কোভিডের কারণেই পিছিয়ে গেল দূষণমুক্ত পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন। একথা বলা হয়েছে গত ১৭ মে প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স কাউন্সিলের রিপোর্টে। ২০৫০ এর মধ্যে দূষণমুক্ত পৃথিবী গড়ার শপথ নিয়েছিলেন বিশ্বের বিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রনায়কেরা। কিন্তু পরিবেশের উন্নতি সাধনের কাজকে পিছিয়ে দিয়েছে কোভিড মোকাবিলার কাজ। তা এখন আর কোন রাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। বেকারি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সঙ্কট এই মুহূর্তে পৃথিবীর দেশগুলির কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানিয়েছেন কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে অতিমারির ঝুঁকি কমাতে হলে দুনিয়াজোড়া একটা স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন করাটা এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ। এর জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে পৃথিবীর বেশিরভাগ রাষ্ট্রই। পরিবেশ উন্নয়নের কাজ তাই চলে গেছে পিছনে। দেশগুলি তাই এক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে ভাবনাচিন্তা ও আর্থিক আদানপ্রদান বাড়ানোর কাজে বেশি ব্যস্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে কোভিড মোকাবিলার ব্যাপারে অগ্রসর দেশগুলির একটা বড় ভূমিকা আছে। টিকাকরণ, চিকিৎসা, গবেষণা ইত্যাদি কাজে আর্থিক সহযোগিতার জন্য অনুন্নত দেশগুলি তাদের ওপর নির্ভরশীল।
বিশেষজ্ঞদের মতে ২০২৭ পর্যন্ত মোটামুটিভাবে সারা পৃথিবী কোভিড সঙ্কট, উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি, ভ্যাকসিন ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। অর্থাৎ স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং চিকিৎসা বেশি গুরুত্ব পাবে। এই ভাবনায় পরিবেশের ততটা গুরুত্ব থাকবে না। কোভিড ১৯ আস্তে আস্তে পরিণত হবে প্যানডেমিক থেকে এনডেমিক ডিজিজে। গরিব দেশগুলির স্বাস্থ্যের ওপর বাড়বে চাপ। বিঘ্নিত হবে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা। বাড়বে মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্কট। দিনের পর দিন স্কুল বন্ধ থাকা, অনলাইন-অফলাইন বিভাজন, নারী-পুরুষ অসাম্য সবকিছুই আগের তুলনায় বাড়বে। একারণেই গুরুত্ব হারাবে দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ার উদ্যোগ।
কাউন্সিলের মতে এই ভাবনায় একটা গলদ রয়েছে। কারণ অতিমারির মোকাবিলা শুধু স্বাস্থ্যের সমস্যা নয়, তার সঙ্গে পরিবেশেরও একটা যোগাযোগ রয়েছে। সরকার পরিচালনা জনমুখী না করলে, ডিজিটাল ডিভাইড না কমালে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ার কাজকে গুরুত্ব না দিলে দুনিয়াজোড়া কোভিড মোকাবিলার কাজে সাফল্য আসবে না। কারণ স্বাস্থ্য ও পরিবেশের সমস্যা চরিত্রগতভাবেই আন্তর্জাতিক।