দিনের দিন বাড়ছে আলুর দাম। চাষির মুখে হাসি। ব্যবসায়ীরাও আলু নিয়ে লাভবান। কিন্তু ক্রেতাদের কাছে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে আলুর দাম যে হারে বাড়ছে তাতে করে হিমঘরে এবারে যা আলু মজুত রয়েছে, তাতে আগামী দিনে বাজারে দাম লাগামছাড়া হতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রসঙ্গত, মাঠ থেকে ওঠা নতুন আলু এখন বাজারে এসেছে। কিন্তু তারপরও দাম চড়ছে আলুর। খুচরো বাজারে জ্যোতি আলু ২৫-৩০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চন্দ্রমুখী আলু বিকোচ্ছে ৫০টাকা প্রতি কেজির আশেপাশে। কিছুদিন আগেই তা ১৫-১৬টাকা কেজি ছিল। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত বছর এই সময় বাজারে খুচরো প্রতি কেজি ১৫টাকার আশেপাশেই ছিল। তবে এবার চাষিরা নতুন আলুর দাম অনেকটাই বেশি পাচ্ছেন বলে খুচরো বাজারে এর প্রভাব পড়ছে, দাবি প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির চেয়ারম্যান লালু মুখোপাধ্যায়ের।
আলু ওঠার মুখে চাষিরা মাঠে ১৪-১৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছেন। এখন সেই আলু ২৫-৩০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যে হারে বাড়ছে তাতে আগামী দিনে আরও বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। কারণ গত বছরের তুলনায় এ বছর আলুর ফলন কম। তাছাড়া ভিন রাজ্য থেকেও আমদানি কম হওয়ায় দাম বাড়ছে। রাজ্য সরকারের খাদ্য সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে জানিয়েছেন, বাজারে আলুর দাম বাড়ছে। পাইকারি বাজারে জ্যোতি আলু ২৫ টাকা কেজির আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। আলুর ফলন গত বছরের থেকে কম হয়েছে।এই আশঙ্কায় দাম বাড়ছে বলেও চাষিমহল মনে করছে। আরামবাগের কমল পাত্র, পুরশুড়ার কাশীনাথ চৌধুরী, চাঁপাডাঙার কমল মাইতির মতো বর্ধিষ্ণু চাষিরা জানাচ্ছেন, বেশি বৃষ্টির কারণে এবার প্রথম দিকে যে আলু বীজ বসানো হয়েছিল তাতে অনেকটাই নষ্ট হয়েছে। হুগলি, পূর্ব বর্ধমান সহ কয়েকটি জেলায় তার একটা বড় অংশ নষ্ট হয়ে যায়। ফের নতুন করে বীজ বসিয়ে চাষ হলেও উৎপাদন কম হয়েছে। গত বছর দক্ষিণবঙ্গে আলুর উৎপাদন কিছুটা কম হলেও রাজ্যে মোট আলু উৎপাদন হয়েছিল ৯০ লক্ষ টন। ২০২২-এ উৎপাদন ছিল ৮০ লক্ষ টন। এবারে উৎপাদন ৭০লক্ষ টন। বিগত বছর থেকে অনেকটাই কম।
কিন্তু উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরবঙ্গেও কম ফলনের জন্য প্রচুর আলু সেখান থেকে বাজারে কম আসে এবং হিমঘরে মজুত সম্ভবপর হয়নি। কেবলমাত্র দক্ষিণবঙ্গের আলু এবারে মজুত হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর রাজ্যের ৪৮০টি হিমঘরে আলু মজুত হয়েছিল ১৫ কোটি ৪৮ লক্ষের কিছু বেশি প্যাকেট। রাজ্যে খাওয়ার জন্য লাগে ৫৬ লক্ষ টন। রাজ্যের প্রায় সমস্ত হিমঘরগুলিতে এবার আলু মজুত সম্পূর্ণ হয়নি।
প্রসঙ্গত, সাধারণত মে মাস থেকে হিমঘরের আলু বাজারে আসতে শুরু করে। হিমঘরের ভাড়া ও অন্যান্য খরচ যুক্ত হওয়ায় তখন দাম বেড়ে যায়। এবার যেহেতু বেশি দামে কেনা আলু হিমঘরে মজুত হচ্ছে, তাই দামও চড়া থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকার যদি আলুর দামে রাশ টানতে না পারে, তাতে বর্ষায় ও পুজোর সময় আলু মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাবে।