বৃহস্পতিবার | ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:২৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
কেন বারবার মণিপুরে আগুন জ্বলে আর রক্ত ঝড়ে : তপন মল্লিক চৌধুরী শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (শেষ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায় শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (ষষ্ঠ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (পঞ্চম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ? : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (চতুর্থ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার শতবর্ষে সঙ্গীতের ‘জাদুকর’ সলিল চৌধুরী : সন্দীপন বিশ্বাস সাজানো বাগান, প্রায় পঞ্চাশ : অমর মিত্র শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (তৃতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (একাদশ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার খাদ্যদ্রব্যের লাগামছাড়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের : তপন মল্লিক চৌধুরী মিয়ানমারের সীমান্ত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (দ্বিতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (দশম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বুদ্ধদেব গুহ-র ছোটগল্প ‘পহেলি পেয়ার’ ‘দক্ষিণী’ সংবর্ধনা জানাল সাইকেলদাদা ক্যানসারজয়ীকে : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (প্রথম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (নবম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘তোমার নাম’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (অষ্টম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘হাওয়া-বদল’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার প্রবোধিনী একাদশী ও হলদিয়ায় ইসকন মন্দির : রিঙ্কি সামন্ত সেনিয়া-মাইহার ঘরানার শুদ্ধতম প্রতিনিধি অন্নপূর্ণা খাঁ : আবদুশ শাকুর নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘শুভ লাভ’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

বাংলার বস্ত্রশিল্পের উত্থান ও পতন : নন্দিনী অধিকারী

নন্দিনী অধিকারী / ৩৫৭ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০২৪

ভাগিরথীর তীরে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের কাছে বালুচর জনপদ। মারাঠা বর্গীরা হৈ-হৈ রৈ-রৈ করে এসে বালুচরে লুঠপাট শুরু করল। শুধু কি ধনী জৈন ব্যবসায়ীদের ধনসম্পদের প্রতি লুটেরাদের নজর ছিল? সেখানে বাজার ছিল অতি সুন্দর রেশম শিল্পজাত নানারকমের বস্ত্রের। সোনা-রুপোর চেয়ে সেসব কম মূল্যবান নয়!

সেইসব রেশম বস্ত্রখন্ডে শিল্পীদের নিপুণ হাতে ফুটে উঠত নবাবদের ঘোড়াগাড়ি চালানো, বেগমদের হুক্কা খাওয়া এমনকি কোটপ্যান্ট হ্যাট পরা সাহেবরাও। খোদ নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ ঢাকা থেকে বয়ন শিল্পীদের আনিয়ে বালুচরের আশেপাশের গ্রামে তাদের প্রতিষ্ঠা করলেন। মুর্শিদাবাদের গ্রামগুলিতে তুঁত গাছের চাষ শুরু হল। তুঁতগাছের পাতা খেয়ে রেশম গুটিপোকারা বড় হত। রেশমশিল্প হয়ে উঠল মুর্শিদাবাদের অন্যতম অর্থনীতি জীবিকা। সেসময় ওখানকার প্রবাদ ছিল, তুঁতগাছ পুত্রসন্তানের চেয়েও অনেকবেশি ধনসম্পদ ও সুখশান্তির আকর। সুতোকাটুনি মেয়েদের নরম আঙুলের অনুভূতি দিয়েই সূক্ষ্ম সুতো বেরিয়ে আসত। কাজ করতে করতে তারা ছড়া কাটত, “চরকা আমার স্বামীপুত চরকা আমার নাতি, / চরকার দৌলতে আমার দুয়ারে বাঁধা হাতি”।

নবাব পরিবার আর শেঠেদের জন্যে তখন তৈরি হত ফুলকাটা শাল, গলাবন্ধ, বালুচরী শাড়ি। নবাব আর আমীর ওমরাহরা বালুচরের রেশম আর ঢাকার মসলিন পরে দরবার আলো করতেন। জানানা মহলের বেগমদের জন্যে মীনাবাজারে বিক্রি হত বালুচরের লাল, গোলাপি, ফিরোজী, পীলা, হরা রেশমী কাপড়।

১৭৫৭ খ্রীস্টাব্দে পলাশীর প্রান্তরে বাংলায় নবাবী যুগের পরিসমাপ্তি ঘটল। বালুচর তলিয়ে গেল ভাগিরথীর করাল গ্রাসে। বালুচরী শাড়ি বেঁচে রইল বিষ্ণুপুরের রেশম শিল্পীদের হাত ধরে।

প্রাক-পলাশী যুগে বাংলার তাঁতিদের ছিল স্বর্ণযুগ। ঢাকা, কাশিমবাজার, শান্তিপুর, হুগলিতে ছিল বাংলার তাঁতঘর। গোটা পরিবার এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকত।

ষোলোশো আশির দশকে ইউরোপ/ ইংল্যান্ডে বাংলার কাপড়ের বিরাট চাহিদা। ইউরোপের মানুষ তখন হঠাৎ ফ্যাশন দুরস্ত হয়ে পড়ে। এর আগে ইউরোপ বা ইংল্যান্ডে বাংলা তথা ভারতীয় শস্তা ও মিহি কাপড় পড়ার চল বিশেষ ছিল না এসব কাপড় গরিব ও খুব সাধারণ লোকেদের পরিধেয় ছিল। ভারতীয় সুতীর কাপড় তখন সেখানে শবদেহের শেষ শয্যার আচ্ছাদন!

ইউরোপ এবং ইংল্যান্ডে হঠাৎই বাংলা তথা ভারতীয় কাপড় ব্যবহার করা দারুন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়ালো। ঐতিহাসিকরা এটাকে বলেন ইন্ডিয়ান ক্রেজ বা ইন্ডিয়াননেস। শুধু অভিজাত লর্ড-লেডিরা নয় রাঁধুনী থেকে চাকর-বাকর সবাই ভারতীয় বা বাংলার কাপড় না পড়লে ইজ্জত থাকছে না বলে ভাবতে শুরু করে দিল। এটা নিয়ে সারাদেশে হইচই পড়ে গেল। রক্ষণশীলরা দেশটা রসাতলে গেল বলে চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন।

ক্যালিকো বা মিহি সুতোর কাপড় না পরলে কোন পুরুষ বা নারী নিজেদের সুবেশ মনে করতেন না। পুরুষদের ক্ষেত্রে ক্যালিকো শার্ট, গলা বন্ধ, জামার হাতা, পকেটের রুমাল তৈরি হল। মেয়েরা ব্যবহার করতেন ভারতীয় সুতীর রাত্রিবাস, মাথার টুপি, ওড়না, জামার হাতা, অ্যাপ্রন, গাউন, অন্তর্বাস। পুরুষ নারী সবারই সুতির মোজা তৈরি হত ভারতীয় মিহি সুতোতে।

সুতীর কাপড়ের পরেই ছিল দামি মসলিন কাপড়ের চাহিদা। বাংলা থেকে ইউরোপের বাজারে যেত ৫০-৫৫ রকমের বিভিন্ন কাপড়। মসলিন, মিহি সুতোর কাপড়, মোটা সুতোর কাপড়, সিল্কের কাপড়, সুতি সিল্ক মেশানো কাপড়ের বিশেষ চাহিদা ছিল ইউরোপের বাজারে।

এই স্বর্ণযুগের সমাপ্তি হল ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের ফলে। ইংল্যান্ডের বস্ত্রশিল্পে বাষ্পীয় শক্তিচালিত যন্ত্রপাতির ব্যবহার হল। তার ফলে সস্তায় কাপড়চোপড় উৎপাদিত হতে লাগলো। সেসব পণ্য বৃটিশ বণিকদের বিক্রির ব্যবস্থা করতেই হত। তাই অত্যাচার শুরু হল বাংলা তথা ভারতীয় বস্ত্রশিল্পীদের ওপর। তাঁতিরা নিজেদের পেশা ছাড়ল। বাংলার বস্ত্রশিল্পের অবলুপ্তি ঘটাতে দক্ষ ও নিপুণ তাঁতিদের আঙুল কেটে দেবার ঘটনাও শোনা যেত।

অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলার বস্ত্রশিল্প পুরোপুরি অবক্ষয়ের পথে। লোকের মুখে মুখে জনমানসে তখনকার তাঁতিদের অবস্থার কথা শোনা যায় ছড়ায়, লোকগানে, প্রবচনে। “তাঁতির বাড়ি ব্যাঙের বাসা, কোলা ব্যাঙের ছা”। এতেই ফুটে ওঠে একটি কল্পচিত্র। তাঁতির বাড়ি এখন একটি ধ্বংসস্তূপ। সেখানে ব্যাঙের বাসা। কোলা ব্যাঙের ছানারা অবাধে ঘুরে বেড়ায়।

তথ্য : পৃথিবীর তাঁতঘর বাংলার বস্ত্রশিল্প ও বাণিজ্য, সুশীল চৌধুরী, পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি : বিনয় ঘোষ


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “বাংলার বস্ত্রশিল্পের উত্থান ও পতন : নন্দিনী অধিকারী”

  1. মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য says:

    অল্প কথায় বাংলার বয়নশিল্পের অনেকটাই তুলে ধরলে। ভালো লাগলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন