দুরন্তঘূর্ণিসম যাপনের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হয় সবাইকে। সময়ের অভাবে কাটছাঁট হচ্ছে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত ঘুম। জীবনযাপনের এই বেপরোয়া মনোভাব ঝুলিতে ভরে দিচ্ছে অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল, গ্যাস্ট্রিক আলসারের মতো জটিল অসুখ।
অধিকাংশ সময় আমরা দিনের শুরুর খাবার অর্থাৎ প্রাতঃরাশ বা ব্রেকফাস্ট খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে ফেলি। পুষ্টিবিদরা বারংবার বলেন, কোন পরিস্থিতিতেই ব্রেকফাস্ট বা জলখাবার বাদ দেওয়া অনুচিত। আর যদি ভাবছেন কেন? উত্তরটি নামের মধ্যেই রয়েছে— আপনি সারারাত যে উপবাস করেছেন তা ভেঙে ফেলুন— ব্রেক দ্য ফাস্ট।
আমাদের শরীর একটি বায়োলজিক্যাল ঘড়ির মতো কাজ করে। যাবতীয় খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন, ঘুম, শরীরে হরমোন নিঃসরণ এই বায়োলজিক্যাল ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ করে। দিনের শুরুতে কর্টিসোল (cortisol) হরমোন থাকে তুঙ্গে। তাই জলখাবার বেশি খেলে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে কম। আমরা কোন সময়ে কোন খাবার খাচ্ছি তার ওপরে বডি ওয়েটের বৃদ্ধি বা ঘাটতি নির্ভর করে। হঠাৎ করে যাদের ওজন বেড়ে গেছে, তারা ব্রেকফাস্ট এড়ানোর বদলে এটি যুক্ত করুন ডায়েট চার্টে।
‘ব্রেকফাস্ট হোক রাজার মতো’ এই কথাটি কমবেশি সকলের জানা। রাজার মতো শব্দটি শুনে যদি মনে করেন ৫৬-রকম পদ সহযোগে জলখাবার খাওয়া, তা কিন্তু মোটেও নয়। পুষ্টিকর-সুষম আহারে পেট ভরাতে হবে। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলেন, ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার পর্যন্ত আহারের পরিমাণ হবে উল্টানো পিরামিডের মতন। সকালের জলখাবার হবে অনেকটা বেশি— রাজার মতো, তারপর পরিমাণ কমতে কমতে ডিনার হবে দরিদ্রের মতো।
এখন আপনার মনে হতেই পারে, এত জ্ঞানের কথা না বলে সুষম আহারের একটি লিস্টি করে দিলেই হয়। আসলে লিস্টি বেশ বড়ো, সবটা বলা সম্ভব নয় বলেই এত ভনিতা। ডায়েটের বেশিরভাগ এনার্জি (ক্যালোরি) আসে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার থেকে। যেমন— ভাত, রুটি, দালিয়া, সুজি, চিঁড়ে, ওটস, খই, মুড়ি ইত্যাদি থেকে। এই ধরনের খাবারগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানাস্বাদের পদ বানিয়ে খেতে পারেন।
হোল হুইট ফ্লাওয়ার অর্থাৎ আটা, ওটস, ডালিয়া—এগুলিতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণের ডায়েটারি ফাইবার। যা রক্তে ধীর গতিতে শর্করা শোষণে সহায়তা করে এবং অনেক সময় পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
রাখুন মাঝারি সাইজের একবাটি শাকসবজি বা স্যালাড। সঙ্গে থাকুক যে কোন একটি মরশুমি ফল। সবুজ শাকসব্জিতে আছে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে তৈরি হওয়া ক্ষতিকর পদার্থকে (ফ্রি র্যাডিকেল) শরীর থেকে বের করতে সাহায্য করে।
ডিম, দুধ, ছানা, পনিরের মধ্যে রয়েছে উচ্চমানের প্রোটিন, জরুরী পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন ও মিনারেল। ওজন কমানোর জন্য এগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রেখে খেতে পারলেই হয়ে যেতে পারে মিরাকেল।
ছুটির দিনে বাঙালির প্রিয় জলখাবার লুচি-তরকারি। লুচি বিনে রবিবার যেন মণি হারা ফনি। গরম গরম ফুলকো লুচির সঙ্গে সামান্য কালো জিরে কাঁচা লঙ্কা দিয়ে তৈরি ডুমো ডুমো আলুর মাখা ঝোল বা নারকেল কুচি, কাজু-কিশমিশ সহযোগে থকথকে ছোলার ডাল হাত চেটে, পাত চেটে খায় বাঙালি। তা খাওয়া যেতে পারে মাঝেমধ্যে।
খাওয়া যায় হাতে তৈরি আটার রুটি সঙ্গে ডিমসেদ্ধ, ডাল আর স্যালাড। সবরকম সব্জী দিয়ে ঘরে বানানো চাউমিন, দালিয়া, সব্জী দিয়ে উপমা, ইডলি সম্বর ডাল ও উপাদেয় যথেষ্ট। স্বাদ বদলাতে স্যুপ, স্যালাড, ওমলেটও খাওয়া যেতে পারে। এমনকি দুধ-মুড়ি-কলাও ভালো অপশন। ব্যায়াম করার পর স্প্রাউটের স্যালাড বা চাট নেওয়া যায়। যেকোন প্যাকেটজাত খাবারে অতিরিক্ত নুন বা চিনি থাকে তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। পেটপুরে ব্রেকফাস্টের পর মিড মর্নিংয়ে যেকোনো একটি-দুটি ফল অথবা ফ্রুট-স্যালাড দিলে ছোট থেকে বড়ো সবাই খুশি।
অতএব, ব্রেকফাস্ট স্কিপ করার কথাটা ভুলে যান। রুটিনমাফিক শরীরচর্চা এবং সঠিক সময়ে সঠিক ও পর্যাপ্ত আহার হলো স্বাস্থ্যকর জীবনের চাবিকাঠি।
Information retrieved from Nutritionist (Ishani Bandyopadhyay) and Health Reports
Bhalo hoyeche
Jol chole elo …