সোফিয়া প্রেসবার্গ (Sophia Pressburg) (১৭৯৭-১৮৫৪) ও লায়ন ফিলিপস (Lion Philips) ( ১৭৯৪-১৮৬৬) // কার্ল মার্কসের মাসি ও মেসো
হেনরিয়েটা প্রেসবার্গের ছোট বোন সোফিয়া প্রেসবার্গের সঙ্গে বিয়ে হয় ইহুদি বংশোদ্ভুত লায়ন ফিলিপসের। লায়ন ফিলিপসের বাবা বেনজামিন ফিলিপস, মা লিয়া হার্টগ। বেনজামিনরা নেদারল্যাণ্ডের ভেনেডাল থেকে জাল্টবোমেলে চলে আসেন। তাঁর সাত ছেলে আর দুই মেয়ে। অন্য ছেলে-মেয়ে ব্যবসার সূত্রে অন্য জায়গায় চলে যান। লায়ন ফিলিপস ছিলেন মা-বাবার সঙ্গে।
১৮১৫ সালে লায়ন ‘দ্য ইউনিকর্ন’ নামে একটি তামাক কোম্পানি চালু করেন। দীর্ঘদিন এই কোম্পানির অস্তিত্ব ছিল। লায়ন অন্য ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। এই সব ব্যবসা থেকে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন।
মাসি ও মেসো কার্ল মার্কসকে খুব ভালোবাসতেন। কার্লও নিজমিজেনে তাঁদের বাড়িতে প্রায়ই যেতেন। মেসোর সঙ্গে কার্লের পত্রালাপ হত। কার্লকে লেখা লায়নের, লায়নকে লেখা কার্লের সাতটি পত্র পাওয়া গেছে। সেসব পত্রে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রসঙ্গ যেমন আছে (আমেরিকার গৃহযুদ্ধ, বিদ্যুতের আবিষ্কার ইত্যাদি), তেমনি আছে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে। কার্লকে লায়ন নানা সময়ে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন। অর্থের ব্যাপারে মায়ের বিরুদ্ধে কার্ল মেসোর কাছে অভিযোগও করেছেন, ‘I have fallen out with my family and, as long as my mother lives, I have no right to my inheritance.’
১৮৬৩ সালে মায়ের মৃত্যুর পরে লায়ন ফিলিপসের মধ্যস্থতায় কার্ল তাঁর বাবার সম্পত্তির অংশ পান (‘seven thousand guilders’)। এ ছাড়াও লায়ন স্নেহবশত কার্লকে নানাভাবে অর্থসাহায্য করেছেন। কার্ল মার্কস রসিকতা করে ১৮৬১ সালের ৭ মে এঙ্গেলসকে লিখছেন, ‘I squeezed $160 out of my uncle so that we were able to Pay off the greater part of our debts.’
কার্ল মার্কসের ভাই-বোন
হাইনরিখ মার্কস ও হেনরিয়েটা প্রেসবার্গের মোট নয়টি সন্তান। জন্মসাল অনুযায়ী তাঁদের তালিকা এই রকম :
এম.ডেভিড মার্কস (১৮১৫-১৮১৯) (M David Marx)
সোফিয়া মার্কস (১৮১৬-১৮৮৬) (Sophia Marx)
কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩) (Karl Marx)
হারম্যান মার্কস (১৮১৯- ১৮৪২) (Harman Marx)
হেনরিয়েটা মার্কস (১৮২০-১৮৪৫) (Henriette Marx)
লুই জুটা মার্কস (১৮২১-১৮৯৩) (Louise Juta Marx)
এমিলি কনরাডি (১৮২২-১৮৮৮) (Emily Conradi)
ক্যারোলিন মার্কস (১৮২৪-১৮৪৭) (Carolyn Marx)
এডুয়ার্ড মার্কস (১৮২৬- ১৮৩৭) (Eduard Marx)
কার্ল মার্কসকে বাদ দিলে বাকি আটজন সন্তানের মধ্যে আমরা তিনজনের পরিচয়লিপি সংগ্রহ করতে পেরেছি। প্রথমে বলা যাক সোফিয়া শ্মালহাউজেন মার্কসের কথা। ১৮৪২ সালে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয় উইলেম রবার্ট শ্মালহাউজেনের সঙ্গে। রবার্ট ছিলেন এক আইনজীবী। বিয়ের পরে তাঁরা নেদারল্যাণ্ডের ম্যাস্ট্রিক্ট শহরে চলে আসেন। কার্ল মার্কসের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর যোগাযোগ ছিল। ১৮৪৭ সালের এক চিঠিতে দেখা যাচ্ছে, রবার্ট শ্মালহাউজেন পৈত্রিক সম্পত্তির ব্যাপারে কার্লকে পরামর্শ দিচ্ছেন। কার্ল মার্কসের পরিবার যখন লণ্ডনে থাকতেন, তখন তাঁদের মেয়ে ক্যারোলিনা ও বার্থা দেখা করতে যেতেন। ক্যারোলিনা ও বার্থা ছাড়াও তাঁদের বেন্নো নামে এক ছেলে ও হেনরিয়েটা নামে এক মেয়ে ছিল।
লুই জুটা মার্কস কার্ল মার্কসের আর এক বোন। জল্টবোমেলে তাঁর সঙ্গে জন ক্যারেল জুটার সাক্ষাৎ হয়। ১৮৫৩ সালে ট্রিয়েরে তাঁদের বিয়ে হয় মা ও মাসির উপস্থিতিতে। কেপ কলোনি যাবার পথে লুই জুটা ও তাঁর স্বামী লণ্ডনের ডিন স্ট্রিটে কার্ল মার্কসের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এখানে জুটা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে ভাইকে তিরস্কার করেন। কার্ল মার্কস ও এঙ্গেলস যখন ম্যাঞ্চেস্টারে ছিলেন তখনও জুটা ও তাঁর স্বামী তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁরা বই ব্যবসায় যুক্ত হন। তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ‘জে.সি. জুটা, বুকসেলার অ্যাণ্ড স্টেশনার’। লুই ও জন ক্যারেলের সাতটি সন্তান। এঁদের মধ্যে স্যার হেনরি জুটা দক্ষিণ আফ্রিকার আদালতের ব্যারিস্টার ও বিচারক হয়েছিলেন।
এমিল কনরাডি কার্ল মার্কসের আর এক বোন। ১৮৫৯ সালে ট্রিয়ের শহরের ওয়াটার এঞ্জিনিয়ারিং সুপারভাইজার জোহাব জ্যাকব কনরাডির সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। মার্কসের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল। পিতার সম্পত্তির উত্তারাধিকার লাভের ব্যাপারে এমিলির স্বামী মার্কসকে সাহায্য করেন। মার্কসের মৃত্যুর পরে এলেনর মার্কসের কাছে তাঁরা শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন। (ক্রমশ)