হুগলির খানাকুল ও আরামবাগে প্রায় ফি-বছর বন্যা। প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষয়ক্ষতি অপরিসীম। দুর্গতির অন্ত থাকে না মানুষের। এর পিছনে বাঁধ-কাটা ইঁদুরের যে হাত থাকে প্রশাসন তা বুঝতে পেরে আগেভাগেই সর্তক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রসঙ্গত, প্রতি বছর নদী বাঁধ ভাঙছে। বন্যায় ভাসছে গ্রামের পর গ্রাম। এ চিত্র হুগলির খানাকুল, আরামবাগ ও পুরশুড়ায়। নদীবাঁধ ভাঙনের কারণ খুঁজতে গিয়ে হতবাক সেচ দপ্তর। ভাঙনের পিছনে ইঁদুরের একটা মুখ্য ভূমিকা আছে। তা জানার পর সেচ দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। তড়িঘরি টেন্ডার ডেকে ইঁদুর তাড়াবার বন্দোবস্ত করেছে। সেই সঙ্গে ইঁদুরের গর্ত কীভাবে বোজানো যায় এবং তা থেকে বাঁধকে রক্ষা করার উপায় বের করেছেন। এজন্য নদীবাঁধগুলোতে কাজও শুরু হয়েছে। এখন রীতিমতো মুষিককুলকে নিয়ে মাথাব্যাথা প্রশাসনের। বন্যার পিছনে এদেরও যে একটা ভূমিকা এতদিন কাজ করছিল তা জানার পরই মুষিককুলকে তাড়াতে তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, হুগলির খানাকুল, আরামবাগ ও পুরশুড়া এলাকা দামোদর, মুন্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, রূপনারায়ণ, কানামুন্ডেশ্বরী নদীবাহিত হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষার সময় বন্যায় প্লাবিত হয়। ডিভিসি জল ছাড়লেই নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাওয়ায় জলধারণ ক্ষমতা থাকে না। নদীপাড় বা নদীবাঁধগুলোর এমন করুণ অবস্থা, যে সহজেই ভেঙে গিয়ে অজস্র প্রাম প্লাবিত হয়। নদীবাঁধগুলো বারবার সংস্কার করা সত্ত্বেও কেন ভেঙে যাচ্ছে তার কারণ খুঁজতে গিয়ে ইঁদুরের যে একটা মুখ্য ভূমিকা আছে, তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। সেচদপ্তরের কর্মীরা এই সমীক্ষা করার পর ইঁদুরের কীর্তিকলাপ নিয়ে রিপোর্ট জমা দেবার পরই দপ্তরের অফিসাররা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে স্থির হয় ইঁদুর তাড়াতে না পারলে নদীবাঁধ বারবার সহজে ভাঙবে। বন্যার হাত থেকে রেহাই পাবেন না এলাকার মানুষ। তাই দ্রুত টেন্ডার ডেকে নদীপাড়ে ইঁদুরের গর্ত বোজানোর ও সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।
নদীগুলোর দু’পাড়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা পলি মিশ্রিত হওয়ায় আলু, ধান, বাদাম, তিল, পাট ইত্যাদি ফসল ভালো হয়। সেইসঙ্গে বেগুন, পটল ইত্যাদি সবজিও প্রভূত পরিমাণে উৎপন্ন হয়। আর এই সমস্ত ফসল যা মূষিককুলের অত্যন্ত প্রিয় খাবার। ফলে নদীপাড়ে এই সমস্ত মূষিকদের বাসস্থান গড়ে উঠেছে। বেলে মাটি হওয়ায় জল দাঁড়ায় না। ফলে সহজে গর্ত খুঁড়ে বাসা তৈরি করছে। নদীবাঁধগুলোতে অসংখ্য জায়গায় গর্ত হওয়ায় বন্যার সময় সহজেই জল ঢুকে ভাঙন সৃষ্টি করছে। ভাসছে গ্রাম। গ্রামের খেত। ভাঙছে ঘরবাড়ি। নিরাশ্রয় হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। এর পিছনে ইঁদুরের যে একটা ভূমিকা আছে তা হাতে হাতে প্রমাণ পেয়েছে সেচ দপ্তর।
আরামবাগ সেচ দফতর সূত্রে জানা গেছে এই মহকুমায় মোট ৬৪টি নদী ও খাল রয়েছে। অধিকাংশ জায়গায় নদীবাঁধে ইঁদুরের উৎপাত। শস্যের সন্ধান পাওয়ায় ইঁদুরের পৌষমাস। খাচ্ছে আর নদীপাড়েই বাসস্থান করে থাকছে। এর সংখ্যাটাও বাড়ছে। গতবার বন্যার পরই সরেজমিনে দেখে চক্ষুচড়কগাছ। ইঁদুরের গর্তে নদীবাঁধগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। নদীতে জল বাড়লেই তা সহজে ভেঙে যাচ্ছে। তাই ঠিক হয়েছে যেভাবেই হোক ইঁদুর তাড়াতে হবে। এজন্য ২৫টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। টেন্ডার ডেকে ইঁদুর তাড়ানোর ব্যবস্থা। সেইসঙ্গে নদীপাড়ের ইঁদুরগর্ত বোজানো ও সংস্কার হচ্ছে।
চাঁপাডাঙা সেচদপ্তরের জনৈক আধিকারিক বলেন, দামোদর বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় মূষিককুলের নদীবাঁধে দাপট। অসংখ্য জায়গায় বাঁধে গর্ত। সেই জায়গা দিয়ে সহজে জল ঢুকে গ্রাম ভাসাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে ফসল, ঘরবাড়ি। ৩০টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। টেন্ডার ডাকা হয়েছে মেরামতির জন্য। দামোদর, মুন্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, রূপনারায়ণ নদের বাঁধগুলো সেচদপ্তর এখন থেকে কড়া নজর রেখে চলেছে। যাতে চলতি বর্ষায় নদীবাঁধগুলো অক্ষত থাকে। চাষিদের সজাগ থাকার কথা বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে চাষিদের সচেতন করা হয়েছে। নদীপাড়ে চাষের জমিতে জল দিতে যেখানে-সেখানে নালা না কাটা হয়। কোনওভাবেই যাতে আর বাঁধ দুর্বল না হয় কঠোরভাবে নজর রাখছে সেচদপ্তর।