দুর্গা পুজোকেও ছাপিয়ে গেল রানাবাঁধের লক্ষ্মীপুজো। চাঁপাডাঙ্গা থেকে ২৬ নম্বর বাসে পিয়াসারা স্টপেজ। আর তারপর যাওয়া যায় সেই লক্ষ্মীপুজো খ্যাত রানাবাঁধ, বেলবাঁধ এলাকায়। অন্যদিকে তারকেশ্বর কিংবা লোকনাথ স্টেশন থেকেও অটোতে করে যাওয়া যায় এই এলাকায়। আদিযোগী শিবশক্তি, ইসকন মন্দির, উইপোকার ঢিবি, হীরক রাজার দেশে, বাস্তু তন্ত্র সহ পাটকাঠি, বাঁশ, দড়ির মন্দিরের থিমে জমজমাট রানাবাঁধের লক্ষ্মীপুজো। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে তারকেশ্বর থানার চাঁপাডাঙ্গা এবং নাইটা মালপাহাড় পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত জগন্নাথপুর, বেঁড়েমূল, বেলেবাঁধ ও রানাবাঁধ এলাকার মানুষ লক্ষ্মীদেবীর আরাধনায় বিভিন্ন থিমের মন্ডপসজ্জা তৈরি করে তাব লাগিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে তাদের মন্ডপসজ্জা, বিভিন্ন থিমের মন্ডপে লক্ষ্মী ঠাকুর দেখতে আসা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করেছে। এবছর লক্ষ্মী পুজোয় আদিযোগী শিবশক্তি, ইসকন মন্দির উইপোকার ঢিবি, হীরক রাজার দেশে বাস্তু তন্ত্র সহ পাটকাঠি, বাঁশ, দড়ির বিভিন্ন মন্দিরের থিমে সেজে উঠছে জগন্নাথপুর, বেড়েমূল, বেলবাঁধ এব রানাবাঁধ।
ওই এলাকায় মোট বারোটি পুজো হয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুজোর মধ্যে একটি বেড়েমূল উদয় ভানু ক্লাব। তাদের পুজে এ বছর ৩৪ তম বর্ষে পা দিল। তাদের এবারে থিম মায়াপুর ইসকনের মন্দির। জগন্নাথপুর প্রতিবাদ ক্লাবের পুজো এ বছর ৩২ তম বর্ষে পা দিল, তাদের এবারে থিম উইপোকা ঢিবি। তাছাড়া জগন্নাথপুর বিবাদী ক্লাবের পুজো এ বছর ৪৪ তম বর্ষে বছর পা দিল। গত তিন মাস ধরে বাঁশ, দড়ি এবং কাগজ দিয়ে একটি মন্দির নির্মাণ করেছেন যা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে বলে কমিটির সভাপতি প্রবীর জানা জানান। অপরদিকে,ক্ষুদ্ররামপুর বিবেকানন্দ ক্লাবের পুজো এ বছর ৪৩ তম বর্ষে পা দিল। তাদের এবারে থিম হীরক রাজার দেশে। বেলেবাঁধ নেতাজি সংঘের পুজো এবছর ৪৭ তম বর্ষে পা দিল। তাদের এবারে থিম বাস্তু তন্ত্র। জীবজগতে প্রত্যেকেই যে একে অপরের পরিপূরক। পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিতেই তাদের এবারে থিম বলে কমিটির কোষাধ্যক্ষ সৌরেন বেরা জানান। একই সাথে তিনি বলেন, তাদের থিম এ বছর পুজো দেখতে আসা সমস্ত দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করেছে।
রানাবাঁধ ছাতিমতলা লক্ষ্মীপুজো কমিটির পুজো এবছর ৩৯ তম বর্ষে পা দিয়েছে। তাদের এবারের থিম আদিযোগী শিবশক্তি। আদিযোগীর মূর্তি সহ একাধিক শিবলিঙ্গে সাজিয়ে তোলা হয়েছে মন্ডপ। রানাবাঁধ লক্ষ্মীমাতা ক্লাবের পুজো এবছর ৪৫ তম বর্ষে পা দিল। তাদের এবারে অভিনব থিম জীবনযাত্রায় বোতল, অর্থাৎ মানুষের জীবন বোতল দিয়ে শুরু বোতল দিয়ে শেষ। মানুষের জীবনের জন্ম লগ্ন থেকে এবং মৃত্যুর শেষ লগ্ন পর্যন্ত তার জীবনযাত্রায় দুধের বোতল, পানীয় জলের বোতল, ওষুধের বোতল, মাদক সেবনের বোতল সহ বিভিন্ন বোতলে সাজিয়ে তোলা হয়েছে মন্ডপ। বেলবাঁধ রবীন্দ্র সঙ্ঘের পুজো ৩০ তম বর্ষে পা দিল। তাদের এবারে থিম থাইল্যান্ডের একটি বৌদ্ধ মন্দির। পেন্সিল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মন্ডপ। এছাড়া এখানে শক্তিমান ক্লাবের পুজো এবছর ৩৮তম বর্ষ অতিক্রম করল । তাদের এবারের থিম সূর্য। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আলোর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মন্ডপ। নাইটা উত্তরপাড়া লক্ষীপুজো কমিটি প্রত্যেক বছরের মতো এ বছরও মনোমুগ্ধকর সম্পূর্ণ পাটকাঠি দিয়ে পুরনো মন্দিরের আদলের মন্ডপ তৈরি করেছে। যা সকলের নজর কেড়েছে।
প্রসঙ্গত, পুজোকে কেন্দ্র করে প্রত্যেকদিন লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হচ্ছে বলে জানা গেছে। হুগলি, হাওড়া, বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ প্রতিমা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে তৎপর প্রশাসন। পুজো উপলক্ষ্যে দমকল, স্বাস্থ্যবিভাগ, পুলিশ সহ একাধিক জরুরি বিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে সমস্ত পুজোগুলোকে এক সুতোয় বাঁধতে তৈরি হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। পুজো কমিটিগুলির পক্ষ থেকেও দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ইতিমধ্যেই পুজোকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই সন্ধ্যায় মানুষের ঢল নেমেছে। রাত পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ডপগুলিতে বাড়ছে ভিড়। শনি ও রবিবার এই ভীড় আরও দ্বিগুণ পর্যায়ে পৌঁছবে বলে মনে করছে পুজো উদ্যোক্তারা। এই এলাকার পুজো মানে হাজার হাজার মানুষের আগমন। সার্বজনীন লক্ষ্মীপুজো যে এত বড় মাপের হতে পারে এলাকায় না গেলে বোঝা যায় না।