শুক্রবার | ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:১৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (তৃতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় নানা পরিচয়ে গৌরী আইয়ুব : গোলাম মুরশিদ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় কেন বারবার মণিপুরে আগুন জ্বলে আর রক্ত ঝড়ে : তপন মল্লিক চৌধুরী শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (শেষ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায় শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (ষষ্ঠ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (পঞ্চম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ? : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (চতুর্থ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার শতবর্ষে সঙ্গীতের ‘জাদুকর’ সলিল চৌধুরী : সন্দীপন বিশ্বাস সাজানো বাগান, প্রায় পঞ্চাশ : অমর মিত্র শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (তৃতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (একাদশ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার খাদ্যদ্রব্যের লাগামছাড়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের : তপন মল্লিক চৌধুরী মিয়ানমারের সীমান্ত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (দ্বিতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (দশম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বুদ্ধদেব গুহ-র ছোটগল্প ‘পহেলি পেয়ার’ ‘দক্ষিণী’ সংবর্ধনা জানাল সাইকেলদাদা ক্যানসারজয়ীকে : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (প্রথম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (নবম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘তোমার নাম’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (অষ্টম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘হাওয়া-বদল’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার প্রবোধিনী একাদশী ও হলদিয়ায় ইসকন মন্দির : রিঙ্কি সামন্ত সেনিয়া-মাইহার ঘরানার শুদ্ধতম প্রতিনিধি অন্নপূর্ণা খাঁ : আবদুশ শাকুর
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েকে দুর্গা রূপে আরাধনা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়

মোহন গঙ্গোপাধ্যায় / ১৪৪ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

প্রায় পাঁচশো বছরের গল্পগাথা। কুড়িয়ে পাওয়া ছোট্ট মেয়েকে জমিদার ঘরে তোলেন। পরে দেবী দুর্গা রূপে সেই মেয়ে পূজিত হন। পাঁচশো বছরে একবারও বন্ধ হয়নি সেই পুজো। করোনাও হার মেনেছে এই ঘরের মেয়ে দুর্গার কাছে। যা আজও চলে আসছে।

এক সময় দুর্গাপুজো বলতে পারিবারিক পুজোগুলিকেই বোঝাত। গোটা গ্রামে একটি কিংবা দুটি বাড়িতে দুর্গাপুজো হত। বনেদি পরিবারের ঠাকুরদালানে বসত এক চালার মাটির প্রতিমা। সেখানে চিরাচরিত প্রথা মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করা হত দেবী দশভূজার। আর তা দেখার জন্য জড়ো হতেন পরিবারের আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে গ্রামের লোকজন। সময় বদলেছে। বারোয়ারি দুর্গা পুজোগুলির চোখধাঁধানো চাকচিক্যের কাছে এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছে ঘরোয়া পুজোর রং। তবু এই পারিবারিক পুজোগুলি যে একেবারেই শেষ হয়ে গিয়েছে এমন বলা যায় না। আরামবাগ, তারকেশ্বর এবং ধনিয়াখালির এমন অনেক বনেদি পরিবার এখনও রয়েছে, যাঁরা পুরানো ঐতিহ্য মেনেই বছরের পর বছর নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করে আসছেন। এই প্রাচীন পারিবারিক পুজোগুলির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানান অজানা ইতিহাস, রয়েছে বহু কিংবদন্তী এবং গল্পগাথা। যা বংশপরম্পরায় বয়ে নিয়ে চলেছেন এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম।

ছোট্ট মেয়েকে দুর্গা রূপে পুজো আজ ইতিহাসের স্মৃতি। কেবলই রোমন্থন। সত্য-মিথ্যা যাচাই পরের কথা। কোনও প্রমাণ নেই, কিন্তু বংশপরম্পরায় শুনে আসা ইতিহাসের কথাই আজও ধরে বসে আছেন আরামবাগের গড়বাড়ির রায় পরিবার। আরামবাগ লাগোয়া গড়বাড়ির রায় বাড়ির পুজো মানেই নিয়ম-নিষ্ঠা ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো। পাঁচশো বছরে ঘটে গিয়েছে অনেক সুখদুঃখের ঘটনা। রায়পরিবারের সেই জৌলুসে অনেকবার উত্থান-পতন ঘটেছে কিন্তু একবারও বন্ধ হয়নি পুজো। ইতিহাসের দিকে মুখ ফেরালে দেখা যাবে সুদীর্ঘ কাহিনি। সেই কাহিনি রোমাঞ্চ, মধুর আবার ভক্তি ভাবাবেগের। সব একাকার হয়ে গিয়েছে আজকের দিনে।

প্রসঙ্গত পুজো হয়, পুজো যায়, পুজো আসে। এক মহাপুজোর দিন ফুরোলে আনন্দময়ী বিসর্জিতা হলে শুরু হয় দিন গোনা। অপেক্ষার পালা। বাঙালির জীবনে দুর্গাপুজো একটা আলাদা মাত্রা আনে। তিনি আনন্দদায়িনী, আনন্দময়ী। একটা সময় ছিল। তখন ইংরেজ শাসন। দেশ জুড়ে ছোট, মাঝারি, বড় মাপের জমিদারতন্ত্র। জমিদার কালচারের একটা অপরিহার্য অঙ্গ ছিল দুর্গাপুজো। তা নিজেদের খরচাতেই হোক বা প্রজাদের কাছ থেকে ‘মাঙ্গন’ চেয়েই হোক। পুজো হত। ঝাড়বাতি থেকে আলো ঠিকরোতো, চিকের আড়ালে থাকতেন অন্তঃপুরিকারা। প্রজারা পাত পাড়তো। এসব এখন ইতিহাস হয়ে ইতিহাসের পাতায়। জমিদার নেই, জমিদারিও নেই। এখনও বহু সাবেক জমিদারদের বাড়িতে পুজোর ধারাবাহিকতা বজায় আছে। নেই সেই ঠাটবাট, তবু পুজো আছে পুজোতেই। সেখানে আধুনিকতার ঢেউ গিয়ে পৌঁছায়নি। লক্ষকে অতিক্রম করেনি উপলক্ষ। নিয়ম মেনে পুজো হয়। আচার মেনে। পরম নিষ্ঠায়। যা আজও দেখা যায় গড়বাড়ির রায় পরিবারে।

জমিদার বাড়ির ছোট্ট মেয়ে দুর্গাকে ঘিরে চারদিনের উৎসবে মাতেন এলাকার অসংখ্য মানুষ। আজও ভুলতে পারেন না সেই অতীতের কথা। ভক্তি ও ভাবাবেগ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ছোট্ট মেয়ে দুর্গাকে নিয়ে এই গল্পটার বয়স তা প্রায় পাঁচশো ছুই ছুই! আরামবাগের জন্ম ইতিহাস, সে অবশ্য আরো পুরোনো। এখানে প্রাচীন আটবিক রাজ্যে রাজত্ব করত শূর বংশ। এই বংশের রাজা লক্ষী শূর, পাল বংশের রাজা রাম পালকে কৈবর্ত বিদ্রোহের সময় সাহায্য করেছিলেন। সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘রামচরিতে’ সে কথার উল্লেখ আছে। তখন এই জায়গার নাম ছিল অপারমন্দার। আবার সেন বংশের প্রতিষ্ঠার পর তখন প্রায় ১০৯৬ খ্রিস্টাব্দ, এই অপারমন্দারের রাজা রণ শূর সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেনকে শুধু সমর্থনই করেননি, নিজ কন্যা বিলাস দেবীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ দিয়ে তাঁকে জামাতা রূপে বরণ করেছিলেন। এই সময় তিনি কন্যা ও জামাতার জন্য একটি সুন্দর নগরী নির্মাণ করে নাম দিয়েছিলেন আরম্যনগরী। পরবর্তীকালে সেই নগরীর নামই হয় আরামবাগ।

যাই হোক, এক সময় রাজপুতানা থেকে রণজিত সিংহ নামে একজন এসে বসতি স্থাপন করলেন গড়বাড়ি নামে এক জায়গায়। এখানে তখন ঘন বন। সেই সব বন-জঙ্গল পরিস্কার করে জমিদারির পত্তন হল। কয়েকশো গ্রাম নিয়ে স্থাপিত হল তাঁর রাজত্ব। সবাই তাঁকে রাজা বলেই জানত। সেই রণজিৎ সিংহ রায়রায়াণ উপাধি পেয়ে হয়ে গেলেন রণজিৎ রায়। আরামবাগ মহকুমা জুড়ে নানা কীর্তি কাহিনিতে আজও কিংবদন্তী হয়ে আছেন রণজিৎ রায়। এখানকার প্রাচীন মানুষজন তাঁর নাম শুনলে এখনও কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করে। জনশ্রুতি আছে, তিনি একজন ধার্মিক ও সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন। কিন্তু রাজার মনে একটাই দুঃখ তাঁর কোনো সন্তানাদি ছিল না। তাঁর সাধনায় তুষ্ট হয়ে স্বয়ং দেবী দুর্গা একটি শিশুকন্যার ছদ্মবেশে তাঁর ঘরে এসেছিলেন। ঘন জঙ্গলের মধ্যে সেই শিশুকে কুড়িয়ে পেয়ে মানুষ করেছিলেন রণজিৎ রায়। দেবী তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেছিলেন, — যতদিন না তুই নিজে চলে যেতে বলবি তোর ঘরে তোর মেয়ে হয়ে থাকব। চলে যেতে বললে আর কখনও ফিরে আসব না।’ বেশ কিছু দিন সুখে স্বাচ্ছন্দে কাটছিল। একদিন রাজা তাঁর বৈষয়িক কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন। মেয়েটি নানাভাবে তাঁকে বিরক্ত করছিল। রাজা তাঁর মনোসংযোগে বিঘ্ন হওয়ায় খুব বিরক্ত হচ্ছিলেন। মেয়েটি অভিমান করে ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, ‘আমার কথা শুনবে না তো, তাহলে আমি চলে যাব। বার বার এই কথা বলায় কোনো কিছু না ভেবেই রাজা রেগেমেগে বললেন, ‘যা তোর যেখানে খুশি।’ তার পর অনেক্ষণ সে মেয়ের দেখা নাই। এক শাঁখারি এসে রাজাকে বলল, “তোমার মেয়ে আমার কাছে শাঁখা পরেছে তার দাম দাও। মেয়ে বলেছে কুলুঙ্গিতে পয়সা রাখা আছে।’ হঠাৎ রাজা সম্বিৎ ফিরে পেলেন, ‘কোথায় আমার মেয়ে! আমাকে তার কাছে নিয়ে চলো। আমি যে না বুঝেই বিরক্ত হয়ে তাকে চলে যেতে বলেছি।’ রাজারই খোঁড়া একটি বিশাল দিঘির কাছে শাঁখারি তাঁকে নিয়ে গেল। মেয়েকে কোথাও দেখতে না পেয়ে বুক চাপড়ে কাঁদতে লাগল রাজা, ‘কোথায় গেলি মা, ফিরে আয়, একবার ফিরে আয়ে। দিঘির মাঝখানে নতুন শাঁখা পরা দশটি হাত শুধু দেখা গেল কিছু সময়ের জন্য। তার পর সব মিলিয়ে গেল। এই অলৌকীক ঘটনা ঘটেছিল চৈত্র মাসে আম বারুনির দিনে। সেই দিনটি মনে রেখে এখনও সেখানে সাত দিনের বিরাট মেলা বসে। দূর দূরান্ত থেকে মানুষের ভীড় জমে এই রণজিৎ রায়ের দিঘির মেলাকে কেন্দ্র করে। সেই সময়ে আর একবার দুর্গাপুজোরও আয়োজন করা হয়। সেই মেয়েকে ঘিরে রায় পরিবার প্রতি বছর শারদীয় দুর্গোৎসবে মেতে ওঠেন। অকৃপণ ভক্তি ও ভালোবাসায় মুখর হয়ে ওঠে রায় পরিবার। যা আজও তা চলে আসছে।

গড়বাড়িতে এখন সেই রাজাও নেই আর সেই রাজত্বও নেই। তবু ভাটা পড়েনি শারদীয়া দুর্গোৎসবের। উৎসাহ কমেনি সাধারণ মানুষেরও। বর্তমানে এই বংশের ভবানী রায়, অভয়পদ রায়, নীলরতন রায়, গোপাল রায় এবং পলাশ রায়রা জানালেন, পুরানো রীতি মেনেই নৈবেদ্যতে থাকবে ১৬-১৮ মণ আতপ চাল। ছাগ বলি থেকে শুরু করে কিছুই বাদ যাবে না। এই পরিবারের ২৯টি শরিক সবাই মিলেই পুজো করেন। এ ছাড়া বংশ পরম্পরায় এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছেন নাপিত বামুন থেকে কামার কুমোর পর্যন্ত বহু মানুষজন। সাবেকি প্রথা ও নিয়ম নিষ্ঠা মেনে পুজোর যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা হবে। যদিও সানাই, নহবত, কিংবা হ্যাজাক বা ঝাড়বাতির আলোর জায়গা দখল করে নেবে আধুনিক সাজ সরঞ্জাম তবু তার মধ্য থেকেই যেন কোনো এক প্রাগৈতিহাসিক আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে থাকবে এই ঐতিহ্যের পুজাপ্রাঙ্গণ। আর থাকবে মানুষের চিরায়ত বিশ্বাস।

পেজফোর-এর শারদোৎসব বিশেষ সংখ্যা ২০২৩-এ প্রকাশিত


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন