অঙ্গুরী আমার এক প্রতিবেশীর প্রৌঢ় বয়সী চাকরের নবপরিণীতা তরুণী স্ত্রী। সে তার দ্বিতীয় স্ত্রী। পাঞ্জাবের কোন পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ে করলে তাকে দুহাজু বলা হয়।
এই প্রৌঢ় লোকটির দ্বিতীয় বিয়ে হলেও অঙ্গুরীর কিন্তু ওটাই প্রথম বিয়ে। এক বছর হলো অঙ্গুরীর বিয়ে হয়েছে, তাই তাকে নববধূই বলতে হয়।
পাঁচ বছর আগে পার্বতীপ্রসাদের প্রথমা স্ত্রী মারা যাবার পর সে তার শেষকৃত্য যথারীতি ধর্মীয় বিধানে সুসম্পন্ন করে। অঙ্গুরীর বাবা সেই শেষকৃত্যে পার্বতীপ্রসাদের কাঁধ থেকে গামছার ধড়া নামিয়ে শুকিয়ে দিতে এগিয়ে আসে।
তাদের বিশ্বাস, স্বামীর কাঁধের কাপড় যাকে তারা ধড়া বলে তা মৃত স্ত্রীর অশ্রুবিন্দুতে ভেজা থাকে।
যদি কোন অবিবাহিতা কন্যার পিতা শোকার্ত স্বামীটির কাঁধ থেকে ধড়া নামের গামছা নামিয়ে শুকোতে দেয়, তার অর্থ সে তাকে তার স্ত্রীর পরিবর্তে নিজের মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দিচ্ছে। কোন পুরুষের স্ত্রী মারা গেলে তার পরিবর্তে এভাবেই পুরুষটির কপালে আরেকজন তরুণীকে স্ত্রী হিসাবে পাবার সৌভাগ্য ঘটে পাঞ্জাবের গ্রাম্যদেশের রীতি অনুযায়ী।
পার্বতীপ্রসাদও এভাবেই তাদের সম্প্রদায়ের গ্রাম্য রীতি অনুয়ায়ী অঙ্গুরীকে বিয়ে করার অধিকার লাভ করে। এদিকে অঙ্গুরী কিশোরী মাত্র, তার উপর তার মা আর্থ্রাইটিসে শয্যাশায়ী। তাই অঙ্গুরীর বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দেরি হলো। বিয়ের পর পার্বতীপ্রসাদ তার মালিককে বলে, নতুন বউকে হয় তার মহলে নিয়ে আসতে হবে, নতুবা তাকে গ্রামে ফিরে গিয়ে তার সাথে ঘরসংসার করতে হবে। মালিক দু’জন মানুষকে খাবার দিতে রাজি না হওয়ায় পার্বতীপ্রসাদ চাকরবাকরদের কোয়ার্টারের একপাশের একটা ঘরে অঙ্গুরীকে নিয়ে বসবাস করার প্রস্তাব রাখে মালিকের কাছে। অঙ্গুরী নিজেই নিজেদের রান্নাবান্না করে খাবে, এই কথায় মালিক রাজি হওয়ায় পার্বতীপ্রসাদ অঙ্গুরীকে শহরে নিয়ে আসে।
প্রথম কিছুদিন অঙ্গুরী তার মুখ ঘোমটার আড়ালে ঢেকে চলাচল করেছিলো। এমনকি সে মেয়েদের সামনেও ঘোমটা খোলে না। কিন্তু কয়েকদিন পর সে ঘোমটা খুলে পায়ের রূপোর মল বাজিয়ে চলাচল করতে লাগলো। অঙ্গুরী কয়েদিনের মধ্যেই সবার পরিচিত হয়ে উঠলো। তার পায়ের মলের রুনুঝুনু আওয়াজের সাথে সাথে তার মুখের খিলখিল হাসি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো। সে দিনের অধিকাংশ সময় কোয়ার্টারে থাকলেও তার হাসির শব্দের সাথে পায়ের মলের আওয়াজও শোনা যেতে লাগলো।
আমি একদিন অঙ্গুরীর পায়ের মলের রুনুঝুনু আওয়াজ শুনতে পেয়ে তাকে প্রশ্ন করলাম —“কী পরেছো, অঙ্গুরী?”
“পায়ে মল পরেছি।” সে উত্তরে বলল।
তারপর আমি তাকে একে একে প্রশ্ন করলে সে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলো।
“গোড়ালিতে…?”
“রূপোর মল।”
“বাজুতে ওটা কী?”
“বাজুবন্ধ।”
“কপালে ওটা কী?”
“টিকলি।”
“আজ কোমরে কিছু পরোনি কেন?”
“ওহ! আমার কোমরবন্ধ বেশ ভারী, তবুও কাল ওটা অবশ্যই পারবো। আজ আমি শাড়িরই উপর জামা পরিনি। ওটার চেইন কেটে গেছে। কাল বাজারে নিয়ে যেতে হবে। আমার একটা নোলকও আছে কিন্তু! খুব বড় তাই শাশুড়ির কাছে রেখে এসেছি।”
তারপর থেকে অঙ্গুরী তার রূপোর গয়নাগুলো একেকটা একেকদিন পরে বেশ হাসিখুশি হয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলো।
ঋতু বদলের পর অঙ্গুরীকে আরো সাজগোজ করে বেড়াতে দেখা গেল। ওদের কোয়ার্টারের পাশেই আমাদের বাসা। সে মাঝেমধ্যেই আমাদের বাসার ডানদিকে বড় নিম গাছটার নিচে এসে বসে। নিম গাছের পাশেই একটা পুরনো কুয়ো। কলোনির কেউই কুয়োর জল ব্যবহার করে না।
“কী পড়ছো বিবিজী?”
সেদিন আমি গাছটার নিচে বসে বই পড়ছিলাম। অঙ্গুরী এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো।
“তুমি বই পড়বে?” আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম।
“আমি পড়তে জানি না।”
“তুমি লেখাপড়া শেখনি?”
“না।”
“কেন?”
“মেয়েদের লেখাপড়া করা পাপ না!”
“পুরুষদের পাপ হয় না?”
“না তাদের পাপ হয় না।”
“এ সব কথা তোমাকে কে বলেছে?”
“কে আর বলবে! আমি নিজেই জানি।”
“তবে আমি কি পড়াশোনা করে পাপ করেছি?”
“না, শহরের মেয়েদের পাপ হয় না।”
আমি তার কথা শুনে হেসে উঠলাম। আমার সাথে সাথে সেও হেসে উঠলো। আমি বুঝতে পারলাম, সে যা শুনেছে সেটাকেই সত্যি বলে ধরে নিয়েছে। আমি তাকে আর কিছু বললাম না। সে তার নিজের বিশ্বাস নিয়েই থাকুক।
আমি প্রায়ই তার হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে তাকে দেখতাম। তার রঙ কালো হলেও শরীরের গড়ন নিটোল। এক কথায়, তার অঙ্গসৌষ্ঠব অপূর্ব। প্রায়ই তার পুরুষ্ট স্তনযুগল আর তার গোলগাল বাহুদ্বয়ের উপর আমার চোখ পড়তো। মোটকথা, চেহারাসুরত অপূর্ব। আমি তার স্বামী পার্বতীপ্রসাদকেও দেখেছি। সে খর্বাকৃতি। তার চেহারায় ঠ্যাঙাড়ে ধরনের ভাব। গায়ের চামড়া কোঁচকানো। তাদের চেহারার পাথর্ক্য দেখে আমার হাসি পেতো। আমি তাকে তাদের গ্রাম, তার বাবা মা, ভাইবোন আর সবুজ মাঠের কথা জিজ্ঞাসা করতাম। একদিন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘অঙ্গুরী, তোমাদের গ্রামের মেয়েদের বিয়েশাদী কিভাবে হয়?”
“মেয়ের বয়স পাঁচে পড়তেই একজন পুরুষের পদযুগল পাবার জন্য পুজো করতে শুরু করে।”
“কেমন করে পদযুগলকে পুজো করতে হয়?”
“ওহ! এই কথা! কন্যা কিন্তু নিজে কোন পুরুষের পদযুগোল বন্দনা করে না। কন্যার বাবাকে সেটা করতে হয়। মেয়ের বাবা এক সাজি ফুল আর কিছু টাকাকড়ি পুরুষটির পায়ের কাছে রাখে।”
“তার অর্থ, মেয়েকে যার হাতে তুলে দেবে মেয়ের বাবা তাকেই পুজো করে।”
“এমন কি বিয়ের আগে কনে নিজেও তার হবু বরের দেখা পায় না।”
“বিয়ের কনে বিয়ের আগে হবু বরের দেখা পায় না?”
“না।”
“কোনও কনেই না?”
“না। তবে” — অঙ্গুরী ইতস্তত করে এক সময় মুখ খোলে। “যে মেয়েরা ভালোবাসা করে বিয়েয় বসে তারাই শুধুমাত্র বিয়ের আগে হবু বরকে দেখতে পায়।”
“তোমাদের গ্রামের মেয়েরা কি প্রেমে পড়ে।?”
“অল্পস্বল্প মেয়েই প্রেমে পড়ে।”
“প্রেম করে বিয়ে করা কি পাপ?”
“অবশ্যই পাপ, জঘন্য পাপ।” অঙ্গুরী সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয়।
“কেন পাপ?”
“তবে শোন বিবিজী,” অঙ্গুরী গম্ভীর মুখে বলে, “ছেলেরা প্রেমের ফাঁদে ফেলার জন্য মেয়েদেরকে কিছু একটা খাওয়ায়।”
“কী খাওয়ায়?”
“মেয়েটিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলতে ছেলেটি মিষ্টি কিংবা পানের মধ্যে বুনোফুল পুরে খাইয়ে দেয়। তারপর থেকেই মেয়েটি ছেলেটির প্রেমে পড়ে যায়। সেই মেয়ে জগত সংসারের অন্য কোন ছেলেকে দু’চোখে দেখতে পারে না।’’
“সত্যি কথা!”
“হ্যাঁ, আমি জানি। আমি নিজের চোখে এটা ঘটতে দেখেছি।”
“তুমি কী দেখেছো?”
“আমার একজন সই আছে, সে আমার চেয়ে একটু লম্বা।”
“তারপর!”
“তারপর সেই মেয়েটি একটি ছেলেকে মন দিলো, আর একদিন সে মেযেটিকে নিয়ে শহরে পালিয়ে গেলো।”
“তুমি কীভাবে জানলে যে তোমার সইকে বনোফুল খাওয়ানো হয়েছিলো?”
“ছেলেটি বুনোফুল বরফির ভেতরে পুরে আমার সইকে খাইয়েছিলো। তা না হলে সে বাবা মা আর বাড়িঘর ছেড়ে যায়! ছেলেটি হরহামেশাই আমার সইয়ের জন্য অনেক কিছুই নিয়ে আসতো। একবার সে একটা শাড়ি, কাঁচের চুড়ি, পুঁতির মালা আরো কত কী নিয়ে এলো!”
“ওইগুলো তো ছিল উপহার সামগ্রী। তুমি কেমন করে বুঝলে সে তোমার সইকে বুনোফুল খাইয়েছিল?”
“বুনোফুলো না খাওয়ালে সে কি ছেলেটির প্রেমে পড়তো?”
“কাউকে ভাল লাগার জন্যেও তো কেউ কারো প্রেমে পড়তে পারে।”
“না না, তা হতে পারে না। শুধু শুধু কেউ করো প্রেমে পড়ে না।”
“তুমি কি সেই বুনোফুল দেখেছো?”
“না, আমি কখনো দেখি নি। ওটা অনেক দূরদেশ থেকে আনতে হয়। মিঠাই কিংবা পানের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়। আমার ছোটকালেই মা আমাকে সাবধান করে দিয়েছিলো এই বলে যে আমি যেন কারো কাছ থেকে কোন কিছু না খাই।”
“তুমি কোন বয়স্ক লোকের কাছ থেকে মিঠাই না খেয়ে ভালোই করেছিলে। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না তোমার সই কেন বুনোফুল খেয়েছিলো?”
“ওটা খাবার জন্য সইকে পাপের ফল ভোগ করতে হবে!” অঙ্গুরীর বিষন্ন মুখ দেখে বোঝা গেলো সে তার সই এর জন্য মর্মাহত।
অঙ্গুরী বললো, “ছেলেটির জন্য আমার সইয়ের মাথা বিগড়ে গিয়েছিলো। বেচারী! সই চুল আঁচড়াতো না। মাঝরাতে সে জেগে উঠে গান গাইতে আরম্ভ করতো।”
“সে কী গান গাইতো?”
“তা আমি জানি না। যারাই বুনোফুলের স্বাদ পায় তারাই সারাক্ষণ গান গায়, আর মাঝেমাঝে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নাকাটি করে।”
আমি তাকে আর কোন কিছু জিজ্ঞেস করলাম না।
অল্পদিনের মধ্যেই অঙ্গুরীর একটা পরিবর্তন লক্ষ করা গেল। একদিন সে নীরবে নিম গাছের নিচে আমার পাশে বসলো। আগে বিশকুড়ি গজ দূর থেকে তার পায়ের মলের রুনুঝুনু আওয়াজ পাওয়া যেত, যা থেকে বোঝা যেত অঙ্গুরী আসছে। কিন্তু আজ সে এলো নীরবে। বই থেকে মুখ তুলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “ব্যাপার কী, অঙ্গুরী?”
“আমাকে নাম লেখা শিখিয়ে দাও।”
“তুমি কি কাউকে চিঠি লিখবে?” অঙ্গুরী আমার প্রশ্নের জবাব দিলো না।
তার চোখদুটো উদাস। দুপুরবেলা আমি অঙ্গুরীকে নিম গাচের নিচে রেখে বাসায় গেলাম। সন্ধ্যার দিকে আমি বাসার ভিতর থেকে গাছের কাছে এলাম। অঙ্গুরী তখনো সেখানে বসে আছে দেখে আমি হতবাক! তাকে মনমরা দেখাচ্ছিলো। তার কন্ঠ থেকে বিষন্ন সুরের গান ভেসে এলো। আমি তার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। “আমার অঙ্গে পাথর জড়ানো, আমি এক অভাগী! কেউ কি আমার যৌবনে আসবে না?” — অঙ্গুরী আমার পায়ের শব্দ শুনতে পেয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে গান বন্ধ করলো।
“তুমি তো সুন্দর গান করো, অঙ্গুরী!” আমি বুঝতে পারলাম এতক্ষণ সে কাঁদছিলো। সে চোখের পানি মুছে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো, “আমি গান জানি না।”
“না, তুমি গান জান। তোমার সই গান গাইতো?”
“আমি সইয়ের কাছ থেকে একটা গান শিখেছিলাম।”
“তাহলে আমাকে সেই গানটা গেয়ে শোনাও।” আমার অনুরোধে অঙ্গুরী গান ধরলো।
“একটা বছরের চার মাস হিমেল, চার মাস গরম, আর চার মাস বর্ষা! আমার জীবনে সারাটা বছরই ঠান্ডায় জমা আর বৃষ্টিভেজা।” —
অঙ্গুরী তার গানে ঋতুচক্রের বর্ণনা দিয়ে বারমাসী গান শোনালো। তারপর গান থামিয়ে আমার মুখের দিকে শূন্যদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। আমি তার কাঁধের উপর হাত রেখে জিজ্ঞেস করতে চাইলাম “বাছা! তুমি কি বুনোফুলের স্বাদ পেয়েছ?” কিন্তু যে প্রশ্নটা আমার মুখ থেকে বেরলো, সেটা হল, “তুমি কি খাবার খেয়েছো?”
“খাবার?” অঙ্গুরী অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো। আমি অনুভব করলাম আমার হাতের নিচে তার শরীরটা কাঁপছে। সে যে গানটা গাইলো তারই অনুরণন হচ্ছে তার শরীরে।
বর্ষাদিনের মেঘের ঘনঘটা, গ্রীষ্মের ঝোড়ো হাওয়া আর শীতের হাড়কাঁপুনি যেন তার শরীরকে কাঁপিয়ে তুলছে।
আমি জানি পার্বতীপ্রসাদ মনিবের বাড়িতে যখন খাওয়াদাওয়া করে তখন অঙ্গুরী নিজের খাবার নিজেই রান্না করে খায়। আমি আবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “আজ কি কিছু রান্না করেছো?”
“না আমি এখনো রান্না করিনি।”
“সকালে কী রান্না করেছিলে? চা খেয়েছিলে?”
“চা! আজ দুধ নেই।”
“দুধ কিনতে পার নি?”
“না, আজ দুধ কিনতে পারি নি।”
“তুমি রোজ চা খাও না?”
“খাই।”
“তবে আজ কেন চা খাও নি?”
“রামতারা রোজ দুধ নিয়ে আসে—।”
“রামতারা আমাদের কলোনির চৌকিদার। সবাই মিলেঝিলে তাকে বেতন দেওয়া হয়। সে সারারাত কলোনির রাস্তাগুলোতে হাঁটহাঁটি করে বড়ই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আমার মনে পড়লো, অঙ্গুরী এখানে আসার আগে রামতারা এক কাপ চায়ের জন্য এবাড়ি ওবাড়িতে ধরণা দিত। তারপর সে তার খাটিয়াটা কুয়োর পাশে রেখে তাতে সারাদিন ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিত। অঙ্গুরী আসার পর থেকে সে গোয়ালার কাছ থেকে দুধ কিনতে শুরু করে। অঙ্গুরী তার চুলায় একটা চায়ের পাত্র বসায়, আর চুলাটা ঘিরে বসে সে নিজে, পার্বতীপ্রসাদ আর রামতারা। তারা চায়ে চুমুক দিয়ে আরাম করে। আমার আরো মনে পড়লো, রামতারা তিনদিন এখানে নেই, সে ছুটিতে নিজের গ্রামের বাড়ি গেছে।”
আমার হাসি পেল। আমি অঙ্গুরীকে জিজ্ঞেস করলাম, “অঙ্গুরী! তুমি তিন দিন চা খাও না, তাই তো?” সে জবাব না দিয়ে শুধুমাত্র মাথা নাড়ালো। “আজ তুমি কিছু খেয়েছো?”
এবারও তার মুখে কোন কথা নেই। মনে হলো সে কিছু বলতে চায় কিন্তু তা সে বলতে পারছে না। আমি রামতারার চেহারা মনে করার চেষ্টা করলাম। সে সুদর্শন, টানাটানা দুটো চোখ। এক ধরনের মোহনীয় দেহ সৌষ্ঠব। সে কথা বলে মিষ্টি করে।
“অঙ্গুরী?”
“হ্যাঁ।”
“তুমি গ্রামে গিয়ে বুনোফুল খেয়ে এসেছো, তাই না?”
আমার প্রশ্ন শুনে তার গাল আর ঠোঁট বেয়ে চোখের পানি গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। এবার সে মুখ খুললো।
“ঈশ্বরের দোহাই! আমি তার হাত থেকে মিঠাই কিংবা পান খাইনি। শুধুমাত্র চা ছাড়া… বুনোফুল কি চায়ের মধ্যে থাকতে পারে?”
অঙ্গুরী আর কিছু বলতে পারলো না। তার কন্ঠ কান্নার শব্দের মাঝে তলিয়ে গেল।
মূল: অমৃতা প্রীতম , অনুবাদ: মনোজিৎকুমার দাস
পেজফোর-এর শারদোৎসব বিশেষ সংখ্যা ২০২৩-এ প্রকাশিত।