গত ২৭ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের ১৪ টি নাটকের দল, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, রাস্তার দু’ধারে গাছের দানা ছড়াতে ছড়াতে গাছ বসাতে বসাতে পৌঁছে যায় বীরভূমের দ্বারন্দার থিয়েটার কটেজে। আশি জন নাট্যকর্মী একদিনের এই কর্মসূচি পালন করেন। কেউ এসেছিলেন বাইকে কেউ ট্রেনে কেউ বা ছোট লরিতে। কাদা দিয়ে তৈরি বীজের বোম ছুঁড়তে ছুঁড়তে, বীজ ছড়াতে ছড়াতে এবং গাছের চারা মানুষের হাতে দিতে দিতে তারা দ্বারন্দা পৌঁছে যান সন্ধ্যা নামার আগেই। সারাদিন মুষলধারায় বৃষ্টির কারণে থিয়েটার কটেজের জমিতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। মূল অনুষ্ঠান তাই ব্লুজম থিয়েটারের নিজস্ব গ্যালারিতে করা হয়। গান নাটক বই প্রকাশ ও আলোচনা চক্রে একদিনের এই কর্মসূচি শেষ হয় রাত দুটোয়।
অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রস্তুতি নাট্য সংস্থার কর্ণধার রাকেশ বনু জানান — আমরা গত দশ বছরের বেশি সময় এই কাজটা করে চলেছি। প্রস্তুতি নাট্য সংস্থার পূর্ব-অভিজ্ঞতা থেকেই এবারে বিভিন্ন দলকে যুক্ত করার ভাবনা আসে। আমাদের মনে হয় সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া বৃক্ষরোপণের কাজটি তার মর্যাদা হারায়। তাই গত দু-মাস ধরে প্রায় ৩০টি নাট্য দলের সাথে পর্যায়ক্রমে আলোচনার মাধ্যমে তাদের এই কর্মযজ্ঞে যুক্ত করে কাজটি শুরু করি।
আলোচনা করে গ্রুপটি সিদ্ধান্ত নেয়, বর্ষা নামলেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোরবেলা যাত্রা শুরু করব। আমাদের মিলনস্থল হবে শান্তিনিকেতনের কাছে দ্বারন্দার থিয়েটার কটেজ। ব্লুজম থিয়েটারের পার্থ গুপ্ত আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। তাদের দলের ছেলেমেয়েরা দায়িত্ব নেয় খাওয়া দাওয়ার। আজ মিলিত প্রচেষ্টায় কাজটি সকলের হয়ে উঠেছে। সারাদিন মুষলধারায় বৃষ্টি হয়েছে। গাছেরাও ভিজেছে আমরাও ভিজেছি। এ এক অন্যরকম অনুভুতি।
নানা সমস্যার কারণে সব দল হাজির হতে না পারলেও ১৩, ১৪ টি দল তাদের নিজে নিজে অঞ্চল থেকে ২৭ জুলাই ভোর যাত্রা শুরু করে। অংশ নেয় আবহমান হালিশহর, উত্তর ২৪ পরগনা; প্রস্তুতি নাট্য সংস্থা, ঝিকুবেরিয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা; সৃজক, নদীয়া, রানাঘাট; কুশিলব, নদীয়া, শিমুলারি; ব্রাত্য সারথি, বিরাটি; বঙ্গীয় নাট্যাঙ্গন, টালিগঞ্জ, কলকাতা; ফেয়ারলেস স্ট্রোক, কলকাতা; কোলাঘাট বিনোদিনী, পূর্ব মেদিনীপুর ইত্যাদি আরও বহু দল ও কাছের মানুষেরা। পুরো কার্যক্রম কোন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাহায্য ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। নাট্যদল, শুভানুধ্যায়ী, সাধারণ মানুষ, বন্ধু, নার্সারি মালিক, দোকানদাররাই দানা, গাছ ও অর্থ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।
গান, নাচ, বই প্রকাশ, শ্রুতি নাটক ও নাটকের মাধ্যমে ভাবী অরণ্যের স্বপ্ন নিয়ে-র প্রথম সম্মেলন সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানের আলোচনা চক্রে বক্তব্য রাখেন মধু প্রেমিক স্বর্ণেন্দু সরকার, নাট্যকার তীর্থঙ্কর চন্দ, নাট্য পরিচালক পার্থ গুপ্ত। অনেক রাত পর্যন্ত চলে সমগ্র অনুষ্ঠান। পুনরায় ভাবী অরণ্যের স্বপ্ন নিয়ে, বৃক্ষ রোপন ও গাছ বাঁচানোর শপথ গ্রহণ করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।