ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ অব এগ্রিকালচারের কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী গবেষণা করে দেখেছেন, বাড়ির সামনে বাঁশগাছ থাকলে তা বাতাস থেকে যে পরিমাণে কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে, তার চেয়ে অনেক বেশি বাতাসে অক্সিজেন সরবরাহ করে। কেবল তাই নয় এই পর্যাপ্ত অক্সিজেন মানুষের ফুসফুসকে সুস্থ ও সচল রাখতে বাঁশগাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এমনই তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়। বিশেষজ্ঞদের মতে বাঁশের প্রয়োজনীয়তা এখানেই থেমে নেই। নিত্য ব্যবহারে বাঁশ অপরিহার্য। বাঁশ থেকে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্প গড়ে উঠেছে দেশ ও বিদেশে। এই শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বাঁশশিল্প উন্নয়ন সমিতি, হস্তশিল্প সমবায় সমিতি, লোক কারুশিল্প ইত্যাদি। এক কথায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ জেলায় বাঁশশিল্পের কদর যেমন আছে, সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক চিত্রটাও শক্তপোক্ত অনেকখানি। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ। তাই দিনের দিন বাঁশের কদর বাড়ছে সর্বত্র।
উল্লেখ্য, বাঁশ থেকে সুন্দর সুন্দর কারুকার্যময় নিত্য ব্যবহারযোগ্য পণ্য তৈরি হচ্ছে। বাজারে চাহিদা আছে। সেইসঙ্গে রপ্তানির সুযোগও আছে। তাই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উভয়েই বাঁশশিল্পীদের নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, দেশের মহারাষ্ট্র, বেঙ্গালুরু, আসামের গুয়াহাটি, নলবাড়ি, ওড়িশা ইত্যাদি রাজ্যে বাঁশ থেকে বিভিন্ন নিত্য ব্যবহারযোগ্য জিনিস তৈরি হচ্ছে, যুক্ত আছেন বহু মানুষ। একইভাবে পশ্চিমবঙ্গেও এই শিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কদর বাড়ছে এই শিল্পজাত সামগ্রীর। অর্থনৈতিক দিকটা সফল হচ্ছে। তাই রুটি-রোজগারের একটা অন্যতম মাধ্যম এই বাঁশ ভিত্তিক শিল্প।
তাছাড়া বাঁশ থেকে কুলো, ধুচুনি, চ্যাঙারি, ঝুড়ি, খই-চালুনি, ফুলের সাজি, ডাস্টবিন বাক্সেট, পেন হোল্ডার, ফিল্টার, চাঁচ, দরমা, বাঁশের মই, দরজা, বেড়া সবই হচ্ছে। প্রত্যেকটি পণ্য মানুষের নিত্য প্রয়োজনে লাগে। একটা সময় এ রাজ্যের অধিকাংশ জেলায় মানুষের ভিটায় বাঁশগাছ ছিল। এমনকী বহু জায়াগায় বাঁশবাগানও ছিল। তা কমে গিয়েছে। অথচ চাহিদা বাড়ছে। চাষ কমে যাওয়ায় বাঁশের দামও বেড়ে গিয়েছে। হুগলি, হাওড়া, বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ ইত্যাদি জেলাতে বিভিন্ন জাতের বাঁশ দেখা যায়। তবে প্রত্যেক জাতের বাঁশেই বিভিন্ন পণ্য তৈরি হয়। হস্তশিল্পের একটা অন্যতম উপাদান যে বাঁশ তা বলা যেতেই পারে। বর্তমানে এরাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা বাঁশ ভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলে জীবিকানির্বাহ করছেন। এজন্য সরকারি সাহায্য ও ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যুক্ত হয়েছে অসংখ্য মহিলা। বহু পরিবার আছেন, যাঁরা এই শিল্পের ওপরই নির্ভরশীল। বাড়িতে বসেই হাতের সুন্দর কারুকার্য দ্বারা বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করছেন। ওই সমস্ত সামগ্রী ব্যবসায়ীরা বাড়িতে এসেই কিনে নিচ্ছেন। নতুবা নিকটবর্তী হাট বাজারে গিয়ে বিক্রি করছেন।
বাঁশশিল্পের সঙ্গে যুক্ত বেচারাম আদক, মদন ধাড়া, সজল আদকরা জানালেন, এই শিল্পেরএকটা বড় বাজার আছে। তৈরি মালপত্রের চাহিদা বাড়ছে। উপযুক্ত দামও মিলছে। সরকার একটু চিন্তাভাবনা করলেই ছোট ছোট শিল্প গড়ে উঠতে পারে। তাতে কর্মসংস্থান হবে বহু যুবক যুবতীর। একটা কুলো তৈরি করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৫০ টাকায়। প্রতিটি ঝুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। একটা বাঁশ ১৫০ টাকায় কিনলে এর থেকে ৮০০ টাকার পণ্য বিক্রি করা যেতে পারে।
এদিকে বাঁশ শিল্পের কদর বাড়াতে বিভিন্ন জায়গায় সরকারি ও বেসরকারি ভাবে মেলাও হচ্ছে। আসামের নলবাড়িতে বাঁশশিল্প উন্নয়ণ সমিতি, ধুবড়িতে হস্তশিল্প সমবায় সমিতি, পশ্চিমবঙ্গে লোককারুশিল্প গড়ে উঠেছে। রাজ্যের শিল্পভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁশ ভিত্তিক শিল্পকে রাজ্য সরকার বহু জায়গায় গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের পথ খুলে দিতে চাইছে। যাতে মানুষের অর্থনৈতিক দিকটা মজবুত হয়।