পান্ডুয়া বইমেলার শেষ দিন ১২ ফেব্রুয়ারি এক অভিনব অনুষ্ঠানের মুখোমুখি হল হুগলি জেলা। এই প্রথম কোনো বইমেলায় নির্বাচিত কিছু বই নিয়ে নিলামের অনুষ্ঠান করা হলো। এই অভিনব ভাবনা বলাগর কলেজের অধ্যাপক ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মস্তিষ্ক প্রসূত। তাঁরই সংগ্রহ করা নির্বাচিত বই নিয়ে বইমেলায় নিলাম করা হয়। এই নিলাম অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয় দেবাশিস শেঠ সম্পাদিত বই, রামদাস আদকের ধর্ম মঙ্গল কাব্য “অনাদিমঙ্গল”। বইটি বিক্রি হয়েছে ২৬৭০ টাকায়। এছাড়া পদ্মাবতী বইটি নিলাম হয় ৭০০ টাকায়, কেদার রচনাবলী ৭০০ টাকায়। এই নিলামে কুড়িটি বই বিক্রি হয়েছে মোট সাত হাজার টাকায়। জানা গেছে, এই বিক্রয়লব্ধ টাকা বইমেলা কমিটি তুলে দেবেন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এম.এ পাঠরত এক ছাত্রীর হাতে।
অধ্যাপক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “আমি নিজে বই সংগ্রহে ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি। মানুষকে মূল্যবান করে বই। বই থেকে কোনদিন যেমন দূরে থাকতে পারি না, তেমনি চাই সবাই আসুক বইয়ের কাছে। তাই সুশান্তবাবুর দেওয়া প্রস্তাবকে আমি তৎক্ষণাৎ গ্রহণ করি।”
এই পান্ডুয়া বইমেলা কমিটির প্রাণপুরুষ সাংবাদিক সুশান্ত সরকারের বক্তব্য, “পার্থ বাবু যেভাবে নিজের সংগ্রহের বই মেলায় এনে একটা অন্যরকম মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠিত করলেন তাতে পান্ডুয়া বইমেলায় তাঁর প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবে।” নিলামে অংশগ্রহণকারী অধ্যক্ষ ডঃ গৌতম বিট বলেন,”পার্থবাবুর জ্ঞান বিতরণ, শিক্ষার জন্য প্রান্তীয় মানুষদের নিয়ে কাজ, আজ হুগলি জেলাকে পথ দেখাচ্ছে। বই যে মহার্ঘ্য সম্পদ তাকেও যে নিলামে এনে মানুষকে বই সংগ্রহে আকর্ষিত করা যায় তা পান্ডুয়া বইমেলা করে দেখালো।”
এই ঘটনার কথা শুনে আবেগাপ্লুত সাহিত্যিক দেবাশিস শেঠ এর বক্তব্য, “সাহিত্যে নিবেদিত প্রাণ পার্থ বাবু, সাংবাদিক সুশান্ত বাবু এবং এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এরকম অভিনব একটি ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য। রামদাস আদক সপ্তদশ শতকের একজন বলিষ্ঠ অথচ ভাগ্যবিড়ম্বিত কবি। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বহকাল তাঁকে অন্যের লেখা চুরি করার মিথ্যা অপবাদ বহন করতে হয়েছে। আমার এই সম্পাদনা তাঁকে সেই অপবাদ থেকে মুক্তি দিয়েছে এবং তাঁকে একজন মৌলিক এবং বলিষ্ঠ কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আজ এই ঘটনায় তাঁর সেই অমর সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হলো, এ অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।”
এই দিনের বই নিলাম অনুষ্ঠানটি বইমেলায় উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র উন্মাদনা তৈরি করেছে। সেই দিক থেকে বাংলায় প্রথম বই নিলামের অনুষ্ঠানটি করে বাংলার বইমেলার ইতিহাসে একটি নতুন পালক যোগ করল ১৫ তম বর্ষের পান্ডুয়া বইমেলা।
অভিনব খবর, পড়ে আনন্দিত উৎফুল্ল হলাম
দারুন লেখাটা হয়েছে। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই সুশান্ত সরকার