এখন থেকে একশো নিরানব্বই বছর আগে আঠারোশো পাঁচ সালে শুরু হয়েছিল এই পুজো জানালেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য এবং এই দুর্গাপুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা মনোহর বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যতীক্রমী এই পুজোর প্রতিমা দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী নন, ব্যাঘ্রবাহিনী৷ প্রতিমাতেও রয়েছে নজরকাড়া বিশেষ সাবেকিয়ানা৷ তিনি জানালেন, অযোধ্যা এস্টেটের প্রতিষ্ঠাতা রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় পুজো শুরু করার সময় দেবী মূর্তিতে বিশেষত্ব চেয়েছিলেন৷ তাই চণ্ডীমঙ্গলের বর্ণনা অনুযায়ী, দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী নন, ব্যাঘ্রবাহিনী৷
এখানে প্রতিমার মুখ ছাঁচে ফেলে তৈরি হয় না৷ বংশপরম্পরার প্রতিমা শিল্পী হাতে তৈরি করেন দেবীর মুখ৷ এরকম মূর্তি বাঁকুড়া জেলায় দ্বিতীয়টি দেখা যায় না বলেই বিশ্বাস। ষষ্ঠীর দিন অধিবাস ও আমন্ত্রণের সময় আমাদের পরিবারের একজন বিবাহিতা মহিলা সারাদিন উপোস থেকে পুজোয় বসেন। রাস উৎসবের সময় ওই মহিলাই উৎসবের প্রথম দিন কুলদেবতার পায়ে ফুল উৎস্বর্গ করার অধিকারী হন। সপ্তমীর দিন রুপার পালকি করে নব পত্রিকা আনা হয়, এবং মন্দিরে প্রবেশ করানোর আগে দ্বাদশ শিব মন্দিরের সামনে পুজো ও আরতি করা হয়।
অষ্টমীর দিন চাল কুমড়া বলি দেওয়া হয়। মন্দিরে দুর্গার সাথে আমাদের কুল দেবতা কে রেখে পুজো করা হয়। ভোগ নিবেদনের সময় আগে কুলদেবতাকে নিবেদন করা হয়, পরে মা দুর্গার ভোগ নিবেদন হয়। কমপক্ষে চোদ্দটি থালায় ভোগ নিবেদন করা হয় । পুরো পুজোর বৈষ্ণব মতে হয়। পুজো আগে মল্ল রাজাদের কামানের আওয়াজ শুনে বলি দেওয়া হত। এখন ঘড়ির সময় দেখেই দেওয়া হয়।
বিজয়ার দিন বেদীতে ঘট বিষর্জনের পর সিঁদুর খেলা হয়। পরে রুপার পালকি করে নদীতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘট বিসর্জন হয়।প্রতিমা বিষর্জন হয় সপ্তমী থেকে আট দিন পর। একসময় সাধারন মানুষ ও প্রজাদের ভিড়ে দুর্গা পুজো উৎসবের চেহারা নিত। এখনও নবমীতে ভোগ খাওয়ানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এই পুজোর একটা আলাদা আকর্ষন আছে। আগের মতো জৌলুস হয়ত নেই তবুও জনপ্রিয়তা অটুট রয়েছে।