শুক্রবার | ১লা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:৪৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
মীনাক্ষী সেন-এর বড়োগল্প ‘একটি ভূতের বাড়ির আজগুবি গল্প’ অজ্ঞানতার আঁধার পেরিয়ে আলোর উৎসব : সন্দীপন বিশ্বাস রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (শেষ পর্ব) : কৌশিক মজুমদার ভূত চতুর্দশী — নেত্যকালীর মিরর ইমেজ ও প্রেতলোকের চোদ্দকাহন : প্রলয় চক্রবর্তী কালীপূজার আগের দিনটি চোদ্দবাতি জ্বালানো ও চোদ্দশাক খাওয়ার জন্যে নির্দিষ্ট : অসিত দাস পেঁয়াজের ঝাঁজে গৃহস্থের চোখে জল, সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়বে রাজ্য : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ধনং দেহী ধনতেরাস অ্যান্ড পুরুষালী গয়না : রিঙ্কি সামন্ত এ উৎসবের লগনে : নন্দিনী অধিকারী রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (দ্বিতীয় পর্ব) : কৌশিক মজুমদার কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (শেষ পর্ব) : শংকর ধনতেরাস এখন বাঙালিরও : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ডাক্তারদের আন্দোলন উপনির্বাচনে ইস্যু নয়, জয় নিয়ে শাসকদল নিশ্চিত : তপন মল্লিক চৌধুরী রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (প্রথম পর্ব) : কৌশিক মজুমদার কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (তৃতীয় পর্ব) : শংকর সেকালের প্রেতচর্চা — শিক্ষিত জনের কাছে থিওসফি : প্রলয় চক্রবর্তী মা কালী যখন মহালক্ষ্মী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (দ্বিতীয় পর্ব) : শংকর মহাকাব্যে ভেড়ার উল্লেখ : অসিত দাস কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (প্রথম পর্ব) : শংকর রমা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও একাদশী পালনের নিয়মাবলী : রিঙ্কি সামন্ত আশাপূর্ণা দেবী-র ছোটগল্প ‘চাবি’ একে দানা-য় রক্ষা নেই তারওপর ডিভিসি-র ৪২ হাজার কিউসেক জল : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (নবম পর্ব) : বিজয়া দেব চেতনার সমস্যা, সামাজিক অবকাঠামো এবং বলপ্রয়োগ : এরিক ফ্রম, অনুবাদ ফাতিন ইশরাক বারবার ভিলেন সেই বঙ্গোপসাগর : তপন মল্লিক চৌধুরী নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রাখাইন পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ‘দানা’ থেকে ভয় পাবেন না, সতর্ক থাকুন, মোকাবিলায় রাজ্য সরকার প্রস্তুত : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সই বা বন্ধুত্ব স্থাপনের উৎসব সয়লা : রিঙ্কি সামন্ত প্রথম পাঠ — “নিশিপালনের প্রহরে” নিয়ে, দুয়েকটি কথা : সোনালি চন্দ বৃহন্নলার অন্তরসত্তা : নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

মহাশিবরাত্রি ব্রতকথা : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৪০৯ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪

ওম তৎপুরুষায় বিদ্মহে, / মহাদেবায় ধীমহি / তন্নোরুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ।।

ভারতীয় দেবভাবনায় শিব দেবাদিদেব মহাদেব। মহাপ্রলয়ের দেবতা অপরদিকে তিনি কল্যাণসুন্দর। সত্যম শিবম সুন্দরম। তিনি হিন্দু বিবাহের দেবতা। আজও কুমারী মেয়েরা মনের মত বরের কামনায় শিবপূজা করে। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশীতে পালিত মহাশিবরাত্রি। ঈশান সংহিতা অনুযায়ী এইদিন জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে শিব প্রকট হন। মহাশিবরাত্রি তিথিতেই শিব-শক্তির মিলন হয়। তাই শিব ভক্তরা মহাশিবরাত্রি তিথিকে শিবের বিবাহোৎসব হিসেবেও পালন করেন।

বিশ্বাস করা হয় যে মহাশিবরাত্রির রাতে, শিব তাণ্ডবের মহাজাগতিক নৃত্য পরিবেশন করেছিলেন, যা মহাবিশ্বের ছন্দময় সৃষ্টি, সংরক্ষণ এবং ধ্বংসের প্রতীক। তাই মহাশিবরাত্রি তিথি নানান দিক দিয়ে মাহাত্ম্যপূর্ণ। এই তিথিতে শিবভক্তরা নিয়মনীতি মেনে শিবের পুজো করেন।

এবছর চতুর্দশী তিথি শুরু হবে ৮ মার্চ রাত ৯টা ৫৭ মিনিটে এবং তিথির অবসান হবে ৯ মার্চ সন্ধে ৬টা ১৭ মিনিটে। ভগবান শিবকে তুষ্ট করতে সারাদিন উপবাস রেখে সিদ্ধি, ধুতরো, আকন্দ, বেলপাতা এবং ‘পঞ্চামৃত’ নিবেদন করেন ভক্তরা। পঞ্চামৃত হল — দুধ, দই, মধু, চিনি এবং ঘি। এইদিন শিব তাণ্ডব স্তোত্র ও শিব মহিমাস্তোত্র পাঠ করা হয়।

ব্রত নিয়মের পালন : শিবপুরান মতে শিবরাত্রির আগের দিন হবিষ্যান্ন (অর্থ হবিষ্য, ঘৃতযুক্ত আতপান্ন) বা নিরামিষ আহার করে শয়ন করতে হবে খড় বা কম্বলে। ব্রতের দিন উপোস থাকতে হবে সারাদিন। বাড়িতে শিবলিঙ্গ থাকলে উত্তম কিন্তু না থাকলে গঙ্গা বা শুদ্ধ মাটি দিয়ে তৈরি করতে হবে চারটি শিব। চার প্রহরে এই চারটি শিবলিঙ্গকে পুজো করতে হবে। প্রথম প্রহরে শিবলিঙ্গ কে স্নান করাতে হবে দুধ দিয়ে দ্বিতীয় প্রহরে দই দিয়ে তৃতীয় প্রহরে ঘি দিয়ে এবং শেষ প্রহরে মধু দিয়ে। এই ব্রতে সারারাত জাগার পর পরেরদিন ব্রত কথা শুনে ব্রাহ্মণভোজন করিয়ে দক্ষিণা দিয়ে পারন করতে হয়।

ব্রতকথা : পুরাকালে বারাণসীতে জরা নামে এক ব্যাধ ছিল। দিবারাত্রি সে কেবলই জীব হত্যা করত। একদিন অনেক পশুপাখি মেরে বাড়ি ফেরার পথে অনেক রাত হয়ে গেল। অন্ধকারে আর পথ দেখা যায় না, উপায় না পেয়ে সেই ব্যাধ তখন আশ্রয় নিল একটি গাছের তলায়। কিন্তু রাত বাড়ার সাথে গভীর জঙ্গলে হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের ডাক শুনে এসে উঠে পড়লো একটি গাছের ডালে। সঙ্গে থাকা মাংসের ঝোলাটি গাছের ডালে ঝুলিয়ে ব্যাধ বসে রইল। যে গাছটিতে বসেছিল ব্যাধ সেটি ছিল একটি বেল গাছ। গাছের নিচেই ছিল একটি শিবলিঙ্গ। গাছের ডালে বসে নড়েচড়ে উঠতেই একটি শিশির ভেজা বেলপাতা খসে পড়ল শিবলিঙ্গের মাথায়। সেদিন ছিল শিব চতুর্দশী ব্যাধ সকাল থেকে উপবাসী ছিল। তাই শিবের মাথায় বেলপাতা পড়তেই অত্যন্ত প্রীত ও প্রসন্ন হলেন ভগবান রুদ্র নারায়ণ। এসব কিছুই জানতো না ব্যাধ।

সকালে বাড়িতে ফিরে গেলো ব্যাধ। ঘরেতে ফিরে ব্যাধের স্ত্রী ব্যাধকে খেতে দিল। এমন সময় ব্যাধের বাড়িতে এক অতিথি এল। ব্যাধ  তার খাবারটা না খেয়ে খেতে দিল সেই অতিথিকে। ফলে উপবাসের পরের দিন পারনের ফললাভও হলো ব্যাধের।

সময়ের সঙ্গে ব্যাধ অসুস্থ হলো এবং কালের নিয়মে মারাও গেল। যমদূতেরা এলো তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এমন সময় শিবদূতেরাও এসে হাজির হলো সেখানে। যুদ্ধ বেধে গেল দু-দলের মধ্যে। যমদূতেরা হেরে গেল এবং ব্যাধকে কৈলাসে নিয়ে গেল শিবদূতেরা।

কিন্তু তাদের পিছনে ধাওয়া করলো যমদূতেরা। শিবের পার্শ্বদ নন্দী তখন পাহাড়া দিচ্ছিল কৈলাসের দ্বারে। নন্দী যমদূতেদের কাছে গিয়ে বলল ব্যাধের জীবনে কোন একদিন ঘটে যাওয়া শিবরাত্রির ঘটনার কথা। আনপুর্বিক সমস্ত ঘটনার কথা শুনে যমরাজকে তা জানাবে বলে চলে গেল যমদূতেরা। সমস্ত কথা শুনে যমরাজ বললেন ‘যে শিব বা বিষ্ণুভক্ত শিবচতুর্দশী ব্রত করেন এবং মোক্ষভূমি বারাণসীতে মারা যান, তার ওপর কোনো অধিকার থাকে না আমার।’ শিবচতুর্দশী ব্রতের ফললাভ হলো ব্যাধের।

এরপর থেকেই এই পবিত্র ব্রতের কথা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে বলল চারিদিকে।

ভারতবরেণ্য সকল মহাপুরুষগন বলেন, শিবরাত্রির দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস করে পরে শিবলিঙ্গে জল বেলপাতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী ফল দিয়ে পুজো করে প্রসাদ গ্রহণ করলে শিবরাত্রি ব্রতসিদ্ধ হয়। যার বিশেষ সামর্থ্য আছে সে সারারাত উপবাস থেকে ভজন, নামসংকীর্তন করে রাত জাগতে পারে। যদি কেউ রাত জাগতে না পারে তাতেও কোন দোষ হয় না। এই ব্রত নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই করতে পারেন এতে অশেষ কল্যাণ হয় কারণ সামান্যতেই তুষ্ট হন মহাদেব।

সারা ভারতবর্ষ জুড়ে অসংখ্য শিব মন্দির আছে। অনেক শিব মন্দিরে দুপুরবেলায় শিবের ভোগ দেওয়া হয় পায়েস। বেনারসে বাবা বিশ্বনাথের মন্দিরে দুপুরে অন্নভোগ সবজি রুটি পুরি পায়েস ভোগ দেওয়া হয়। বলা হয় শিবঠাকুরের সিদ্ধি ও পঞ্চামৃতের নৈবেদ্য অত্যন্ত প্রিয়। এ ছাড়াও তিলের মিষ্টি, চিরৌঞ্জি, মিছরী, চিনি দেওয়া দুধ ও দই, মতিচুরের লাড্ডু শিবের পছন্দের ভোগ।

অসমুদ্র হিমাচলে কোন শিবমন্দিরের বিগ্রহে শিবের দাড়িগোঁফ নেই তবে কামাখ্যা মন্দিরে দেওয়ালে এমন কিছু মূর্তি চোখে পড়ে। শিবের দাড়ি গোফের উল্লেখ পাওয়া যায় শ্রীমৎ কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ-এর বৃহৎ তন্ত্রসার গ্রন্থে।

মহাশিবরাত্রি ব্রত আমরা পালন করি কারন তা মানবকে শিব (কল্যাণকারী) হওয়ার প্রেরণা দেয়, সমস্ত সৃষ্টিকে শিবত্বের বাণী শোনায়। জগতের কল্যাণ কামনায় এই ব্রত যদি সতত নিষ্ঠা সহকারে পালন করা হয় তাহলে এক রাত্রিতে মানব শিবত্ব লাভ করতে পারে।

‘শিবো ভূত্বা শিবং যজেৎ’ — শিব হয়েই শিবের উপাসনা করা উচিত। শিব হলেন জ্ঞানের দেবতা, তাঁর মস্তক থেকে অবিরত জ্ঞানগঙ্গা বয়ে চলেছে। জ্ঞানের অধিপতি শিবের উপাসনা করায় ইচ্ছুক মানবেরও জ্ঞানপিপাসু হওয়া দরকার।

কবি পুষ্পদন্ড শিবমহিমা স্তোত্রতে লিখেছেন — ভগবান বিষ্ণু একবার সহস্র কমল দিয়ে শিবের পূজা করছিলেন। এমন সময় একটি কমল কম হওয়ায় তিনি তার নেত্র কমল দ্বারা তার অভাব পূর্ণ করেছিলেন। এটি একটি রূপক। এখানে শিব হলেন জ্ঞানের দেবতা ও বিষ্ণু প্রেমের। অতএব শিবের সাথে বিষ্ণুর দৃষ্টির মিলন হওয়া চাই অর্থাৎ জ্ঞানীগণের উচিত প্রেমের দৃষ্টিতে সৃষ্টিকে দেখা, প্রেম ছাড়া জীবন নিরানন্দময়। জ্ঞান বিশ্লেষণে আগ্রহী হয় কিন্তু প্রেম সমন্বয়কে মেনে নেয়। বিশ্লেষণ বস্তুকে অনেক ক্ষেত্রে ছিন্নভিন্ন করে দেখে কিন্তু সমন্বয় বস্তুর সৌন্দর্যকে দেখে। জ্ঞান প্রেমের সমন্বয়ই বস্তুকে বস্তু জেনেও তার সৌন্দর্যের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।

যাঁর মস্তক থেকে জ্ঞানের গঙ্গা বয়ে চলেছে, চরিত্রের উত্তুঙ্গ ধবল শিখরে যিনি বসে আছেন, যার সাজসজ্জা সাধাসিধে, বিভূতিকে যিনি বৈভব মনে করেন, সজ্জনের সংরক্ষণ ও দুর্জনের বিনাশ যাঁর জীবনে ব্রত, কামের বিপরীত প্রেম যার আরাধ্যদেব, কর্মযোগী শিশু চন্দ্রকে যিনি মস্তকে ধারণ করেছেন, জগৎকে রক্ষার জন্য যিনি হাসতে হাসতে বিষ পান করেছেন, কল্যান ও জ্ঞানকে যিনি সাকার রূপ দিয়েছেন, এমন ভগবান শিবকে আমাদের অনন্ত প্রণাম।


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “মহাশিবরাত্রি ব্রতকথা : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. N Bhowmik says:

    হরে হরে মহাদেব 💐🙏🙏🙏

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন