয়া ঝাও, মুগি মালশিরা, লেনডাং, কান্দি বংশি, জাফার, নাওডুম, কলম ঢেপি, ছোট পানি শাইল, শ্যামরসা, প্যারা মালশিরা, বিন্নাফুল, হরিশংকর, সজনী, নাইল জশোয়া, ফুল গাঁজিয়া, চেং মাগুরি, বিতি কান্দিশাও, বাছি, কার্তিক শাইল, কালাপাক্রি, হরিণ পাঁজর, তুলা পাঁজর, কালামানা, মটর শাইল, কাঁচকলস, কই শাইল, মান্দিগিরি, তূরা মালশিরা, রসুলভোগ, ইতি কাঁন্দিশাও, চিনিভোগ, বড় গাঁজিয়া, কাতরা যশোয়া, পুরামাগরি, নারিকেল ঝুঁকি, শ্যামরাজ, বাঙাল দাড়িয়া, শংকর মুখি, গজাল গাড়িয়া, কংসহার, জন করাই, ডালকচরা, মাই, খুসনী মালশিরা, সুন্দরী, ঝাঁকড়, পাক্ড়ি খিরশা, পাকশিরাজ, আশাববরা, ঝুলঝুলি, নুলি, আটিয়াটেপা, বোয়া পাক্ড়ি, বীর মাদলী, আর্শ্বিনা, সমাস ঝালি, গজাল গাড়িয়া, ভোগবাগরা, হরিনখোল, বিটু, গাজিয়া, পর্বতজিরা, কালামাই, ভোগজিরা, নাওজিরা, কাটারিভোগ, মৌভাঁজ, বাকুর, বাওয়াই ভোগ, দুধকলম, বাঁশপাতারি, আমলা, অলিয়া, বারুনি, বই দুলালী, বুড়াবাকুর, চাঁপা, দোল কলম, গুজরি, হলদিয়াবচি, হরিন কাজলিয়া, হনি, হাতীঝুল, ইন্দ্রশাইল, জগন্নাথ ভোগ, খিরশাভোগ, বিলবচি, মধুশাইল, নারিকেল ফুল, পানাতি, ফুল পাকড়ি, শাইলনা, শামলাল, রাধুনি পাগল, শীলকুমার, রাজভোগ, কালা শাইলনা, ধলা শাইলনা, কৃষ্ণচূড়া, বট পাকুড়, কালাপাকড়ি, অঞ্জনা, কানকুয়া, পানি শাইল, এলাই, পাতিশাইল, সেনগাড়িয়া, সিন্দমাই, বড় যশোয়া, ছোট যশোয়া, বেত, ঢোল, নেড়াবাচি, খোদনী, হাতিদন্ত, সূবর্ণখর্গ, হাতি, চন্দনচূড়া, পায়ামুশরী, উদয়গৌরী, মালশিরা, খৈচুর, বাজনাও, খড়গমূতি, পাটেশ্বরী, পরীজল, চরাইচটি, কলডমা, দেবকন্যা, দুধসর, সূর্বন যশোয়া, পাক্ড়ি মালশিরা, বামন ভোগ, শাপাহার, সূর্য উজ্জ্বল।
এক সময় বঙ্গ রমনীরাই লাউয়ের বস, বাশেঁর চোঙ, ডুলি ইত্যাদিতে বীজ ধান প্রস্তুত করতো। ধান চাষের আদি রূপকার ছিল বাংলার নারী। বন্যার বাড়ন্ত পানিতে টিকে থাকে এবং দিনে দিনে বেড়ে যেতে সক্ষম কতিপয় ধানের নাম হলো- মাগুড়ি, বেতো, চাঁপাকলি, সিঙ্গারিয়া, আমলা কাচাঁ, কাঁন্দিশাও, খলিশানীবেত, কালীমন, ফুলকাঁচা, মুড়িয়া, বাঙাল দাঁড়িয়ে আবালী, কানশাহারা, কংশ, চাঁদা, দংশ, খোঁড়া, আগুর পাঠ, চেঙ্গা, আশ্বিনা, পাথর নুটি এবং ঠাকুরবীন।
চট্টগ্রামের ইতিহাসে উল্লিখিত বিভিন্ন প্রকারের ধানের নাম
যথা (১) চিন্নাল (২) বৈলাম (৩) গীরিং (৪) আমনহাইল (৫) নুনাহাইল (৬) বেতী (৭) সাদা বেতী (৮) বাদসা বেতী (৯) দুগ্ধা বেতী (১০) টুরগা বেতী (১১) বালাম (১২) খরইপেঁয়রা (১৩) চিকণকুশারী (১৪) ছোটবিনি (১৫) বড়বিনি (১৬) লালবিনি (১৭) তিলক কচকচি (১৮) ঘঞ্জালি (১৯) পার্বা (সাদা ও লাল) (২০) তুলসীমালা (২১) কাল্যাজিরা (২২) খণ্ডল্যাবের্তী (২৩) মধুমালতী (২৪) মতিহারি (২৫) দুধকমল (২৬) চিকণজিরা (২৭) কালবিনি (২৮) কামরাঙা (২৯) গোপালভোগ (৩০) হলম্বুরু (৩১) গচ্ছা (৩২) ছোট চিন্নাল (৩৩) তম্বুরু (৩৪) ধলপাটা বা দলপাতা (৩৫) মইদল (৩৬) কলাবাইল (৩৭) মইজাওরী (৩৮) গেলং (৩৯) রামবিঘা (৪০) আধ রেখা (৪১) হলাডুং (৪২) লাটারিয়া বেতী (৪৩) চাওক্কাল (৪৪) কাল গেলং কলাবাইল (৪৫) ছুড়ি (৪৬) দুলংফু (৪৭) ধাইয়া (৪৮) কামিন ধান (85) ঘিয়ক (৫০) নাগপেটী (৫১) চাবিচি (৫২) পাপাইব (৫৩) মরিয়া (৫৪) তুর্কি (৫৫) পচাউনি (৫৬) কগ্রমী (৫৭) যবধান (৫৮) পেলং (৫৯) জটা বেতী (৬০) নেনুয়া (৬১) ভুইচামরী (৬২) লেঙাচিকণ (৬৩) পঞ্চাল (৬৪) ডায়রবের্তী (৬৫) কুরাবিনি (৬৬) গোবিন্দভোগ (৬৭) ভারগোবিন্দ (৬৮) মনসাইল (৬৯) চাপলাইশ (৭০) মতীচূড়া (৭১) বেগুনবিচি (৭২) গোদাচালাশ (৭৩) আজিম বাউ (৭৪) বেগুনী বিনি (৭৫) বর্ষাল
(৭৬) পোটলিয়া বাজাল (৭৭) নাইজটা (৭৮) ঝিয়ট (৭৯) কানচিকণ (৮০) হলদিয়া (৮১) কৃষ্ণমণি (৮২) বালুসাক্কর (৮৩) রাহাইল চিকণ (৮৪) চাপা কলি (৮৫) পুহনী মগনী (৮৬) চৈননুরি (৮৭) ভানিকৰিনি (৮৮) রূপসাইল (৮৯) কালিগরজ (৯০) ভারচাপালাইশ (৯১) নারিকেল চৌমর (১২) চিক জামরী (৯৩) দুধসজাল (৯৪) বীজাসাইল (৯৫) আজিমবাদী (৯৬) কাঞ্চন আমান (১৭) জাফরাইল (৯৮) ঘিনজ (৯৯) পদ্মসাইল (১০০) পাঞ্চ (১০১) ভাদুরী (১০২) বাতিকোটা (১০৩) বাশীবাজ (১০৪) গুড়িসাইল (১০৫) চামাল (১০৬) সাক্করকোড়া (১০৭) ধনীগাফেঁ (১০৮) ময়ুরপাখা (১০৯) বাগেন্দাবেতী (১১০) মহিদসান (১১১) বেড়াডুল (১১২) সাধনছড়ি (১১৩) চিকণসাইল (১১৪) পাঠানল (১১৫) পদফাজল (১১৬) ভারোচিকণ (১১৭) মিচিকা (১১৮) মেরাজ (১১৯) দুইধ্যা (১২০) বাৎসাভোগ (১২১) পিরাপাইচ (১২২) চন্দ্রকোটা (১২৩) জুগীআমান (১২৪) কুমড়াশির (১২৫) ভোজনকূৰ্পণ (১২৬) বড়জুনী (১২৭) পিরপালাইছ (১২৮) কালাকোড়ী (১২৯) দিগজ (১৩০) পহরা (১৩১) সাদামাটা (১৩২) গোপামুণি (১৩৩) চিনাবাদাম (১৩৪) দাদখালী (১৩৫) বালামবেতী (১৩৬) লববেণী (১৩৭) লারদু (১৩৮) লালরেঙ্গি (১৩৯) পাওনী (১৪০) বাদেইয়া (১৪১) বানর নকবিনী (১৪২) ইন্দ্ৰসাইল (১৪৩) পরমান্ন (১৪৪) রাজভোগ (১৪৫) কটকতারা (১৪৬) ঘৃতকাঞ্চন (১৪৭) বড়বালাম (১৪৮) কেউরাবিনি (১৪৯) পাখিধান (১৫০) ভোলানাথ (১৫১) তিনবাজাল (১৫২) নাহিরজটা (১৫৩) আটিছাড়া (১৫৪) গুয়ামহরী ইত্যাদি।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা : নয়ন তনবিরুল বারি